ভূমিকা : আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের আযাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ক্ষমা প্রার্থীদের অঢেল নেকী প্রদান করতে ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন। পেন্সিলের ভুল লেখা মুছে ফেলার জন্য যেমন রাবার ব্যবহার করা হয় তেমনই বান্দার ভুলগুলো আমলনামা থেকে মুছে ফেলার জন্য আল্লাহ তওবার ব্যবস্থা রেখেছেন। কিভাবে তওবা করতে হয় এবং কিভাবে গুনাহমুক্ত জীবন লাভ করা যায় তা রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে শিখিয়েছেন। সেই সাথে ক্ষমা প্রার্থীদের পাপরাশি মোচনের সুসংবাদও প্রদান করেছেন।
বর্তমানে বহু মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশ! পাপপূর্ণ জীবনের দিকে লক্ষ্য করে ভাবেন আল্লাহ কি আমার এত গুনাহ ক্ষমা করবেন! কি হবে আমার শেষ পরিণতি! এই আলোচনা সেই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা নিজেদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে হতাশায় ভুগছেন। পাপের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যারা জীবনের খেই হারিয়ে ফেলেছেন তাদের উদ্দেশ্যেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।-
১. রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের ও মুমিন নর-নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা : নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি সকল মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা কর্তব্য। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ- ‘আর তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার ও মুমিন নর-নারীদের জন্য। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ভালভাবেই জানেন তোমাদের চলাফেরা ও আশ্রয় সম্পর্কে’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنِ اسْتَغْفَرَ لِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ مُؤْمِنٍ وَّمُؤْمِنَةٍ حَسَنَةً، ‘যে ব্যক্তি মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ সে ব্যক্তির আমলনামায় পৃথিবীর প্রতিটি মুমিন নর-নারীর সংখ্যা পরিমাণ একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’।[1]
২. বিগত নবী-রাসূলগণের অধিকহারে ক্ষমা প্রার্থনা করা : বিগত প্রত্যেক নবী-রাসূল অধিকহারে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে তাঁদের কিছু দো‘আ উল্লেখ করা হ’ল।-
(ক) আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,قَالاَ رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ- ‘তারা (উভয়ে) বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছি। এক্ষণে যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তাহ’লে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (আ‘রাফ ৭/২৩)।
(খ) নূহ (আঃ) স্বীয় উম্মতের মুমিন নারী-পুরুষের জন্য কাতর কণ্ঠে দো‘আ করে বলেন,رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلاَ تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلاَّ تَبَارًا- ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে, আর যারা মুমিন হয়ে আমার বাড়ীতে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদেরকে ক্ষমা কর। আর তুমি যালেমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করো না’ (নূহ ৭১/২৮)।
(গ) ইব্রাহীম (আঃ) হাজেরা ও ইসমাঈলকে মক্কার বিজন মরুভূতিতে রেখে এসে আল্লাহর কাছে নির্জনে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন,رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ، رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ছালাত কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমার দো‘আ কবুল কর! হে আমাদের প্রভু! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে’ (ইব্রাহীম ১৪/৪১-৪২)।
(ঘ) মূসা (আঃ) ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন,رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার নিজের উপর যুলুম করেছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর! তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ক্বাছাছ ২৮/১৬)।
(ঙ) দাঊদ (আঃ) একইভাবে আল্লাহর সমীপে প্রণত হ’লেন। আল্লাহ বলেন,وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَّأَنَابَ- ‘দাঊদ ধারণা করল যে, এর দ্বারা আমরা তাকে পরীক্ষা করেছি। ফলে সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় পড়ে গেল ও আল্লাহর দিকে প্রণত হ’ল’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)।
(চ) সারা পৃথিবীর বাদশাহ ও নবী সোলায়মান (আঃ) দো‘আ করেন,رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لاَّ يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِّنْم بَعْدِي إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ- ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, আমার পরে যেন আর কেউ না পায়। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৫)। সম্মানিত পাঠক! নবীগণ ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক। তাঁরা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তবে আমাদেরও ক্ষমা চাওয়া দরকার।
৩. সকাল-সন্ধ্যায় ক্ষমা প্রার্থনা : আল্লাহর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা শুধু পাপ মোচনের মাধ্যমই নয় বরং একটি মহৎ ইবাদত। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ- ‘তুমি তোমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং সন্ধ্যায় ও সকালে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা কর’ (মুমিন ৪০/৫৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে সকাল-সন্ধ্যায় ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যারা পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, তাদের কত বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত, তা সহজেই অনুমেয়।
