উত্তর : বাহাঈ একটি ধর্মত্যাগী কাফের সম্প্রদায়। ১২৬০ হি. মোতাবেক ১৮৪৪ সালে বারো ইমামে বিশ্বাসী শী‘আদের থেকেই এ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। আলী মুহাম্মাদ রেযা শীরাযী নামক এক ব্যক্তি এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। যার উপাধি ছিল ‘আলবাব’। সে নিজেকে প্রথমে বাবুল মাহদী, এরপর মাহদী, তারপর রাসূল এবং পরবর্তীতে সকল রাসূলের শ্রেষ্ঠ রাসূল হিসাবে দাবী করে। আর তার উপাধির সাথে সম্পৃক্ত করে ‘বাবিয়া’ নামে সম্প্রদায়টি গড়ে উঠে। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে মিরযা হুসাইন আলী ‘বাহাউল্লাহ’ বা ‘বাহাউদ্দীন’ উপাধি নিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হন। অতঃপর তার অনুসারীর বাহাঈ নামে পরিচিত হয়। এদের রচিত গ্রন্থ হচ্ছে ‘আল-বায়ান’ এবং ‘আল-আকদাস’। তাদের দাবী এ গ্রন্থদ্বয় দ্বারা কুরআনকে রহিত করে দিয়েছে এবং তাদের ধর্মের আগমনের মাধ্যমে ইসলাম রহিত হয়ে গেছে। বাহাউদ্দীন ১৮৯২ সালে মারা যায়।
এক্ষণে তাদের আক্বীদাসমূহ হ’ল- (১) ‘আলবাব’ই তার নির্দেশ দ্বারা প্রতিটি বস্ত্ত সৃষ্টি করেছে। সে-ই সব কিছুর শুরু এবং তার থেকেই সব কিছু প্রকাশিত হয়েছে। তার শরীর সকল সৃষ্টির মধ্যে প্রবেশ করেছে। (২) তাদের ধর্মের সৎ ব্যক্তিদের আত্মা সম্মানিত কিছুতে রূপান্তরিত হবে এবং অসৎ ব্যক্তিদের আত্মা শুকর, কুকুর ইত্যাদি নিকৃষ্ট পশুতে রূপান্তরিত হবে। (৩) তারা ১৯ সংখ্যাটিকে পবিত্র মনে করে। তাদের বছর হয় ১৯ মাসে এবং মাস হয় ১৯ দিনে। (৪) তাদের মতে, সকল নবীর মু‘জিযা মিথ্যা এবং ফেরেশতা ও জিন জাতির কোন অস্তিত্ব নেই। (৫) জান্নাত-জাহান্নাম বলে কিছু নেই। (৬) তাদের মতে, কুরআনে ক্বিয়ামত বলতে ‘বাহা’র প্রকাশিত হওয়া এবং মুহাম্মাদী শরী‘আতের সমাপ্তি বুঝানো হয়েছে। (৭) ইসরাঈলের উকা শহরে অবস্থিত ‘কাছরুল বাহযাহ’ তাদের ক্বিবলা। (৮) তারা নারীদের জন্য পর্দা করাকে হারাম এবং মুত‘আ বিবাহকে হালাল গণ্য করে। তাদের নিকট নারী-পুরুষ ভেদাভেদহীন। কেউ কারো জন্য হারাম নয়। সবাই সবার বিচরণস্থল। (৯) তাদের ছালাত তিন ওয়াক্তে নয় রাক‘আত। জামা‘আতে ছালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। (১০) তাদের ছিয়াম হচ্ছে ২রা মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৯ দিন। (১১) উকা শহরে ‘বাহা’র কবরে যাওয়াই তাদের হজ্জ। ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তীন, লেবানন, ভারত, পাকিস্তান সহ ইউরোপ-আফ্রিকা বিভিন্ন দেশে এ সম্প্রদায়ের বসবাস। শিকাগোতে এদের সর্ববৃহৎ উপাসনালয় রয়েছে। এদের প্রধান কেন্দ্র ইসরাঈলে অবস্থিত। এদের আনুমানিক ৬০ লক্ষ অনুসারী রয়েছে (বিস্তারিত দ্রঃ ড. তলা‘আত যাহরান, আল-বাহাইয়াহ; ইহসান ইলাহী যহীর, আল-বাহাইয়াহ; নাকদ ওয়া তাহলীল)।