‘ভালবাসা[1] দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী দিন দিন উন্মাতাল হয়ে উঠছে। বাজার ছেয়ে যাচ্ছে নানাবিধ হাল ফ্যাশনের উপহারে। পার্কগুলোতে চলছে ধোয়ামোছা। রেস্তরাঁগুলো সাজছে নতুন সাজে। পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-কে ঘিরে সাজ সাজ রব। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ সংস্কৃতির মাতাল ঢেউ লেগেছে। হৈ চৈ, উন্মাদনা, রাঙায় মোড়া ঝলমলে উপহার সামগ্রী, নামি রেস্তরাঁয় ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’কে ঘিরে প্রেমিক যুগলের চোখেমুখে এখন বিরাট উত্তেজনা। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালবাসার জন্য ধার্য মাত্র এই একটি দিন! প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি। বছরের এ দিনটিকে তারা বেছে নিয়েছে হৃদয়ের কথকতার কলি ফোটাতে।
ভালবাসা দিবস কী?
বছরে মাত্র একটি দিন ও রাত প্রেম সরোবরে ডুব দেয়া, সাঁতার কাটা, চরিত্রের নৈতিক ভূষণ খুলে প্রেম সরোবরের সলিলে হারিয়ে যাওয়ার দিবস হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘ভালবাসা দিবস’। সারাবিশ্বে ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয় প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারী।
ইতিহাসে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’
‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর উৎস হচ্ছে ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র উৎসব। এ পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃষ্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। এ সমস্ত কল্প-কাহিনীর অন্যতম হচ্ছে, এ দিনে পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রোমিউলাস নামক জনৈক ব্যক্তি একদা নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এ পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ ফেব্রুয়ারী উৎসব পালন করত। এ দিনে পালিত বিচিত্র অনুষ্ঠানাদির মধ্যে একটি হচ্ছে, দু’জন শক্তিশালী পেশীবহুল যুবক গায়ে কুকুর ও ভেড়ার রক্ত মাখত। অতঃপর দুধ দিয়ে তা ধুয়ে ফেলার পর এ দু’জনকে সামনে নিয়ে বের করা হ’ত দীর্ঘ পদযাত্রা। এ দু’যুবকের হাতে চাবুক থাকত, যা দিয়ে তারা পদযাত্রার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে আঘাত করত। রোমক রমণীদের মাঝে কুসংস্কার ছিল যে, তারা যদি এ চাবুকের আঘাত গ্রহণ করে, তবে তারা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা এ মিছিলের সামনে দিয়ে যাতায়াত করত।
রোমকরা খৃষ্টধর্ম গ্রহণের পরও এ উৎসব উদ্যাপনকে অব্যাহত রাখে। কিন্তু এর পৌত্তলিক খোলস পাল্টে ফেলে খৃষ্টীয় খোলস পরানোর জন্য তারা এ উৎসবকে ভিন্ন এক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে। সেটা হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক খৃষ্টান সন্ন্যাসীর জীবনোৎসর্গ করার ঘটনা। ইতিহাসে এরূপ দু’জন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী পাওয়া যায়। এদের একজন সম্পর্কে দাবী করা হয় যে, তিনি শান্তি ও প্রেমের বাণী প্রচারের ব্রত নিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তার স্মরণেই রোমক খৃষ্টানরা এ উৎসব পালন অব্যাহত রাখে। কালক্রমে ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র উৎসব রূপান্তরিত হয় জৈবিক কামনা ও যৌনতার উৎসবে। পরবর্তীতে রোমানরা খৃষ্টানদের অধীনে আসলে তাদের অনেকেই খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে। খৃষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মবিরোধী, সমাজ বিধ্বংসী ও ব্যভিচার বিস্তারকারী এ প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। এমনকি খৃষ্টধর্মের প্রাণকেন্দ্র ইতালীতে এ প্রথা অবশেষে বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু আঠারো ও ঊনিশ শতকে তা পুনরায় চালু হয়।
ক্যাথলিক বিশ্বকোষে ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে তিনটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকটি ঘটনা নিম্নরূপ :
