উত্তরঃ ৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে মদীনার ইহুদী গোত্র বনু নাযীর আত্মসমর্পণ করে (আর-রাহীক্ব ২৯৭)। বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত এই শত্রু সম্পদগুলিকে ‘ফাই’ বলা হয়। যা কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট ছিল (হাশর ৫৯/৭)।
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখান থেকে নিজ পরিবারের জন্য এক বছরের
খোরাকী রেখে বাকীটা তাঁর আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির এবং
আল্লাহর রাহে ব্যয় করতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪০৫৫-৫৬ ‘জিহাদ’ অধ্যায় ‘ফাই’ অনুচ্ছেদ)।
তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তিনটি
সম্পদ বা ভূমি ছিল। ১. বনু নাযীরের ‘ফাই’ সম্পদ (যা ৪র্থ হিজরীর রবীউল
আউয়াল মাসে হস্তগত হয়)। ২. খায়বার ও ৩. ফাদাকের শস্যভূমি (যা ৭ম হিজরীর ছফর
মাসে হস্তগত হয়)। বনু নাযীরের সম্পদ তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করতেন।
‘ফাদাক’ ভূমির আয় মুসাফিরদের জন্য রক্ষিত ছিল। খায়বরের আয়কে তিনি তিন ভাগে
ভাগ করেছিলেন। দুই ভাগ মুসলিম জনসাধারণের জন্য ও একভাগ নিজের
পরিবার-পরিজনের খোরপোষের জন্য। এরপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা গরীব
মুহাজিরগণের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন’ (আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৪০৬২)।
ওমর ইবনু আব্দুল আযীয বলেন, ফাদাক ভূমির আয় থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের
(পরিবারের) জন্য ব্যয় করতেন। এতদ্ব্যতীত বনু হাশেমের শিশু-কিশোরদের চিকিৎসা
সেবা দিতেন ও তাদের অবিবাহিতদের বিবাহ দিতেন। রাসূলের জীবদ্দশায় এবং
আবুবকর ও ওমরের খেলাফত কালে এই নিয়ম বহাল ছিল (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০৬৩)।
বনু নাযীর, ফাদাক ও খায়বারের আয় থেকে আবুবকর ছিদ্দীক্ব ও ওমর (রাঃ) স্ব
স্ব খেলাফতকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরিবারের জন্য নিয়মিতভাবে এক বছরের
খোরাকী রেখে দিতেন (বুখারী হা/৬৭২৮)।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে নবুঅত লাভের পূর্বে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মহিলা খাদীজার সাথে বিবাহের মাধ্যমে তাঁর অসচ্ছলতা দূর করে দেন। অতঃপর তিনি শূন্য হাতে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে তাঁর মাতুল গোত্র বনু নাজ্জারের কাছে আশ্রয় লাভ করেন, যারা তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। অতঃপর বদরের যুদ্ধে গণীমত লাভ করেন। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কখনোই অসচ্ছল ছিলেন না। কিন্তু অতীব দানশীল হওয়ায় সংসারে প্রায়ই অন্নকষ্ট লেগে থাকত। যেসব হাদীছে তাঁর পারিবারিক অভাব-অনটনের কথা এসেছে, সেখানে কারণ ছিল এটাই। হিজরতের পর থেকে ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধের আগ পর্যন্ত রাসূলের পারিবারিক অবস্থা সঙ্গত কারণেই অসচ্ছল ছিল। পরে সচ্ছলতা আসে এবং ৪র্থ হিজরীতে বনু নাযীরের ‘ফাই’ সম্পত্তি, ৭ম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধের গনীমত হিসাবে প্রাপ্ত শস্যভূমি এবং ‘ফাই’ হিসাবে প্রাপ্ত ফাদাকের খেজুর বাগান তাঁর জন্য বরাদ্দ হ’লে তাঁর পারিবারিক সচ্ছলতা পুরোপুরি ফিরে আসে (আর-রাহীক্বল মাখতুম পৃঃ ৩৭৪, ৩৭৭)।