উত্তর : না। বরং রাসূল (ছাঃ) এই শব্দে দো‘আটি পাঠ করেছেন বলেই আমাদেরকে তা পাঠ করতে হবে। তাশাহহুদ সম্পর্কিত সকল ছহীহ মরফূ হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন সূচক ‘আইয়ুহান্নাবী’ শব্দ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ কতিপয় ছাহাবী ‘আইয়ুহান্নাবী’-এর পরিবর্তে ‘আলান্নাবী’ বলতে থাকেন। যেমন বুখারী ‘ইস্তীযা-ন’ অধ্যায়ে এবং অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। অথচ সকল ছাহাবী, তাবেঈন, মুহাদ্দেছীন, ফুক্বাহা পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ পড়েছেন। এই মতভেদের কারণ হ’ল এই যে, রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলা গেলেও তাঁর মৃত্যুর পরে তো আর তাঁকে ঐভাবে সম্বোধন করা যায় না। কেননা সরাসরি এরূপ গায়েবী সম্বোধন কেবল আল্লাহকেই করা যায়। মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে সম্বোধন করলে তাঁকে আল্লাহ সাব্যস্ত করা হয়ে যায়। সেকারণ কিছু সংখ্যক ছাহাবী ‘আলান্নাবী’ অর্থাৎ ‘নবীর উপরে’ বলতে থাকেন।
পক্ষান্তরে অন্য সকল ছাহাবী পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতে থাকেন। ত্বীবী (মৃ: ৭৪৩ হিঃ) বলেন, এটা এজন্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁদেরকে উক্ত শব্দেই ‘তাশাহহুদ’ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার কোন অংশ তাঁর মৃত্যুর পরে পরিবর্তন করতে বলে যাননি। অতএব ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত শব্দ পরিবর্তনে রাযী হননি। ছাহেবে মির‘আত বলেন, জীবিত-মৃত কিংবা উপস্থিতি-অনুপস্থিতির বিষয়টি ধর্তব্য নয়। কেননা স্বীয় জীবদ্দশায়ও তিনি বহু সময় ছাহাবীদের থেকে দূরে সফরে বা জিহাদের ময়দানে থাকতেন। তবুও তারা তাশাহহুদে নবীকে উক্ত সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতেন। তারা তাঁর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে উক্ত সম্বোধনে কোন হেরফের করতেন না। তাছাড়া বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ বিষয়াবলীর (من خصائصه) অন্তর্ভুক্ত। এটা স্রেফ তাশাহহুদের মধ্যেই পড়া যাবে, অন্য সময় নয়।
উল্লেখ্য যে, এই সম্বোধনের মধ্যে কবর পূজারীদের জন্য কোন সুযোগ নেই। তারা এই হাদীছের দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বত্র হাযির-নাযির প্রমাণ করতে চায় (মির‘আত ১/৬৬৪-৬৫; ঐ, ৩/২৩৩-৩৪, হা/৯১৫-এর ভাষ্য দ্রঃ) ও মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তাঁকে ‘অসীলা’ হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। এটা পরিষ্কারভাবে ‘শিরকে আকবর’ বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত (বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ১১৯-১২০)।