উত্তর : উক্ত
মর্মে ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে একটি বর্ণনা এসেছে, যার সনদকে হাকেম ও
বায়হাক্বী ছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ যঈফ ও জাল বলেছেন। বায়হাক্বী এর সনদ
ছহীহ বললেও একেবারেই ‘শায’ বলে উল্লেখ করেছেন (হাকেম হা/৩৮২২;
বায়হাক্বী, আল-আসমাউস ছিফাত হা/৮৩১-৮৩২; মোল্লা আলী ক্বারী, আল-আসরারুল
মারফূ‘আ‘হ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ ১/৯৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১১৩; সুয়ূতী,
আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৪৬২; আব্দুর রহমান আল-মু‘আল্লিমী, আল-আনওয়ারুল
কাশিফাহ ১১৭-১১৮ পৃ.)। ইমাম আহমাদ হাদীছটিকে মুনকার বলেছেন (ইবনু কুদামাহ, আল-মুনতাখাব মিন ইলালিল খাল্লাল ১২৫ পৃ.)। সুয়ূতী বলেন, এই হাদীছকে ইমাম হাকেমের ছহীহ বলাতে আমি অতীব আশ্চর্যান্বিত (তাদরীবুর রাবী ১/২৬৮)। ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, যখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বর্ণনাটি যঈফ তখন এর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই (আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১১৩)।
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটির সনদ যদি ছহীহও ধরে নেয়া হয়, তবুও
এর মতন ছহীহ নয়। কারণ ইবনু আববাস হয়তো এটি ইসরাঈলী রেওয়ায়াত হিসাবে বর্ণনা
করেছেন (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ১/২১)।
উল্লেখ্য যে, সাত যমীনের অর্থ সাতটি স্তর। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও সেই পরিমাণ। এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়। যাতে তোমরা জানো যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী। আর আল্লাহ সবকিছুকে তাঁর ইলম দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন’ (তালাক্ব ১২)। এই আয়াতের তাফসীরে এসেছে, সাঈদ ইবনু জুবায়ের বলেন, এক ব্যক্তি ইবন আববাস (রাঃ)-কাছে এসে তিনবার উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাইল। তিনি কোন জবাব দিলেন না। মানুষজন তাঁর কাছ থেকে চলে গেলে লোকটি আবার বলল, কেন আপনি আমার জবাব দিচ্ছেন না? ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, আমি যদি তোমাকে সে-ব্যাখ্যা বলি তাহ’লে তুমি কুফরী করবে না, এমন আশঙ্কা থেকে তুমি কি মুক্ত? লোকটি বলল, আমাকে সে-ব্যাখ্যা বলুন। ইবনু আববাস বললেন, আসমান যমীনের নিচে আর যমীন আসমানের উপরে। এভাবে একটা আরেকটার সাথে গুটানো আছে। আসমান-যমীন সমূহের মাঝে এভাবে ঘুরে, যেমন নাটাই তার সূতা নিয়ে ঘুরে। (কিতাবুল আযামাহ, ২/৬৪৩; তাফসীরুর রাগেব ১/৫২৫; এর সনদ গ্রহণযোগ্য)। যাহ্হাক, যুহায়লীসহ অনেকে মনে করেন, সাতটি যমীন রয়েছে, তবে একটির সাথে আরেকটি মিলে আছে, এমনটি নয় (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১৭৫; তাসীরুল মুনীর ২৮/২৯৯)। শায়খ আত্বিয়া সালেম বলেন, যমীন সাতটি একটির সাথে আরেকটি মিলে আছে। এদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই (শরহ বুলূগুল মারাম ৬/২১৩)।
সর্বোপরি এটি অদৃশ্যের জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় না, সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কোন মন্তব্য না করাই কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা ১৬/৩৬)।