উত্তর : ইভ্যালী,
আলিশা মার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স সাইট অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের আধুনিক
প্রতিষ্ঠান। যেখানে ৪৫ দিন বা নির্দিষ্ট মেয়াদে পণ্য সরবরাহের চুক্তিতে
অগ্রিম টাকা জমা দিতে হয় এবং বিনিময়ে বাযারমূল্য থেকে বিশাল অংকের লোভনীয়
ছাড় দেওয়া হয়। আর নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে পণ্যের বাযার
মূল্যের সমপরিমাণ চেক রিটার্ণ দেওয়া হয় (যদিও সেই অর্থ ইভ্যালী বা
নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যত্র ব্যবহারযোগ্য নয়)। ফলে ক্রেতা খুব সহজেই
প্রলুব্ধ হয় এই ধারণায় যে, পণ্য পেলেও লাভ, না পেলেও লাভ।
তাদের ব্যবসা পর্যালোচনা করলে কয়েকটি বড় ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। (১) বায়‘এ গারার বা অস্পষ্ট ক্রয়-বিক্রয় : কেননা এর পরিণতি অনিশ্চিত। ক্রেতা জানেনা যে, শেষ পর্যন্ত সে পণ্যটি পাবে কি-না। এধরনের অস্পষ্ট শর্ত বা চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) কংকর নিক্ষেপ করে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং গারার বা ধোঁকাযুক্ত লেনদেন থেকে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৩৬৯১)। (২) হস্তগত হওয়ার পূর্বেই অগ্রিম পণ্য বিক্রয় : তারা এমন পণ্যের অর্ডার গ্রহণ করে, যা তাদের হস্তগত হয়নি বা আয়ত্বে নেই। হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! আমার নিকট এসে কোন লোক এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার নিকট নেই। আমি এভাবে বিক্রয় করতে পারি কি যে, তা বাযার থেকে ক্রয় করে এনে তাকে দিব? তিনি বলেন, যা তোমার অধিকারে নেই তা তুমি বিক্রয় করো না (আবুদাউদ হা/৩৫০৩; মিশকাত হা/২৮৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২০৬)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদ্য-দ্রব্য (খরীদ করে) পুরোপুরি আয়ত্বে না এনে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। রাবী ত্বাঊস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, যেমন দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম আদান-প্রদান করা হয়। অথচ পণ্যদ্রব্য অনুপস্থিত থাকে (বুখারী হা/২১৩২; মুসলিম হা/১৫২৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এটিকে দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয় বলার কারণ হ’ল, বিক্রেতা পণ্যটি নিজ আয়ত্বে নেওয়ার পূর্বেই তা বিক্রয় করে। বরং পণ্য দিতে বিলম্ব করে। ফলে এটি দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয়ের সমতুল্য। অর্থাৎ বিক্রেতা যেন পণ্য হাতে না পেয়েই ১০০ টাকার পণ্য কিনে পরে ১২০ টাকায় বিক্রয় করল (ফাৎহুল বারী ৪/৩৪৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, বর্ণনাকারী ত্বাঊস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাসের নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারণ কি? তিনি বললেন, তুমি কি লক্ষ্য করোনি যে, লোকজন স্বর্ণ ও খাদ্যদ্রব্য বাকীতে ক্রয় করে? (মুসলিম হা/১৫২৫)।
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি বাযারে গিয়ে যায়তূন কিনলাম। তা আমার হস্তগত হ’লে এক ব্যক্তি এসে আমাকে এর একটা ভালো মুনাফা দিতে চাইল। আমি তাকে যায়তূন প্রদানের ইচ্ছা করলে পিছন থেকে একজন এসে আমার বাহু ধরলেন। তাকিয়ে দেখি, যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ)। তিনি বললেন, যেখান থেকে কিনেছেন সেখানে বিক্রি করবেন না। আপনার স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করুন। কারণ রাসূল (ছাঃ) ব্যবসায়ীদেরকে পণ্যদ্রব্য ক্রয়ের পর নিজের স্থানে নিয়ে যাওয়ার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/৩৪৯৯; হাকেম হা/২২৭১, সনদ ছহীহ)।
(৩) ক্বিমার বা লটারী : অস্বাভাবিক প্রলোভন দেখানোর পর এতে অল্প কিছু সংখ্যক ক্রেতার নিকট পণ্য পাঠানো হয় এবং এতে সে ব্যাপক লাভবান হয়। কিন্তু অপরদিকে অসংখ্য ক্রেতা পণ্য প্রাপ্তির মিথ্যা আশায় বসে থাকে এবং পরে বঞ্চিত হয়। যা ক্বিমার বা জুয়ার মত সুস্পষ্ট প্রতারণা (৪) সূদ : এতে বঞ্চিত ক্রেতাদেরকে মূল টাকার উপর অতিরিক্ত এমনকি শতভাগেরও বেশী ক্যাশব্যাক দেওয়া হয়। এটি একদিকে কেনাবেচার কোন শর্তের মধ্যেই পড়ে না। উপরন্তু অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের কারণে তা সম্পূর্ণ সূদে পরিণত হয়। (৫) যুলুম : এই অতিরিক্ত টাকা গ্রাহকের হাতে সরাসরি না দিয়ে তাদেরকে কোম্পানীর অন্যান্য পণ্য ক্রয় করার জন্য বাধ্য করা হয়, যা যুলুম। (৬) ফটকাবাজারী : এই ব্যবসা বাযারে অপ্রকৃত মূল্যের মাধ্যমে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা তৈরী করে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে ঠেলে দেয়। সুতরাং এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না। অতএব এরূপ ব্যবসা নিজে করা যাবে না এবং এতে অংশগ্রহণও করা যাবে না।
প্রশ্নকারী : অলিউল্লাহ, চারঘাট, রাজশাহী।