রাষ্ট্রের কোন যথার্থ সংজ্ঞা আজও নির্ধারিত হয়নি। তবে নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলে বর্তমান যুগে একটি রাষ্ট্র বাস্তবে রূপ লাভ করে থাকে। মানবতার সুরক্ষা ও উত্তম জীবন যাপনই যার একমাত্র লক্ষ্য।

প্রাচীন গ্রীসের City state বা নগর রাষ্ট্রগুলিকেই আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর আদি রাষ্ট্র বলে ধারণা করেন। কারণ ঐগুলি ছিল দু’তিন হাযার জনগোষ্ঠীর একেকটি গ্রামের মত। যারা পরস্পরে প্রত্যক্ষ আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে শাসন চালাতেন। একে আদি গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রত্যক্ষ শাসন নীতিই ছিল কথিত নগররাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল দিক। কথায় বলে ‘অধিক সন্ন্যাসী গাজন নষ্ট’। এথেন্সের নগররাষ্ট্রের ৫২৫ জনের জুরি বোর্ডের অধিকাংশ যখন সেদেশের জ্ঞানীকুল শিরোমণি সক্রেটিসকে নিজ হাতে বিষপানে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলেন, তখন তাঁর শিষ্য প্লেটো (খৃঃ পূঃ ৪২৭-৩৪৮) এই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারালেন। জ্ঞান সম্পর্কে এথেন্সবাসীদের উদাসীনতা তথা তাদের মানসিক বৈকল্য তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করে তোলে। তাই নিজ দেশ এথেন্স ও গ্রীসের নগর রাষ্ট্রগুলিকে জ্ঞানালোকে আলোকিত করে অভিজাত তন্ত্রের মাধ্যমে তিনি নতুনভাবে সংহত করতে চেয়েছিলেন।

পক্ষান্তরে তাঁর শিষ্য এরিস্টটলের আদর্শ রাষ্ট্রে বিশেষ কোন সুবিধাভোগী শ্রেণীর জন্য বিশেষ কোন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। প্লেটোর মতে রাষ্ট্রে ঐক্য ও সংহতি যত বৃদ্ধি পাবে, রাষ্ট্রের মঙ্গল তত বেশী সম্পন্ন হবে। কিন্তু এরিস্টটলের মতে রাষ্ট্রে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য থাকা বাঞ্ছনীয়। তা না হলে রাষ্ট্র প্রথমে একটি পরিবারে ও পরে একটি ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হবে। যাতে রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নষ্ট হবে। দুই প্রধান চিন্তাবিদের মধ্যে এত অমিলের মধ্যেও মিল ছিল প্রচুর। দু’জনে ছিলেন একে অপরের প্রিয়তম গুরু ও শিষ্য। উভয়ে ছিলেন একই নগর রাষ্ট্রের অভিন্ন ঐতিহ্যের ক্রোড়ে লালিত। হোমার থেকে সক্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত যে পটভূমি, দু’জনেই তা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন। দু’জনেই গ্রীসের খন্ড-বিখন্ড ও পারস্পরিক কোন্দলে জর্জরিত নগররাষ্ট্রগুলির রোগগ্রস্ত অবস্থা দেখে ব্যথিত ছিলেন এবং রাজনৈতিক স্থিতিহীনতার প্রতিকার চিন্তায় ক্লিষ্ট ছিলেন। জ্ঞানই পূণ্য এ মৌলিক বিষয়ে দু’জনে ছিলেন এক ও অভিন্ন। উভয়ে বিশ্বাস করতেন যে, রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে এবং উন্নততর জীবনের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র চালু থাকবে।

