মজুদদারী হারাম হওয়ার শর্ত সমূহ :
মজুদদারী হারাম হওয়ার জন্য ফকীহগণ কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। যথাঃ-
১. মজুদকৃত বস্ত্ত মজুদকারী ও তার পরিবারের এক বছরের প্রয়োজন পূরণের অতিরিক্ত হতে হবে। কারণ এক বছরের জন্য কোন ব্যক্তি তার ও তার পরিবারের প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করতে পারে।
ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَتْ أَمْوَالُ بَنِى النَّضِيرِ مِمَّا أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا لَمْ يُوجِفِ الْمُسْلِمُونَ عَلَيْهِ بِخَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ، فَكَانَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَاصَّةً، يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ مِنْهَا نَفَقَةَ سَنَتِهِ، ثُمَّ يَجْعَلُ مَا بَقِىَ فِى السِّلاَحِ وَالْكُرَاعِ، عُدَّةً فِى سَبِيلِ اللهِ-
‘বনু
নাযীরের সম্পদ আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ফায় হিসাবে দান করেছিলেন। যা অর্জনের
জন্য মুসলমানরা ঘোড়া দৌড়ায়নি বা সওয়ারী পরিচালনা করেনি। তাই তা রাসূল
(ছাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। তিনি এত্থেকে তাঁর পরিবারের এক বছরের খরচ
নির্বাহ করতেন। বাকী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্ত্ততির জন্য
অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া ক্রয়ে ব্যয় করতেন’।[1]
অন্য
হাদীছে এসেছে,عَنْ عُمَرَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه
وسلم كَانَ يَبِيعُ نَخْلَ بَنِى النَّضِيرِ، وَيَحْبِسُ لِأَهْلِهِ قُوتَ
سَنَتِهِمْ- ‘ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বনু নাযীরের খেজুর বিক্রি
করতেন এবং তার পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য জোগাড় করে রাখতেন’।[2] ইবনু
দাকীকুল ঈদ (রহঃ) বলেছেন, فِي الْحَدِيثِ جَوَازُ الِادِّخَارِ لِلْأَهْلِ
قُوتَ سَنَةٍ- ‘হাদীছে পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য মজুদ করা জায়েয হওয়ার
প্রমাণ রয়েছে’।[3]
উক্ত হাদীছ দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর পরিবারের প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে এক বছরের জন্য খাদ্য মজুদ করে রেখেছিলেন।
২. মজুদকৃত জিনিস শহর/নগরের
বাজার থেকে ক্রয়কৃত হ’তে হবে। যদি দেশের বাইরে থেকে আমদানীকৃত হয় বা
মজুদদারের নিজস্ব জমির উৎপাদিত ফসল হয়, তাহ’লে তা মজুদদারির আওতায় পড়বে না।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ الطَّعَامُ مِنْ
ضَيْعَتِهِ فَحَبَسَهُ فَلَيْسَ بِمُحْتَكِرٍ ‘যখন তার জমির উৎপাদিত ফসল
থেকে খাদ্য আসবে এবং সে তা জমা করে রাখবে তখন সে মজুদদার হিসাবে গণ্য হবে
না’।[4] কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পণ্য আমদানীকারক রিযিকপ্রাপ্ত আর মজুদদার অভিশপ্ত’।[5]
হাম্বলী
ফকীহ ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন,وَلِأَنَّ الْجَالِبَ لَا يُضَيِّقُ عَلَى
أَحَدٍ، وَلَا يَضُرُّ بِهِ، بَلْ يَنْفَعُ، فَإِنَّ النَّاسَ إذَا
عَلِمُوْا عِنْدَهُ طَعَامًا مُعَدًّا لِلْبَيْعِ، كَانَ ذَلِكَ أَطْيَبُ
لِقُلُوبِهِمْ مِنْ عَدَمِهِ- ‘কারণ আমদানীকারক কাউকে কষ্টে ফেলে না এবং
কারো ক্ষতি করে না; বরং উপকার করে। সুতরাং মানুষ যখন জানবে যে তার কাছে
বিক্রয়ের জন্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্ত্তত আছে, তখন তা না থাকার চেয়ে সেটা তাদের
জন্য অধিক হৃদয় শীতলকারী হবে’।[6]
তবে সঠিক
কথা হ’ল, এই শর্তটি আবশ্যিক নয়। কারণ হুকুম তার কারণ বিদ্যমান থাকা ও না
থাকার সাথে আবর্তিত হয়। আর মজুদদারী হারাম করার কারণ হ’ল ক্ষতিসাধন। কাজেই
দেশের বাইরে থেকে আমদানীকৃত জিনিসের ক্ষেত্রেও উক্ত কারণ (ক্ষতিসাধন)
বিদ্যমান থাকলে তাতে মজুদদারির বিধান প্রযোজ্য হবে। মজুদকৃত জিনিস জমির
উৎপাদিত ফসল হওয়া বা বাজার থেকে ক্রয়কৃত হওয়া বা দেশের বাইরে থেকে আমদানী
করা এ ধরনের পার্থক্যকরণের কোন শারঈ দলীল নেই। কারণ এর সবই মানুষকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদেরকে কষ্টে ফেলে।[7]
৩. মজুদকৃত বস্ত্ত খাদ্যদ্রব্য হতে হবে। হানাফী, শাফেঈ ও হাম্বলীদের মত এটি। তারা যেসব হাদীছে ‘আম বা সাধারণভাবে মজুদদারী থেকে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলি দ্বারা দলীল দিয়ে থাকেন। যেমন, مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ ‘যে পণ্য মজুদ করে রাখবে সে পাপী’।[8] এছাড়া তাদের আরো কিছু দলীল রয়েছে।
ইমাম
মালেক (রহঃ) বলেন,اَلْحُكْرَةُ فِي كُلِّ شَيْءٍ فِي السُّوقِ مِنَ
الطَّعَامِ وَالْكَتَّانِ وَالزَّيْتِ وَجَمِيعِ الْأَشْيَاءِ وَالصُّوفِ
وَكُلِّ مَا يَضُرُّ بِالسُّوقِ... فَلَا بَأْسَ بِذَلِكَ إذَا كَانَ لَا
يَضُرُّ بِالسُّوقِ. ‘বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসে মজুদদারী হয়। যেমন
খাদ্যদ্রব্য, লিনেন বস্ত্র, তেল, পশম এবং অন্য সকল জিনিসে, যার মজুদ
বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ... তবে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করলে এতে কোন
সমস্যা নেই’।[9]
ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)
বলেন,كُلُّ مَا أَضَرَّ بِالْعَامَّةِ حَبْسُهُ فَهُوَ احْتِكَارٌ وَإِنْ
كَانَ ذَهَبًا أَوْ فِضَّةً أَوْ ثَوْبًا- ‘যে কোন জিনিস মজুদ করলে যদি
জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেটাই মজুদদারী হিসাবে গণ্য হবে। যদিও
মজুদকৃত বস্ত্ত স্বর্ণ, রৌপ্য বা কাপড় হয়’।[10]
ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,
وَظَاهِرُ أَحَادِيثِ الْبَابِ أَنَّ الِاحْتِكَارَ مُحَرَّمٌ مِنْ غَيْرِ فَرْقٍ بَيْنَ قُوتِ الْآدَمِيِّ وَالدَّوَابِّ وَبَيْنَ غَيْرِهِ- وَالتَّصْرِيحُ بِلَفْظِ الطَّعَامِ فِي بَعْضِ الرِّوَايَاتِ لَا يَصْلُحُ لِتَقْيِيدِ بَقِيَّةِ الرِّوَايَاتِ الْمُطْلَقَةِ، بَلْ هُوَ مِنْ التَّنْصِيصِ عَلَى فَرْدٍ مِنْ الْأَفْرَادِ الَّتِي يُطْلَقُ عَلَيْهَا الْمُطْلَقُ-
‘বাবের
হাদীছগুলির প্রকাশ্য মর্ম অনুযায়ী মজুদদারী হারাম। এক্ষেত্রে মানুষ ও
চতুষ্পদ জন্তুর খাদ্য ও অন্য জিনিসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কতিপয়
বর্ণনায় الطَّعَام বা খাদ্য শব্দটি উল্লেখ থাকলেও সেটা বাকী মুতলাক
(নিঃশর্ত) বর্ণনাগুলোকে শর্তযুক্ত করার উপযুক্ত নয়। বরং তা কোন একজন
ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, যার উপর মুতলাক হুকুম প্রযোজ্য’।[11]
তিনি
আরো বলেন,وَالْحَاصِلُ أَنَّ الْعِلَّةَ إِذَا كَانَتْ هِيَ الْإِضْرَارَ
بِالْمُسْلِمِينَ لَمْ يَحْرُمِ الِاحْتِكَارُ إلَّا عَلَى وَجْهٍ يَضُرُّ
بِهِمْ وَيَسْتَوِيْ فِي ذَلِكَ الْقُوتُ وَغَيْرُهُ؛ لِأَنَّهُمْ
يَتَضَرَّرُونَ بِالْجَمِيعِ- ‘মোদ্দাকথা, মজুদদারী নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ
যেহেতু মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, সেহেতু তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে
মজুদদারী হারাম হবে না। এক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য ও অন্য জিনিস সমপর্যায়ভুক্ত।
কারণ জনগণ সকল দ্রব্য মজুদের দ্বারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়’।[12]
মদীনার
তায়বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মাহমূদ আবূ যায়েদ বলেন,إنَّ
الاحتكار يحمل كل معاني الظلم والاستبداد والحبس المؤدي إلى الإضرار بالناس
وهو عام يشمل القوت وغيره، متى وُجِدَ سببُهُ، ولهذا أجمع العلماء على
أنَّ الاحتكار منهي عنه في التشريع الإسلامي لما فيه من الإضرار بالناس،
والتضييق عليهم، واتفقوا على أنَّه محرم، ‘মজুদদারী যুলুম, স্বেচ্ছাচারিতা
এবং পণ্য মজুদ করে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বলতে যা বুঝায় তার সব অর্থকেই
বহন করে। আর মজুদদারী ‘আম, যা খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য জিনিসকে শামিল করে।
যখন এর কারণ পাওয়া যাবে। এজন্য আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ইসলামী
শরী‘আতে মজুদদারী নিষিদ্ধ। কারণ এর ফলে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় এবং
তাদেরকে সংকটে ফেলা হয়। তারা এ বিষয়েও ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মজুদদারী
হারাম’।[13]
ইমাম ছান‘আনী (রহঃ) বলেন,
ولا يخفى أن الأحاديث الواردة في منع الاحتكار وردت مطلقة ومقيدة بالطعام وما كان من الأحاديث على هذا الأسلوب فإنه عند الجمهور لا يقيد فيه المطلق بالمقيد لعدم التعارض بينهما، بل يبقى المطلق على إطلاقه وهذا يقتضي أنه يعمل بالمطلق في منع الاحتكار مطلقا-
‘প্রকাশ থাকে যে, মজুদদারী
নিষিদ্ধের হাদীছগুলি মুতলাক বা সাধারণভাবে এবং খাদ্যদ্রব্যের সাথে মুকাইয়াদ
বা শর্তযুক্ত হয়ে বর্ণিত হয়েছে। আর যেসব হাদীছ এভাবে বর্ণিত হয়েছে জমহুরের
নিকট সেগুলিতে মুতলাককে মুকাইয়াদ করা যাবে না। কারণ এতদুভয়ের মাঝে
দ্বন্দ্ব নেই। বরং মুতলাক তার ইতলাকের (সাধারণ হুকুম) উপর অবশিষ্ট থাকবে।
আর এর দাবী হ’ল, সাধারণভাবে মজুদদারী নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মুতলাকের উপর
আমল করতে হবে’।[14]
মোটকথা, মজুদকৃত বস্ত্ত যাই হোক না কেন তার দ্বারা যদি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা হারাম হবে। শুধু খাদ্যদ্রব্যের সাথে একে খাছ করার কোন দলীল নেই। এক্ষেত্রে ইমাম মালেক ও আবু ইউসুফ (রহঃ) প্রমুখের মত প্রাধান্যযোগ্য।
৪. মজুদকৃত পণ্যের দ্বারা উদ্দেশ্য হবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অপেক্ষায় থাকা এবং অধিক লাভ করার আকাঙ্ক্ষা।
৫. মজুদদারী এমন সময় হবে যখন মানুষ মজুদকৃত পণ্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে।[15]
৬. এমন শহর/নগরে মজুদদারী হতে হবে যেখানে সে সময় পণ্য মজুদের ফলে শহরের অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।[16]
মজুদদারী প্রতিরোধে করণীয় :
১.
