
ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। মানুষের ফিতরাত তথা সহজাত প্রবৃত্তিকে ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তা পূরণের সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও কল্যাণকর নির্দেশনা দিয়েছে। এজন্য ইসলাম মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের জীবনে স্বভাবগত কিছু অনুভূতি ও অবস্থা রয়েছে যেমন- ক্লান্তি-ক্লেশ, হীনমন্যতা, বিষণ্ণতা, দুর্বলতা, আনন্দ-উচ্ছ্বাস, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা প্রভৃতি। এগুলো মানুষের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ চাইলেও এগুলো থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে পারে না।
মানবিক প্রবৃত্তি প্রধানত দুই ধরনের। দেহের প্রবৃত্তি এবং মনের প্রবৃত্তি। দেহের যাবতীয় প্রবৃত্তি নিবারণের সমস্ত বৈধ পন্থা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত রয়েছে। যেমন অসুস্থ হ’লে চিকিৎসা গ্রহণ, ক্লান্তি ও দুর্বলতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম এবং পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহকরণ ইত্যাদি নির্দেশনা ইসলামী শরী‘আতে রয়েছে। অনূরূপভাবে মনের অবসাদ, দুঃখ-যন্ত্রণা, নানা প্রতিকূলতার মানসিক চাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রয়োজন চিত্ত বিনোদন। যা মানুষের আত্মিক খোরাক। যেটা মানুষকে প্রশান্তি দেয় এবং মনকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। ফলে মানুষ প্রফুল্ল চিত্তে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত-বন্দেগীতেও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হ’ল, বিনোদন বলতেই আমাদের মাথায় চলে আসে তথাকথিত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসনের চাপে সমাজ জীবনে প্রচলিত গান, বাজনা, নাটক, সিনেমা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতা। যার উন্মত্ত স্রোতে গা ভাসিয়ে বহু মুসলিম আজ নিজেদের স্বকীয়তা, নৈতিকতা ও আত্মপরিচয় ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। অথচ ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যাকে আল্লাহ তা‘আলা সব দিক থেকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। যেখানে চিত্ত বিনোদনের জন্য বিজাতীয় সংস্কৃতির দারস্থ হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ইসলাম নিজেই একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থাকে বিশ্বমানবতার নিকট থেকে মুছে ফেলতে ইহুদী ও খ্রিষ্টান সভ্যতা যুগে যুগে নানা কৌশলে গ্রীসীয় ও রোমান সংস্কৃতি মুসলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যাতে মুসলমানরা ধীরে ধীরে নিজেদের মৌলিক চেতনা, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় ভুলে যায়। হার্ভাড বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন সেকথাই ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইসলামী মৌলবাদ পশ্চিমাদের জন্য মূল সমস্যা নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি সভ্যতার ধারক হওয়ার কারণে ইসলামই তাদের মূল সমস্যা। কারণ এ ধর্মের অনুসারীরা তাদের নিজেদের জীবনাচার বা ইসলামের সংস্কৃতিকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে প্রাণে বিশ^াস করে; যদিও নিজেদের শক্তি-সামর্থের দীনতা বর্তমানে তাদের মনকে কিছুটা দুর্বল করে রেখেছে। একইভাবে ইসলামের জন্যও CIA কিংবা আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সত্যিকার কোন সমস্যা নয়।