এজন্য হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, أَكْثِرُوا مِنَ الْاِسْتِغْفَارِ فِي بُيُوتِكُمْ وَعَلَى مَوَائِدِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَفِي أَسْوَاقِكُمْ وَفِي مَجَالِسِكُمْ، أَيْنَمَا كُنْتُمْ فَإِنَّكُمْ مَا تَدْرُونَ مَتَى تَنْزِلُ الْمَغْفِرَةُ- ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীতে, দস্তরখানায়, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে এবং বৈঠকগুলিতে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা তোমরা তো জানো না যে, কখন ক্ষমা নাযিল হবে’।[2] লোকমান হাকীম তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেন,يَا بُنَيَّ! عَوِّدْ لِسَانَكَ الإسْتِغْفَارَ فَإِنَّ لِلَّهِ سَاعَاتٌ لاَ يُرَدُّ فِيْهِنَّ سَائِلاً، ‘বৎস! তোমার জিহবাকে ক্ষমা প্রার্থনায় অভ্যস্ত কর। কেননা আল্লাহর নির্ধারিত এমন কিছু সময় আছে, যখন কোন প্রার্থীর প্রার্থনা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’।[3] সুতরাং আমাদেরকেও সকাল-সন্ধ্যায়, সর্বাবস্থায় ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। জিহবাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন, আনমনেই ইস্তেগফার উচ্চারিত হয়।
৪. প্রতি ছালাতের শেষ বৈঠকে ক্ষমা প্রার্থনা : বিশিষ্ট ছাহাবী আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম,يَا رَسُولَ اللهِ عَلِّمْنِي دُعَاءً أَدْعُو بِهِ فِي صَلاَتِي، ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি দো‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি ছালাতে পাঠ করব। তখন তিনি বললেন, তুমি বল,اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ- ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। আপনি ব্যতীত ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।[4]
৫. শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা : আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীদের পসন্দ করেন। বিশেষকরে শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থীদের তিনি অত্যধিক ভালোবাসেন। যেমন আল্লাহ বলেন,قُلْ أَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِنْ ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ وَاللهُ بَصِيرٌم بِالْعِبَاد، اَلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ، اَلصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ- ‘তুমি বল, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চাইতে উত্তম বস্ত্তর খবর দিব? (তা হ’ল) যারা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার নিকট রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে এবং থাকবে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তার বান্দাগণের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখেন’। ‘যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’। ‘যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, আল্লাহর পথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী’ (আলে ইমরান ৩/১৫-১৭)।
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,دَلَّ عَلَى فَضِيلَةِ الِاسْتِغْفَارِ وَقْتَ الْأَسْحَارِ- ‘এতে প্রমাণিত হ’ল যে, শেষ রাতের ক্ষমা প্রার্থনার এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে’।[5] হাফেয ইবনু ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أَرْبَعَةٌ تَجْلِبُ الرِّزْقَ : قِيَامُ اللَّيْل وَكَثْرَةُ الْاِسْتِغْفَارِ بِالْأَسْحَارِ وَتَعَاهُدُ الصَّدَقَةِ وَالذِّكْرُ أَوَّلَ النَّهَارِ وَآخِرَه. وَأَرْبَعَةٌ تَمْنَعُ الرِّزْقَ : نَوْمُ الصُّبْحَةِ وَقِلَّةُ الصَّلاَةِ وَالْكَسَلُ وَالْخِيَانَةُ، ‘চারটি বিষয় রিযিক্বে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে- ক্বিয়ামুল লায়ল, শেষ রাতে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা, নিয়মিত দান-ছাদাক্বা এবং সকাল-সন্ধ্যায় যিকির করা। আর চারটি বিষয় রিযিক্বকে সংকুচিত করে- সকাল বেলা ঘুমানো, নফল ছালাতের স্বল্পতা, অলসতা এবং খিয়ানত’।[6]
৬. নফসের উপর যুলুমের পর ক্ষমা প্রার্থনা : মানুষ পাপ করার মাধ্যমে নিজ নফসের প্রতি যুলুম করে থাকে। পাপ হয়ে গেলে হতাশ হয়ে বসে না থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। যেমন আল্লাহ এই ধরণের মানুষের প্রশংসা করে বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوآ أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللهُ؟ ‘যারা কোন অশ্লীল কাজ করার পরে বা নিজের উপর যুলুম করার পরে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে?’ (আলে ইমরান ৩/১৩৫)। তিনি অন্যত্র বলেন,وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَّحِيمًا- ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)। সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার ব্যপারে বিলম্ব করা যাবে না। পাপকর্ম হয়ে যাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমা প্রার্থনা করাই আল্লাহর রহমত লাভের কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَوْلاَ أنَّكُمْ تُذْنِبُوْنَ لَخَلَقَ اللهُ خَلْقًا يُذْنِبُوْنَ وَيَغْفرُ لَهُمْ- ‘যদি তোমরা পাপ না করতে, তাহ’লে অবশ্যই আল্লাহ আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করতেন, যারা পাপ করত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করত। ফলে তিনি তাদের ক্ষমা করতেন’।[7] প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল ‘আছ (রাঃ) বলেন, সূরা যিলযাল নাযিল হ’লে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে থাকেন। যেখানে আল্লাহ বলেন, فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهُ، وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهُ- ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে’। ‘আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে’ (যিলযাল ৯৯/৭-৮)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবুবকরকে উপরোক্ত হাদীছ বর্ণনা করে সান্ত্বনা প্রদান করেন।[8]