আমরা এখন আধুনিক গণতন্ত্রের যুগে বাস করছি। প্রাচীন গ্রীসের কয়েকটি নগর রাষ্ট্রকে এর মডেল হিসাবে ধরা হয়। তবে তা ছিল আধুনিক গণতন্ত্র থেকে আলাদা। যেমন প্রাচীন এথেন্সে দাসগণের ও বিদেশী বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার ছিল না। সে সময় এথেন্সের অর্ধেকই ছিল ক্রীতদাস ও ১৫ শতাংশ ছিল বিদেশী। বাকী ৩০ ভাগের মধ্যে কেবল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটাধিকার ছিল, নারীদের ছিল না। এইসব ভোটাররা কেবল অভিজাতদের নির্বাচন করত। ফলে শাসনকার্যে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। সর্বোপরি তখনকার রাষ্ট্রদর্শন ছিল ব্যক্তির জীবনধারা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। যার গূঢ় উদ্দেশ্য ছিল দুর্বল শ্রেণীকে দমন করা ও তাদেরকে আজীবন শ্রমদাস হিসাবে ব্যবহার করা। আর এখনকার রাষ্ট্রদর্শন হ’ল ব্যক্তির বিকাশে ও তার সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে রাষ্ট্র সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এখনকার গণতন্ত্র হ’ল অপ্রত্যক্ষ। যেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই আইন প্রণয়নে ও শাসন কার্যে অংশ গ্রহণ করে। পরোক্ষ গণতন্ত্রে একজন  ভোটার বিস্তীর্ণ মরুভূমির একটি বালুকণা সদৃশ। মেয়াদ শেষে একবার যার খোঁজ পড়ে এবং এতে সে নিজেকে বড় গর্বিত মনে করে। এরপরেই সে পুনরায় বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়। তবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে ভাল দিক হ’ল, জনগণের মধ্যে সাম্যবোধ ও দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়। আর এর সবচেয়ে মন্দ দিক হ’ল, সে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশী প্রতারিত হয় ও নির্যাতিত হয়। অথচ তার কিছুই করার থাকে না। এ এক অসহনীয় অবস্থা। ফলে অসন্তুষ্ট জনগণ হরতাল, ধর্মঘট-ভাঙচুরের আশ্রয় নেয়। সরকার চরম দমননীতি চালায়। ফলে গণতন্ত্রের ঘোষিত নীতি-আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়।

বস্ত্ততঃ প্লেটোর সময় থেকেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছে। হেনরী মেইন, লেকি প্রমুখ চিন্তাবিদ এর সমালোচনা করেছেন, লেকি বলেছেন, গণতন্ত্র হ’ল দারিদ্র্যপীড়িত, অজ্ঞ ও অক্ষমদের শাসন। কারণ তারাই সর্বদা সংখ্যাগুরু’। প্লেটো বলেছেন, এটা সংখ্যাগরিষ্টের নামে মূর্খের শাসন। তিনি গণতান্ত্রিক সরকারকে নিকৃষ্টতম সরকার বলেছেন। তিনি অভিজাততন্ত্রকে এবং তাঁর শিষ্য এরিস্টটল রাজতন্ত্রকে সর্বোৎকৃষ্ট সরকার বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, এতে উচ্ছৃংখলতা এত বৃদ্ধি পায় যে, অবশেষে স্বেচ্ছাচারী নেতা সকল ক্ষমতা এক হাতে কুক্ষিগত করে নেয়’। টেলির‌্যান্ড বলেন, এটি শয়তানের শাসন’। এমিল ফাগুয়ে বলেন, এটি হ’ল অনভিজ্ঞদের শাসন। কেননা বিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকেরা কখনো দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে ভোট চায় না। ফলে শুধু লোভী ও অপদার্থরাই ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তারা অগ্নিঝরা ভাষণে মানুষকে ভুলিয়ে ভোট নেয়। অথচ শাসনকার্য এত সহজ নয় যে, কয়েক দিনের মধ্যেই সে সবকিছু রপ্ত করে নিবে। এজন্য দক্ষ ও নিপুণ হাতের প্রয়োজন’।

সবচেয়ে বড় কথা হ’ল গণতন্ত্র হ’ল দলীয় শাসন ব্যবস্থা। এতে প্রশাসন দলীয়করণ অবশ্যম্ভাবী। সেই সাথে বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকিছুই দলীয়করণের বিষে আক্রান্ত হয়। এই সাথে তৃণমূল পর্যন্ত গড়ে ওঠে রাজনীতির নামে এক শ্রেণীর পেশাদার সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ। যাদের হাতে সাধারণ মানুষের জান-মাল ও ইযযত প্রতিনিয়ত লুট হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র অধিকাংশ দেশেই ব্যর্থ হয়েছে। জ্ঞানীরা ভোট দেয় না। মুর্খদের লোভ দেখিয়ে বা জোর করে এনে ভোট দেওয়ানো হয়। এরপরেও থাকে ভুয়া ভোটের জয়জয়কার। বিভিন্ন দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র নামে যা চলছে, তা একেক দেশে একেক রকম। যার প্রায় সবগুলিই প্রতারণামূলক ও অত্যাচারমূলক। ফলে এর মূল্যায়নকারীদের শেষ মন্তব্য হ’ল, যতদিন মানুষ আদর্শবান ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে না উঠবে, ততদিন যে নামেই হৌক, শাসন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ থাকতে বাধ্য।

সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল নিঃসন্দেহে বড় জ্ঞানী ছিলেন। তারা জ্ঞান ভিত্তিক সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেছেন। যদিও সে স্বপ্ন কোথাও বাস্তবায়ন হয়নি। যে প্রাচীন নগর রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে, তা আসলেই কোন রাষ্ট্র ছিল না। এগুলি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতিকদের কল্পনার সৃষ্টি মাত্র। কেননা তাদের সামনে কোন আদর্শ রাষ্ট্রের নমুনা না থাকায় অনৈতিহাসিক ও অপ্রমাণিত একটি বিষয়কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রদের সামনে কল্পচিত্র হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন। যাতে তাদের চিন্তা-চেতনা গ্রীকদের বাইরে যেতে না পারে। গ্রীকরাই তাদের পূজ্য এবং সে যুগের চিন্তাবিদরাই তাদের নমস্য। ভাবখানা এই যে, গ্রীকরাই মানুষকে সভ্য বানিয়েছে এবং এরপর থেকে সভ্য হতে হতে বর্তমান উন্নততর যুগে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে শিক্ষিত শ্রেণীকে পাশ্চাত্যপূজারী করা হচ্ছে। অথচ যে মধ্যপ্রাচ্য হ’ল মানবেতিহাসের উৎসভূমি, আদি পিতা আদম (আঃ) সহ প্রায় সকল নবী-রাসূলের জন্ম ও কর্মভূমি, যেখানে মানবজাতি নবীগণের হাতে সর্বোত্তম সমাজব্যবস্থা দেখেছে, দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ)-এর আমলে বিশ্বসেরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখেছে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন ও তাঁদের উত্তরসুরীদের হাতে সর্বোত্তম রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থা দেখেছে, এসব থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষকদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

যদি বলি, লিখিত ইতিহাস শাস্ত্রের জন্ম কতদিন আগে? এর কোন সঠিক জবাব কারু কাছে আছে কি? যা কিছুই বলা হবে, প্রায় সবকিছুই ধারণা ও কল্পনা প্রসুত। অথচ অভ্রান্ত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে কুরআনে। পৃথিবীতে আদম (আঃ)-এর অবতরণ থেকে শেষনবী (ছাঃ)-এর আগমন পর্যন্ত সব ইতিহাস সেখানে আছে। যার একটি শব্দ ও বর্ণ এযাবত কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। সেখানে বর্ণিত রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে সুপরিকল্পিতভাবে মানুষকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। মানবতার সুরক্ষায় ও উত্তম জীবন যাপনে যার কোন তুলনা নেই। আসুন আমরা সেদিকে মনোনিবেশ করি।

আদম (আঃ)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষের আবাদ হয়। দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনায় আদম (আঃ) সবকিছু এককভাবে আনজাম দিতেন আল্লাহর অহী মোতাবেক। এইভাবে যুগে যুগে নবীগণের মাধ্যমেই মানবজাতির পরিবার ও সমাজ জীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে। যদিও প্রত্যেক যুগেই শয়তান তার চমৎকার যুক্তি ও কৌশলের মাধ্যমে কিছু মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। ফলে কাবীল, কেন‘আন, ‘আদ, ছামূদ, নমরূদ, ফেরাঊন, কারূণ প্রমুখ দুষ্টু নেতাদের আবির্ভাব ঘটে। যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান থেকে ফিরিয়ে নিজ নিজ জ্ঞানভিত্তিক শাসনের অধীনস্ত করে। যেমন ফেরাঊন তার কওমকে বলেছিল, তোমাদের জন্য যেটা মঙ্গল সেটাই আমি তোমাদের বলি। আর আমি তোমাদের কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি’ (মুমিন ৪০/২৯)। অথচ সে ছিল বিশ্বসেরা যালেম শাসক। তার রাষ্ট্রদর্শনে ছিল তার নিজস্ব জ্ঞান ও দুষ্টু নেতাদের মন্দ পরামর্শ। যুগে যুগে শয়তানের উপাসীরা এটাই করেছে জনগণের কল্যাণের নামে। আজও তারা সেটাই করে যাচ্ছে। ফলে রাষ্ট্র ও সরকারের অস্তিত্ব এখন বহু ক্ষেত্রে মানুষের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপরূপে দেখা দিয়েছে। ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র বলে এমন নতুন পরিভাষা চালু হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই উক্ত তালিকাভুক্ত, এতে কোন সন্দেহ নেই। বস্ত্ততঃ যুলুম করাটাই এখন রাষ্ট্রদর্শনে পরিণত হয়েছে।

