উত্তর :
ওমরাহর ইহরাম বাঁধার জন্য মক্কাবাসী হারাম এলাকার বাইরে যাবেন ও সেখান
থেকে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসবেন। এজন্য সবচেয়ে নিকটবর্তী হ’ল ৬ কিঃমিঃ
উত্তরে ‘তান‘ঈম’ এলাকা। বিদায় হজ্জের সময় ওমরাহর ইহরাম বাঁধার জন্য
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে তার ভাই আব্দুর রহমানের সাথে
এখানে পাঠিয়েছিলেন (বুখারী হা/১৫/১৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৫৬, ২৬৬৭)।
এটাই হ’ল জমহূর বিদ্বানগণের মত। এমনকি মুহেববুদ্দীন ত্বাবারী বলেন, ওমরাহর
জন্য মক্কাকে মীক্বাত গণ্য করেছেন, এমন কোন বিদ্বান সম্পর্কে আমি জানিনা’ (সুবুলুস সালাম)।
মীক্বাত সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদীছটির শেষ দিকে বলা হয়েছে حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ ‘এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে’ (বুখারী হা/১৫২৪; মুসলিম হা/১১৮১)। এক্ষণে উক্ত দুই হাদীছের মধ্যে বিদ্বানগণ যেভাবে সমন্বয় করেছেন তা এই যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীছটি ‘আম, যা কেবল হজ্জ ও হজ্জে ক্বিরানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছটি ‘খাছ’। যা কেবল ওমরাহর জন্য প্রযোজ্য হবে। অতএব সর্বজনগৃহীত নীতি অনুযায়ী এখানে ‘খাছ’ অগ্রগণ্য হবে এবং ওমরাহর ক্ষেত্রে আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছের উপর আমল হবে। আর সেটাই সর্বদা হয়ে আসছে। অর্থাৎ মক্কাবাসীগণ পৃথকভাবে ওমরাহর জন্য হারাম এলাকার বাইরে যাবেন ও সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে আসবেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/১৪৩-৪৭)।
উছায়মীন বলেন, যদি কেউ বলেন যে, আয়েশা (রাঃ) মক্কার বাসিন্দা ছিলেন না। সেজন্য তাঁকে মক্কার বাইরে গিয়ে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসতে বলা হয়েছিল। আমরা বলব, বহিরাগতদের জন্য মক্কা থেকে ওমরাহর ইহরাম বাঁধায় কোন বাধা নেই। কেননা তাদের জন্য মক্কা থেকে (৮ তারিখে) হজ্জের ইহরাম বাঁধায় কোন বাধা নেই। এক্ষণে যদি মক্কা ওমরাহর ইহরামের জন্য মীক্বাত হ’ত, তাহ’লে সেটা মক্কাবাসী ও বহিরাগত সকলের জন্যই হ’ত। বিষয়টি খুবই পরিষ্কার। দ্বিতীয়তঃ ওমরাহ হ’ল যিয়ারত। যা অবশ্যই বাইরে থেকে আসার মাধ্যমে সম্পন্ন হ’তে পারে। যদি কেউ বলেন, এর ফলে মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধার নেকীতে ঘাটতি পড়ে যাবে। আমরা বলব, ঘাটতি হবে না। কেননা যে ব্যক্তি মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধেন, তিনি বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ করতে পারেন না, হারামের বাইরে গিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে ফিরে না আসা পর্যন্ত।
অতএব যারা বলেন মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধবেন, তাঁদের কথা দলীল, অভিধান ও মর্ম সব দিক দিয়েই দুর্বল’ (ওছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ‘আলা যাদিল মুসতানক্বে‘ ৭/৫২)।
আমরা মনে করি আয়েশা (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর গৃহীত আমলই এখানে অগ্রগণ্য। কেননা তিনি সর্বদা সহজটাকেই অগ্রাধিকার দিতেন। এতদসত্ত্বেও সে যুগে অনেক কষ্ট করেই গভীর রাতে দুর্গম পথে আয়েশা (রাঃ)-কে বাইরে গিয়ে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসতে হয়েছিল। মক্কা থেকে জায়েয হলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ স্ত্রীকে এভাবে কষ্ট দিতেন না। ছাহেবে সুবুলের ধারণা অনুযায়ী আয়েশাকে খুশী করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, যুক্তিটি দুর্বল। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। (আলোচনা দ্রষ্টব্য : ফাৎহুল বারী হা/১৫২৪; সুবুলুস সালাম হা/৬৭৫-এর ব্যাখ্যা)।