বাজারে পণ্য যখন ব্যাপক আমদানী হয় তখন অত্যধিক মুনাফা লাভের প্রত্যাশায়
মুনাফাখোররা সস্তা দামে তা ক্রয় করে মজুদ করে রাখে এবং বাজারে পণ্যের
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। সুতরাং মুনাফাখোরী ও মজুদদারী প্রতিরোধের জন্য
সর্বাগ্রে সরকারীভাবে মজুদদারীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ওমর ফারূক (রাঃ) ও
ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মজুদদারীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।[17] ওমর
(রাঃ) তাঁর খেলাফতকালে ব্যবসায়ীদেরকে বলেছিলেন,لاَ حُكْرَةَ فِى سُوقِنَا
لاَ يَعْمِدُ رِجَالٌ بِأَيْدِيهِمْ فُضُولٌ مِنْ أَذْهَابٍ إِلَى رِزْقٍ
مِنْ رِزْقِ اللهِ نَزَلَ بِسَاحَتِنَا فَيَحْتَكِرُونَهُ عَلَيْنَا
وَلَكِنْ أَيُّمَا جَالِبٍ جَلَبَ عَلَى عَمُودِ كَبِدِهِ فِى الشِّتَاءِ
وَالصَّيْفِ فَذَلِكَ ضَيْفُ عُمَرَ فَلْيَبِعْ كَيْفَ شَاءَ اللهُ
وَلْيُمْسِكْ كَيْفَ شَاءَ اللهُ. ‘আমাদের বাজারে কেউ মজুদদারী করবে না।
যাদের হাতে অতিরিক্ত মুদ্রা আছে, তারা যেন আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা সমূহ হ’তে
কোন জীবিকা (খাদ্যশস্য) ক্রয় করে আমাদের উপর মজুদদারী করার ইচ্ছা না করে।
তবে যে ব্যক্তি প্রচন্ড শীত ও গ্রীষ্মকালে নিজের পিঠে বোঝা বহন করে
(খাদ্যশস্য) আনবে সে ওমরের মেহমান। আল্লাহর ইচ্ছায় সে যেভাবে ইচ্ছা বিক্রি
করুক এবং যেভাবে ইচ্ছা মজুদ করুক’।[18]
২.
পণ্য মজুদের ফলে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি
হ’লে সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং মুনাফাখোরী ও
মজুদদারী প্রতিরোধের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। সাইয়িদ সাবিক
এ সম্পর্কে বলেন,على أن التجار إذا ظلموا وتعدوا تعديا فاحشا يضر بالسوق
وجب على الحاكم أن يتدخل ويحدد السعر صيانة لحقوق الناس، ومنعا للاحتكار،
ودفعا للظم الواقع عليهم من جشع التجار- ‘তবে ব্যবসায়ীরা যখন যুলুম করবে
এবং মূল্যের ব্যাপারে চরমভাবে বাড়াবাড়ি করবে, যা বাজার ব্যবস্থাপনাকে
ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তখন মানুষের অধিকার রক্ষাকল্পে, মজুদদারী প্রতিরোধকল্পে
এবং ব্যবসায়ীদের লোভ হেতু জনসাধারণের উপর চেপে বসা যুলুমের অবসানকল্পে
শাসকের এতে হস্তক্ষেপ করা এবং দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া আবশ্য
কর্তব্য’।[19]
৩. মুজদদারী প্রতিরোধের এক কার্যকর ও বলিষ্ঠ উপায় হচ্ছে যাকাত। কারণ মজুদকৃত সম্পদের উপরেই যাকাত ধার্য করা হয়ে থাকে। সুতরাং সরকারীভাবে যাকাত আদায়কে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪.
বাজার তদারকির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে ‘আল-হিসবাহ’
ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। মুনাফাখোরী ও মজুদদারী সহ রাষ্ট্রের যাবতীয়
অর্থনৈতিক দুর্নীতি রোধে এ বিভাগ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ড. শাওকী
আব্দুহু আস-সামী এ বিভাগের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, يقوم بمراقبة الدولة،
كما أنه يراقب الحالة الاقةصادية، فمنع الاحةكار والغش والةعامل بالربا إلى
غير ذلك من الأمور الاقةصادية للدولة، بجانب رد الحقوق إلى أصحابها- ‘এ
বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (মুহতাসিব) যেমন রাষ্ট্রের কার্যক্রম
পর্যবেক্ষণ করবেন, তেমনি তিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাও তদারকি করবেন।
মজুদদারী, ধোঁকাবাজি, পণ্যে ভেজাল প্রদান ও সূদী কারবার সহ রাষ্ট্রের
যাবতীয় অনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন। পাশাপাশি
হকদারদেরকে তাদের প্রাপ্য হক ফিরিয়ে দিবেন’।[20]
উল্লেখ্য যে, ‘আল-হিসবাহ’ হচ্ছেهى و ظيفة دينية من باب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر الذى هو فرض على القائم بأمور المسلمين يُعَيِّنُ لذلك من يراه أهلا له- ‘এটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের আওতাভুক্ত একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। যেটি মুসলমান জনসাধারণের জন্য নিয়োজিত প্রত্যেক শাসকের উপরে ফরয বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। উপযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি এ পদে নিয়োগ দান করবেন’।[21] আর যিনি এ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলা হয় ‘মুহতাসিব’।
৫.
মজুদদারির ফলে বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি হ’লে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে
ন্যায্য মূল্যে খোলা বাজারে সরকারীভাবে পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা গ্রহণ
করবেন। যতক্ষণ না পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক ও সহনীয় হয় এবং মজুদদাররা তাদের
মজুদদারী থেকে নিবৃত্ত হয়। এ লক্ষ্যে সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে
পূর্ব থেকেই মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানী করে বা দেশজ
উৎস থেকে সংগ্রহ করে মজুদ করে রাখবেন। ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, ‘যখন
বাগদাদে মূল্য বৃদ্ধি পেত তখন খলীফা তার ভান্ডার খুলে দেয়ার এবং মানুষের
বিক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির নির্দেশ দিতেন। যতক্ষণ না
মানুষ প্রকৃত মূল্যের দিকে ফিরে আসে’।[22]
৬. মজুদদারী প্রতিরোধের জন্য ওমর (রাঃ) ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে মদীনায় পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ হয়। কারণ তখন মদীনায় খাদ্য কম পাওয়া যেত। ফলে সেখানে মজুদদারী বেশী হ’ত।[23] প্রয়োজনবোধে এ পন্থাও অবলম্বন করা যেতে পারে।
৭.
