নারীরা মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু প্রগতির মোড়কে নারীরা আজ তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে। ভুলে গেছে ঐ চার নারীর কথা, যারা শ্রেষ্ঠ ঘোষিত হয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যবানে।[1] বিস্মৃত হয়েছে, কেন তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। বিমুখ হয়েছে তাদের আখলাক, আফকার অনুসরণে। মর্যাদামন্ডিত সেই নারীদের অন্যতম হচ্ছেন মা খাদীজা (রাঃ)। আজ আমরা বর্ণনা করব মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে খাদীজা (রাঃ)-এর ছয়টি বাক্য ও তার শিক্ষা প্রসঙ্গে।-
হাদীছের অনুবাদ :
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি সর্বপ্রথম ওহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, তা ভোরের আলোর মতই সুস্পষ্ট হ’ত। এরপর নির্জনতা তাঁর কাছে প্রিয় হ’তে লাগল। তাই তিনি একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত নিজের পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘হেরা গুহায়’ নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। খাবার শেষ হয়ে গেলে পুনরায় খাদীজার কাছে এসে অনুরূপ কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকাবস্থায় তাঁর কাছে সত্যবাণী এসে পৌঁছল। ফেরেশতা (জিবরীল) তাঁর কাছে এসে বললেন, ‘পড়ুন!’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমি পড়তে পারি না’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এতে আমি খুব কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন!’ আমি বললাম, ‘আমি তো পড়তে পারি না’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, এরপর তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি খুব কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন!’ আমি বললাম, ‘আমি পড়তে পারি না’। এরপর তিনি তৃতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন! আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক (জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড) হ’তে। পাঠ করুন! এবং আপনার রব মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না’। এরপর রাসূল (ছাঃ) এই আয়াতগুলো নিয়ে ভয়ে কম্পমান অবস্থায় বাড়ি ফিরলেন। খাদীজার কাছে পৌঁছেই বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। খাদীজা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে ভীতি কেটে গেলে তিনি খাদীজাকে ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমি আমার জীবন সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। একথা শুনে খাদীজা (রাঃ) (তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে) বললেন, ‘কখনোই নয়। আপনার জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। কেননা (১) আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, (২) সর্বদা সত্য কথা বলেন, (৩) অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, (৪) নিঃস্বদের সহযোগিতা করেন, (৫) মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং (৬) সত্য পথে বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন’। অতঃপর খাদীজা তাঁকে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ওরাক্বা বিন নাওফালের কাছে গেলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলতে চায় শুনুন! ওরাক্বা বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কি দেখেছ? রাসূল (ছাঃ) তখন যা দেখেছেন