ক্বিয়ামতের গুজব ও বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ড

সম্প্রতি হঠাৎ কিছু বক্তাদের মাধ্যমে গুজব রটল এ বছরের ১৫ই রামাযান শুক্রবার ক্বিয়ামত হবে। সেদিন আকাশে বিকট আওয়ায হবে। তাতে বহু লোক মারা যাবে, অন্ধ হবে, বধির হবে’ ইত্যাদি। তারা প্রমাণ উপস্থাপনের সময় বললেন, ‘হয়তো হাদীছ হিসাবে সনদটি ছহীহ নাও হ’তে পারে, কিন্তু ইবনু মাসঊদের বক্তব্য হিসাবে অবশ্যই এটি ছহীহ’। অতঃপর তারা ১৫ই রামাযান শুক্রবারে আকাশে বিকট আওয়ায হবে মর্মে ‘জাল’ হাদীছটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন এমনভাবে যেন হাদীছটি অবশ্যই ছহীহ।

বস্ত্তত উক্ত মর্মের ‘জাল’ হাদীছগুলি হ’ল সিলসিলা যঈফাহ হাদীছ নং ৬১৭৮-৬১৭৯ ও ৬৪৭১। প্রশ্ন হ’ল, পবিত্র রামাযান মাসে এসকল জাল হাদীছ ও উদ্ভট কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য কি? এর দ্বারা ইসলাম বিরোধীদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে কিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে? অথচ উচিৎ ছিল ইসলামের অভ্রান্ত বাণী সমূহ প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা এবং পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা। জানা আবশ্যক যে, ক্বিয়ামতের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে গায়েবী বিষয়। যা আল্লাহর হুকুমে হঠাৎ করে এসে যাবে। পবিত্র কুরআনে ‘বাগতাতান’ বা হঠাৎ করে ক্বিয়ামত আসার বিষয়টি ১৩টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। বস্ত্তত শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনটাই হ’ল ক্বিয়ামতের প্রধান আলামত। তাঁর জীবদ্দশাতেই চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে। অতঃপর ক্বিয়ামতের পূর্বে ৩০ জন ভন্ডনবীর আগমন ঘটবে বলে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে (আবুদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬)। যাদের মধ্যে তাঁর জীবদ্দশাতেই দু’জন ভন্ডনবীর আবির্ভাব ঘটেছে। এছাড়া তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ হ’ল ইলম উঠে যাবে, মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে, ব্যভিচার ও মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে ও নারীর সংখ্যা বেশী হবে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৪৩৭)। ‘আমানত বিনষ্ট হবে ও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে’ (বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯)। ‘সম্পদ বৃদ্ধি পাবে ও প্রবহমান হবে। এমনকি যাকাত নেওয়ার মত কোন হকদার খুঁজে পাওয়া যাবে না। আরব দেশ সমূহ শস্য-শ্যামল ও নদী-নালায় পরিবর্তিত হবে’ (মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪৪০)। এছাড়াও রয়েছে ১০টি নিদর্শনের মধ্যে ইমাম মাহদীর আগমন ও পৃথিবীব্যাপী ৭ বছর ন্যায়ের শাসন কায়েম, ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ইত্যাদি (থিসিস ১০৬ পৃ.)

উপরে বর্ণিত নিদর্শন সমূহের কিছু কিছু নমুনা আমাদের যুগেই শুরু হয়েছে। এযুগে ডিগ্রীধারী বেড়েছে। কিন্তু যোগ্য ও বিচক্ষণ আলেম কয়জন আছেন? দেশে ও সমাজে যোগ্য নেতা কোথায়? আমানতের খেয়ানতের রিপোর্ট প্রায়ই পত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে। যেমন গত ৬ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম হ’ল, ‘নদী খননে সাগর চুরি ১৩৮ কোটি টাকা লোপাট’। ১৫৫ কি.মি. নদী খনন প্রকল্পের কোন কাজ না করেই সব টাকা গায়েব (দৈনিক ইনকিলাব)

ইতিপূর্বে ২০০০ সালের ৫ই মে ক্বিয়ামত হওয়ার গুজব রটানো হয়েছিল। তাছাড়া মাঝে-মধ্যেই ইমাম মাহদীর আগমনের খবর রটানো হয়। অথচ এসব গুজব যারা ছড়ান ও যারা এতে আতংকিত হন, তাদের বড় কর্তব্য ছিল অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং মৃত্যুপরবর্তী পাথেয় হাছিলে সচেষ্ট হওয়া।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ড : গত ৪ঠা এপ্রিল মঙ্গলবার দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা পোশাকের মার্কেট ঢাকার বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যাতে মার্কেটটির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাযার দোকানের সবই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ী নানাভাবে ঋণ নিয়ে দোকানে মালামাল মওজুদ করেছিলেন। তারা এখন নিঃস্ব ও সম্বলহারা। এমতাবস্থায় তাদের ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করা যরূরী। তাদের অনেকে ঋণের টাকা, পাওনা টাকা ও সংসার নিয়ে পাগলপারা। তাদের বাকি টাকার খাতা তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে দেশের যে সকল ব্যবসায়ীর বকেয়া লেনদেন আছে, তারা নিজ নিজ দায়িত্বে তা পরিশোধ করুন। তাতে সর্বস্বহারা ব্যবসায়ীদের কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। লিখিত প্রমাণ বড় নয়। বরং আল্লাহর নিকটে জবাবদিহিটাই বড় কথা। অতএব আল্লাহকে ভয় করুন এবং ব্যবসায়ীদের পাওনা সঠিকভাবে দিয়ে দিন।

সর্বোপরি এই অবস্থায় কোনরূপ রাজনীতি কাম্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছেন। এর পাশাপাশি আমাদের সবাইকেই এসব নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেন যেন ঢাকার প্রসিদ্ধ মার্কেটগুলিতে অগ্নিকান্ড প্রায় স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত ৭ই মার্চ মঙ্গলবার ছিদ্দীক বাজারে ৭তলা ভবনে অগ্নিকান্ড ঘটে এবং তাতে ২২ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। প্রায় একই সময়ে রাজধানীর গুলিস্তান, ওয়ারী, মহাখালীর সাততলা বস্তি, নবাবপুর, নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গত ১৫ বছরে বহু অগ্নিকান্ড ঘটেছে। প্রায় সবগুলি অগ্নিকান্ডের মূলে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সতর্কতার অভাব। অতএব মার্কেট মালিকদের যথাযথ তদারকি ও ফায়ার ব্রিগেডের তাৎক্ষণিক ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আল্লাহর নিকট থেকে উত্তম বদলা কামনায় তাদেরকে ধৈর্য ধারণের আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন (স.স.)






বিষয়সমূহ: পাপ পরকাল
দর্শনীয় স্থানগুলি শিক্ষণীয় স্থান রূপে গড়ে তুলুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস হৌক যাকাত ও ছাদাক্বা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাংলা একাডেমীর বইমেলা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নৃশংসতার প্রাদুর্ভাব : কারণ ও প্রতিকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তির ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বাধীনতা দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিপন্ন স্বাধীনতা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছ আন্দোলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভেসে গেল স্বপ্নসাধ! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাননীয় সিইসি সমীপে
সত্যের সন্ধানী - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধের উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.