স্কুল-কিন্ডারগার্টেন কিংবা কোচিংয়ে পড়ার কারণে বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ধর্মীয় শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী ধারা মক্তবে যেতে পারে না। নিতে পারে না ধর্মীয় শিক্ষার প্রথম পাঠ। পড়তে পারে না কুরআন। এভাবেই দিনের পর দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে মক্তব। তাই এই ঐতিহ্যবাহী ধারাকে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনতে কিশোরগঞ্জের দারুল আরক্বাম ইনস্টিটিউটে চলছে আফটার স্কুল এক ঘণ্টার এই মক্তব। স্কুল ছুটির পর বিকালে বা সন্ধ্যায় এই মক্তবে পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা। যেখানে হিফয থেকে শুরু করে দ্বীনের বুনিয়াদী শিক্ষা গ্রহণ করছে শত শত শিক্ষার্থী। ২০০৯ সালে শুরু হয় আফটার স্কুল মক্তব। স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরী হয় সিলেবাস। স্কুল শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়।
কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, এখানে ২০ পারা, ১৫ পারা, ৫ পারা, নির্বাচিত কিছু সূরা মুখস্থ ইত্যাদি ভাগে শিক্ষার্থীরা কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করছে। এ বছর নতুনভাবে সবক গ্রহণ করেছে ১৫২ জন শিক্ষার্থী এবং কুরআন খতম করেছে ৭০ জন শিক্ষার্থী। এখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি শেখানো হয় মৌলিক আক্বীদা, ছালাত-ছিয়ামসহ ফরয ইবাদতের বিধান সমূহ, মাসনূন দো‘আ সমূহ, গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি হাদীছ, প্রশ্নোত্তরে সীরাতুর রাসূল ও ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি।
এই মক্তব কার্যক্রমের তিনটি ধাপ। (১) আফটার স্কুল মক্তব : নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এই ধাপে পড়ে। এখানে ক্বায়েদা ও কুরআনের পাশাপাশি দ্বীনের বুনিয়াদী বিষয়গুলি পড়ানো হয়। (২) আফটার স্কুল হিফয : ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ে। যারা মক্তব শেষ করতে পারে, তাদেরকেই মূলতঃ এখানে সুযোগ দেওয়া হয়। (৩) আফটার স্কুল শরী‘আ কোর্স : এটি ১০ম শ্রেণীর উপরের শিক্ষার্থীদের জন্য। এখানে মূলতঃ পড়ানো হয় শরী‘আতের মৌলিক বিষয়গুলি। প্রচলিত মাসআলা, আরবী ভাষা শিক্ষা সহ আরও কিছু বিষয়। যেন একজন শিক্ষার্থী অন্ততঃ কুরআনের অনুবাদ করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আব্দুল ক্বাইয়ূম বলেন, তাদের কারিকুলামে ইতিমধ্যেই ৮০০ জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২৫টি যেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ২৫০টি শাখা। শাখা খোলা হয় ভাড়া বাসায়। কোথাও কোথাও মসজিদেও খোলা হচ্ছে শাখা।
তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে। তারা এসে যখন সিলেবাস দেখেন, কেউ ফিরে যান না। স্কুল শেষে মাত্র এক ঘণ্টা নিয়মিত পড়ে তাদের সন্তানরা দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলি জানতে পারবে, এতেই তাদের ভরসা। যদি মসজিদে মসজিদে এই মক্তব চালু করা যেত, তাহ’লে প্রসারটা আরও অধিক হ’ত। চাইলেই ইসলামিক স্কুল বা মাদরাসা তৈরী করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আফটার স্কুল মক্তব চালু করা অনেকটাই সহজ।