বৈঠকে ক্ষমা প্রার্থনা ও মজলিসের কাফ্ফারা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বৈঠকে গণনা করে দেখতাম যে, তিনি এক বৈঠকে এক শতবার বলতেন, رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয় তুমিই একমাত্র তওবা কবুলকারী, পরম করুণাময়’।[9]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন,سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّآ إِلَهَ إِلَّآ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ، তখন জনৈক ব্যক্তি বলল,يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّكَ لَتَقُولُ قَوْلاً مَا كُنْتَ تَقُولُهُ فِيمَا مَضَى، فَقَالَ : كَفَّارَةٌ لِّمَا يَكُونُ فِي الْمَجْلِسِ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পড়লেন তা ইতিপূর্বে তো আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু ভুলত্রুটি হয়ে থাকে এ দো‘আ তার কাফ্ফারা হিসাবে গণ্য হবে’।[10]
ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি : ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করে দিন বা রাতে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা। অতঃপর কৃত গোনাহ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে তওবা করবে ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ، إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ، ‘যদি কেউ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পর উত্তমরূপে ওযূ করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার ঐ পাপ মাফ করে দেন’।[11] তবে খেয়াল রাখতে হবে, পাপ যেন মানুষের হক নষ্টের সাথে সম্পৃক্ত না হয়। কারণ এ ধরণের পাপ আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার পূর্বে ব্যক্তির কাছে মাফ নিতে হবে।
ক্ষমা প্রার্থনার ফযীলত :
ক্ষমা প্রার্থনার অশেষ প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থীদের দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। যেমন-
(১) ক্ষমা প্রার্থনাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে : ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করলে জান্নাত পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ দিনে পাঠ করে সেদিন সন্ধ্যার পূর্বে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ রাতে পাঠ করে সেদিন সকালের পূর্বে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। দো‘আটি হ’ল-اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকট প্রদত্ত অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমি আমার পাপ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।[12]
(২) ক্ষমা প্রার্থনাকারীগণ সৌভাগ্যবান : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا- ‘মহা সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি, যার আমলনামায় সর্বাধিক ইস্তেগফার পাওয়া যাবে’।[13] তিনি প্রার্থনার সময় বলতেন,رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي، وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي كُلِّهِ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَايَايَ، وَعَمْدِي وَجَهْلِي وَهَزْلِي، وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ المُقَدِّمُ وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহ, অজ্ঞতা, প্রতিটি কাজে আমার বাড়াবাড়ি এবং আমার চাইতে তুমিই আমার অপরাধসমূহ সম্পর্কে অধিক অবগত, সেগুলি ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! আমার প্রতিটি ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, ঠাট্টাচ্ছলে কৃত গুনাহ এবং আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমার পূর্বাপর গোপন-প্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। তুমিই পশ্চাতের মালিক এবং তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’।[14]
ছাওবান (রাঃ) বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلاَتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلاَثًا وَقَالَ : اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন, অতঃপর এ দো‘আ পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’।[15] আয়েশা (রাঃ) বলেন,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রুকূ‘ ও সিজদাতে অধিকাংশ সময় এই দো‘আটি পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’![16]
(৩) আসমান ও যমীন ভর্তি পাপও আল্লাহ ক্ষমা করেন : হাদীসে কুদসীতে রাসূল (ছাঃ) বলেন,قَالَ اللهُ تَعَالَى : يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدمَ إِنَّك لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ لَقِيتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً- ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার প্রত্যাশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। এতে আমি কাউকে পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার পাপরাশি যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে যায়, আর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কাউকে পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ পাপরাশি নিয়ে আমার সমীপে উপস্থিত হও এবং শিরক মুক্ত অবস্থায় আমার সামনে আসো, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’।[17]
অপর হাদীছে কুদসীতে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন,يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ، ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিনরাত অনবরত পাপ করে থাক। আর আমিই সমস্ত পাপ ক্ষমা করি। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিব’।[18]
শয়তানের চক্রান্তে বান্দা ভুল করে ফেলে। তবে সে যদি তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, শয়তান বলল,وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لاَ أَبْرَحُ أُغْوِي عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِي أَجْسَادِهِمْ، فَقَالَ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى : وَعِزَّتِي وَجَلاَلِي لاَ أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِي- ‘হে মহান প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গোমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ বললেন, আমার ইয্যত-সম্মান, আমার মর্যাদার কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি ততক্ষণ তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব’।[19]
আল্লাহ তা‘আলার এমন ঘোষণা থাকার পরেও যদি আমরা ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভুগি তবে আমাদের মত দুর্ভাগা আর কে হ’তে পারে!