তা খুলে বললেন। ওরাক্বা বললেন, এটা তো সেই ফেরেশতা যাকে পাঠানো হয়েছিল মূসা (আঃ)-এর নিকটে। হায়! আমি যদি যুবক থাকতাম। হায়! আমি যদি সেসময় বেঁচে থাকতাম, যখন তোমার কওম তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দিবে! তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তারা কি সত্যিই আমাকে বের করে দিবে? ওরাকবা বলেন, হ্যাঁ। তুমি যা নিয়ে আগমন করেছে অনুরূপ কোন কিছু নিয়ে যে ব্যক্তিই আগমন করেছে তার সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। আমি তোমার সে সময় পেলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমাকে সাহায্য করব’।[2]
ওহী গ্রহণের প্রস্ত্ততি :
ওহী নাযিলের পূর্বক্ষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাগ্রচিত্তে নির্জনে ইবাদতকে পসন্দ করতেন। সেকারণ তিনি খাবারপত্রসহ ‘হেরা গুহায়’ গমন করেন এবং দিনের পর দিন সেখানে নির্জনে কাটান। মূলতঃ রূহানী মযবূতী ও আত্মিক দৃঢ়তার জন্য তাঁকে ‘নির্জনতা প্রিয়’ করে দেয়া হয়েছিল। এটি ছিল তাঁর ওহী গ্রহণের পূর্ব প্রস্ত্ততি, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছিল।
আবার সর্বোত্তম বাণীর ধারক ও বাহক হিসাবে শারীরিকভাবে প্রস্ত্তত করার জন্য দুই দুই বার তাঁর বক্ষবিদারণের ঘটনাও ঘটে। একবার ঘটে শৈশবে, আরেকবার মি‘রাজের রাতে। আনাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, ‘একদা রাসূল (ছাঃ) সমবয়সীদের সাথে খেলছিলেন। এমন সময় জিবরীল (আঃ) তাঁর নিকটে আসেন এবং তাঁকে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলেন। অতঃপর বক্ষবিদীর্ণ করে কলিজা থেকে এক খন্ড রক্তপিন্ড বের করে বলেন, তোমার দেহের ভেতরের শয়তানের অংশ এটা। অতঃপর তা একটি স্বর্ণপাত্রে রেখে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে যথাস্থানে কলিজা রেখে তা জোড়া লাগিয়ে দেন। এ ঘটনা দেখে বালকেরা দৌঁড়ে গিয়ে তাঁর দুধমাকে খবর দেয় যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করা হয়েছে। তখন তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে বিবর্ণ মুখে দেখতে পান। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর বুকের সেলাইটি (প্রায়ই) দেখতাম।[3]
আর মি‘রাজ রজনীতে বক্ষবিদারণ প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কা‘বার হাতীম বা হিজরে কাত হয়ে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং গলার মধ্যভাগের গর্ত থেকে নাভী পর্যন্ত চিরে ফেললেন। আমার কলব বের করলেন, অতঃপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের পাত্র আমার কাছে আনা হ’ল। কলব ধৌত করা হ’ল, অতঃপর ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রেখে দেয়া হ’ল। অন্য বর্ণনায় আছে, অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হ’ল। ঈমান ও হিকমত দ্বারা তা পরিপূর্ণ করা হ’ল’।[4]
উক্ত বিষয়গুলোতে ইলমের ময়দানের মুসাফিরদের জন্য চিন্তার রসদ রয়েছে। দৈহিক প্রস্ত্ততির জন্য কারো বক্ষবিদারণের বিধান, পদ্ধতি বা সুযোগ কোনটাই আমাদের নেই। তবে ইলম অর্জনের জন্য আমরা যা করতে পারি তা হ’ল : হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা। হারাম খাবার থেকে বিরত থাকা। ভক্ষণকৃত খাবার সন্দেহমুক্ত রাখা। অতঃপর সুন্নাতী তরীকায় আহার গ্রহণ করা। আবার আত্মিক প্রস্ত্ততির জন্য ইবাদতে আত্মসমাহিত হওয়া। আল্লাহর নিকট কলবের দুয়ার খুলে ইলম ও আমল চাওয়া। দৈহিক ও আত্মিক উভয়বিধ প্রস্ত্ততির মাধ্যমেই মূলতঃ ইলম ও ইলমের নূর-নূরানিয়াত হাছিল হয়।
বিপদ মুক্তির আমল :
