উত্তর : আল-ফি‘আতুল বাগিয়াহ বা ‘বিদ্রোহী দল’ বলতে হাদীছে কী বুঝানো হয়েছে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর ‘আম্মার দু’টো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) তা দেখে তাঁর দেহ হ’তে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা তাকে আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, তখন আম্মার বললেন, আমি ফিৎনা হ’তে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই (বুখারী হা/৪৪৭)

অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় একদল বিদ্বান বলেন, ‘বাগিয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য ওছমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচার দাবীকারী। যার অর্থ দাঁড়ায় আম্মার (রাঃ)-কে ওছমান হত্যার বিচার দাবীকারীরা হত্যা করবে। আর জাহান্নামের দিকে আহবান করার অর্থ হচ্ছে-জাহান্নামে যাওয়ার কারণের দিকে আহবান করবে। আর তা হ’ল আমীরের আনুগত্য না করা। এর অর্থ সরাসরি জাহান্নাম উদ্দেশ্য নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৫/৭৪)

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, প্রকৃত অর্থেই উক্ত বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা বিদ্রোহী দল। তবে বিদ্রোহী দল হওয়া অর্থ ইসলাম থেকে খারিজ নয়। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘যদি মুমিনদের দুই দল পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে দল সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে, তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালবাসেন। মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/৯-১০)

অত্র আয়াতদ্বয়ে বিবদমান দুই দলকেই আল্লাহ মুসলিম এবং পরস্পর ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করে যে, আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ) উভয়ে মুসলিম ও ছাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্যে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ভুল ইজতিহাদ ছিল যে, আলী (রাঃ) তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদের বিচারহীন অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন।

আর বিদ্রোহী দল দ্বারা উদ্দেশ্য যুদ্ধরত বিচ্ছিন্ন একটি দল যারা আম্মারকে হত্যা করেছিল। সরাসরি মু‘আবিয়া (রাঃ) নন। যারা উক্ত দলের কাজকে সমর্থন করবে তারা ঐ দলেরই আওতাভুক্ত হবে। কিন্তু মু‘আবিয়া বা আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) কেউ আম্মারের হত্যাকে সমর্থন করেননি (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৫-৭৪-৭৫)। ছাহেবে তোহফা বলেন, বিদ্রোহী দল বলতে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর দলভুক্ত একদল লোককে বুঝানো হয়েছে (তোহফাতুল আহওয়াযী ১০/২০৪)। এজন্য আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী অনেকের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, সঠিক কথা উভয় দলই তাদের ইজতিহাদে সঠিক ছিলেন (উমদাতুল ক্বারী ৪/২০৮)

তবে আব্দুল কাহের জুরজানী (রহঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ও মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণ একমত যে, মু‘আবিয়া (রাঃ) ছিলেন বিদ্রোহী এবং আলী (রাঃ) তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমনের ব্যাপারে সঠিক ছিলেন, যেমন তিনি ‘উটের যুদ্ধে’ সঠিক ছিলেন (আমীর কাহলানী, আত-তানভীর ১১/৪৩)

মোটকথা আলী (রাঃ) তাঁর ইজতিহাদে সঠিক ছিলেন এবং তাঁর দল লোকদেরকে জান্নাতে যাওয়ার পথে তথা আমীরের আনুগত্য করার মাধ্যমে মুসলিম জামা‘আতকে সুসংহত করার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অন্যদিকে মু‘আবিয়া (রাঃ) ওছমান হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে তিনি এবং তাঁর দল ইজতিহাদে ভুল করেছেন। তবে তাদেরকে জাহান্নামীদের দল বলা যাবে না। কেননা নিঃসন্দেহে উভয় দলই মুসলমান ছিলেন এবং সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি সুধারণা রাখাই আমাদের জন্য কর্তব্য হবে। হাদীছে জাহান্নামের দিকে আহবানের অর্থ বিচ্ছিন্নতার পথে আহবান। কেননা তারা ভুল ইজতিহাদের মাধ্যমে খলীফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

প্রশ্নকারী : সাইফুল ইসলাম

কাজলা, রাজশাহী।







বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
প্রশ্ন (৮/২০৮) : বাস বা ট্রেনে যেখানে ছালাতের কোন স্থান নেই এবং ক্বিবলা কোন্ দিকে তাও জানা যায় না। এরূপ অবস্থায় ছালাত আদায় করা যাবে কি? এছাড়া ছালাতের সময় অবশিষ্ট থাকতেই গন্তব্যে পৌছানোর সম্ভাবনা থাকলে গাড়িতে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
প্রশ্ন (১৯/২৫৯) : বীর্য কি পবিত্র? ধোয়ার পরও কিছু অংশ লেগে থাকলে উক্ত কাপড়ে ছালাত হবে কি?
প্রশ্ন (৪০/৪৪০) : শিশুকালে পিতা-মাতার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমি মামার বাড়িতে মানুষ হই। পিতা কখনো আমার কোন দায়িত্ব পালন করেননি। আর আমার সাথে কথা বলতে চাইলেও আমি কখনো বলিনি। এতে আমার কোন গোনাহ হবে কি? তিনি আমার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পালন না করায় তার প্রতি আমার কোন দায়িত্ব আছে কি? - -বদরুদ্দোজা শেখঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
প্রশ্ন (২১/৩০১) : কিছু লোক যুক্তি দেখিয়ে বলে থাকে, মসজিদে যাওয়ার জন্য যেমন অনেকগুলো পথ থাকে, তেমনি বিভিন্ন ইসলামী দলের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া যাবে। উক্ত যুক্তি কি সঠিক?
প্রশ্ন (৪/৪০৪): জনৈক ব্যক্তি সূরা ক্বদর পাঠের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি ওযূ করার পর তা তিন বার পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে নবীগণের সাথে পুনরুত্থিত হবে। এটা কি সঠিক?
প্রশ্ন (১৪/১৭৪) : কোন বেকার ছেলে স্ত্রীর ব্যয় নির্বাহে অক্ষম হ’লে তার জন্য বিবাহ করা জায়েয হবে কি?
প্রশ্ন (১২/১২) : সূরা হূদের ১০৭-১০৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্ন (৩২/৭২) : শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম পালনের পর আইয়ামে বীযের তিনটি ছিয়াম পালন করতে হবে কি?
প্রশ্ন (২৪/৩০৪) : সদ্যমৃত ব্যক্তি, যাকে এখনও কবরস্থ করা হয়নি, তাকে সালাম দেওয়া যাবে কি?
প্রশ্ন (২৯/১৪৯) : অপরিচিত কোন মহিলাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলে সে কোন ধর্মের তা শনাক্ত করার উপায় কি? অজানা অবস্থায় তার কাফন-দাফন ও জানাযা করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৩০/১৯০) : পিতা খালাতো ভাইয়ের সাথে আমার বোনকে বিবাহ দেয়। পরে ৮ বছরের সন্তান থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে নানাবিধ পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় তালাক নেওয়া হয়। কিন্তু ১ বছর আমাদের বাসায় থাকার পর আমাদের সবার অবাধ্য হয়ে নতুন বিয়ের মাধ্যমে বোন তার সাবেক স্বামীর কাছে ফিরে যায়। এখন আমি তার সাথে আর সম্পর্ক রাখি না। এটা শরী‘আত সম্মত হবে কি?
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : ওকালতি পেশা গ্রহণ করা শরী‘আতসম্মত কি? এ পেশায় থাকতে হ’লে কোন কোন বিষয় থেকে সতর্ক থাকা যরূরী?
আরও
আরও
.