বরং পুরো পশ্চিমা সভ্যতাই তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা’।[1]
এই ছোট্ট একটি মন্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক আদর্শ তুলে ধরে একজন ইংরেজ অধ্যাপক যে সত্যকে উপলব্ধি করেছেন, সেটা যদি মুসলিম উম্মাহ হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করত তাহ’লে কখনোই ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে স্থান দিত না। দুঃখজনকভাবে আজ মুসলিম উম্মাহ দুনিয়ার মরীচিকার পিছনে ছুটতে ছুটতে ইসলামী শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মৌলিকত্ব রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমা সমাজের বাহ্যিক চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে তারা নিজেদের আদর্শিক শিকড় উপড়ে ফেলেছে। অথচ একসময় মুসলমানরাই সভ্যতার পথপ্রদর্শক ছিল এবং বিশ্ব জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করত। আজ ইসলামী জ্ঞান থেকে দূরে সরে গিয়ে এবং নিজেদের আদর্শিক পরিচয় ভুলে গিয়ে মুসলিম উম্মাহ পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণকারী এক নিষ্প্রভ বাহকে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সেই হারানো চেতনা ফিরিয়ে আনতে হ’লে আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উৎসারিত সংস্কৃতির মধ্যেই বিনোদনের আত্মিক খোরাক নিবারণ করতে হবে। এখন আলোচ্য প্রসঙ্গে আসা যাক।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদ। ঈদ শুধুমাত্র উৎসব নয় বরং ইবাদতও বটে। কিন্তু বর্তমানে ঈদ যেভাবে উৎযাপন হচ্ছে তাতে এর ধর্মীয় গুরুত্ব কমে গিয়ে নিছক বস্ত্তবাদী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ঈদের দিন ছালাত শেষ হ’তেই খুৎবা না শুনে একদল লোক বের হয়ে চলে যায়, গ্রাম-গঞ্জে ঈদগাহের আশেপাশে খাবারের বিশাল মেলা বসে, বিকাল হ’তে না হ’তেই পার্কগুলোতে নারী-পুরুষের সমাগম বাড়ে, অন্তত ৩-৪ দিন যাবৎ রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পার্ক ও অবকাশযাপন কেন্দ্রগুলোতে চলে বেপর্দা ঘোরাঘুরি, বাসা বাড়ীতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, সিনেমা হলগুলোতে ঈদ কেন্দ্রিক সিনেমা দেখার হিড়িক। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকরা পিকআপ ভাড়া করে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে বেহায়ার মত উদ্দাম নাচতে নাচতে এলাকা কাঁপিয়ে চলে যাচ্ছে। আরো এক ধাপ এগিয়ে এ বছর ঈদুল ফিতরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত সুলতানী আমলের ঈদ মিছিলের নামে চরম জাহেলিয়াত। গত ৩১শে মার্চ ঈদুল ফিতরের ছালাত শেষে ঢাকার রাজপথে ঈদের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যকে পদদলিত করে বেহুদা ঈদ মিছিল প্রদর্শিত হয়। সেখানে গানের তালে তালে ব্যান্ড পার্টির ঢোল-তবলা, রঙিন সাজে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি আর বিভিন্ন কিসিমের পাপেট মূর্তির ছড়াছড়ি। ঈদ মিছিলের নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির সয়লাব দেখে মনে প্রশ্ন জাগে-এগুলো কি আদৌ ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্কৃতি? মুহাম্মাদ (ছা.) আমাদের এভাবে ঈদ উদযাপন করতে শিখিয়েছেন? আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ঈদ পালন করছি না-কি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মোহে অন্ধ হয়ে গেছি? ঈদ কি কেবল সামাজিক রীতিনীতির মত নিছক কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, না-কি ইবাদত? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হ’লে আমাদের জানতে হবে বস্ত্তবাদী সংস্কৃতি এবং ইসলামী সংস্কৃতির মৌলিক পার্থক্য। জানতে হবে ঈদের প্রেক্ষাপট এবং রাসূল (ছা.)-এর যামানার ঈদ উদযাপন সম্পর্কে। শুরুতেই সংস্কৃতির প্রসঙ্গে আসা যাক।
ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই.বি টাইলরের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের সদস্য হিসাবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন, রীতিনীতি এবং অন্য যেকোন দক্ষতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টি’।[2] অপর এক বর্ণনা মতে, ‘সাধারণত কৃষ্টি বা Culture অভ্যাসগত আচার পদ্ধতি বা Way of life ভিন্ন কিছু নয়। তার পিছনে মানব জীবন সম্বন্ধে একটি মূল ভাবধারা থাকে। এই মূল ভাবধারাটাই প্রত্যেক সভ্যতার পটভূমি বা Background. যাকে কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে উঠে। প্রকৃতপক্ষে Civilization হচ্ছে Culture বা কৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।...কৃষ্টি একটি অভ্যাসগত প্রাথমিক জীবন পদ্ধতিরূপে বর্তমান থেকে শেষে স্বভাবগত হয়ে পড়ে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে যে সভ্যতা গড়ে উঠে পন্ডিতগণ তাকেই যুক্তিসঙ্গত স্বাভাবিক কৃষ্টি ও সভ্যতা নাম দিয়ে থাকেন’।[3]
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সমাজের একজন মানুষ যে রীতিনীতি, আচার-আচরণ, দক্ষতা ও অভ্যাস নিয়ে বেড়ে উঠে তা-ই তার সংস্কৃতি। মোদ্দাকথা, মানুষের অনুশীলিত কৃষ্টির পরিশীলিত রূপই সংস্কৃতি। ব্যক্তি যদি অমুসলিম সমাজের ব্যাকগ্রাউন্ডে বেড়ে উঠে তাহ’লে সেই সমাজের জ্ঞানের উৎস, ধর্মীয় বা বৈষয়িক বিশ্বাসের ভিত্তি, আইন, রীতিনীতির উৎসের ভিত্তিতেই তার সংস্কৃতি নিহিত। অপরদিকে ব্যাক্তি যদি মুসলিম সমাজের ব্যাকগ্রাউন্ডে বেড়ে উঠে তাহ’লে সেই সমাজের মানুষের অর্জিত জ্ঞানের উৎস, ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিকতা, আইন ও রীতিনীতির উৎসের মধ্যেই তার সংস্কৃতি। মুসলমানদের সমাজব্যবস্থা, ধর্ম বিশ্বাস, শিক্ষা-সাহিত্য, আইন, আচার-আচরণসহ সকল কিছুর উপাদান পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে মওজূদ রয়েছে। সুতরাং আজ থেকে ১৫০০ বছর পূর্বে মুহাম্মাদ (ছা.) ও তাঁর ছাহাবীগণ কুরআন ও হাদীছ ভিত্তিক যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন সেই সমাজের সংস্কৃতিই ইসলামী সংস্কৃতি। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছই সে সংস্কৃতির উৎস। সেজন্য মাওলানা আবদুর রহীম লিখেছেন, ‘সমাজবদ্ধ মানব-সমষ্টির মধ্যে মুসলিম জাতির লক্ষ্য, পথ-প্রদর্শক ও আলোকবর্তিকা এক ও অভিন্ন। আল্লাহর সন্তোষ লাভ তাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছা.) তাদের পথ-প্রদর্শক। তাদের অগ্রগতি সাধিত হয় আল্লাহর কালাম কুরআন মাজীদের নিষ্কলংক আলোকের দিগন্তপ্লাবী উজ্জ্বলতায়। ফলে তার (কুরআনের) উপস্থাপিত জীবন ব্যবস্থার প্রতিফলনে যে সাংস্কৃতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তির উন্মেষ ঘটে কেবলমাত্র তা-ই হ’তে পারে ইসলামী সংস্কৃতি’।[4]