১ম বর্ণনা : রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের তরফ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হ’লে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করেন। ফলে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। রোম সম্রাটের বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
২য় বর্ণনা : খৃষ্টীয় ইতিহাস অনুযায়ী এ দিবসের সূত্রপাত হয় ২৬৯ খৃষ্টাব্দে। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তলোলুপ রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার ছিল এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাযী নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি ভালবেসে সেন্ট মারিয়াসকে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে সম্রাট ক্লডিয়াস জেনে যান। তিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাযির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। ঐ দিনের শোক গাঁথায় আজকের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।
অন্য বর্ণনা মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জনৈক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুদন্ড দেন। তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী।
৩য় বর্ণনা : গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হ’ত রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারীতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হ’তে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হ’ত। এ রীতিটি কতক পাদ্রীর গোচরীভূত হ’লে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ন করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
৪র্থ বর্ণনা : প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনো (Juno)’র সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারী ছুটি পালন করা হ’ত। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারী লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাযারো তরুণের মেলায় র্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে (জারে) ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা সিপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হ’ত এবং ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে পরিণতি ঘটত।
৫ম বর্ণনা : রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভু ‘আতারিত’ এবং রোমানদের সবচেয়ে বড় প্রভু ‘জুয়াইবেতার’ সম্পর্কে ভ্যালেনটাইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলে, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসীহ’। এ কারণে তাকে ১৪ ফেব্রুয়ারীতে হত্যা করা হয়।
৬ষ্ঠ বর্ণনা : কথিত আছে যে, খৃষ্টধর্মের প্রথম দিকে রোমের কোন এক গীর্জার ভ্যালেন্টাইন নামক দু’জন সেন্ট (পাদ্রী)-এর মস্তক কর্তন করা হয় নৈতিক চরিত্র বিনষ্টের অপরাধে। তাদের মস্তক কর্তনের তারিখ ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী। ভক্তেরা তাদের ‘শহীদ’ (!) আখ্যা দেয়। রোমান ইতিহাসে শহীদের তালিকায় এ দু’জন সেন্টের নাম রয়েছে। একজনকে রোমে এবং অন্যজনকে রোম থেকে ৬০ মাইল (প্রায় ৯৭ কি.মি.) দূরবর্তী ইন্টারামনায় (বর্তমান নাম Terni) ‘শহীদ’ করা হয়। ইতিহাসবিদ কর্তৃক এ ঘটনা স্বীকৃত না হ’লেও দাবী করা হয় যে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দে ‘ক্লাউডিয়াস দ্যা গথ’-এর আমলে নির্যাতনে তাদের মৃত্যু ঘটে। ৩৫০ খৃষ্টাব্দে রোমে তাদের সম্মানে এক রাজপ্রাসাদ (Basilica) নির্মাণ করা হয়। ভূগর্ভস্থ সমাধিতে একজনের মৃতদেহ আছে বলে অনেকের ধারণা।
অন্য এক তথ্যে জানা যায়, রোমে শহীদ ইন্টারামনা গীর্জার বিশপকে ইন্টারামনা ও রোমে একই দিনে স্মরণ করা হয়ে থাকে। রোমান সম্রাট ২য় ক্লাউডিয়াস ২০০ খৃষ্টাব্দে ফরমান জারী করেন যে, তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না। কারণ অবিবাহিত তরুণরাই দক্ষ সৈনিক হ’তে পারে এবং দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। ভ্যালেন্টাইন নামের এক তরুণ সম্রাটের আইন অমান্য করে গোপনে বিয়ে করে। কেউ কেউ বলেন, রাজকুমার এ আইন লংঘন করেন।
