গত ১লা এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামে ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে নোঙর করা দু’টি ট্রলারে ৫০০০ আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫০০০ গ্রেনেড , সাড়ে ১১ লাখ গুলীসহ সর্বসাকুল্যে ১০ ট্রাক সর্বাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের বিশাল একটি অবৈধ চালান ধরা পড়েছে। যা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বরং পৃথিবীর ইতিহাসে নযীরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। গত বছর বগুড়ার কাহালুতে ধরা পড়েছিল লক্ষাধিক গোলাবারুদের একটি বিশাল চালান। সেটাও ছিল স্মরণকালের বৃহত্তম। সেটা পাওয়া গিয়েছিল স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার বাড়ীতে। হয়তোবা সেখানে কোন বড় মাপের শক্তিশালী নেতার গোপন কানেকশন ছিল, কিংবা ভয়ংকর কোন বিদেশী শক্তির রক্তচক্ষুর ভয় ছিল। ফলে ওটা ধামাচাপা পড়ে গেছে। জাতীয় দৈনিকগুলিও কোন অদৃশ্য সুতোর টানে ঐ ব্যাপারে এখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছে। সেদিন সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হ’লে সম্ভবতঃ আজকের এ ঘটনা ঘটতো না। এবারও দেখা যাচ্ছে অস্ত্রবাহী দু’টি ট্রলারের একটির মালিক স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা। এর আগেও তারা হয়তোবা কয়েক চালান এনেছে। নিশ্চয়ই সব দিক ম্যানেজ করেই তারা একাজ করেছিল। নইলে এত অস্ত্র এত ভিতরে নির্দ্বিধায় আনার সাহস কিভাবে হ’ল? উদ্ধারকৃত অস্ত্রের অংশ মাত্র ব্যবহার করেও অন্যান্য দেশে ইতিপূর্বে সহিংসভাবে সরকার পতন ঘটানো হয়েছে। যেমন ১৯৫৯ সালে কিউবার সরকার পতন ঘটানো হয়েছিল। তবুও দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণের দো‘আ ও আল্লাহর বিশেষ রহমত আছে বলেই স্থানীয় কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনী এ চালানটি ধরতে সক্ষম হয়েছে। অতএব সর্বপ্রথম সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি তাঁর এক বান্দার মাধ্যমে গোপন সংবাদ দিয়ে এ বিরাট বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ। এর দ্বারা আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতির শীর্ষে বলা হ’লেও তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমিক ও আল্লাহভীরু কিছু সদস্য ও কর্মকর্তা আছেন, যারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হ’লেও দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করেন। যেসকল কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্য এ মহতী ও দুঃসাহসিক কাজে খালেছ অন্তরে কাজ করেছেন, আমরা তাদের জন্য খাছ দো‘আ করি। আল্লাহ যেন তাদেরকে পরকালে উত্তম জাযা দান করেন। সরকারকেও বলব তাদেরকে পুরস্কৃত করার জন্য, যাতে তারা উৎসাহিত হন। পক্ষান্তরে কর্ণফুলী থানার ওসি ও তার সহযোগী বাহিনী যারা দাঁড়িয়ে থেকে অস্ত্র খালাস করাচ্ছিল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হৌক।

প্রশ্ন ওঠে, দেশকে এভাবে বারবার হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে কেন? কারা এগুলি করছে? সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও কতগুলি মৌলিক বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি। সেটি এই যে, দেশকে হুমকির মুখে ফেলছে তারাই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে পারেনি। দ্বিতীয় প্রশ্ন : কারা এগুলি করছে? এর সোজা জবাব এই যে, একাজ তারাই করছে, যারা সরকারের বৈরী শক্তি। যারা সরকারের ভিতরেরও হ’তে পারে, বাইরেরও হ’তে পারে। তবে এটা যে দেশের বর্তমান হিংসাত্মক রাজনীতির ফল, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা চলে।

এক্ষণে এইসব রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসা থেকে বাঁচার উপায় কি? এর জবাব এই যে, এসব থেকে বাঁচার উপায় কারু নেই। শয়তান যেহেতু মানুষের রগ-রেশায় বিচরণ করে, সেহেতু ষড় রিপুর হামলা থেকে ব্যক্তি ও দেশ মুক্ত হবে না কখনোই। তবে একে দমিয়ে রাখার ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে। প্রথমতঃ যেসব কাজ করলে হিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয়তঃ নাশকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু এগুলি কিভাবে সম্ভব?

এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ : মেয়াদভিত্তিক ক্ষমতা দখলমুখী রাজনীতির পরিবর্তে নৈতিকতা ও ন্যায়নিষ্ঠা ভিত্তিক জনকল্যাণমুখী রাজনীতি চালু করতে হবে। যাতে সর্বোচ্চ আদালতে অপরাধী প্রমাণিত হ’লে মেয়াদ পূর্তির আগেই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। কোনরূপ হরতাল, গণঅভ্যুত্থান বা সশস্ত্র অভ্যুত্থান প্রয়োজন না হয়। একই সাথে সরকারী ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। যাতে একজন ক্ষমতায় গেলে অন্যজন হিংসায় জ্বলতে না পারে এবং সশস্ত্র নাশকতায় লিপ্ত না হ’তে পারে। ২- দেশের পুলিশ ও বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখতে হবে। যাতে তারা যেকোন সময় যেকোন অপরাধীকে নির্দ্বিধায় ধরতে ও বিচার করতে সমর্থ হয়।

সবশেষে দেশের প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ : আল্লাহভীরু হৌন, বিদেশভীরু হবেন না। দেশ ও জনগণের স্বার্থেই আপনারা প্রশাসনে আছেন, বিদেশীদের স্বার্থ দেখার জন্য নয়। জন্মেছেন একদিন, মরবেনও একদিন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে যদি বিদেশী চক্রের গুলীর খোরাক হ’তে হয়, তবুও চিরকাল আপনারা জনগণের হৃদয়ের মুকুট হয়ে থাকবেন। মনে রাখবেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে বড় খেয়ানতের পতাকা উড়ানো হবে, বিশ্বাসঘাতক শাসকের জন্য’।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘মুসলমানদের কোন কর্তৃপক্ষ তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে যদি খেয়ানতকারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন’।[2] পক্ষান্তরে ‘ন্যায়পরায়ণ শাসকগণ আল্লাহর নিকটে তাঁর ডান পার্শ্বে নূরের আসনে বসবেন’।[3]

পরিশেষে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সর্বোপরি ইসলামের এ নিরাপদ দুর্গটিকে রক্ষায় জীবন বাজি রেখে দাঁড়িয়ে যাবার জন্য আমরা সরকার ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই। আল্লাহ আমাদের দেশকে হেফাযত করুন- আমীন![4]

[1]. মুসলিম হা/১৭৩৮; মিশকাত হা/৩৭২৭ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[2]. মুসলিম হা/১৪২; বুখারী হা/৭১৫১; মিশকাত হা/৩৬৮৬ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[3]. মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[4]. ৭ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা এপ্রিল ২০০৪।






বিষয়সমূহ: রাজনীতি
পিওর ও পপুলার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নষ্ট সংস্কৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিমালা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
করোনা ও রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাল আছি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অস্ত্র ব্যবসা বনাম মানবিক কূটনীতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মিসকীন ওবামা, ভিকটিম ওসামা, সাবধান বাংলাদেশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভৌগলিক ও ঈমানী প্রতিরক্ষা চাই - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পশুত্বের পতন হৌক! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.