মজুদদারির ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলে জনসাধারণের কষ্ট লাঘবের
জন্য সরকার মজুদদারদেরকে তাদের মজুদকৃত পণ্য বাজারের প্রচলিত দামে বিক্রি
করতে বাধ্য করবেন। জগদ্বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) এ
প্রসঙ্গে বলেন, كان لولى الأمر أن يكره الناس على بيع ما عندهم بقيمة المثل
عند ضرورة الناس إليه، مثل من عنده طعام لا يحةاج إليه والناس فى مخمصة
فإنه يجبر على بيعه للناس بقيمة المثل- ‘মানুষের প্রয়োজন দেখা দিলে সরকার
মানুষের কাছে মজুদকৃত পণ্য বাজারের প্রচলিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করবেন।
যেমন কারো কাছে কোন খাদ্যদ্রব্য মজুদ আছে, যার প্রয়োজন তার নেই। অথচ মানুষ
ক্ষুধার্ত আছে, তাহ’লে তাকে সেটা মানুষের নিকট প্রচলিত দামে বিক্রি করতে
বাধ্য করা হবে’।[24]
৮. যদি মুনাফাখোর ও মজুদদাররা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে তাহ’লে সরকার তাদেরকে শাস্তি দিবেন, যাতে অন্য কেউ এ কাজে দুঃসাহস না দেখায়। ওমর ও আলী (রাঃ)-এর যুগে মজুদদারির প্রবণতা দেখা দিলে তারা প্রথমতঃ মজুদদারদেরকে নছীহত করতেন অতঃপর নছীহত না শুনলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতেন।[25]
ওমর ফারূক (রাঃ) সর্বপ্রথম খাদ্য মজুদকারীদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন।[26]
উমাইয়া বিন ইয়াযীদ আল-আসাদী ও মুযায়না গোত্রের জনৈক আযাদকৃত দাস মদীনায়
খাদ্যদ্রব্য মজুদ করত। ওমর (রাঃ) তাদেরকে মদীনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন।[27]
ইমাম কাসানী (রহঃ) বলেন,
أَنْ يُؤْمَرَ الْمُحْتَكِرُ بِالْبَيْعِ إزَالَةً لِلظُّلْمِ لَكِنْ إنَّمَا يُؤْمَرُ بِبَيْعِ مَا فَضَلَ عَنْ قُوتِهِ وَقُوتِ أَهْلِهِ فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ وَأَصَرَّ عَلَى الِاحْتِكَارِ وَرُفِعَ إلَى الْإِمَامِ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ مُصِرٌّ عَلَيْهِ فَإِنَّ الْإِمَامَ يَعِظُهُ وَيُهَدِّدُهُ فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ وَرُفِعَ إلَيْهِ مَرَّةً ثَالِثَةً يَحْبِسْهُ وَيُعَزِّرْهُ زَجْرًا لَهُ عَنْ سُوءِ صُنْعِهِ وَلَا يُجْبَرُ عَلَى الْبَيْعِ وَقَالَ مُحَمَّدٌ يُجْبَرُ عَلَيْهِ-
‘যুলুম দূর
করার জন্য মজুদদারকে মজুদকৃত পণ্য বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হবে। তবে তাকে
তার নিজের ও তার পরিবারের খাদ্যের অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া
হবে। যদি সে না করে এবং মজুদদারির উপর যিদ করে এবং দ্বিতীয়বার রাষ্ট্র
প্রধানের কাছে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। আর সে এ বিষয়ে যিদের উপরেই থাকে তাহ’লে
রাষ্ট্র প্রধান তাকে নছীহত করবেন এবং ভীতি প্রদর্শন করবেন। যদি সে না করে
এবং তৃতীয়বার রাষ্ট্র প্রধানের কাছে বিষয়টি উত্থাপিত হয় তাহ’লে তিনি তাকে
বন্দী করবেন এবং তার মন্দ কর্মের জন্য তাকে তিরস্কার করবেন। তবে তাকে
বিক্রি করতে বাধ্য করা যাবে না। ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, তাকে বিক্রি করতে
বাধ্য করা হবে’।[28]
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.
আমীন মোস্তফা আব্দুল্লাহ বলেন, ويعتبر الاحتكار جريمة تعزيرية لولى الأمر
أن يعرض عقوبتها حسب ما يراه بما يناسب ارتكاب الجريمة وظروف المخالفة،
متروكة له حسب زمانه ومكانه وفاعليتها، فهى عقوبت تقديرية يقررها الحاكم
حسبما يراه. ‘মজুদদারীকে শাস্তিমূলক অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। অপরাধ
বিবেচনা ও নির্দেশ লঙ্ঘনের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুপাতে শাসক তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি
অনুযায়ী শাস্তি দিবেন। তবে মজুদদারির সময়, স্থান ও কার্যকারিতা অনুযায়ী এর
শাস্তিকে শাসক নিজের ইখতিয়ারে রাখবেন। এটি নির্ধারণমূলক শাস্তি। শাসক
যেমনটা মনে করেন সে অনুযায়ী তিনি শাস্তি নির্ধারণ করবেন’।[29]
অপরাধের
গুরুত্ব ও পরিবেশ বুঝে শাসক মজুদদারির জন্য লঘু ও গুরু দন্ড দিতে পারেন।
ইসলামী শরী‘আতে একে ‘তা‘যীর’ (تعزير) বলে। যেমন, মজুদকৃত পণ্য ক্রোক বা
জব্দ করা, মজুদদারকে বন্দী করা, বাজার থেকে বের করে দেয়া, প্রহার করা,
মজুদকৃত পণ্য ধ্বংস করা প্রভৃতি।[30]
৯.
