দেশে আয়বৈষম্য আরও বেড়েছে। ধনীদের আয় আরও বেড়েছে। গরীবদের আয় আরও কমেছে। দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ১০% মানুষের হাতেই এখন দেশের মোট আয়ের ৪১%। অন্যদিকে সবচেয়ে গরীব ১০% মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১.৩১%। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। অথচ ৫০ বছর আগে ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে প্রথম জরিপের ফল অনুযায়ী, দেশের ১০% ধনী মানুষ ওই সময়ে দেশের মোট আয়ের ২৮.৪% আয় করত এবং ১০% গরীব মানুষ মোট আয়ের ২.৮০%-এর মতো আয় করত। সব মিলিয়ে এবারের জরিপে দেখা গেছে, দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ আয় যাচ্ছে দেশের ধনী ৩০% মানুষের হাতে। বাকি ৭০% মানুষের আয় মোট আয়ের বাকি এক ভাগ।
বিশেষত গত এক যুগে দেশে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি যেমন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, একইসাথে দ্রুতগতিতে বৈষম্যও বেড়েছে। বৈষম্যের নির্দেশক জিনি সহগ সূচক এখন দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট। দশমিক ৫০০ পয়েন্ট পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ উচ্চ বৈষম্যের দেশ থেকে অতি সামান্য দূরত্বে আছে বাংলাদেশ।
কেন বৈষম্য বাড়ছে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, শহরের শ্রমিকদের আয় সেভাবে বাড়েনি। জমি বা সম্পদের মালিকেরাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল বেশি পাচ্ছেন। গত ছয় বছরে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। অথচ এই সময়ে শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মজুরিও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা; কিন্তু তা হয়নি। এই প্রবৃদ্ধিতে মালিকদের আয় বেড়েছে। ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তারা মাফ পেয়ে গেছেন। করসুবিধা শিল্পমালিকেরাই পেয়েছেন। সার্বিকভাবে সরকারী সুযোগ-সুবিধায় মালিকেরা লাভবান হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা কিছু পাননি। তাদের কাছে প্রবৃদ্ধির কোন সুফল যায়নি। এভাবেই বৈষম্য বেড়েছে।