ঈদ অবশ্যই ইসলামী সংস্কৃতির অংশ। যে সংস্কৃতির উৎস হ’ল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। সেজন্য এটি ইবাদত; সাধারণ কোন সংস্কৃতি নয়। ঈদের মধ্যে ইবাদত, আনন্দ ও উৎসব সবই নিহিত রয়েছে। এই সকল বৈশিষ্ট্য সমন্বয় করে রাসূল (ছা.) যেভাবে ঈদ উদযাপন করেছেন আমাদেরও সেভাবে উদযাপন করতে হবে। এটাই ইসলামী সংস্কৃতির মূল আদর্শ। যে ব্যক্তি ছওয়াবের নিয়তে ইসলামী শরী‘আতের সীমারেখার মধ্যে ঈদ উদযাপন করবে সে ঈদের দিন আনন্দ উৎসবে থাকলেও আল্লাহর ইবাদতেই সময় কাটাবে। কেননা ঈদের চাঁদ দেখা, ঈদের দিন সকালে গোসল করা, উত্তম পোষাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদুল ফিতরে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া, ঈদুল আযহায় না খাওয়া, এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, ঈদগাহে ছালাত আদায় করা, ঈদুল ফিতরের ফিতরা আদায় ও ছালাতান্তে বিতরণ করা, ঈদের তাকবীর পড়া, পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে تقبل الله منا ومنكم বলা, ঈদুল আযহায় কুরবানী করা, গোশত ও চামড়ার অর্থ গরীব, মিসকীনদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া ইত্যাদি সকল কিছু নিছক সংস্কৃতি নয় বরং প্রত্যেকটিই ইবাদত।
এগুলো রাসূল (ছা.) তাঁর ব্যক্তি জীবনে করে দেখিয়েছেন। এমনকি ঈদের দিন শারঈ এই কাজের ফাঁকে তিনি হালাল বিনোদনও উপভোগ করেছেন। ছহীহ বুখারীতে এসেছে, ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢাল নিয়ে খেলেছেন আর রাসূল (ছা.) ও আয়েশা (রা.) তা উপভোগ করেছেন (বুখারী হা/৯৫০)। এটাও আমাদের সংস্কৃতি। এ হাদীছ থেকে দলীল নিয়ে ওলামায়ে কেরাম নির্দোষ খেলাধূলা এবং শরী‘আত গর্হিত নয় এমন বিনোদনকে জায়েয বলেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন রাসূল (ছা.) মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতেন সম্ভবত এই হাদীছটির উপর ভিত্তি করে গ্রাম-গঞ্জে এক সময় কলে তৈরী সেমাই বানানোর প্রচলন ছিল। গ্রামের মহিলারা ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বেই সেমাই তৈরী করতেন এবং ঈদের দিন সকালে পরিবারের জন্য রান্না করে পরিবেশন করতেন। সেজন্য ঈদুল ফিতরকে সেমাই ঈদ বলা হ’ত। ঈদে উত্তম পোষাক পরা ইবাদত, কিন্তু নতুন পোষাক পরা শর্ত নয়। অথচ ঈদে আমরা কম-বেশী সবাই নতুন পোষাক পরার চেষ্টা করি। ঈদুল আযহায় কুরবানীর জন্য পশু ক্রয় করার নির্দেশ হাদীছে এসেছে। সেজন্য পশুর হাট বসানো হয়। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ঈদের দিন ঘটা করে সালামী নিতে আসে আর আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে তাদের সাধ্যমত সালামী দেই। এগুলো সবই ইসলামী সংস্কৃতির অংশ ইসলাম গর্হিত কোন কাজ নয়।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামী সংস্কৃতির মৌলিক উৎস কুরআন ও হাদীছ। কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ ইসলামী সংস্কৃতির অংশ নয়। সুলতানী, মুঘল কিংবা আরবীয় সমাজ বা রাজা-বাদশাহর মস্তিষ্কপ্রসূত কোন আমল ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠিগত ঐতিহ্য হ’তে পারে ইসলামী ঐতিহ্য নয়। আমাদেরকে ইসলামের গন্ডির মধ্যে থেকেই আত্মার খোরাক মেটাতে হবে এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!
[1]. Samuel P. Huntington, The Clash of Civilizations and the Remaking of World Order (New York : Simon & Schuster Rockefeller Center, 1996), page, 217-18; গৃহীত : ড. আবু আমীনা বিলাল ফিলিপস, সভ্যতার সংকট (ঢাকা : সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড, মে ২০১৬), পৃ. ১৬-১৭।
[2]. Edward B. Tylor, Primitive Culture (London : John Murray, Albemarle Street ,6th edition, June 1920), Vol. 1, page, 1.
[3]. হাছান আলী, আধুনিক সভ্যতার তত্ত্বকথা (তর্জুমানুল হাদীছ, ৭ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ফেব্রুয়ারী-১৯৫৭), পৃ. ১১৭।
[4]. মাওলানা আবদুর রহীম, শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ৭ম প্রকাশ, মে ২০১৯), পৃ. ২৩০।