৭ম বর্ণনা : ৮২৭ খৃষ্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ব্যক্তি রোমের পোপ নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য এবং সুন্দর ব্যবহার দিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই রোমবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৪০ দিন দায়িত্ব পালনের পরই তাঁর জীবনাবসান ঘটে। প্রিয় পোপের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী রোমবাসী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনেকের মতে এভাবেই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সূচনা হয়।[2]
প্রাচীনকালে রোমানরা নেকড়ে বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে লুপারকালিয়া নামে ভোজানুষ্ঠান করত প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারী। এ ভোজানুষ্ঠানের দিন তরুণরা গরুর চামড়া দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করত। মেয়েরাও উৎসবে মেতে উঠত। ভ্যালেন্টাইন নামের কোন বিশিষ্ট বিশপ প্রথমে এর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এর নাম হয়েছে ভ্যালেন্টাইন, তা থেকে দিবস। রোমানরা ৪৩ খৃষ্টাব্দে ব্রিটেন জয় করে। এ কারণে ব্রিটিশরা অনেক রোমান অনুষ্ঠান গ্রহণ করে নেয়। অনেক গবেষক এবং ঐতিহাসিক Lupercalia অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন অনুষ্ঠানের একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন। কেননা এতে তারিখের অভিন্নতা ও দু’টি অনুষ্ঠানের মধ্যে চরিত্রগত সাযুজ্য রয়েছে।
ভালবাসা দিবস উদ্যাপনের সূচনা
‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, ১৪ ফেব্রুয়ারীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন প্রেমের পূজারী সিদ্ধপুরুষরূপে ভালবাসার বাণী বিনিময়ের মূর্তপ্রতীক হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলনের এটাই হ’ল আদি ইতিহাস। এ দিবসের ইতিহাসে বর্ণিতে লটারীর বিষয়টি পরবর্তীতে পোপ গেলাসিয়াস কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং এ দিবসকে খৃষ্টীয় ফ্লেভার দিতে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামের মোড়ক দিয়ে আবৃত করেন। মজার কথা হ’ল ১৪ শতকের আগেও ভ্যালেন্টাইন দিবসের সাথে ভালবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জেওফ্রে চসার (Geoffery Chaucer) তার ‘The Parliament of Fowls’ কবিতায় পাখিকে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসাবে কল্পনা করেছেন। মধ্যযুগে ফ্রান্সে এবং ইংল্যান্ডে বিশ্বাস করা হ’ত যে, ফেব্রুয়ারী মাস হ’ল পাখির প্রজনন কাল। চসার তার কবিতায় লিখেছেন, ‘For this was on St. valentine’s day, when every fowl cometh there to choose his mate.’ বস্ত্ততঃ চসারের এ কবিতার মাধ্যমেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মধ্যে ভালবাসা জিনিসটি ঢুকে যায় এবং আস্তে আস্তে ব্যাপকতা লাভ করে। লেখক Henry Ansgar Kelly তার ‘Chaucer and cult of Saint Valentine’ বইতে এ ব্যাপারটি ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মূলতঃ আজকের ভালবাসা দিবসের উৎপত্তি ভালবাসা দিবস হিসাবে হয়নি।
৫ম শতাব্দী (৪৯৬ খৃ.) থেকেই দিনটিতে কবিতা, ফুল, উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে প্রিয়জনকে বিশেষ স্মরণের রেওয়াজ শুরু হয়। ইংল্যান্ডের মানুষ ১৪শ’ শতাব্দীর শুরু থেকে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদ্যাপন শুরু করেছে। ঐতিহাসিকদের অভিমত, ভ্যালেন্টাইন দিবসে ইংল্যান্ডে প্রিয়জনের কাছে কবিতার চরণ প্রেরণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। ফরাসি বংশোদ্ভূত অর্লিন্স (Orleans)-এর ডিউক চার্লসকে ১৪১৫ সালে অজিনকোর্টের যুদ্ধে ইংরেজরা গ্রেফতার করে এবং ইংল্যান্ডে এনে কারাবন্দি করে। ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন দিবসে এ ডিউক তার স্ত্রীর কাছে ছন্দময় ভাষায় লন্ডন টাওয়ারের কারাগার থেকে পত্র লেখেন। ইংল্যান্ডে সেই থেকে ভ্যালেন্টাইনস দিবস উদ্যাপন শুরু।
মধ্য ইংল্যান্ডের ডারবিশায়ার কাউন্টির তরুণীরা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মধ্য রাতে দল বেধে ৩ থেকে ১২ বার চার্চ প্রদক্ষিণ করত এবং এ চরণগুলো সুর দিয়ে আবৃত্তি করত প্রদক্ষিণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত :
I sow hempseed
Hempseed I sow,
He that love me best,
Come after me now.
