ইসলাম ও মুসলিম বিশব আজ সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি মিডিয়া আগ্রাসনেরও শিকার। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়া আগ্রাসনে মধ্যপ্রাচ্যে যেমন ইসরাঈল, সমগ্র বিশবজুড়ে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ এশিয়ায় তেমনি ভারত। ভারতীয় প্রচারের কৌশল দ্বিমুখী। ভারত থেকে সরাসরি সম্প্রচারের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে তাদের আশ্রয়ে পালিত হচেছ মিডিয়া জগতের অনেকেই। প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি ও ভূগোলকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ভারতীয় পুঁজির বিস্তর বিনিয়োগ হয়েছে মূলত সাতচলিলশ থেকেই। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত ১৯৬৫-এর সামরিক আগ্রাসন ভন্ডুল হওয়ার পর তাদের প্রচারধর্মী নিরস্ত্র আগ্রাসনের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় আধিপত্য সহনীয়, গ্রহণযোগ্য, এমনকি প্রশংসনীয় করতে অসংখ্য পত্রিকা প্রকাশিত হচেছ। এদেশটিকে কব্জায় রাখতে গিয়ে এককালে নিজেদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করেছিল বৃটিশরা, লক্ষ্য ছিল বাজার দখল। ভারত একই উদ্দেশ্য সাধন করছে নিজেদের রক্তক্ষয় না করেই। এ কাজটি করছে কিছু অর্থ ব্যয় করেই। বৃটিশের সামনে সমস্যা ছিল, এত অধিক হারে তারা এত আত্মবিক্রিত দালাল পায়নি। ফলে হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, দুদুমিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদেরকেও রক্ত ঢেলে লড়তে হয়েছে। অথচ ভারতের সৌভাগ্য হ’ল, তাদের হয়ে আজ এ দেশের অনেকে লড়ছে। এর কারণ তাদের প্রবল প্রচার আগ্রাসন। তাদের প্রচারের ফসল এদেশে যে ফলেছে প্রচুর এটি তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। বাংলাদেশী হয়েও এরা ভারতীয়দের চেয়েও বেশী ভারতীয়। তসলিমা নাসরীন হ’ল এ ক্ষেতেরই ফসল। সে যা লিখেছে তা খুব কম সংখ্যক ভারতীয়ই লেখার সাহস করেছে। এজন্য সে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হ’লেও ভারতে পুরস্কৃত হয়েছে। তসলিমা নাসরীনের মত সাহস না থাকলেও মন-মানসিকতায় তার মত অভিন্ন লেখকের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়, বরং অসংখ্য। এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করে যাচেছ তারা। সে অভিন্ন লক্ষ্যটি হ’ল, সাতচলিলশের ভারত বিভাগ বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ছিল- এটি আদাজল খেয়ে প্রমাণ করা। আর এটি প্রমাণ করতে পারলে বাংলাদেশের পৃথক অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় প্রমাণ করাও তাদের জন্য সহজতর হবে। বাংলাদেশের শেকড় কাটার কাজ এবং সে সাথে ভারতের দেহে মলান হওয়ার পক্ষে প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হচেছ বস্তুত এভাবেই। অখন্ড ভারতে একীভূত হওয়ার দাবী তারা এ মুহূর্তে না উঠালেও যথাসময়ে যে উঠাবে সেটি সুনিশ্চিত। নইলে ভারতঘেষা এসব বুদ্ধিজীবীদের এত কসরৎ কেন?