(৪) ক্ষমা প্রার্থী বান্দার উপর আল্লাহ পরম আনন্দিত হন : প্রার্থনাকারীদের আল্লাহ ভালবাসেন এবং বান্দার তওবাতে তিনি অত্যধিক আনন্দিত হন।
(ক) আলী ইবনু রাবী‘আ বলেন, আলী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হ’লাম, তখন তার নিকটে একটি সাওয়ারী আরোহণের জন্য উপস্থিত করা হ’লে তিনি বাহনের পাদানিতে পা রেখে বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’। অতঃপর এর পিঠে বসে বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। এরপর তিনি কুরআনের আয়াতটি পাঠ করলেন,سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ. وَإِنَّآ إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ- ‘সেই মহান পবিত্র সত্তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি এটিকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন অথচ আমরা তাকে বশীভূতকারী ছিলাম না, আর আমরা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর দিকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তনকারী’।[20]
অতঃপর তিনি পুনরায় তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। এরপর তিনি বললেন, سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ- ‘হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমি আমার উপর যুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া পাপ মোচন করার কেউ নেই’। এরপর তিনি হেসে উঠলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আমীরুল মুমিনীন! কিসে আপনার হাসি পেল? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, আমি যেরূপ করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কেও এরূপ করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি হাসছিলেন। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি কারণে আপনার হাসি পেল? তিনি উত্তরে বললেন, إِنَّ رَبَّكَ يَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا قَالَ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِيْ তোমার প্রতিপালক আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি পরম আনন্দিত হন যখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমার পাপরাশি ক্ষমা করে দিন এবং সে আরও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, আমি ব্যতীত তার পাপরাশি ক্ষমা করার অন্য কেউ নেই’।[21]
(খ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا أَيْ بِيَدِهِ فَذَبَّهُ عَنْهُ ‘মুমিন নিজের পাপকে এমন বড় মনে করে যে, সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে কোন পাপিষ্ঠ নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির ন্যায় তুচ্ছ মনে করে, যা তার নাকের ডগায় বসল, আর সে তা হাত দিয়ে তাড়িয়ে দিল।
অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ স্বীয় মুমিন বান্দার তওবায় ঐ ব্যক্তির চাইতে বেশী আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি ধ্বংসকারী কোন ধু ধু মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে রয়েছে তার একমাত্র সম্বল বাহন, যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে গাছের ছায়ায় সে যমীনে মাথা রাখল ও কিছুক্ষণ ঘুমাল। অতঃপর জেগে দেখল তার একমাত্র বাহনটি পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে অসহনীয় গরম-তৃষ্ণা এবং অন্যান্য দুঃখ-বেদনা তাকে দুর্বল ও ঘায়েল করে ফেলল। তখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, আমি যেই টিলার উপর ছিলাম সেখানে গিয়ে শুয়ে থাকব। সে ব্যক্তি সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যাতে সে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ঘুমাতে পারে। এক সময় জেগে দেখে তার বাহন হঠাৎ তার কাছে উপস্থিত, বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রী মওজূদ। তখন আকস্মিকভাবে সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফেরত পাওয়ার পর পুনর্জীবন লাভ করার ন্যায় যেরূপ খুশী হয়, আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার ক্ষমা প্রার্থনায় এর চাইতেও অধিক খুশী হন’।[22]
(৫) আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তি : ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,لَوْلاَ تَسْتَغْفِرُونَ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ- ‘কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছ না? যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হ’তে পার’ (নামল ২৭/৪৬)। তিনি বলেন,وَاسْتَغْفِرِ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا- ‘আর তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/১০৬)।