তারা মনে করত এ কথাগুলো বারবার আবৃত্তি করলে রাত্রিতে প্রেমিকজন অবশ্যই ধরা দেবে।
এ দিবসে যা যা করা হয়
পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে এ দিনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও উপহার বিনিময় হয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে আছে পত্র বিনিময়, খাদ্যদ্রব্য, ফুল, বই, ছবি, ‘Be my valentine’ (আমার ভ্যালেন্টাইন হও), প্রেমের কবিতা, গান, শোক লেখা কার্ড প্রভৃতি। গ্রীটিং কার্ডে, উৎসব স্থলে অথবা অন্য স্থানে প্রেমদেব (Cupid)-এর ছবি বা মূর্তি স্থাপিত হয়। সেটা হ’ল একটি ডানাওয়ালা শিশু, তার হাতে ধনুক এবং সে প্রেমিকার হৃদয়ের প্রতি তীর নিশান লাগিয়ে আছে। এ দিন স্কুলের ছাত্ররা তাদের ক্লাসরুম সাজায় অনুষ্ঠান করে।
১৮শ’ শতাব্দী থেকেই শুরু হয়েছে ছাপানো কার্ড প্রেরণ। এ সব কার্ডে ভাল-মন্দ কথা, ভয়-ভীতি আর হতাশার কথাও থাকত। ১৮শ’ শতাব্দীর মধ্য ভাগ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যে সব কার্ড ভ্যালেন্টাইন ডে’তে বিনিময় হ’ত তাতে অপমানজনক কবিতাও থাকত।
সবচেয়ে যে জঘন্য কাজ এ দিনে করা হয়, তা হ’ল ১৪ ফেব্রুয়ারী মিলনাকাঙ্ক্ষী অসংখ্য যুগল সবচেয়ে বেশী সময় চুম্বনাবদ্ধ হয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। আবার কোথাও কোথাও চুম্বনাবদ্ধ হয়ে ৫ মিনিট অতিবাহিত করে ঐ দিনের অন্যান্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে :
ভালবাসায় মাতোয়ারা থাকে ভালবাসা দিবসে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো। পার্ক, রেস্তোরাঁ, ভার্সিটির করিডোর, টিএসসি, ওয়াটার ফ্রন্ট, ঢাবির চারুকলার বকুলতলা, আশুলিয়া- সর্বত্র থাকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের তুমুল ভিড়। ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’ উপলক্ষে অনেক তরুণ দম্পতিও হাযির হয় প্রেমকুঞ্জগুলোতে।
ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলের আয়োজনে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উদ্যাপন উপলক্ষে হোটেলের বলরুমে বসে তারুণ্যের মিলন মেলা। ‘ভালবাসা দিবস’-কে স্বাগত জানাতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলরুমকে সাজান বর্ণাঢ্য সাজে। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় বলরুমের অভ্যন্তর। জম্পেশ অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট, ডেলিশাস ডিনার এবং উদ্দাম নাচ। আগতদের সিংহভাগই অংশ নেয় সে নাচে। ঘড়ির কাটা যখন গিয়ে ঠেকে রাত দু’টার ঘরে তখন শেষ হয় প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলের ‘ভালবাসা দিবস’ বরণের অনুষ্ঠান।[3]
রাজধানীর পাঁচতারা হোটেলগুলোতে এ দিবস উদ্যাপনের অনুকরণে দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলোর বড় বড় হোটেলগুলোও এ দিবস উদ্যাপন শুরু করেছে প্রায় একই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
ঢাবির টিএসসি এলাকায় প্রতি বছর এ দিবসে বিকেল বেলা অনুষ্ঠিত হয় ভালবাসা র্যালি। এতে বেশ কিছু খ্যাতিমান দম্পতির সাথে প্রচুর সংখ্যক তরুণ-তরুণী, প্রেমিক-প্রেমিকা যোগ দেয়। প্রেমের কবিতা আবৃত্তি, প্রথম প্রেম, দাম্পত্য এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির স্মৃতি চারণে অংশ নেয় তারা।
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এমনকি বুড়া-বুড়িরা পর্যন্ত নাচতে শুরু করে! তারা পাঁচতারা হোটেলে, পার্কে, উদ্যানে, লেকপাড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে ভালবাসা বিলাতে, অথচ তাদের নিজেদের ঘর-সংসারে ভালবাসা নেই! আমাদের বাংলাদেশী ভ্যালেন্টাইনরা যাদের অনুকরণে এ দিবস পালন করে, তাদের ভালবাসা জীবনজ্বালা আর জীবন জটিলতার নাম; মা-বাবা, ভাই-বোন হারাবার নাম; নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত হওয়ার নাম। তাদের ভালবাসার পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা-ছাড়ার বেলেলাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী।
ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উদ্যাপন
বর্তমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে স্যাটেলাইটের কল্যাণে মুসলিম সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণ করছে। নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র্যকে ভুলে গিয়ে, ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে তারা আজকে প্রগতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে তাদের কর্মকান্ডে মুসলিম জাতির উঁচু শির নত হচ্ছে। অথচ এটা বহুপূর্বে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করে গেছেন।
ছাহাবী আবু অকেদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) খায়বার যাত্রায় মূর্তিপূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখা হ’ত। এ দেখে কতক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রাসূল (ছাঃ) ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মূসা (আঃ)-এর জাতির মত কথা। আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়। আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার-অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে’।[4] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে’।[5]
মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণপ্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আক্বীদা, ইবাদত, ধর্মীয় আলামত বিরোধী, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতী। দুর্ভাগ্য যে, মুসলমানরা ক্রমশ ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে এবং বিজাতীদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। যার অন্যতম ১৪ ফেব্রুয়ারী বা ভালবাসা দিবস। মুসলমানদের জন্য এসব বিদস পালন জঘন্য অপরাধ।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘কাফিরদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাদের শুভেচ্ছা জানানো একটি কুফরী কাজ। কারো দ্বিমত নেই এতে। যেমন তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ‘শুভেচ্ছা’ বলা, শুভ কামনা জানানো। এগুলো কুফরী বাক্য না হ’লেও ইসলামী দৃষ্টিকোণ হ’তে হারাম। কারণ এর অর্থ হ’ল, একজন লোক ক্রুশ, মূর্তি ইত্যাদিকে সিজদা করছে, আর আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এটা একজন মদ্যপ ও হত্যাকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়েও জঘন্য।
অনেক লোক অবচেতনভাবেই এ সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অথচ তারা জানেও না, কত বড় অপরাধ তারা করে যাচ্ছে। শিরক ও কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ধন্যবাদ দিচ্ছে। এভাবে আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছে।
মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ছেদন হচ্ছে আমাদের পথিকৃৎ ছাহাবা, নেককার পূর্ব পুরুষদের একটি বৈশিষ্ট্য। সুতরাং যারাই বিশ্বাস করে, ‘আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল।’ তাদের উচিত ও কর্তব্য, মুসলমানদের মুহাববত করা, কাফিরদের ঘৃণা করা, তাদের সাথে বৈরিভাব পোষণ করা, তাদের আচার-অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করা। এতেই আমরা নিরাপদ, এখানেই আমাদের কল্যাণ, অন্যথা সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