ভারতবর্ষে আর্য আগ্রাসন, ফিলিস্তীনে ইহুদী আগ্রাসন এবং আমেরিকায় ইউরোপীয় আগ্রাসনের মধ্যে গুণগত সাদৃশ্য প্রকট। এরা বিজিত দেশের মূল অধিবাসীদের অধীনস্ত বা নির্মূলের মধ্য দিয়ে নিজেদের আবাদ গড়েছে। অথচ প্রচারের বলে এরাই বিশেব ভাল মানুষ সেজেছে। অপরদিকে মুসলমানদের চিত্রিত করেছে সন্ত্রাসী, বর্বর ও অন্যান্য নানা বিশেলষণে। রক্তের গন্ধ আবিষ্কার করছে মুসলমানদের ইতিহাস থেকে। অথচ দু’-দু’টি বিশবযুদ্ধ বাধিয়ে কয়েক কোটি মানুষ হত্যা করেছে তারাই। আরো কয়েক কোটিকে করেছে পঙ্গু। হিরোশিমা ও নাগাসাকির মত দু’টো শহরকে পরিণত করেছে সাক্ষাৎ ধ্বংসস্তূপে। অথচ মুসলমানেরা যেখানেই গিয়েছে মসজিদ, মাদরাসা ও বিদ্যালয় গড়ে সভ্যতার উন্নতিকে ত্বরান্বিত করেছে। মুসলমানদের ভান্ডার থেকে এমনকি ইউরোপীয়রাও ফসল কম তোলেনি। ইউরোপের শিল্প বিপলব এসেছিল বস্তুত স্পেনের মুসলমানদের থেকে বিদ্যা লাভের পরেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১১ই সেপ্টেম্বর এসেছে মাত্র একবার। অথচ ইসরাঈল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেটি ফিলিস্তীনীদের জীবনে এসেছে বহুবার। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের যত মানুষ মারা পড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষ মারা গেছে সাবরা ও শাতীলার ফিলিস্তীনী উদ্বাস্ত্ত শিবিরে। গত ৬০ বছরের বেশী সময় ধরে সন্ত্রাসের শিকার ফিলিস্তীনীদের আজ বলা হচেছ সন্ত্রাসী এবং সেটি প্রচারজগতে আধিপত্য থাকার কারণে।
ভৌগলিক সীমানা দিয়ে সীমাবদ্ধ না হওয়ায় মিডিয়ার প্রতাপ এখন বিশবব্যাপী। তাদের দ্বারাই বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হচেছ বিশব রাজনীতিও। বিশেষ করে আজকের মেরুদন্ডহীন মুসলিম বিশেবর। নিউইয়র্কস্থ কলম্বিয়া বিশববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর এডওয়ার্ড সাঈদ Covering Islam নামে একখানি বই লিখেছেন। এডওয়ার্ড সাঈদ একজন ফিলিস্তীনী আরব, যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী মহলে তার পরিচিতিও প্রচুর। ক্যাম্পডেভিড চুক্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরবদের সম্পর্কে বড় আকারের ফাটল ধরে। সে ফাটলেরই মেরামতে প্রফেসর সাঈদকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রেসিডেনট কার্টার। সেহেতু বলা যায়, মার্কিনীদের অনেক নাড়ির খবরই তার জানা। তার বইতে তিনি প্রমাণ করেছেন মার্কিন প্রচার মাধ্যম কতটা জঘন্যরূপে পক্ষপাতদুষ্ট এবং মুসলিম স্বার্থবিরোধী। তার মতে যুক্তরাষ্ট্রে ইদানিং ঝাঁকে ঝাঁকে আবির্ভূত হচেছ অসংখ্য মুসলিমবিদ্বেষী বুদ্ধিজীবী, এদের কাজই হ’ল মুসলিম বিশেব মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট তৈরী করা। অথবা কোন আগ্রাসন পরিচালিত হ’লে সেটিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বৈধ প্রমাণিত করা। অনেকেরই আফসোস, পাশ্চাত্য বিশব কেন এখনও মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করছে না। তাদের বক্তব্যের সারমর্ম হ’ল, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর পুর্তগীজ আগ্রাসনই বর্তমান পশ্চিমা শাসকবর্গের জন্য মডেল হওয়া উচিত। তাদের মতে ঔপনিবেশিক শাসনই বিশেব শেষবারের মত শান্তি (?) এনেছিল।[1] যদিও সে শান্তি ছিল হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে নিরীহ ও নিঃসম্বল মানুষের সামরিক ও অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের। এশিয়া-আফ্রিকার মযলূম মানুষের স্বাধীনতাকে এরা বর্বরতা বৈ ভিন্নরূপে দেখে না।
