উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবায় মিম্বার ব্যবহার করতেন না। উমাইয়া খলীফা মারওয়ান বিন হাকাম (৬৪-৬৫ হিঃ) সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বার ব্যবহার করেন।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে পৌঁছে প্রথমে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর তারা তখন স্ব স্ব কাতারে বসা থাকত। ... রাবী বলেন, মানুষ এভাবে আমল করতে থাকে। পরে আমি মারওয়ানের সাথে ঈদুল ফিৎর অথবা ঈদুল আযহায় গেলাম। তখন তিনি মদীনার আমীর। মাঠে এসে দেখি কাছীর ইবনুছ ছালত মাটি ও কাঁচা ইট দ্বারা একটি মিম্বার তৈরী করেছে। মারওয়ান মিম্বরে চড়ে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিতে চাইলে আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি জোরপূর্বক মিম্বরে উঠে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করলে। মারওয়ান বললেন, আবু সাঈদ! তুমি যে নিয়ম জান ঐ নিয়ম এখন চলবে না। আমি বললাম, আমি যে নিয়ম জানি তাতেই কল্যাণ রয়েছে। তখন মারওয়ান বললেন, মানুষ ছালাতের পর আমার খুৎবা শুনার জন্য বসে না। তাই আমি খুৎবাকে ছালাতের পূর্বে করেছি’ (বুখারী হা/৯৫৬; মুসলিম, হা/৮৮৯ ‘ঈদায়েন-এর ছালাত’ অধ্যায়)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মারওয়ান ঈদের দিন মিম্বার নিয়ে বের হ’লেন এবং ছালাতের পূর্বেই খুৎবা শুরু করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের বিরোধিতা করলে। ঈদের দিন তুমি মিম্বর বের করলে যা কখনো এখানে বের হয়নি! আবার তুমি ছালাতের পূর্বে খুৎবাও শুরু করলে! একথা শুনে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি কে? তখন উপস্থিত অন্যরা বলল, অমুক। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান (আবুদাঊদ হা/১১৪০)। এই হাদীছ শুনানোর মাধ্যমে তিনি ঐ ব্যক্তির প্রতিবাদকে সমর্থন করলেন এবং প্রকারান্তরে তিনি ছালাতের পূর্বে খুৎবা ও মিম্বার উভয়েরই প্রতিবাদ করলেন।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে মিম্বর মসজিদ হ’তে বের করে মাঠে নিয়ে যাওয়া হ’ত না, সর্বপ্রথম মারওয়ান ইবনুল হাকাম এটি করেছেন’ (যাদুল মাআদ ১/৪৩১ পৃঃ)

উপরোক্ত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খলীফা মারওয়ানই তার শাসনামলে সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বারের প্রচলন ঘটান। আবু সাঈদ (রাঃ) ও অন্যান্যগণ যার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।

এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে দিয়েছেন মর্মে প্রশ্নকারীর উপস্থাপিত দলীলগুলির বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :

(১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি কুরবানীর ঈদে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন খুৎবা শেষ করলেন, তখন মিম্বার থেকে নামলেন’ (আহমাদ হা/১৪৯৩৮, আবুদাঊদ হা/২৮১০; তিরমিযী হা/১৫২১)

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি মুত্ত্বালিব ও জাবের (রাঃ)-এর মাঝে ইনক্বিতা‘ বা সনদে বিচ্ছিন্নতার দোষে দুষ্ট...। রাবী মুত্ত্বালিব একজন মুদাল্লিস রাবী। অতএব এরূপ বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। তাছাড়া অন্য বর্ণনায় এ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমে জাবের থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেখানে মিম্বারের কথা উল্লেখ নেই (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩-এর আলোচনা দ্রঃ)

(২) অন্যত্র জাবের (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা শেষে অবতরণ করে নারীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন(বুখারী হা/৯৭৮)। এ হাদীছের ব্যাপারে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘ইতিপূর্বে ‘মুছাল্লার দিকে বের হওয়া’ অনুচ্ছেদে পাওয়া গেছে যে, রাসূল (ছাঃ) ঈদের মুছাল্লায় যমীনের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তাই সম্ভবতঃ রাবী স্থান পরিবর্তনকে অবতরণ করা শব্দে এনেছেন’(ضَمَّنَ النُّزُولَ مَعْنَى الاِنْتِقَالِ) (ফাৎহুল বারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ২/৪৬৭)

(৩) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ঈদের মুছাল্লা সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঈদের দিন রাসূল (ছাঃ)(أَتَى الْعَلَمَ الَّذِى عِنْدَ دَارِ كَثِيرِ بْنِ الصَّلْتِ) কাছীর বিন ছালতের বাড়ির সামনে যে  নিশানা ছিল সেখানে আসলেন এবং ছালাত আদায়ের পর খুৎবা দিলেন (বুখারী হা/৯৭৭)