অর্থের প্রতি অতিরিক্ত মোহ মানুষকে মুনাফাখোরী ও মজুদদারির প্রতি ধাবিত
করে। অবৈধ পথে উপার্জনের এ পন্থাকে তারা লাভজনক মনে করে। অথচ এভাবে
উপার্জিত সম্পদ সমূলে বিনষ্ট হয়ে যায়। ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদূন
বলেন, ومما اشتهر عند ذوى البصر والتجربة فى الأمصار ان احتكار الزرع
لتحين أوقات الغلاء مشئوم، وأنه يعود على فائدته بالتلف و الخسران- ‘নগরীর
দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে এ বিষয়টি সুপরিচিত যে, দ্রব্যমূল্যের
ঊর্ধ্বগতির সময় ঘনিয়ে আসার অপেক্ষায় শস্য মজুদ করে রাখা অশুভ কাজ। কারণ
এভাবে অর্জিত লাভ ক্ষতি ও সর্বনাশ ডেকে আনে’।[31] সুতরাং মুনাফাখোরী ও
মজুদদারী প্রতিরোধের জন্য সম্পদ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের
চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীটি
প্রণিধানযোগ্য- لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ، وَلَكِنَّ
الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ ‘সম্পদের প্রাচুর্য ধনাঢ্যতা নয়; রবং প্রকৃত
ধনাঢ্য ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর সম্পদশালী’।[32]
১০. আমাদের দেশে পণ্য আমদানী করার পর আমদানীকারকরা এই পণ্য গুদামজাত ও বাজারজাতকরণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। তারা এই ঋণ পরিশোধের সময় পায় চার থেকে ছয় মাস। এ অতিরিক্ত সময় পাওয়ার কারণে আমদানীকারকরা পণ্য মজুদ করে থাকে এবং বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেই সরবরাহ করে। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে এক মাসের মধ্যে নিয়ে এলে আমদানীকারকরা মজুদের সময় পাবে না।
১১. মুনাফাখোরী ও মজুদদারী প্রতিরোধের অপরিহার্য পূর্বশর্ত হ’ল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগকে সরকারের যাবতীয় হস্তক্ষেপ, প্রভাব ও চাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও স্বাধীন হ’তে হবে, যাতে তা মুনাফাখোর ও মজুদদারদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী নির্ভয়ে রায় প্রদান করতে পারে। নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে মাখযূম গোত্রের জনৈক মহিলা চুরি করলে তার গোত্রের লোকজন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)-এর কাছে আসে। উসামা (রাঃ) এ ব্যাপারে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে আলোচনা করলে তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে যান। অতঃপর হামদ ও ছানার পর বলেন,
فَإِنَّمَا أَهْلَكَ النَّاسَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمِ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ، وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا-
‘তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকেরা এজন্য ধ্বংস হয়েছে যে, যখন তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত কেউ
চুরি করত তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত এবং যখন দুর্বল কেউ চুরি করত তখন তারা
তার উপর দন্ড কার্যকর করত। যেই সত্ত্বার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর কসম!
মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করত, তবে তার হাতও আমি অবশ্যই কেটে
দিতাম’।[33]
১২. ব্যবসায়ীদেরকে হালাল উপার্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং তাদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। প্রফেসর Tausig মজুদদারী প্রতিরোধের জন্য নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।[34]
রাসূল (ছাঃ) হালাল উপার্জনের প্রতি জোর
তাগিদ দিয়ে বলেন, إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
‘আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র ভিন্ন তিনি গ্রহণ করেন না’।[35] তিনি বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّىَ بِالْحَرَامِ ‘হারাম দ্বারা পরিপুষ্টিসাধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[36]
তিনি আরো বলেন, كُلُّ جَسَدٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ
‘হারাম দ্বারা গঠিত প্রত্যেক দেহ জাহান্নামে যাওয়ার অধিক উপযুক্ত’।[37]
অন্য
হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنِ اكْتَسَبَ مَالًا مِنْ مَأْثَمٍ
فَوَصَلَ بِهِ رَحِمَهُ أَوْ تَصَدَّقَ بِهِ أَوْ أَنْفَقَهُ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ جُمِعَ ذَلِكَ كُلُّهُ جَمِيْعًا فَقُذِفَ بِهِ فِيْ جَهَنَّمَ- ‘যে
ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করল। অতঃপর এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক
রক্ষা করল বা ছাদাক্বা করল বা আল্লাহর পথে তা ব্যয় করল, এর সবগুলিকে
একত্রিত করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[38]
ইমাম
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, وكما يتَعَلَّق الثَّوَابُ وَالْعِقَاب والمدح
والذم بِإِخْرَاج الدِّرْهَم فَكَذَلِك يتَعَلَّق باكتسابه، وَكَذَلِكَ
يسْأَل عَنهُ مستخرجه ومصروفه، من أَيْن اكْتَسبهُ وَفِيمَا أنفقهُ-
‘পুণ্য, শাস্তি, প্রশংসা ও নিন্দা যেমন টাকা-পয়সা খরচের সাথে সম্পৃক্ত,
তেমনি তা উপার্জনের সাথেও সম্পর্কিত। অনুরূপভাবে এর আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত
সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে’।[39]
মজুদদারির ভয়াল থাবা : ইতিহাসের সাক্ষী
মজুদদারির ভয়াল থাবা সম্পর্কে ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা দেখতে পাই, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফসলের পরিবর্তে মুদ্রা রাজস্ব আদায়ের একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হয়। ফলে খাজনার টাকা সংগ্রহের জন্য কৃষককে তার সারা বছরের খাদ্য ফসল বিক্রি করতে হ’ত। এই সুযোগে ইংরেজ ব্যবসায়ীরা বাংলা-বিহারের বিভিন্ন স্থানে ধান-চাল ক্রয়ের জন্য ক্রয়কেন্দ্র খুলে বসে। শুধু তাই নয়, বেশী মুনাফা লাভের আশায় এসব ক্রয়কৃত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা শুরু করে। পরে সুযোগ-সুবিধামতো এসব খাদ্যই চড়ামূল্যে সেই চাষীদের নিকটই আবার বিক্রি করত। ফলে খাদ্য গুদামজাতকরণের মাধ্যমে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির কারণেই এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে এল। ১৭৬৯ সালে ক্রয়কৃত সমস্ত ফসল কোম্পানীর লোকেরা ১৭৭০ সালেই বেশী দামে হতভাগ্য চাষীদের নিকট বিক্রি করতে লাগল। বাংলার চাষী তা ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়ে নযীরবিহীন দুর্ভিক্ষের শিকার হ’ল। মারা গেল কয়েক লক্ষ বনু আদম। বাংলা ১১৭৬ (১৭৬৯-৭০খৃ.) সালের এই দুর্ভিক্ষই ইতিহাসে ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে খ্যাত।