পাশ্চাত্যের শাসকবর্গ কোন ধর্মকেই নিজেদের জন্য আজ আর হুমকি হিসাবে ভাবে না। তবে ইসলামই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যেকোন দেশেই ইসলামের উত্থান তাদের কাছে এক নিদারুণ ত্রাস। যারাই এ উত্থানের পক্ষে তারাই তাদের কাছে সন্ত্রাসী। ইসলামের অনুসারীদের পরিকল্পিতভাবে চিত্রিত করা হচেছ মানবতার দুশমনরূপে। এ প্রচারণায় মূল ভূমিকা পালন করছে পাশ্চাত্যের মিডিয়া। অথচ মুসলিম বিশেব যারা সত্যিকার যালেম, যাদের দেশে প্রতিবাদী আওয়াজ তোলার ন্যূনতম শাস্তি হ’ল প্রাণদন্ড, তাদের সাথে ওদের সখ্যতা অতি নিবিড়। বিস্তর অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে এসব দেশের স্বৈরাচারী শাসকদেরকে টিকিয়ে রাখাই হ’ল এদের বিদেশনীতি। এ কাজকে এরা বলে ‘স্থিতিশীলতা’। এমন স্থিতিশীলতার স্বার্থে যে কোন সামরিক বর্বরতা পরিচালনায় বা সমর্থনদানে এদের আপত্তি নেই। আলজেরিয়াতে এমনই এক বর্বরতা চলছে সেদেশের স্বৈরাচারী শাসকের হাতে। অথচ পশ্চিমা মিডিয়া এ বর্বরতা দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না। নিশ্চুপ এরা কাশ্মীর ও ফিলিস্তীনে পরিচালিত নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধেও। তারা বর্বরতা খুঁজে ইরানে বা সূদানে। কারণ সেখানে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতাসীন। নিশ্চুপ এসব দেশের একাডেমী বা বিশববিদ্যালয়সমূহও। পাশ্চাত্যের নীতি ও নৈতিকতায় কতটা মড়ক লেগেছে সেটি এ থেকেই অনুমেয়। বিবেকের যে অসুস্থতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা ও নাগাসাকির কয়েক লক্ষ নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বেসামরিক মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করে বিজয়ের আননদ খুঁজেছিল, সে অসুস্থতা থেকে আজও যে তাদের আরোগ্য মেলেনি এসব তাদেরই আলামত। ইরাকে ও আফগানিস্তানে হাযার হাযার টন বোমাবর্ষণ, ইরাকের শিশু হাসপাতালে বোমাবর্ষণ, মিসাইল ছুঁড়ে ইরানের বেসামরিক বিমানের যাত্রী হত্যা- এসব নিষ্ঠুরতা সে নৈতিক অসুস্থতারই প্রমাণ। মিডিয়ার অপরাধ তারা সে নিষ্ঠুরতাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে না। তারা সুনামীতে ধ্বংস হওয়ার আগে ইনেদানেশিয়ার আচেহ দ্বীপের তুলনামূলক ছবি দেখায়। কিন্তু এ ছবি দেখায় না মার্কিনীদের বোমাবর্ষণের পূর্বে ইরাকের ফালুজা কেমন ছিল।
প্রচার মাধ্যমে ইহুদীদের আধিপত্য অতি প্রবল। রয়টারের মত বিশেবর অন্যতম বৃহৎ সংবাদ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা তাদেরই। টাইম, নিউজ উইকের মত বহুল প্রচলিত পত্রিকাগুলোর প্রভাবশালী সাংবাদিক ও কলামিস্ট তারাই। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশববিদ্যালয়সমূহে ইহুদী শিক্ষকগণই অধিকতর প্রভাবশালী। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে প্রচার মাধ্যম এসব শিক্ষকদের মতামতকেই অধিকতর গুরুত্ব দেয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনও নির্দেশনা নেয় তাদের থেকেই। প্রচারে ইহুদীদের প্রভাবের কারণেই ফিলিস্তীনী বসতি নির্মূলের পরও আগ্রাসী ইহুদীরা প্রচার পায় শান্তিবাদী রূপে। অথচ ইসরাঈলের জন্মই হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। টিকেও আছে বিরামহীন সন্ত্রাস চালিয়ে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুদ্ধ আর সন্ত্রাস চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিকে তারাই বিনষ্ট করেছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, মার্কিনীদের পর তারাই এখন বিশেবর বৃহৎ আগ্রাসী শক্তি। আর এদের সাফাই গাচেছ পাশ্চাত্যের মিডিয়া। মিডিয়ার হাতে যিম্মী পশ্চিমা বিশেবর রাজনীতিকেরাও, ঈসরাঈলী স্বার্থের বিরোধিতা দূরে থাক তাদের স্বার্থে সামান্য