ওহী নাযিলের পুরো ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রচন্ড ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর ধারণা হয় তিনি এরূপ গুরুগম্ভীর ওহী ধারণে সক্ষম নন। ওহী ধারণ, বহন, প্রচার, প্রসার এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া আঞ্জাম দেয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তিনি তাঁর জীবন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছিলেন অথবা আশঙ্কা করছিলেন দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে যাওয়ার (মিরক্বাত ১০/৫১২ পৃ:)। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের এই জটিল মুহূর্তে মা খাদীজা (রাঃ) কী বলেছিলেন, কোন কথা বলে তার অস্থির হৃদয়কে সুস্থির করেছিলেন, কোন কোন আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, সেটিই মূল বিষয়। তিনি বলেছেন ৬টি বাক্য, যাতে রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅত লাভের পূর্ববর্তী জীবনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেছে। বিশ্ব ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে তিনি ভীত-সন্ত্রস্তস্বামী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলেন,كَلاَّ أَبْشِرْ، فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، فَوَاللَّهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِى الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ ‘কখনোই নয়, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনোই অপমানিত করবেন না। কেননা (১) আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, (২) সর্বদা সত্য কথা বলেন, (৩) অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, (৪) নিঃস্বদের সহযোগিতা করেন, (৫) মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং (৬) সত্য পথে বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন’।[5]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চিন্তায় তখন জীবন-মৃত্যুর দোলা। এরূপ পরিস্থিতিতে মা খাদীজা আরো ভাল কাজের কথা বলতে পারতেন। বলতে পারতেন, আপনার কল্যাণ-চিন্তায় হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনে বড় বিপর্যয় থেকে জাতির মুক্তি মিলেছে। আপনার বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে কুরাইশরা আপনাকে ‘আল-আমীন’ উপাধি দিয়েছে। আপনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ আপনাকে সমীহ করে। তিনি বলতে পারতেন, আপনার কিসের আশঙ্কা? আপনার বংশীয় প্রভাব আছে। বংশে আপনারও নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। আপনার ক্ষতি করার সাহস পাবে কে? বলেননি- আমারও রয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি, ধন-সম্পদ, গোত্রীয় প্রভাব। সুতরাং আপনার কোন ভয় নেই। তাছাড়া বলতে পারতেন আপনি তো হেরাগুহায় ইবাদতেই রত ছিলেন। এই অবস্থায় কোন খারাপ কিছু হ’তে পারে না। বিপদমুক্তির অসীলা হিসাবে নিজ নিজ গোত্রীয় শক্তির চিন্তা করেননি মা খাদীজা। ভাবনায় আনেননি অর্থ-সম্পদের কথা। উচ্চারণ করেননি প্রভাব-প্রতিপত্তির কথা। তিনি মুখে আনলেন নীরবে নিভৃতে করে যাওয়া কতিপয় উত্তম গুণের কথা। যেগুলোতে তেমন অর্থের প্রয়োজন হয় না। দরকার পড়ে শুধু সদিচ্ছা ও আত্মত্যাগের। প্রয়োজন হয় আক্বল বা বিবেকের। অথচ আমরা খরচ করি পয়সা, আর তুলে রাখি বিবেক। সুতরাং বিপদ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে উপরোক্ত আমলগুলোর চর্চা-পরিচর্যা করা আবশ্যক।
উন্নত ভাষা :