(৬) উত্তম জীবনোপকরণ প্রাপ্তি : ক্ষমা প্রার্থীদের জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন। যেমন তিনি বলেন,وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَّيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ- ‘এ মর্মে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে ফিরে যাও। তিনি তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত এবং প্রত্যেক উত্তম আমলকারীকে তার প্রতিদান দিবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে আমি তোমাদের উপর কঠিন দিবসের শাস্তির আশংকা করছি’ (হূদ ১১/৩)।
(৭) রহমতের বৃষ্টি প্রাপ্তি : ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আসমানী বাল-মুছীবত আসমানে তুলে নেন এবং উপকারী বৃষ্টি দান করেন। যেমন হূদ (আঃ)-এর উক্তি কুরআনে এভাবে এসেছে,وَيَاقَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوآ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ- ‘আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁরই প্রতি নিবিষ্ট হও। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বারিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদেরকে শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করে দিবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (হূদ ১১/৫২)।
(৮) সম্পদ, সন্তান ও জান্নাত প্রাপ্তি : কৃত ভুল স্বীকার করা এমন এক মহৎ গুণ, যার মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ক্ষমাপ্রার্থীদের দুনিয়াতে সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন এবং পরকালে জান্নাত দান করবেন। যেমন আল্লাহ নূহ (আঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করেন এভাবে,فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا- يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَّبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ أَنْهَارًا- ‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল’। ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন’। ‘তিনি তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগিচাসমূহ সৃষ্টি করবেন ও নদীসমূহ প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ৭১/১০-১২)।
(৯) আযাব-গযব থেকে সুরক্ষা প্রাপ্তি : ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আযাব-গযব থেকে পরিত্রাণ মেলে। আল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ- ‘অথচ আল্লাহ কখনো তাদের উপর শাস্তি নাযিল করবেন না যতক্ষণ তুমি (মুহাম্মাদ) তাদের মধ্যে অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে’ (আনফাল ৮/৩৩)। তাবে শর্ত হ’ল গুনাহ থেকে পরিপূর্ণভাবে নিবৃত্ত হয়ে খালেছ অন্তরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,فَإِنَّ اللهَ لاَ يُعَذِّبُ مُسْتَغْفِرًا، وَأَمَّا مَنْ أَصَرَّ عَلَى الذَّنْبِ، وَطَلَبَ مِنَ اللهِ مَغْفِرَتَهُ، فَهَذَا لَيْسَ بِاسْتِغْفَارٍ مُطْلَقٍ، وَلِهَذَا لاَ يَمْنَعُ الْعَذَابَ، ‘আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে শাস্তি দিবেন না। কিন্তু যে ব্যক্তি পাপের উপর অটল থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, এটা তার প্রকৃত ক্ষমা প্রার্থনা নয়, ফলে এর মাধ্যমে শাস্তি বিদূরিত হবে না’।[23]
মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আঃ) কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহকে বলেন, لآ إِلَهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ- ‘(হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আর নিশ্চয়ই আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৭)। ফলে তিনি আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তি পান।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذا دَعَا رَبَّهُ وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ (لَآ إِلَهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ) لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ إلاَّ اسْتَجَابَ لَهُ- ‘মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যে দো‘আ করেছিলেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সেই দো‘আটি পাঠ করে আল্লাহর কাছে কোন প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তার দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল করবেন’।[24]