নীরবতাও তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। মিডিয়ার আগ্রাসনের মাধ্যমে ফিলিস্তীনীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত তাদের বীভৎস ধ্বংসযজ্ঞকে তারা একটি ন্যায্য যুদ্ধ রূপে বিশ্বময় প্রচার করছে। পাশ্চাত্য বিশ্বে সেটি গ্রহণযোগ্যতাও পাচেছ। মিডিয়া যে কিভাবে মানুষের মনের ভুবনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এ হ’ল তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এককালে বহু অর্থ ও বিপুল রক্তক্ষয়ে প্রকান্ড এক সামরিক যুদ্ধ লড়েও এমনটি সম্ভব ছিল না। আগ্রাসী শক্তি রূপে এটিই হ’ল মিডিয়ার ক্ষমতা। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ সে শক্তির কাছেই প্রচন্ডভাবে পরাজিত।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে অপপ্রচারে অনেক মিডিয়া লিপ্ত আছে। তন্মধ্যে ২০০টি রেডিও ষ্টেশন, ১৭০০টি টিভি চ্যানেল এবং দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য প্রায় ২২ হাযার ম্যাগাজিন প্রতিনিয়ত ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচেছ।
মূলতঃ দ্বীনের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আলেম-ওলামা মিডিয়াতে অংশগ্রহণ না করায় নাস্তিক্যবাদীরা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে ইসলামের নাম-নিশানা চিরতরে উড়িয়ে দিতে মিডিয়ার অপব্যবহারে মাতাল হয়ে লেগেছে। ইসলামে চিরনিষিদ্ধ অপকর্মগুলোকে মিডিয়াতে ব্যাপকহারে অতি জোরালোভাবে সম্প্রচার করা হয়। মিডিয়ায় প্রচারিত বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করলে অনায়াসেই অনুমেয় হয় যে, এটার প্রচারক কে বা কারা? বর্তমানে মিডিয়াতে অতি গুরুত্বের সাথে ইহুদী, খৃষ্টানদের চাল-চলন, বেশ-ভূষণ, কাজ-কর্ম সম্প্রচার করা হয়। মিডিয়ায় প্রচারিত বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করে আমাদের মুসলিম দেশের মানুষেরা নাস্তিক ও লম্পটদের সংস্কৃতি ও উলঙ্গপনাকে পসনদসই মনে করছে। ইসলামী সংস্কৃতির চেয়ে তথাকথিত উলঙ্গপনার সংস্কৃতিকে মুসলমানদের মুষ্টিমেয় ছেলে-মেয়েরাই অগ্রাধিকার দিচেছ। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে এড়িয়ে চলছে।
এ মিডিয়ার যুগে যদি সঠিকভাবে ইসলাম প্রচার করা হয়, মিডিয়ার প্রতিটি সেক্টরে যদি ইসলামের বিধি-বিধান থাকে তাহ’লে ইসলামের যে কত বড় একটা খেদমত হবে তা বলাই বাহুল্য।
সম্প্রতি মুম্বাই-এর ডা. যাকির নায়েক ইসলামী মিডিয়া অঙ্গনে বড় আকারে আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। তিনি মিডিয়া ব্যবহার করে ইসলাম প্রচারে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তার পরিচালিত ‘পীস টিভি’ বর্তমানে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি বিধর্মীদের সাথে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনায় অংশ নিচেছন। তার প্রতি সেমিনারে হাযার হাযার জনতা অংশগ্রহণ করছেন। তিনি এত জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন শুধুমাত্র মিডিয়া চ্যানেল ও ইনটারনেটে অংশগ্রহণের কারণে। তাছাড়া তার লেকচার বিশুদ্ধ ইংরেজী ভাষায় এবং তার কথাগুলোও বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ। তাই যুগের পরিবর্তনে, সময়ের দাবীতে, ইসলামের খাতিরে ইনটারনেট ও টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় হক্বপন্থী আলেমদের শক্ত অবস্থান একান্ত আবশ্যক।