যেকোন পরিস্থিতিতে প্রথম মুহূর্তেই মানুষের স্বভাব প্রকাশ পেয়ে যায়। আমরা কি লক্ষ্য করেছি, এমন বিপদ-সংকুল পরিস্থিতিতে মা খাদীজা (রাঃ)-এর মুখের ভাষা ছিল কতটা উন্নত? নাকি মা খাদীজা (রাঃ) সাহিত্যিক ছিলেন? নাকি কেউ একথা বলবে যে, তাঁর ভাষা পরিবর্তন করে হাদীছ বর্ণনা করা হয়েছে? কিংবা এরূপ বলা যাবে যে, ঐ মুহূর্তে তিনি ভেবেছিলেন, এগুলো তো হাদীছরূপে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত থাকবে, তাই একটু প্রস্ত্ততি নিয়ে উত্তর দেই? বস্ত্ততঃ সবগুলো কথাই হাস্যকর। তাহ’লে বিষয়টা কী? আমরা কুরআন- হাদীছে মাসআলা খুঁজি। কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি না। মূলতঃ সে সময় ভাষার বিশেষ চর্চা হ’ত। ভাষা শেখার জন্য তারা বিশেষ যত্ন নিতেন। ফলে একেকটা যবান থেকে সাহিত্যসমৃদ্ধ ভাষা নির্গত হ’ত স্রোতস্বিনী নদীর মত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলেননি। আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেননি। ছাহাবীগণও আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেননি। যদি করতেন তবে হাদীছে সে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার থাকত। সুতরাং শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা স্বভাবগত সুন্নাত।
স্বামীর প্রতি আস্থা :
ওহীর মুবারক আগমন গাম্ভীর্য ও কষ্টের সাথে হয়েছিল। ওহী নাযিলের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে খাদীজা (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। জীবন সম্পর্কে তখন তিনি শঙ্কিত। ঐ সংকটময় মুহূর্তে মা খাদীজা (রাঃ) চরম দৃঢ়তা ও পরম মমতায় স্বামীর প্রতি কোমলভাবে ছড়িয়ে দিলেন কিছু অভয়ভরা ও মমতায় মোড়ানো বাক্য। যাতে নিজ স্বামী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি তাঁর অটুট আস্থা ফুটে উঠেছে। স্বামীর প্রতি চরম ভক্তি ও বিনয় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি সেসময় যে গুণগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন তার সবক’টিই মানবীয় সদগুণ। যার সাথে জড়িয়ে আছে দয়া ও মানবতা, দরদ ও মমতা।
সুতরাং স্বামীর প্রয়োজন রয়েছে স্ত্রীর আস্থা অর্জনের। স্ত্রীর কাছে নিজের সদ্গুণাবলী প্রমাণের। পরিচালক ও গৃহকর্তা হিসাবে নির্ভরযোগ্যতা তুলে ধরার। প্রয়োজন আছে এমন অবস্থান তৈরী করার, যাতে প্রমাণিত হয় যে, কেন তিনি স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল? কেন আল্লাহ তাকে পরিবার প্রধানের মর্যাদা দান করেছেন? স্বামীর দুর্দিনে স্ত্রী যেন নির্ভরতার সাথে বলতে পারেন, আপনার তো এরূপ এরূপ আমল রয়েছে। কিন্তু স্বামীর বিপদে যদি স্ত্রী স্বামীকে দোষারোপ করে এবং তার কারণে এই বিপদ এমনটা মনে করে এবং অন্তরে অন্তরে আত্মতুষ্টিতে ভোগে তবে বুঝতে হবে সে স্বামী ব্যর্থ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজের পরিবারের নিকটে উত্তম’।[6] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকটে উত্তম’ (তিরমিযী হা/৩১২৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি যদি কোন মানুষকে সিজদা করার আদেশ করতাম তবে স্ত্রীকে আদেশ করতাম স্বামীকে সিজদা করার জন্য’।[7] তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদের মেরো না। অতঃপর ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলেন, স্বামীদের উপর স্ত্রীদের সাহস বেড়ে গেছে। এতে তিনি তাদেরকে প্রহারের অনুমতি প্রদান করেন। ফলে বহু নারী এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের নিকটে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট বহু মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। শোন! এরূপ লোকেরা কখনো ভাল নয়’।[8]
