উত্তর : জান্নাতে কেবল একশটি নয় বরং অসংখ্য স্তর আছে (নিসা ৪/৯৫-৯৬; আনআম ৬/১৩২; আনফাল ৮/৪; বনী ইসরাঈল ১৭/২১; ত্ব-হা ২০/৭৫)। যার মধ্যে শুধু একশটি স্তর এমন রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭)। অন্য হাদীছে এসেছে, জান্নাতে কুরআনের আয়াত সমপরিমাণ স্তর আছে (ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮০; ছহীহুত তারগীব হা/৬৩৮; ফাৎহুল বারী ১৩/৪১৩; ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিল আরওয়াহ ৬৬, ৭৯ পৃ; ইয বিন আব্দুস সালাম, আল-ফাওয়ায়েদু ফি ইখতিছারিল মাক্বাছেদ ১৫৩ পৃ.)। সুতরাং জান্নাতের অসংখ্য স্তর রয়েছে। এক্ষণে এই স্তরগুলোর বাস্তবতা কেমন ও বিভিন্ন স্তরের অধিবাসীদের মধ্যে মর্যাদার কি তফাৎ হবে- সে ব্যাপারে কোন স্পষ্ট হাদীছ নেই। অবশ্য হাদীছের বর্ণনামতে, জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের নাম হ’ল ‘ফেরদাউস’। আর জান্নাতের একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরের দূরত্ব দুই আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমপরিমাণ হবে (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ঈমান, আমল ও তাক্বওয়ার তারতম্যের ভিত্তিতে জান্নাতীদের মধ্যে এই স্তরভেদ করা হবে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/১৮৮)। আর নেক আমলের প্রতিযোগিতা করতে উৎসাহিত করার জন্যই এই স্তরগুলোর তারতম্যের কথা হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। যাতে তারা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্য দুনিয়াতে নেক আমলের প্রতিযোগিতা করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ উপর দিকে দেখতে পাবে, যেমন দূরবর্তী উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ তোমরা আকাশের পূর্ব বা পশ্চিম কোণে স্পষ্ট দেখতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরের সম্মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য সূচিত থাকবে। এ কথা শ্রবণে ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ স্তরসমূহ তো নবীদের জন্য নির্ধারিত। তাদের ছাড়া অন্যেরা তো ঐ স্তরে কখনো পৌঁছতে পারবে না। জবাবে তিনি বললেন, কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি! যে সব ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছে ও তাঁর রাসূলদের সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, তারা উক্ত স্তরসমূহে প্রবেশ করতে পারবে (বুঃ মুঃ ছহীহুত তারগীব হা/৩৭০৬)। তবে এই মর্যাদার পার্থক্যের কারণে কারো অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ স্থান পাবে না। কেননা জান্নাতীদের হৃদয় থেকে এই ধরনের অনুভূতিকেই উঠিয়ে নেয়া হবে (হিজর ১৫/৪৭)।
প্রশ্নকারী : রায়হানুল ইসলাম, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।