আজ বিশ্বজুড়ে মানুষ শান্তির বার্তা খোঁজাখুঁজি করছে। যারা বুঝেছে শান্তির ছায়া একমাত্র ইসলামেই, তারা এখন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানদানকারী ব্যক্তিকে তালাশ করছে। ইসলাম জানতে তারা হা করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মিডিয়াতে হক্বপন্থী জ্ঞানী লোকের স্বল্পতা চরম পর্যায়ে। তাই অতি শীঘ্রই এই শূণ্যতা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। কোন জায়গায়, কীভাবে মিডিয়াকে অপব্যবহার করা হচেছ তা পর্যবেক্ষণ করে মিডিয়ার মাধ্যমেই বাতিল শক্তির মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদীদের মোকাবেলায় মিডিয়াকে অস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। প্রিনট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আয়ত্তে এনে তাতে ইসলাম প্রচারের সুগম ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগ। তাই বিশ্বের যেকোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। আর এ খবর যার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তা হ’ল এই আধুনিক নিউজ মিডিয়া। ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি সহ বিশ্বের প্রধান নিউজ মিডিয়াগুলো সম্পূর্ণ ইসলাম বিদ্বেষীদের করায়ত্তে। এ কারণে প্রতিদিন ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার, কুৎসা রটনা ও বিভিন্ন অপপ্রচারের মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষদেরকে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে সন্দেহপ্রবণ মানুষকে ইসলামপন্থীদের পক্ষে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জ্ঞান অর্জনসহ বিভিন্ন পন্থায় নিউজ মিডিয়ার যুগে একটি বস্ত্তনিষ্ঠ ও প্রতিবাদী নিউজ মিডিয়া সৃষ্টি করলে একবিংশ শতাব্দী ইসলামের বিজয়ের শতাব্দীতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
এ সঙ্কটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে।
(১) মুসলিম বিশ্বের জনবলকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
(২) সমগ্র মুসলিম বিশ্বে গণমাধ্যম ও তথ্য প্রবাহের অবস্থা খুবই করুণ। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য গণমাধ্যম বিষয়ক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে।
(৩) তথ্য ও প্রযুক্তিতে মুসলিম বিশ্ব অনেকটাই পিছিয়ে। এর অন্যতম কারণ হ’ল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ না থাকা। ইসলামী বিশ্ব এক্ষেত্রে কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে, এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ব এ পরিবারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
(৪) OIC (Organization of Islamic Conference) কর্তৃক ১৯৭৯ সালে সঊদী আরবের রাজধানী জেদ্দায় IINA (International Ialamic News Agency) প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। এটাকে সত্যিকার অর্থে রয়টার বা সিএনএন বা আল-জাযীরা-এর ন্যায় সংবাদ সংস্থা হিসাবে গড়ার কার্যকরী পদক্ষেপ ওআইসিকেই নিতে হবে।
(৫) মুসলিম বিশ্বের সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ়তর ও সুনিবিড় করার লক্ষ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিশেষে বিশ্ব প্রতিপালকের নিকটে প্রার্থনা, বিধর্মীদের নিউজ মিডিয়ার বিরুদ্ধে তিনি আমাদেরকে শক্তিশালী নিউজ মিডিয়া গড়ে তুলে বিশ্বের মানুষের মন থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ দূর করার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন!
নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজীদ
গোবিন্দ, পাবনা।
[1]. J.B.Kelly, Arabia, The Gulf and the West: A Critical View of the Arabs and Their Oil Policy (London: Weidenfeld and Nicolson, 1980.