সুতরাং স্বামী ও স্ত্রী উভয় তরফে উভয়ের প্রতিই দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা ও তার সন্তুষ্টি হাছিল করা। স্বামীরও কর্তব্য রয়েছে স্ত্রীকে মূল্যায়ন করা ও তার মনোতুষ্টি অর্জন করা।
ওহীর ভারবাহিতা :
ওহী এক গুরুগম্ভীর বিষয়। যার বরণ ও ধারণ প্রক্রিয়ায় ছিল কষ্টকর ও গাম্ভীর্যপূর্ণ আয়োজন। আলোচ্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর ওহী নাযিলের কষ্ট বর্ণিত হয়েছে। জিবরীল (আঃ) যখন বললেন, إِقْرَاْ ‘পড়ুন’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَا أَنَا بِقَارِئٍ ‘আমি পড়তে জানি না’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَأَخَذَنِىْ فَغَطَّنِى حَتَّى بَلغَ مِنِّى الْجَهْدَ ‘তখন তিনি আমাকে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমি প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করলাম’।
এখানে غط শব্দের অর্থের বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, আমি বলব, স্পষ্ট কথা যে غط অর্থ عصر নিংড়ানো, চিপে ফেলা। বুকের দিক থেকে হোক বা পিঠের দিক থেকে হোক, তীব্র চাপের কারণে অন্তর সংকুচিত হওয়া। এমন সংকুচিত হওয়া, যেমন ফাঁস লাগানোর ফলে কণ্ঠনালী সংকুচিত হয়ে যায়। আর এই অর্থটিই উত্তম ও উপযুক্ত’।[9]
তিনি আরো বলেন, মুসলিমের ব্যাখ্যায় রয়েছে, চাপ দেয়ার মাঝে যে হিকমত ও প্রজ্ঞা রয়েছে তা হ’ল : সবদিক থেকে মুক্ত হয়ে তিনি যেন শুধু ওহীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারেন। জিবরীল (আঃ) যা বলছেন তাতে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে তা আয়ত্ত করতে পারেন। কষ্টকর এই চাপ একবারই দেয়া যেত। কিন্তু অধিক সাবধানতা ও অতি সতর্কতার জন্য তিনবার এরূপ করা হয়েছে। চাপ দেয়ার মধ্যে আরো একটি বিষয় বোঝা যায় যে, শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখার জন্য শিক্ষক সতর্ক ও হুঁশিয়ার করতে পারেন। শাসন করতে পারেন।[10]
উবাদা ইবনু ছামিত (রাঃ) বলেন, ওহী নাযিলের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কষ্ট অনুভব করতেন। কষ্টের কারণে তাঁর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে যেত। অন্য বর্ণনায় আছে তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলতেন। ছাহাবীগণও মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলতেন। ওহী নাযিল শেষ হ’লে তিনি মাথা তুলতেন।[11]
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, হারেছ ইবনু হিশাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার নিকটে কীরূপে ওহী আসে? তিনি বলেন, কখনো কখনো ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় আসে। এটি ওহী নাযিলের সর্বাপেক্ষা কঠিন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ওহী নাযিল শেষ হ’লে জিবরীল যা বলেন, আমি তা মুখস্থ করে নেই। কখনো তিনি মানবাকৃতিতে আসেন। আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন, আমি তা মুখস্থ করি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ওহী নাযিল শেষ হ’লে প্রচন্ড শীতেও তাঁর কপালটবেয়ে ঘাম ঝরে পড়ত’।[12]
উল্লেখিত হাদীছগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যে কোন অর্জনে রয়েছে অশেষ কষ্ট। যে কোন প্রাপ্তিতে রয়েছে চরম ক্লেশ। বহু অর্জনের পশ্চাতে রয়েছে খাহেশাতের বর্জন। বহু উন্নয়নের আড়ালে রয়েছে আরাম ছুঁড়ে ফেলা শ্রম। প্রাপ্তি আর অর্জন শুধু প্রকাশিত হয়। আড়ালে থেকে যায় কষ্ট আর ক্লেশগুলো। তাই কারো উন্নয়ন দেখে তাক্বদীরকে দোষারোপ করার চেয়ে পেছনের শ্রমের দিকে নযর দেয়া বেশী যরূরী।