উল্লেখ্য যে, হাদীছে বর্ণিত নিশানা এবং কাছীর ইবনুছ ছালতের বাড়ী কোনটিই রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তা পরবর্তীতে তৈরীকৃত। কারণ হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ)-এর মুছাল্লা ছিল খোলা ময়দান। সেখানে কোন সুৎরা বা নিশানা ছিল না। ফলে তার সামনে একটি বর্শা পুঁতে দেওয়া হ’ত এবং তিনি সেদিকে ফিরে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু মাজাহ হা/১৩০৪, ইবনু রজব হাম্বলী, ফৎহুল বারী হা/৯৭৭ এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। অর্থাৎ পরবর্তীতে সেখানে বাড়ি এবং নিশানা নির্মিত হওয়ার পর ইবনু আববাস (রাঃ) ঐ ব্যক্তিকে সেগুলির মাধ্যমে স্থানটি চিনিয়ে দিচ্ছিলেন মাত্র।

(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে জুম‘আ, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিৎরের খুৎবা দিতেন’। এ হাদীছটি যঈফ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩)

সুতরাং সার্বিক পর্যালোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের খুৎবা মিম্বারে দেয়ার প্রমাণে কোন বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য দলীল নেই। সুতরাং মিম্বারহীন খোলা ময়দানে দাঁড়িয়েই খুৎবা দিতে হবে।






প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : জনৈক বক্তা বলেন, ওযর ব্যতীত হজ্জ থেকে বিরত থাকা ব্যক্তি ইহূদী বা খ্রিষ্টান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। একথা কোন সত্যতা আছে কি? - -সাইফুদ্দীন, মান্দা, নওগাঁ।
প্রশ্ন (৩০/৪৩০) : যে রোগীর জন্য দাঁড়ালে বসা কষ্টকর হয়, বসলে দাঁড়াতে কষ্টকর হয়, তিনি কীভাবে ছালাত আদায় করবেন? তিনি কি তার সম্পূর্ণ ছালাতে বসে পড়বেন; নাকি দাঁড়িয়ে পড়বেন?
প্রশ্ন (৩১/১৯১) : মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করার উদ্ভব কখন থেকে হয়? - -রফীকুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
প্রশ্ন (২০/৩৪০) ‘আসসালামু ‘আলা মানিত্তাবা‘আল হুদা’ বাক্যটি কেবল অন্যধর্মের লোকদের প্রতি সালাম প্রদানের সময় বলতে হবে কি?
প্রশ্ন (১/২৪১) : করোনা ভাইরাসের আতংকে সঊদী আরবের মসজিদসমূহে আযানের সময় ‘হাইয়া আলাছ-ছালাহ’-এর বদলে ‘ছাল্লূ ফী বুয়ূতিকুম’ বলা হচ্ছে। এটা কি শরী‘আত সম্মত? - -এনামুল হক, পাংশা, রাজবাড়ী।
প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : আমরা ৩ বান্ধবী একসাথে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে পড়ার জন্য থাকি। সম্প্রতি আমি জানতে পারি যে, বাসায় থাকা অবস্থায় তোলা আমার পর্দাহীন কিছু ছবি আমার বান্ধবীর মাধ্যমে কিছু ছেলে দেখেছে। এজন্য আমি গুনাহগার হব কি?
প্রশ্ন (১৩/২৫৩) : জুম‘আর খুৎবার সময়ে ইমাম কোন প্রশ্ন করলে মুছল্লীরা উত্তর দিতে পারবে কি?
প্রশ্ন (১৫/১৩৫) : বর্তমানে রাসূল (ছাঃ)-এর কবরটি সবুজ গম্বুজ দ্বারা সুশোভিত করে রাখা আছে। এটা কি শরী‘আতসম্মত?
প্রশ্ন (৮/৩২৮) : আমি যে কোম্পানীতে কাজ করি সেই কোম্পানীতে মাঝে-মধ্যে বাহিরের কিছু শ্রমিক এনে কাজ করাই, তাদের সাথে আমার চুক্তি হয় প্রতি ঘন্টা আট ডলার, আর আমি কোম্পানীর সাথে চুক্তি করি দশ ডলার। অতিরিক্ত ডলার কি আমি গ্রহণ করতে পারব? - -মাহবূবুর রহমান, সিঙ্গাপুর।
প্রশ্ন (৭/৪৭) : ঈদের মাঠ পাকা করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৩৪/১১৪) : লওহে মাহফূয সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : জনৈক আলেম বলেন, কেবল চামড়ার মোটা মোজা পরিধান করলেই মাসাহ করা যাবে, সাধারণ মোজায় নয়। এক্ষণে সূতী মোজা পরিধান করলে মাসাহ করা যাবে কি? এছাড়া বুট জুতার উপর দিয়ে মাসাহ করা যাবে কি?
আরও
আরও
.