মানবসভ্যতা যখন প্রতি মুহূর্তে উৎকর্ষের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই যেন উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সূদানে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। রক্তে রঙিন হচ্ছে রাজপথ, ধর্ষিতার চিৎকারে ভারী হচ্ছে আকাশ। বেকারত্ব, ক্ষুধা আর দারিদ্র্য যেন দেশটির অসহায় মানুষগুলোকে প্রতি মুহূর্তে চিল-শকুনের মতো খুবলে খাচ্ছে। চারপাশে ভূমিবেষ্টিত দক্ষিণ সূদান ২০১১ সালের ৯ জুলাই সূদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পরপরই দেশটির জনগণের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন যেন দুর্বিষহ হয়ে তাদের জীবনে হানা দেয়। দক্ষিণ সুদানের ১০টি অঙ্গরাজ্যের ৯টিতেই শুরু থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী সংগঠন। সংগঠনগুলোর দাবী, দেশটির সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার পাঁয়তারা করছে। এ সংঘর্ষের ফলাফলে ভালো কিছু তো আসেইনি, উল্টো ঘরছাড়া হয়েছেন লাখ লাখ নিরীহ মানুষ। দিনে দিনে খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে যারাই সরকারের বিরোধিতা করছে, তাদেরকেই নানাভাবে হত্যা করছে সেনারা। এ হত্যার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না শিশু ও অক্ষম মানুষেরাও। কাউকে প্রকাশ্য দিবালোকে জীবন্ত পোড়ানো হচ্ছে, কাউকে জনসমক্ষে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, আবার কাউকে শিপিং কন্টেইনারে পুরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হচ্ছে। নির্যাতন শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। সরকারপন্থী সেনারা রীতিমতো ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে মেতেছে। যার বাড়িতে খুশি হানা দিচ্ছে তারা। লুটে নিচ্ছে সবকিছু। ধর্ষণ করছে নারীদের। হত্যা করছে পুরুষ ও শিশুদের। এমনকি মিলিশিয়া বা সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে নারীদের ধর্ষণের বৈধতা দিয়েছে দেশটির সরকার। যা এক চরম বিভীষিকাময় চিত্রের নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

প্রতিবেদনে এসেছে, সেনাদের সঙ্গে দেশটির সরকারের যা খুশী করার একটা চুক্তি হয়েছে। যার ফলে এ চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে অস্থিরতার সূচনা ঘটলেও ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে। দেশটির দুর্ভাগ্যের শুরু হিসাবে প্রেসিডেন্ট সালভা কিইর ও প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের মধ্যকার সম্পর্কচ্যুতিকেই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ সময়ের মধ্যে সেখানে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ১০ হাযার মানুষ নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ। মানুষে-মানুষে হানাহানি আর সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে সেখানে টালমাটাল অবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সরকার বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিয়েছে। আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে যে যার মতো জবর দখল করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। সংঘাত, অস্থিরতা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সহিংসতায় পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। মানুষের দিন যায়, রাত কাটে মৃত্যুর শঙ্কা বাড়ে। কিন্তু নবীন এই স্বাধীন রাষ্ট্রের শুভদিনের খোঁজ মেলে না...।







আরও
আরও
.