ছাহাবায়ে
কেরাম ছিলেন হকের উপরে দৃঢ়চিত্ত। কখনো তাঁরা বাতিলের সাথে আপোষ করতেন না।
জীবন দিয়ে হ’লেও তাঁরা বাতিল প্রতিরোধে সদা সোচ্চার থাকতেন। শক্তিধর ও
প্রতাপশালী শাসকদের সামনে হক কথা বলতে তাঁরা কখনো ভীত হ’তেন না। ১ম খলীফা
হযরত আবূবকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ) ছিলেন এমনই এক মহিয়সী নারী। যিনি
অত্যাচারী শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অন্যায় কর্মের প্রতিবাদে সাহসিকতা ও
আপোষহীনতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নিম্নোক্ত হাদীছে সেই ঘটনাটিই আলোচিত
হয়েছে।
আবূ নাওফিল (রহঃ) বলেন যে, আমি (মক্কায়) উকবাতুল মদীনা নামক ঘাটিতে আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-কে (শূলীকাষ্ঠে ঝুলতে) দেখতে পেলাম। রাবী বলেন, তখন অন্যান্য লোকজন তার কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। পরিশেষে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) তার নিকট দিয়ে গমনকালে বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া আবূ খুবায়ব! আসসালামু 'আলাইকা ইয়া আবূ খুবায়ব! আসসালামু আলাইকা ইয়া আবূ খুবায়ব! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই আপনাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই আপনাকে এ থেকে নিষেধ করেছিলাম, আমি অবশ্যই আপনাকে এ থেকে নিষেধ করেছিলাম।
আল্লাহর শপথ আমার যতদূর জানি আপনি ছিলেন সর্বাধিক ছিয়াম পালনকারী, সর্বাধিক ছালাত আদায়কারী এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী। আল্লাহর শপথ! শ্রেষ্ঠ উম্মতের (অন্য বর্ণনায় আছে, নিকৃষ্ট উম্মতের) দৃষ্টিতে আজ আপনি নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছেন।
অর্থাৎ আপনার শত্রুরা আপনার সম্পর্কে বলে থাকে, আপনি উম্মতের মধ্যে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। অথচ প্রকৃতপক্ষে আপনিই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। আর যখন আপনি নিকৃষ্ট হবেন, তখন সকল উম্মত কি উত্তম হবে? অর্থাৎ যখন আপনি নিকৃষ্ট হবেন তখন সমস্ত উম্মত নিকৃষ্ট ও নিন্দিত হবে। (দ্র. ড. মূসা শাহীন আল-আশীন, ফাতহুল মুনঈম শরহ ছহীহ মুসলিম, (কায়রো : দারুশ শুরূক্ব, ১ম প্রকাশ ১৪২৩হিঃ/২০০২খ্রিঃ), ৯/৬০১ পৃঃ)।
তারপর আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ইতিমধ্যে ইবনু যুবায়েরের নিকটে ইবনু ওমর (রাঃ)-এর আগমন ও তাঁর উদ্দেশ্যে করা মন্তব্য হাজ্জাজের কানে পেঁŠছল। তখন সে লোক পাঠালো। যারা আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়রের দেহ শূলীর উপর থেকে নামিয়ে নিল এবং ইহুদীদের কবরস্থানে নিক্ষেপ করল।
তারপর হাজ্জাজ আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর মা আসমা বিনতু আবূবকর (রাঃ)-কে ডেকে আনার জন্য দূত পাঠালেন। কিন্তু তিনি তার নিকট আসতে অস্বীকৃতি জানালেন। অতঃপর তিনি পুনরায় দূত প্রেরণ করলেন এবং বলে পাঠালেন যে. অবশ্যই আপনাকে আমার নিকটে আসতে হবে।
অন্যথা আপনার নিকটে এমন লোক পাঠাব যে আপনাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে আসবে। রাবী বলেন, এরপরও তিনি অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার নিকট আসব না, যতক্ষণ না তুমি আমার নিকট এমন লোক পাঠাবে, যে আমার চুল ধরে টেনে নিয়ে যাবে।
রাবী বলেন, তারপর হাজ্জাজ জুতা চাইলেন এবং তা পরে সদর্পে আসমা (রাঃ)-এর নিকট পেঁŠছলেন এবং বললেন, আপনি কি দেখেননি আল্লাহর শত্রুর সাথে আমি কী ব্যবহার করেছি? আসমা বললেন, ‘হ্যাঁ দেখেছি। তবে আমি যা দেখেছি তা হ’ল, তুমি তার দুনিয়া বরবাদ করে দিয়েছ। আর সে তোমার আখেরাত নষ্ট করে দিয়েছে’। আমি জানতে পেরেছি যে, তুমি তাকে (তিরস্কার স্বরূপ) ‘দু’টি কোমরবন্ধনী ব্যবহারকারীণীর ছেলে’ বলে সম্বোধন করে থাকো। আল্লাহর শপথ! আমিই দু’কোমরবন্ধ ব্যবহারকারিণী। এর একটির মাঝে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবূবকর (রাঃ)-এর খাদ্যদ্রব্য বেঁধে তুলে রাখতাম, যাতে বাহনের পশু খেয়ে ফেলতে না পারে। অপরটি হ’ল যা স্ত্রীলোকের জন্য প্রয়োজন। জেনে রাখো, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ছাকীফ সম্প্রদায়ে একজন মিথ্যুক এবং রক্ত প্রবাহকারীর আগমন ঘটবে। মিথ্যুককে তো আমরা সকলে দেখেছি। আর রক্ত প্রবাহকারী হিসাবে আমি তোমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে মনে করি না। এ কথা শুনে হাজ্জাজ উঠে দাঁড়াল এবং আসমা (রাঃ)-এর কথার কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেল’ (মুসলিম হা/২৫৪৫; মিশকাত হা/৫৯৯৪)।
এ হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে যে, এ উম্মতের মানব হত্যাকারী ছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। আসমা বিনতু আবূবকর (রাঃ) সেকথা জেনেও হাজ্জাজের আহবানে তার কাছে যাননি। এমনকি সে আসলে তার মুখের উপরে তার অপকর্মের কথা বলতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি। হক প্রকাশে আমাদেরকেও অনুরূপ দৃঢ়চিত্ত হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন-আমীন!
-মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।