এর বিপরীতে নবীগণের রাষ্ট্রদর্শনে ছিল তাওহীদ ও তাক্বওয়া দর্শন। সেখানে অহীর বিধান ছিল সবার ঊর্ধ্বে। যা ছিল সত্য ও মিথ্যার মানদন্ড। জ্ঞানীদের মতভেদ সেখানেই সমাধান হ’ত। রোমাকদের কাছে এই মানদন্ড ছিল না। তাই তারা জ্ঞানের ঊর্ধ্বে কোন অভ্রান্ত সত্যের সন্ধান পাননি। যে সত্য আল্লাহ স্বীয় নবীগণের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে নাযিল করতেন। নবীগণ সেগুলি মানুষকে শুনাতেন ও সেভাবে তাদেরকে পরিচালিত করতেন। এতে শয়তানের উপাসীদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব হ’ত। সত্য ও মিথ্যার সে দ্বন্দ্ব আজও আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু সত্যের উপাসীগণ ইহকাল ও পরকালে সর্বদা সফলকাম হবেন।

নবীগণের রাষ্ট্রদর্শনে সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীন থাকবে। যার অধীনে রাষ্ট্রপ্রধান সহ সকল মানুষের অধিকার সমান। এখানে দাস ও মনিবের কোন ভেদাভেদ নেই। আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার এখতিয়ার কারু নেই। ফলে এখানে হালাল-হারাম ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে কারু পরামর্শের বা মতামত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হবে কেবল সেগুলি বাস্তবায়নের পন্থা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে। সূর্যের কিরণ, চন্দ্রের জ্যোতি, বাতাসের প্রবাহ, নদীর স্রোত যেমন সকল প্রাণীর জন্য কল্যাণকর, আল্লাহর আইন তেমনি সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর। সেখানে ধর্ম-বর্ণ, ভাষা ও অঞ্চলের কোন বৈষম্য নেই। অহী নির্দেশিত সরকার ব্যবস্থায় নবীগণ ছিলেন আল্লাহর পক্ষ হ’তে নির্বাচিত প্রধান নির্বাহী। তাঁদের পরে উম্মতের সেরা ব্যক্তিগণ আপোষে পরামর্শের মাধ্যমে অথবা প্রার্থীবিহীনভাবে তাক্বওয়াশীল নির্বাচকগণ একজন বিজ্ঞ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে আমীর বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করবেন। যিনি গুরুভার বহনে এবং আল্লাহর নিকট কৈফিয়ত দানের ভয়ে থাকবেন সদা কম্পমান। যিনি আল্লাহর বিধান মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। এখানে অহি-র বিধান হবে একমাত্র অনুসরণযোগ্য এবং জ্ঞান হবে তার ব্যাখ্যাকারী। প্রশাসন হবে তার বাস্তবায়নকারী। জনগণ হবে আমীরের আনুগত্যকারী, যতক্ষণ আমীর আল্লাহর আনুগত্যকারী থাকেন। নইলে আল্লাহর অবাধ্যতায় আমীরের প্রতি কোন আনুগত্য নেই। এখানে জিহাদ হবে অসত্যের বিরুদ্ধে, শয়তানী অপশক্তির বিরুদ্ধে, সামাজিক শৃংখলা ও স্থিতির স্বার্থে। এখানে দন্ডবিধিসমূহ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এখানে অপরাধীরা স্বেচ্ছায় এসে দন্ড গ্রহণ করে আখেরাতে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার আশায়। এখানে মানুষ নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা করে আখেরাতে জান্নাত লাভের আকাংখায়। তারা আমীরের আনুগত্য করে পরকালীন ছওয়াবের আশায়। বিদ্রোহ-বিক্ষোভ, বিশৃংখলা এ রাষ্ট্রে অকল্পনীয় বিষয়। এভাবে রাষ্ট্রে নেমে আসবে অনাবিল শান্তি। সমাজে নেমে আসবে আল্লাহর রহমত। এই রাষ্ট্রদর্শনে আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষ হবে ভাই ভাই। সেই শান্তির সমাজই মানবতার একমাত্র কাম্য। এটাই হ’ল খেলাফত রাষ্ট্রদর্শন। মদীনা ছিল যার নমুনা। আমরা কি সেদিকে ফিরে যেতে পারি না? আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: রাজনীতি
এশিয়ার দুর্গের পতন। অতঃপর.. - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সামাজিক অস্থিরতা ও তা দূরীকরণের উপায় সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ক্ষেত-খামার
ধর্মনিরপেক্ষতার ভয়াল রূপ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবাধিকার সবার জন্য সমান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হিংসা ও অহংকার সকল পতনের মূল - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আন্তঃধর্ম শান্তি সম্মেলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দেশের তরুণ সমাজ বিদেশমুখী হচ্ছে কেন? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কোয়ান্টাম মেথড : একটি শয়তানী ফাঁদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অহি-র বিধান বনাম মানব রচিত বিধান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.