প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজ ঐতিহাসিক ইয়ং হাসব্যান্ড (Young Husband)-এর ভাষায়, ‘তাদের (ইংরেজ বণিকদের) মুনাফার পরবর্তী উপায় ছিল চাল কিনে গুদামজাত করে রাখা। তারা নিশ্চিত ছিল যে, জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য এ দ্রব্যটির জন্য তারা যে মূল্যই চাইবে, তা পাবে। ...চাষীরা তাদের প্রাণপাত করা পরিশ্রমের ফল অপরের গুদামে মজুদ থাকতে দেখে চাষ-বাস সম্পর্কে এক রকম উদাসীন হয়ে পড়ল। ফলে দেখা দিল ভয়ানক খাদ্যাভাব। দেশে যেসব খাদ্য ছিল, তা ইংরেজ বণিকদের দখলে। খাদ্যের পরিমাণ যত কমতে থাকল, ততই দাম বাড়তে লাগল। শ্রমজীবী দরিদ্র জনগণের চির দুঃখময় জীবনের ওপর পতিত হ’ল এই পুঞ্জীভূত দুর্যোগের প্রথম আঘাত। কিন্তু এটা এক অশ্রুতপূর্ব বিপর্যয়ের আরম্ভ মাত্র’।
তিনি আরো বলেন, ‘এই হতভাগ্য
দেশে দুর্ভিক্ষ কোন অজ্ঞাতপূর্ব ঘটনা নয়। কিন্তু দেশীয় জনশত্রুদের
সহযোগিতায় একচেটিয়া শোষণের বর্বরসুলভ মনোবৃত্তির অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ যে
অভূতপূর্ব বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখা দিল, তা ভারতবাসীরাও আর কোনদিন চোখে
দেখেনি বা কানে শোনেনি। চরম খাদ্যাভাবের এক ভয়াবহ ইঙ্গিত নিয়ে দেখা দিল
১৭৬৯ সাল। সঙ্গে সঙ্গে বাংলা-বিহারের সমস্ত ইংরেজ বণিক তাদের সকল আমলা,
গোমস্তা, রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মচারী, যে যেখানে নিযুক্ত ছিল সেখানেই
দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমে ধান-চাল কিনতে লাগল। এই জঘন্যতম ব্যবসায়ে
মুনাফা এত শীঘ্র ও এত বিপুল পরিমাণ ছিল যে, মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারে
নিযুক্ত একজন কপর্দকশূন্য ভদ্রলোক এ ব্যবসা করে দুর্ভিক্ষ শেষ হওয়ার সাথে
সাথে প্রায় ৬০ হাযার পাউন্ড (দেড় লক্ষাধিক টাকা) দেশে পাঠিয়েছিল (Young Husband : Transaction in India, 1786)।[40]
ডব্লিউ. ডব্লিউ. হান্টার বলেন, All through the stifling summer of 1770 the people went on dying. The husbandmen sold their cattle; they sold their implements of agriculture; they devoured their seed-grain; they sold their sons and daughters, till at length no buyer of children could be found; they eat the leaves of trees and the grass of the field; and in June 1770 the Resident at the Durbar affirmed that the living were feeding on the dead. Day and night a torrent of famished and disease-stricken wretches poured into the great cities. At an early period of the year pestilence had broken out. In March we find smallpox at Moorshedabad, where it glided through the Viceregal mutes, and cut off the Prince Syfut in his palace. The streets were blocked up with promiscuous heaps of the dying and dead. Interment could not do its work quick enough; even the dogs and jackals, the public scavengers of the East, became unable to accomplish their revolting work, and the multitude of mangled and festering corpses at length threatened the existence of the citizens.
‘১৭৭০ সালের শ্বাসরুদ্ধকর
গ্রীষ্মকালব্যাপী মানুষ মারা যাচ্ছিল। কৃষকেরা তাদের গবাদিপশু, লাঙল-জোয়াল
বেচে ফেলেছে এবং খাদ্যশস্য গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেছে। অবশেষে তারা তাদের
ছেলেমেয়ে বিক্রি করেছে। অবস্থা এতদূর গড়ালো যে, ছেলেমেয়ের ক্রেতাও আর পাওয়া
গেল না। তারপর তারা গাছের পাতা ও মাঠের ঘাস খেতে শুরু করে। ১৭৭০ সালের জুন
মাসে দরবারের রেসিডেন্ট নিশ্চিত করলেন যে, জীবিত মানুষ মরা মানুষের গোশত
ভক্ষণ করতে শুরু করেছে। রোগাক্লিষ্ট, প্রচন্ড ক্ষুধায় কাতর মৃতপ্রায়
হতভাগ্য মানুষগুলো দিনরাত স্রোতের বেগে বড় বড় শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছিল।
বছরের শুরুতেই মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। মার্চ মাসে আমরা মুর্শিদাবাদে
গুটিবসন্ত দেখতে পেলাম। যা সেখানে প্রশাসনের কোন সাড়া-শব্দ ছাড়া নীরবে
সংক্রমিত হচ্ছিল। শাহজাদা সাইফুতও এই রোগে তার প্রাসাদে মারা যান। মৃত ও
মরণাপন্ন লোক স্তূপাকারে পড়ে থাকায় রাস্তাঘাট ছিল অবরুদ্ধ। লাশের সংখ্যা
এতো বেশী ছিল যে, তা পুঁতে ফেলার কাজও দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না।
প্রাচ্যের মেথর, কুকুর ও শৃগালের পক্ষেও এত বেশী লাশ নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব
ছিল না। ফলে দুর্গন্ধযুক্ত বিপুল সংখ্যক গলিত লাশ মানুষের অস্তিত্বকেই
বিপন্ন করে তুলেছিল’।[41]
১৯৪৩ সালের
দুর্ভিক্ষও মজুদদারির অশুভ প্রভাবের জ্বলন্ত সাক্ষী। এ দুর্ভিক্ষের
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন,
‘১৯৪৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে’।
অন্যত্র তিনি লিখেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। গ্রাম থেকে লাখ লাখ লোক
শহরের দিকে ছুটেছে স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরে। খাবার নাই, কাপড় নাই। ইংরেজ
যুদ্ধের জন্য সমস্ত নৌকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। ধান, চাল সৈন্যদের খাওয়াবার
জন্য গুদাম জব্দ করেছে। যা কিছু ছিল ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করেছে। ফলে এক
ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দশ টাকা মণের চাউল চল্লিশ-পঞ্চাশ
টাকায় বিক্রি করছে। এমন দিন নাই রাস্তায় লোকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় না।
...ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন বাংলাদেশ দখল করে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়,