(১০) তওবা অন্তরের কালিমা দূর করে : পাপকর্মের কারণে অন্তরে পাপের কালিমা লেপন হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُهُ وَإِنْ زَادَ زَادَتْ حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ فَذَلِكُمُ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللهُ تَعَالَى (كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ)- ‘মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে পাপকাজ পরিত্যাগ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। পুনরায় সে গুনাহ করলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায় এবং মরিচা ধরে। এই সেই মরিচা যা আল্লাহ স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন’। আল্লাহ বলেন,كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ- ‘কখনই না। বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে (মুত্বাফফিফীন ৮৩/১৪)’।[25] তবে বান্দা যদি বেশী বেশী তওবা-ইস্তিগফার করে, তাহ’লে তার অন্তর পরিস্কার ও কোমল হয় এবং আল্লাহর ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্ত্তত হয়ে যায়। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, اجْلِسُوا إِلَى التَّوَّابِينَ فَإِنَّهُمْ أَرَقُّ شَيْءٍ أَفْئِدَةً، ‘তোমরা তওবাকারীদের সাথে উঠা-বসা কর, কেননা তারা সর্বাধিক কোমল হৃদয়ের অধিকারী’।[26]
(১১) ক্ষমা প্রার্থনায় সর্বোচ্চ জান্নাত প্রাপ্তি : পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কারণে তারা জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُولُ : يَا رَبِّ أَنَّى لِي هَذِهِ؟ فَيَقُولُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ- ‘মহান আল্লাহ জান্নাতে তাঁর কোন সৎকর্মশীল বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমার এই উচ্চ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হ’ল? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনার কারণে’।[27] ইমাম মানাভী (রহঃ) বলেন, ‘ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পাপরাশি মার্জনা করা হয় এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নেককার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ যদি তার পিতা-মাতাকে এত উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তাহ’লে ক্ষমা প্রার্থনাকারী সন্তানকে আল্লাহ আরও কত অধিক সম্মানিত করবেন’![28]
উপসংহার : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে খুব ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পুড়াতে চান না। এজন্যই তিনি তওবার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন। আমাদের উচিৎ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গুনাহমুক্ত জীবন পরিচালনায় ব্রতী হওয়া। আমরা যেন ক্ষমা প্রার্থী বান্দাদের ন্যায় আমল করে ইহকালে ও পরকালে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি, মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!
ড. ইহসান ইলাহী যহীর
প্রিন্সিপাল, মারকাযুস সুন্নাহ আস-সালাফী, পূর্বাচল, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. ত্বাবারাণী, মুসনাদুশ শামিইয়ীন হা/২১৫৫; ছহুীহুল জামে‘ হা/৬০২৬, সনদ হাসান।
[2]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আত-তাওবাহ, ১২৫ পৃ.।
[3]. ইবনু রজব হাম্বলী, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, ২১৪ পৃ.।
[4]. বুখারী হা/৮৩৪; মুসলিম হা/২৭০৫; মিশকাত হা/৯৪২।
[5]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/২৩ পৃ.।
[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৭৮।
[7]. মুসলিম হা/২৭৪৮; তিরমিযী হা/৩৫৩৯।
[8]. হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১১৫১২; কুরতুবী হা/৬৪৩৬।
[9]. আবূদাঊদ হা/১৫১৬; তিরমিযী হা/৩৪৩৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৮১৪; মিশকাত হা/২৩৫২।
[10]. আবূদাঊদ হা/৪৮৫৯, সনদ হাসান; দারেমী হা/২৬৫৮।
[11]. আবূদাঊদ হা/১৫২১, সনদ ছহীহ; বায়হাক্বী শো‘আব হা/৬৬৭৬।
[12]. বুখারী হা/৬৩০৬; মিশকাত হা/২৩৩৫।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮১৮, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৩৫৬।
[14]. বুখারী হা/৬৩৯৮; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৯৫৭।
[15]. মুসলিম হা/১৩৫; মিশকাত হা/৯৬১।
[16]. বুখারী হা/৮১৭; মুসলিম হা/২১৭; মিশকাত হা/৮৭১।
[17]. তিরমিযী হা/৩৫৪০; মিশকাত হা/২৩৩৬; ছহীহাহ হা/১২৭-২৮।
[18]. মুসলিম হা/২৫৭৭; মিশকাত হা/২৩২৬।
[19]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭৬৭২, সনদ ছহীহ।
[20]. আহমাদ হা/১০৫৬; আবুদাঊদ হা/২৬০২; মিশকাত হা/২৪৩৪; সূরা যুখরুফ ৪৩/১৩-১৪।
[21]. আহমাদ হা/৯০৩; আবুদাঊদ হা/২৬০২; তিরমিযী হা/৩৪৪৬; মিশকাত হা/২৪৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২০৬৯।
[22]. বুখারী হা/৬৩০৮; মুসলিম হা/২৬৭৫; মিশকাত হা/২৩৫৮।
[23]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩১৫ পৃ.।
[24]. তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২, সনদ ছহীহ।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৪ সনদ হাসান; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৩৯০৮; মিশকাত হা/২৩৪২।
[26]. ইবনুল মুবারাক, আয-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব, ৪২ পৃ.।
[27]. আহমাদ হা/১০৬১০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০; মিশকাত হা/২৩৫৪।
[28]. মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ২/৩৩৯ পৃ.।