আরবী প্রবাদ الحق مر ‘সত্য তিক্ত’ এটি অনেকটা নিন্দার্থে ব্যবহার হয়। তবে ভাল অর্থেও এটি বড় বাস্তব। কেননা সত্য কখনো আমাদের ঘাম ঝরিয়ে দেয়। সত্য কখনো নিস্তব্দ করে দেয়। আবার সত্য কখনো বিষন্ন করে দেয়। এরূপ অবস্থায় সত্যের সাথে থাকা গেলে, অন্তর্জ্বালায় পুড়ে পুড়ে হ’লেও ঝিরঝিরে তৃপ্তিদায়ক স্বাদ আস্বাদন করা যায়। জীবনে শুধু একটি সত্যের আগমন ঘটে না। বরং জীবন জুড়ে থাকে বহু সত্যের আনাগোনা। প্রতিটি সত্য ও বাস্তবতা হাযির হয় বিবেককে জাগ্রত করার বার্তা নিয়ে। কিন্তু মানুষ বড় প্রবৃত্তিপরায়ণ। বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে প্রবৃত্তিতে মেতে থাকে। এর পরেও যারা ত্রুটির সংশোধন চায়, স্বভাবের পরিবর্তন চায়, আমলের উন্নতি চায়, তাদেরকে বহু সত্যের মুখোমুখি হ’তে হয়। নফসের সাথে তুমুল জিহাদ চালাতে হয়। জিহাদের প্রতিটা ক্ষণ তো এরূপ হয় যে, মনোশক্তি যেন দুমড়ে মুচড়ে আছে। উঠে দাঁড়াবার হিম্মতটুকুও যেন নেই। চিন্তার অবস্থা থাকে স্বপ্নভঙ্গে বিপর্যস্ত মানুষের মত। চেতনাগুলো থাকে ফুটো হওয়া বেলুনের মত। কিন্তু এসবকে যদি প্রকৃত ছবরের সাথে শান্ত ও সংযত চিত্তে বরণ করা যায় অন্ততঃ বরণ করার চেষ্টা করা যায় তবে শীতলতাটুকু একাই ভোগ করা যায়। আর উপভোগের নির্যাসটা অন্যকে দেয়া যায়। সত্যের বিষয়টি বড়ই অদ্ভূত! শুরুটা তিক্ত। কিন্তু শেষটা যে এতো মিষ্ট তা বলে বোঝানো যায় না ।
অপরদিকে ওহীর বিরতিকাল আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, কল্যাণের ধারা সদা বহমান থাকে না। পরবর্তী কল্যাণের জন্য হৃদয়ের দহন ও অন্তরের দলন ভোগ করতে হয়। মাঝের এ সময়টুকু কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার, বাক হারিয়ে বিমূঢ় হওয়ার, উদ্যম হারিয়ে গতিহীন হওয়ার। এরূপেই হয়ত আল্লাহ মানুষকে শেখান নিরহংকার হ’তে, যবান সংযত করতে, মানুষকে মূল্যায়ন করতে এবং ভীত বিনম্র ও চরম আশ্বস্ত হয়ে রবের প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে।
৬টি বাক্যের আরো কিছু শিক্ষা :
হাদীছে উল্লিখিত মা খাদীজা (রাঃ)-এর মুখনিঃসৃত ৬টি বাক্যের আরো কিছু শিক্ষা রয়েছে। যেমন- (১) মানুষের উত্তম গুণাবলী, সুন্দর আচরণ ও আদর্শ কঠিন বিপদে নিরাপত্তার কারণ হয়। ভাল মানুষ হ’লে বিপদ আসবে না এরূপ নয়। আপতিত বিপদ হয়ে থাকবে হয়ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আগাম সতর্কবাণী স্বরূপ। অথবা আরো বড় বিপদ প্রতিরোধী স্বরূপ। কিংবা এর মাধ্যমে আল্লাহ তার ছবরের পরীক্ষা গ্রহণ করবেন। হয়তবা তিনি বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। হ’তে পারে গোনাহের কাফফারা স্বরূপও। (২) বিপদের ধাক্কা সামলানোর জন্য ব্যক্তির সম্মুখপ্রশংসা বৈধ। এটি তাৎক্ষণিক ফল লাভের এক কার্যকর পদ্ধতি। যেমনটি মা খাদীজা (রাঃ) করেছেন। (৩) উক্ত ছয়টি বাক্যে ফুটে উঠে মা খাদীজা (রাঃ)-এর সুদৃঢ় ও সুপ্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। বাক্য ক’টিতে কোমল কঠিন সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট দলীল রয়েছে যে, তাঁর ছিল মতামতের প্রাজ্ঞতা, ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা, অন্তরের অবিচলতা ও উপলব্ধির বিচক্ষণতা। (৪) এছাড়াও দলীল রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দারিদ্র্য ছিল ইচ্ছাধীন; বাধ্যতামূলক নয়। তিনি দান করে করে দরিদ্র থাকতেন। নিজের উপার্জন দিয়ে অন্যের অভাব দূর করতেন। অক্ষম, দুঃখী ব্যক্তির পাশে দাঁড়াতেন। আর আমরা পয়সা খরচ করি নিজের সুখ-বিলাসে। উপরন্তু কিছু দান করে নিজেকে দানশীল মনে করি বা নিজেকে দানশীল হিসাবে যাহির করার ভান করি।