কেউ কেউ হয়তো বলবে, আমরা তাদের আক্বীদা বিশ্বাস গ্রহণ করি না, শুধু আপোষে মুহাববত, ভালবাসা তৈরি করার নিমিত্তে এ দিনটি পালন করি। অথচ এর মাধ্যমে সমাজে অশীলতা ছড়ায়, ব্যভিচার প্রসার লাভ করে। একজন সতী-সাধ্বী পবিত্র মুসলিম নারী বা পুরুষ এ ধরনের নোংরামির সাথে কখনো জড়িত হ’তে পারে না।
এ দিনটি উদ্যাপন কোন স্বভাব সিদ্ধ ও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বরং একজন ছেলেকে একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার পাশ্চাত্য কালচার আমদানিকরণ। আমরা জানি, তারা সমাজকে চারিত্রিক পদস্খলন ও বিপর্যয় হ’তে রক্ষা করার জন্য কোন নিয়ম-নীতির ধার ধারে না। যার কুৎসিত চেহারা আজ আমাদের সামনে স্পষ্ট। তাদের অশালীন কালচারের বিপরীতে আমাদের অনেক সুষ্ঠু-শালীন আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে।
মুসলিম সমাজে এক সময় নীতি-নৈতিকতার মূল্য ছিল সীমাহীন। লজ্জাশীলতা ও শুদ্ধতা ছিল এ সমাজের অলংকার। কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে রাস্তায় বের হবার চেয়ে পিঠে বিশাল ভার বহন করা একটা ছেলের জন্য ছিল অধিকতর সহজ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা চিন্তা করারও অবকাশ ছিল না। অথচ সেই অবস্থা থেকে আজ আমরা কোথায় এসে পৌঁছেছি! এটা হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র মত বেলেল্লাপনার কুফল। এসবের দ্বারা সরল, পুণ্যবান, নিষ্কলঙ্ক মানুষ বিপথগামী হচ্ছে।
এ কী করছি আমরা?
আমেরিকা ও ইউরোপ এর লোকজন একই উৎসবে মেতে উঠতে পারে। কারণ তারা এক জাত, এক সভ্যতা, এক সংস্কৃতি, এক ধর্ম এবং একই ধারার লোক। এক দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তাই আনন্দ-বেদনার অনুভূতি সর্বত্র অভিন্ন। কিন্তু আমাদের দেহ পৃথক, ওদের চেয়ে আমরা পৃথক প্রায় সব ক্ষেত্রে। তথাপি কেন আমরা নাচি যখন তারা ডুগডুগি বাজায় নিজেদের জন্য। বিলাতের ভ্যালেন্টাইন ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে মুসলিমরাও যদি একইভাবে এ দিবসটি পালন করে, তাহ’লে তাদের ও আমাদের মধ্যে ফারাক থাকল কোথায়? আমরা মুসলিম। ভ্যালেন্টাইন আমাদের নয়, ওদের- এ জ্ঞানটুকুও নেই, এটাই আজ আমাদের জন্য বড় ট্রাজেডি।
পরিশেষে বলব, যখন এ পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষ না খেয়ে থাকে, যখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কান্ডারী শিশুরা ক্ষুধায়, অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়? তখন আমরা অবৈধ বিনোদনের নামে নোংরামী করে অযস্র অর্থ নষ্ট করি কোন মানবিকতায়? অতএব যেকোন মূল্যে এসমস্ত অপসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুন।-আমীন!
নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজীদ (রুকু)
গোবিন্দা, পাবনা।
[1]. চারটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত ‘ভালবাসা’ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ ‘মুহাববাত’ ও ইংরেজি Love। এর অর্থ- অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা আল্লাহ তা‘আলা মানবহৃদয়ে সৃষ্টিগতভাবে দিয়েছেন। ভালবাসা দু’ধরনের (১) বৈধ ও পবিত্র, (২) অবৈধ ও অপবিত্র। যুবক-যবতীর বিবাহপূর্ব সম্পর্ক হচ্ছে অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা। আর আলাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল (ছাঃ), সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা হচ্ছে পবিত্র ভালবাসা। (http://www.islamhouse.com/bn_al_hubbul_masmuhu)
[2].http://wiki/valentine’s day, www.islamqa.com
[3]. বিভিন্ন দৈনিকে ১৫ ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত সংবাদ অবলম্বনে।
[4].তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৪০৮, ‘কিতাবুল ফিতান’, হাদীছ ছহীহ।
[5]. আহমাদ ২/৫০; আবূ দাঊদ হা/৪০৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০২৫।