উত্তর : বদ নযর সত্য। কেবল শিশুই নয়, বড় মানুষও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে পারে। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আসমা বিনতে ঊমাইস (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জা‘ফরের সন্তানদের বদ নযর লাগে। আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়-ফুঁক করব? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কোন বিষয় যদি ভাগ্য পরিবর্তন করত, তাহ’লে বদ নযর সেটি করতে পারত’ (তিরমিযী হা/২০৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫১০; মিশকাত হা/৪৫৬০)। এতে বুঝা যায় যে, বদ নযর অত্যন্ত ক্ষতিকর।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে তাক্বদীরে লিখিত মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নযর লাগার কারণে হবে’ (ছহীহাহ হা/৭৪৭)। তিনি বলেন, ‘বদ নযর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং উটকে রান্নার পাতিলে পৌঁঁছে দেয়’ (ছহীহাহ হা/১২৪)। অর্থাৎ মেরে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, ‘বদ নযর আল্লাহর অনুমতি ক্রমে কোন ব্যক্তিকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে, সে যেন কোন উঁচু স্থান থেকে হঠাৎ নীচে পড়ে গেল’ (তাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৯৭৭, ছহীহাহ হা/৮৮৯)।
করণীয় : সাধারণভাবে আকর্ষণীয় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে দেখলে তার প্রতি যেন বদ নযর না লাগে, সেজন্য বরকতের দো‘আ করতে হবে। এতে সে সম্ভাব্য বদ নযরের অকল্যাণ থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫০৯)। অর্থাৎ তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে ‘বারাকাল্লাহু ‘আলাইক’ (আল্লাহ তোমার উপরে বরকত দান করুন! -শারহু ইবনে মাজাহ)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন ও মানুষের বদ নযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হ’লে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং অন্যগুলি ত্যাগ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫১১;
নাসাঈ হা/৫৪৯৪; মিশকাত হা/৪৫৬৩)।
আর কারও উপর বদ নযর লেগেছে এমন অনুভব হয়, তবে সে ব্যক্তির চিকিৎসা দু’ভাবে করা যায়। (১) যদি বদ নযর লাগানো ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়, তাহ’লে নিম্নোক্ত সুন্নাতী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন সাহল বিন হুনায়েফ (রাঃ)-এর পুত্র আবু উমামাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ‘আমের বিন রবী‘আহ (রাঃ) সাহল বিন হুনায়েফ-কে গোসল করতে দেখলেন এবং (তার সুন্দর শরীর দেখে) বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! আজকের মতো কোনদিন আমি কাউকে দেখিনি এবং পর্দার আড়ালে রক্ষিত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও এরূপ দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সাহল অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। অতঃপর (এ অবস্থায়) তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আনা হ’ল। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি সাহল-এর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি কাউকে এজন্য অভিযুক্ত কর? তারা বলল, আমরা ‘আমের বিন রাবী‘আহ-এর ওপর সন্দেহ করি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) আমেরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় ভৎর্সনা করে বললেন, তোমাদের কেউ তার আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করলে না কেন? তুমি (তোমার শরীরের কিছু অংশ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ‘আমের নিজের মুখমন্ডল, কনুই পর্যন্ত দুই হাত, আঙ্গুলগুলি সহ দুই পা এবং পায়জামার ভিতরের অঙ্গ পর্যন্ত ধুয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে নিলেন। অতঃপর সেই পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হ’ল। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে লোকদের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্ট ছিল না’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫০৯; মিশকাত হা/৪৫৬২ ‘চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক’ অধ্যায়)।
(২) বদ নযরকারী অপরিচিত বা অজ্ঞাত হ’লে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় হাত দিয়ে ফুঁক দিবে। তাহ’লে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫১১; মিশকাত হা/৪৫৬৩)।
এছাড়াও আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির মাথায় হাত রেখে নিম্নের দো‘আগুলো তিনবার পাঠ করে ঝাড়-ফুঁক করা যায়।-
(ক)أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ، (আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিওঁ ওয়া হা-ম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লা-ম্মাহ)। অর্থ : ‘প্রত্যেক শয়তান হ’তে আল্লাহর পূর্ণ কালেমা দ্বারা তোমার জন্য পরিত্রাণ চাচ্ছি। আর পরিত্রাণ চাচ্ছি প্রত্যেক বিষাক্ত কীট হ’তে এবং প্রত্যেক ক্ষতিকর বদ নযর হ’তে’ (বুখারী হা/৩৩৭১; মিশকাত হা/১৫৩৫ ‘জানাযা’ অধ্যায় ‘রোগীর সেবা’ অনুচ্ছেদ)। উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করে ইব্রাহীম (আঃ) তার দুই ছেলে ইসমাঈল ও ইসহাককে ঝাড়ফুঁক করতেন এবং রাসূল (ছাঃ) তার দুই নাতি হাসান ও হোসাইনকে ঝাড়ফুঁক করতেন।
(খ)بِسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، (বিস্মিল্লা-হি আর্ক্বীকা মিন কুল্লি শাইন ইউযীকা মিন শার্রি কুল্লি নাফ্সিন আও ‘আইনিন আও হাসিদিন আল্ল-হু ইয়াশ্ফীকা বিস্মিল্লা-হি আর্ক্বীকা)। অর্থ : ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি এমন প্রত্যেক বিষয় হ’তে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হ’তে অথবা প্রত্যেক বিদ্বেষী (বদ নযরকারীর) চক্ষুর অকল্যাণ হ’তে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে ঝাড়ফুঁক করছি’ (মুসলিম হা/২১৮৬; মিশকাত হা/১৫৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০)।
(গ) রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত বুলিয়ে দো‘আ পড়বে-أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا- (আয্হিবিল বা’স, রববান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা)। অনুবাদ : ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগীকে ধোকা দেয় না’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩০, ৪৫৫২)।
উল্লেখ্য যে, বদ নযর থেকে রক্ষার জন্য অনেকে কপালে কালো টিপ দেয়, কেউ কোমরে জুতা-স্যান্ডেল বাঁধে বা ঝুলিয়ে রাখে। এসকল কর্ম শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলতঃ এগুলি হিন্দুয়ানী প্রথা থেকে আগত। প্রাচীন ভারতে হিন্দুরা যেসকল ধারণা থেকে টিপ ব্যবহার করত তন্মধ্যে একটি হ’ল শিশুর উপর থেকে দুষ্টু শক্তির প্রভাব দূর করা। এমনকি তারা এটিকে তৃতীয় চোখ মনে করত। সুতরাং এরূপ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কোন মুসলমান এরূপ ক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুকরণ করলে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭, ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
প্রশ্নকারী : সেলিম হোসাইন, লালমাই, কুমিল্লা।