শেষ কথা :
ইলম অর্জনকারী ও ইলমের সুফল প্রত্যাশাকারীদের নযর রাখা উচিত জিসমানী ও রূহানী প্রস্ত্ততির দিকে। নববী ইলম হাছিল করতে চাই আর নববী আখলাকের ছায়া থাকবে না, চাওয়া পাওয়ার হিসাবটা মিলবে কেমন করে? আবার যে বোনেরা স্বামী হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ টেনে এনে স্বামীদের জব্দ করার চেষ্টা করেন দেখা দরকার তাদের জীবনে মা খাদীজা (রাঃ)-এর অনুসরণ আছে কি-না। যে পুরুষরা স্বামীর আনুগত্যের হাদীছ ইয়াদ করে স্ত্রীদের বাগে রাখতে চান, তাদের জীবনে আছে কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাহর অনুসরণ? অনুরূপভাবে বোন ফাতেমার মত কন্যা চাই, অথচ মা খাদীজার চরিত্র নেই, তাহ’লে আসমানের রহমধারা বর্ষণ হবে কেমন করে? আসলে আমরা সুবিধামত কুরআন হাদীছ ব্যবহার করতে চাই। কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেকে বদলাই না। আবার স্বপ্ন দেখে দেখে আমরা অনেক উঁচুতে উঠে থাকি। কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণে চিন্তাকে ব্যস্ত রাখি না। ঈমানী উন্নতির জন্য নিজেকে কঠোরভাবে আত্মসমালোচনা করি না। নিজের উন্নয়ন ঘটাতে, স্বপ্ন পূরণের পথ পাড়ি দিতে, আমল বৃদ্ধি করতে আমরা কষ্ট করি না। বোঝার চেষ্টা করি না জীবনটা সুখের হাট নয়। যেভাবে চাইব সেভাবে সুখী হয়ে যাব। তার চেয়ে বড় কথা জীবনের উদ্দেশ্য কি সুখী হওয়া? মনমত নিজেকে চালানো? জীবনের উদ্দেশ্য যদি না হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তবে সে জীবনে আমাদের কী ফায়দা? সুখী কিংবা দুঃখী এই হিসাবের চেয়ে বড় হিসাব যেন হয় আমল বৃদ্ধি করা। আল্লাহ ও তার বিধানের আনুগত্য করা। শুধুই আল্লাহর জন্য কাজ করা। প্রয়োজন না হ’লে নিজের আমল যাহির না করা। যথাসাধ্য চেষ্টা করা, প্রচলিত ধারা বর্জন করে ছাহাবা যিন্দেগীর আলো ও ছায়া গ্রহণ করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন আত্মবিশ্বাসী মুমিন ও শক্তিশালী মুত্তাক্বী রূপে গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন!
কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।
[1]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৬১৮১ সনদ ছহীহ।
[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪১।
[3]. মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬০২, ‘নবুঅতের নিদর্শন’ অনুচ্ছেদ ।
[4]. বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬১২, ‘মি‘রাজের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ।
[5]. বুখারী হা/৪৯৫৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১।
[6]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫২; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৩১১৪।
[7]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫৫; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৩১১৬।
[8]. আবূদাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারেমী মিশকাত হা/৩২৬১; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৩১২২ সনদ ছহীহ, ছহীহ ইবনে হিববান হা/৪১৮৯।
[9]. মিরকাত ১০/৫০৮ পৃঃ।
[10]. ঐ, ১০/৫০৮ পৃঃ।
[11]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৪৫।
[12]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৪৪।