তখন বাংলার এত সম্পদ ছিল যে, একজন মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী গোটা বিলাত শহর
কিনতে পারত। সেই বাংলাদেশের এই দুরবস্থা চোখে দেখেছি যে, মা মরে পড়ে আছে,
ছোট বাচ্চা সেই মরা মার দুধ চাটছে। কুকুর ও মানুষ একসাথে ডাস্টবিন থেকে
কিছু খাবার জন্য কাড়াকাড়ি করছে। ছেলেমেয়েদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে মা কোথায়
পালিয়ে গেছে। পেটের দায়ে নিজের ছেলেমেয়েকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছে। কেউ
কিনতেও রাজি হয় নাই। বাড়ির দুয়ারে এসে চিৎকার করছে, ‘মা বাঁচাও, কিছু খেতে
দাও, মরে তো গেলাম, আর পারি না, একটু ফেন দাও’। এই কথা বলতে বলতে ঐ বাড়ির
দুয়ারের কাছেই পড়ে মরে গেছে। আমরা কি করব? হোস্টেলে যা বাঁচে দুপুরে ও রাতে
বুভুক্ষুদের বসিয়ে ভাগ করে দেই, কিন্তু কি হবে এতে’? [42]
তিনি
আরো লিখেছেন, ‘এই সময় রিলিফের কাজ করার জন্য গোপালগঞ্জ ফিরে আসে।
...বাড়িতে এসে দেখি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ সবই প্রায় না খেতে
পেয়ে কঙ্কাল হতে চলেছে’।[43]
অন্য আরেক
জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘শহীদ সাহেব দেখলেন যুদ্ধের সময় অধিক লাভের আশায়
ব্যবসায়ীরা কালো বাজারে কাপড় বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করতে শুরু করছে।
একদিকে খাদ্য সমস্যা ভয়াবহ, শহীদ সাহেব রাতদিন পরিশ্রম করছেন, আর একদিকে
অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। শহীদ সাহেব
সমস্ত কর্মচারীদের হুকুম দিলেন, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা বড়বাজার
ঘেরাও করতে। সমস্ত বড়বাজার ঘেরাও করা হল। হাজার হাজার গজ কাপড় ধরা পড়ল,
এমনকি দালানগুলির নিচেও এক একটা গুদাম করে রেখেছিল তাও বাদ গেল না। এমনি
করে সমস্ত শহরে চাউল গুদামজাতকারীদের ধরবার জন্য একইভাবে তল্লাশি শুরু
করলেন। মাড়োয়ারিরাও কম পাত্র ছিল না। কয়েক লক্ষ টাকা তুলে লীগ মন্ত্রিসভাকে
খতম করার জন্য কয়েকজন এমএলএকে কিনে ফেলল। ফলে এক ভোটে লীগ মন্ত্রিত্বকে
পরাজয়বরণ করতে হল’।[44]
মজুদদার সিন্ডিকেটের কারসাজি ও পেঁয়াজের ঝাঁঝ :
মজুদদারির
কুফল কি তা বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। গত
সেপ্টেম্বর মাসে ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানী বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের
মুনাফাখোর মজুদদার সিন্ডিকেট পেঁয়াজের মূল্য অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।
ফলে পেঁয়াজ কিনতে সাধারণ মানুষকে নাকানি-চুবানি খেতে হয়। বর্তমানে গ্রাহককে
প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এমনকি হালি দরে বাজারে
পেঁয়াজ বিক্রির খবরও পত্রিকায় এসেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, পেঁয়াজের বাজারে
কারসাজির মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে গত চার মাসে
ভোক্তাদের ৩ হাযার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাযার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।[45]
অন্যদিকে
জানা গেছে যে, মিয়ানমার থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ কেনা দামের চেয়ে প্রায় তিন
গুণ দামে বিক্রির পেছনে জড়িত আছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও চট্টগ্রামের ১৫
জনের একটি সিন্ডিকেট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং যেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ
আদালতের যৌথ অনুসন্ধানে তাঁদের নাম উঠে এসেছে। এই সিন্ডিকেটটি ৪২ টাকায়
মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানী করে ৯০ থেকে ১১০ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি
করে আসছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গত ৩রা নভেম্বর’১৯ খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এই
অভিযোগের প্রমাণ পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।[46] মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানীকারী শুধু এই সিন্ডিকেট গত কয়েকদিনে ২১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।[47]
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, মজুদদারির ফলে মানুষকে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে হয়। মানুষের রক্ত চুষে মজুদদাররা তাদের স্বার্থপরতা, অবৈধ লাভ ও লোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এর ফলে জনগণ দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এজন্য ইসলামে মজুদদারী হারাম। এটি তাদের উপর কৃত এক প্রকার যুলুম।[48] এতে কোনই সন্দেহ নেই। কারণ এর সাথে বান্দার হক জড়িত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
اَلظُّلْمُ ثَلاَثَةٌ، فَظُلْمٌ لاَ يَتْرُكُهُ اللهُ وَظُلْمٌ يُغْفَرُ وَ ظُلْمٌ لاَ يُغْفَرُ، فَأَمَّا الظُّلْمُ الَّذِيْ لاَ يُغْفَرُ، فَالشِّرْكُ لاَ يَغْفِرُهُ اللهُ، وَأَمَّا الظُّلْمُ الَّذِيْ يُغْفَرُ، فَظُلْمُ الْعَبْدِ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ رَبِّهِ، وَأَمَّا الظُّلْمُ الَّذِيْ لاَ يُتْرَكُ، فَظُلْمُ الْعِبَادِ، فَيَقْتَصُّ اللهُ بَعْضَهُمْ مِنْ بَعْضٍ-
‘যুলুম তিন প্রকার। ১. এমন যুলুম যা আল্লাহ উপেক্ষা করবেন না। ২. এমন যুলুম যা মাফ করে দেয়া হবে এবং ৩. এমন যুলুম যা ক্ষমা করা হবে না। যে যুলুম ক্ষমা করা হবে না তা হ’ল শিরক। আল্লাহ শিরকের পাপ ক্ষমা করবেন না। আর যে যুলুম ক্ষমা করে দেয়া হবে তা হ’ল বান্দা ও আল্লাহর মাঝে কৃত যুলুম। আর যে যুলুমকে উপেক্ষা করা হবে না তা হ’ল বান্দাদের একের প্রতি কৃত অন্যের যুলুম। আল্লাহ তাদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের ক্বিছাছ গ্রহণ করবেন’।[49]
[1]. বুখারী হা/২৯০৪, ৪৮৮৫।
[2]. বুখারী হা/৫৩৫৭ ‘ভরণ-পোষণ’ অধ্যায়, ‘পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং তাদের জন্য কিভাবে খরচ করতে হবে’ অনুচ্ছেদ।
[3]. ফাতহুল বারী ৯/৬২৪, হা/৫৩৫৭-এর আলোচনা দ্র.।
[4]. শারহুস সুন্নাহ ৮/১৭৯; মা‘আলিমুস সুনান ৩/১১৭ ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/২১৫৩, হাদীছ যঈফ; মিশকাত হা/২৮৯৩।
[6]. আল-মুগনী ৬/৩১৭।
[7]. http://www.alkhaleej.ae/supplements/page/645ea360- 5b5f-42ac-ae5c-261cc1dd2d63.
