
উত্তর : ওযূ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ একে স্পর্শ করবে না (ওয়াক্বি‘আ ৫৬/৭৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ পাক-পবিত্র অবস্থা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না (ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৮০; ইরওয়া হা/১২২)। মুছ‘আব বিন সা‘দ কুরআন হাতে করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বললেন, তুমি যাও ওযূ করে এসো। তিনি কুরআন রেখে ওযূ করে আসলেন (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/১২৮, সনদ ছহীহ)। ইমাম আহমাদকে ওযূ ছাড়া মুছহাফ স্পর্শ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওযূ না করা পর্যন্ত কুরআন স্পর্শ করে পড়বে না (ইসহাক মারূযী, মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, পৃ. ৫; ইরওয়া ১/৬১)। ইমাম নববী (রহঃ) উপরোক্ত দলীল ও তার অভিমত উল্লেখ করার পর বলেন, এটাই আলী, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ ও ইবনু ওমরের অভিমত। কোন ছাহাবী তাদের বিরোধিতা করেছেন এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না (আল-মাজমূ‘ ২/৭২)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) উপরোক্ত তিনজন ছাহাবীর সাথে সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেন অতঃপর বলেন, ছাহাবীদের কেউ তাদের বিরোধিতা করেছেন বলে কিছু জানা যায় না (মাজমূউল ফাতাওয়া ২১/২৬৬)। এছাড়াও শায়খ বিন বায ও ওছায়মীনসহ আধুনিক যুগের অধিকাংশ ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছ ওযূ ব্যতীত কুরআন স্পর্শ করে পাঠ করাকে সিদ্ধ নয় বলেছেন (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩৮৩)।
অবশ্য ওযূ বিহীন অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ ছাড়া পড়া যায়। অনুরূপভাবে অনুবাদ কুরআন, তাফসীরুল কুরআন, কুরআনের আয়াত সম্বলিত ধর্মীয় বইপত্র, সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য কুরআনের দো‘আসমূহ ইত্যাদি ওযূ ছাড়া পাঠ করাতে কোন দোষ নেই। তবে স্ত্রী মিলন সংশ্লিষ্ট অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না। (আলোচনা দ্রষ্টব্যঃ ইরওয়াউল গালীল, হা/১২৩ ও ৪৮৫)। অন্যদিকে হাসান বাছরী, ইবনু সীরীন, আমের, ইবনু হাযম, দাউদ যাহেরী প্রমুখ বিদ্বানগণ এবং সমকালীন যুগে আলবানী (রহঃ) উক্ত মর্মে বর্ণিত বিভিন্ন দলীল পর্যালোচনা করে বলেন, মুসলমানগণ সত্তাগতভাবে পবিত্র। অতএব তারা স্ত্রী মিলন বা স্বপ্নদোষের কারণে অপবিত্র না হলে তাদের জন্য কুরআন স্পর্শ করে পাঠে দোষ নেই (মুছন্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৪২৬, ৭৪২৯, ৭৪৩০; মুহাল্লা ১/৯৭-৯৮; তামামুল মিন্নাহ পৃ. ১০৭)।
উল্লেখ্য যে, যারা ওযূ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করে পাঠ করাকে নাজায়েয মনে করেন তারাও কিছু ক্ষেত্রে ওযূবিহীন অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতকে জায়েয বলেছেন। যেমন, যাদের ওযূ প্রায়শই থাকে না এবং পেশাবের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে ঘন ঘন ওযূ ছুটে যায়, তারা নতুনভাবে ওযূ না করে তেলাওয়াত অব্যাহত রাখবে। অনুরূপভাবে কুরআন হিফযের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওযূ ছুটে গেলে তেলাওয়াত অব্যাহত রাখবে। কারণ তাদের ওযর আছে (মানহুজ জলীল শরহ মুখতাছারে খলীল ১/১১৮)।
প্রশ্নকারী : আকরামুযযামান, মান্দা, নওগাঁ।