[8]. মুসলিম হা/১৬০৫।
[9]. আল-মুদাওয়ানাহ ৩/৩১৩।
[10]. আল-হেদায়া ৪/৪৭০।
[11]. নায়লুল আওতার ৩/৬০৪, ‘মজুদদারী’ অনুচ্ছেদ।
[12]. ঐ ৩/৬০৫।
[13]. http://www.alkhaleej.ae/supplements/page/83366ca9-8f8b-4c54-a483-1463f1ab137d.
[14]. সুবুলুস সালাম ৩/২৫।
[15]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৬৫; আল-মুগনী, ৬/৩১৬-১৭; উছূলুল ইকতিছাদ আল-ইসলামী, পৃ: ২৮৭।
[16]. আল-হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম, পৃঃ ২২৫।
[17]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক হা/১৩৪৮, ২৪০০।
[18]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক হা/১৩৪৮।
[19]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/২০২-৩।
[20]. ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪৫বর্ষ ১ম সংখ্যা, জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৫, পৃ: ২১২। গৃহীত: তারীখুল ইকতিছাদ লিল-মুসলিমীন, ১/৩৯।
[21]. মুক্বাদ্দামা ইবনে খালদূন, পৃ: ১৮৫।
[22]. ড. ফুওয়াদ আব্দুল্লাহ আল-উমার, মুক্বাদ্দামা ফী তারীখিল ইকতিছাদ আল-ইসলামী ওয়া তাতাওউরিহী (জেদ্দা : আল-বান্ক আল-ইসলামী লিত-তানমিয়াহ, ১৪২৪/২০০৩), পৃঃ ২৯২।
[23]. ঐ, পৃঃ ২৯০।
[24]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-হিসবাহ, পৃ: ১৯।
[25]. উছূলুল ইকতিছাদ আল-ইসলামী, পৃ: ২৮৯।
[26]. গালিব আব্দুল কাফী আল-কুরাশী, আওয়ালিয়্যাতুল ফারূক আস-সিয়াসিয়্যাহ (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১ম প্রকাশ, ১৪০৩/১৯৮৩), পৃঃ ৩৯৬।
[27]. ফাতহুল বারী ১২/১৯৭, হা/৬৮৩৪-এর আলোচনা দ্র.।
[28]. বাদায়েউছ ছানায়ে ৫/১২৯।
[29]. উছূলুল ইকতিছাদ আল-ইসলামী, পৃঃ ২৮৮।
[30]. হুদা লাউর, আল-ইহতিকার ওয়া উকূবাতুহু বায়নাশ শারী‘আতিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল কানূন আল-ওয়ায‘ঈ, এম.এ. থিসিস, শিক্ষাবর্ষ : ২০১৩-১৪, জামি‘আতুল ওয়াদী, আলজেরিয়া, পৃঃ ৬৭-৬৮।
[31]. মুক্বাদ্দামা ইবনে খালদূন, পৃ: ৩৩০, ‘মজুদদারী’ অনুচ্ছেদ।
[32]. বুখারী হা/৬৪৪৬।
[33]. বুখারী হা/৩৪৭৫, ৪৩০৪।
[34]. ড. এম. এ মান্নান, ইসলামী অর্থনীতি: তত্ত্ব ও প্রয়োগ (ঢাকা: ইসলামিক ইকনমিক্স রিসার্চ ব্যুরো, ১৯৮৩), পৃ: ১২৯।
[35]. মুসলিম হা/১০১৫।
[36]. মিশকাত হা/২৭৮৭; সিলসিলা ছহীহা হা/২৬০৯।
[37], ছহীহুল জামে হা/৪৫১৯, হাদীছ ছহীহ।
[38]. ছহীহ তারগীব হা/১৭২১।
[39]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আল-ফাওয়াইদ (কায়রো : দারুল হাদীছ, ১৪২৬/২০০৫), পৃঃ ২০৭, ‘টাকা-পয়সা উপার্জনের প্রকারভেদ’ অনুচ্ছেদ।
[40]. মেসবাহুল হক, পলাশী যুদ্ধোত্তর মুসলিম সমাজ ও নীল বিদ্রোহ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩য় সংস্করণ, মে ১৯৮৭), পৃঃ ১১-১৩।
[41]. W.W. Hunter, The Annals of Rural Bengal (London : Smith, Elder and Co, 1868), P. 26-27.
[42]. শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী (ঢাকা : দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২য় মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর ২০১২), পৃঃ ১৭-১৮।
[43]. ঐ, পৃঃ ১৯।
[44]. ঐ, পৃঃ ৩৩।
[45]. সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা নভেম্বর’১৯, পৃঃ ১।
[46]. সিন্ডিকেট বাড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম, দৈনিক প্রথম আলো, ৫ই নভেম্বর’১৯, পৃঃ ২০।
[47]. ইনকিলাব, ৬ই নভেম্বর’১৯, পৃঃ ১২।
[48]. বাদায়েউছ ছানায়ে ৫/১২৯।
[49]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯২৭, হাদীছ হাসান।