অবতরণিকা : আমার চঞ্চল শৈশব আর উচ্ছল দুরন্ত কৈশোরের কিছুকাল কেটেছে এক উত্তাল প্রেমের বাঁধনে অছিন্ন ভালবাসার গ্রামে। কখনো মানসপটে জেগে ওঠা হঠাৎ ভাবনায়, কখনো একা বসে, আবার কখনোবা কোলাহলের আওয়ায ছাপিয়ে মনে পড়ে যায় সেই স্মৃতিমাখা অম্লমধুর দিনগুলি। কখনো ইচ্ছে হয় দু’লাইন কবিতা বলতে আবার কখনো মনে হয় লিখে ফেলি আমার কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলির গল্পগাঁথা। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যস্ততার ফাঁকে আজ এই ফুরসতে তবে দু’চার লাইন লিখে ফেলতে দোষ কী? মস্তিষ্কে আর মানসপটে যতটুকু স্মৃতি ধুসর রঙ্গে ছাপা, সেই পুঁজি দিয়েই তবে যাত্রা শুরু হৌক। আজ আমি স্মৃতিচারণ করব না। আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেব এক অনিন্দ্য সুন্দর ভাবনার সাথে।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ! তার ভৌগলিক অবস্থান আর বিশেষত প্রভুর রহমতে বছরান্তে ছ’টি করে মৌসুম আমরা অতিক্রান্ত করি। কিন্তু এখন আর মনে হয় না এটাই সেই ষড়ঋতুর দেশ! এখন আর ঘটা করে শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তের সৌন্দর্য চোখে ধরা পড়ে না। কেন এমন হয় তাও জানি না। আজ গ্রীষ্ম-শীতের সাথে বর্ষার নরম দিনগুলোকে আলাদা করতে পারলেই যেন স্বস্তিবোধ হয়। সেই ঋতুর বৈচিত্র্য থাকুক আর নাই থাকুক, আমি চিরকাল শৈশবে দেখা ঋতুগুলোকে পরম মমতায় আর অমিছে বচনে তুলে রাখব আমার সাহিত্য এবং হৃদয়ে। ষড়ঋতুর কখনো দগ্ধময় কখনো উষ্ণ-শীতল আর কখনো হৃদবাগ কিংবা পৃথ্বীবাগে ফোটা অযুত ফুলের সুঘ্রাণে শোভিত আজকের ঋতুবৈচিত্র্যময় দিনগুলোতে আপনাকে স্বাগতম! আজ আমি সেই ষড়ঋতুর সাথেই মানবাচরণকে মিলিয়ে দেখাব। সেখান থেকেই খোঁজার চেষ্টা করব সত্য-সঠিক পথ।
দগ্ধ গ্রীষ্মের রোজনামচা : গ্রীষ্ম! বলতেই মানসপটে যে নিপুণ অঙ্কন ফুটে ওঠে তা হ’ল, থালার মতো প্রকান্ড একখানা সূর্য। অনবরত সকাল হ’তে সন্ধ্যা অবধি জ্বলে থাকে আসমানে। ফের এক সময় সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। গ্রীষ্মের সরলীকরণ হ’ল গরম। গ্রীষ্ম মানে গা ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়া ক্লান্ত পথিক। গ্রীষ্ম মানে মাঠে কাজ করতে থাকা সোনালী ফসলের স্বপ্নবিভোর কৃষক, যারা রং রোদের কারিশমায় তামাটে বর্ণ ধারণ করে। গ্রীষ্ম মানে সংগ্রাম করতে থাকা জীবনযুদ্ধের ‘উপার্জক’ শ্রেণীর সৈনিকের ঝলসে যাওয়া দেহ।
ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্ম কড়া ঋতু! এই গ্রীষ্মের রুক্ষতার যে রূপ তা যেন মানুষের মধ্যেও ফুটে ওঠে। গ্রীষ্মকে আমার মনুষ্য অন্তরের রুক্ষতার সাথে এবং চিত্তে জ্বলতে থাকা হিংসা-অহংকারের সাথে মেলাতে বড্ড ইচ্ছে হয়। গ্রীষ্মের যেমন তাপদাহ ঠিক তেমনি মানুষের অন্তরও হিংসা ও অহংকারের তাপদাহে ক্রমাগত পুড়তে থাকে। সূর্যের তীর্যক আলো যেমন ধরাকে ভস্ম করে দেয়, ঠিক তেমনি হৃদয়ে জ্বলতে থাকা হিংসা কিংবা অহংকারটুকু তার সমগ্র দেহকে দগ্ধীভূত করে। প্রকান্ড হয়ে জ্বলতে থাকা গ্রীষ্মের সূর্য যেমন সরাসরি নীল আসমানের অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগে চোখের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি হৃদয়ের হিংসা-অহংকার একজন ব্যক্তির প্রকৃত সৌন্দর্য ও মর্যাদাটুকু উপলব্ধির পক্ষে ঢালস্বরূপ।
হে মানুষ! একবারের জন্য সরিয়ে দেখো তোমার বিদ্বেষপরায়নতা, অস্তমিত করে দাও হৃদয়ে জ্বলা অহংবোধের প্রতাপশালী সূর্য। তাহ’লে ঠিক গ্রীষ্মের শেষ বেলায় যখন সূর্য অস্তমিতপ্রায়, গোধূলীবেলার সেই দৃশ্য যেমন দেখতে বড্ড ইচ্ছে করে, লোকজন চোখভরা মুগ্ধতা আর হৃদভরা স্নিগ্ধতা দিয়ে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করে, তেমনি তোমার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে। একদৃষ্টে তোমার অন্তসৌন্দর্যে বিভোর হবে, বিমোহিত হবে তোমার চারিত্রিক গুণে। সুতরাং অন্তরে আনো স্নিগ্ধতা। তবেই প্রভুর দরবারে প্রিয় হয়ে উঠবে তুমি। গ্রীষ্মের দগ্ধ ভস্মজীবনবোধ যেন তোমার চেতনায় না ফুটে উঠে এই হোক পণ!
বর্ষার বজ্র রূপ : বর্ষা! শুনলেই কানে আসে এক পশলা বৃষ্টির আওয়াজ কিংবা কাছে-দূরে সহসা চারিদিক কাঁপিয়ে দেয় বজ্রধ্বনি। বর্ষা ঋতু পৃথিবীকে নরম করে রাখে। পরিমিত বর্ষাবারি প্রভুর রহমতে আমাদের জন্য কল্যাণময় ও মঙ্গলজনক। বর্ষা মানে নরম কাদায় পা ডুবে যাওয়া স্যাঁতসেঁতে পিচ্ছিল পথে পা পিছলে পড়া। বর্ষা মানে চাষীর চোখে সোনালী ফসলের স্বপ্ন। আবার বর্ষা মানে ফসল ডুবে যাওয়া কৃষকের হতাশার আর্তচিৎকার। বর্ষার মধ্যে নানা রূপের মিশ্রণ লক্ষ্যণীয়। ঠিক একইভাবে মানুষের রূপের পরিবর্তনে কখনো দেখা যায় বর্ষার নিপুণ চিত্রায়ন। আমার সমস্ত চিন্তাধারা বর্ষাকে যেমন নরম ও সুন্দর ঋতু হিসাবে চিহ্নিত করে, ঠিক তেমনিভাবে মানবহৃদয়ে জেগে ওঠা হঠাৎ ক্রোধ বা রাগ অথবা রঙ পরিবর্তনের বিষয়কে এর সাথে মিলিয়ে কল্পনা করতে পসন্দ করে নিতান্তই বিশেষিত রূপে।
বর্ষার গর্জন শৈশবে আমার কাছে ভয়াল ঠেকত এবং এখনও ঠেকে! ঝড় আসার পূর্বে যেমন আসমান ধুসর-কালচে মেঘের আস্তরণে তার নীল সৌন্দর্য ঢেকে দেয়, শুরু হয় মেঘমালার উচ্ছ্বল তর্জন-গর্জন। সহসা তেড়ে আসে প্রচন্ড ভয়াল রূপের ঝড়ো হাওয়া। কাঁপিয়ে দেয় মাটিতে শক্ত শেকড় গেড়ে বসা মহীরুহের ডালপালা। তেমনই মানুষের অন্তরেও তার স্বাভাবিকতায় যখন হঠাৎ ক্রোধ প্রবেশ করে তখন সে হয়ে ওঠে হিংস্র। অজান্তেই বদলে ফেলে নিজের রং। রাগের বশে সে যাই করে সেটাই হয় ক্ষতিকর। তাই শয়তান যদি কখনো ক্রোধের আগুন চিত্তে জ্বেলে দেয়, তখন ঝড়ের মতো বিধ্বংসী না হয়ে বাদল হয়ে ঝরে পড়ার চেষ্টা করবে। তাতে যেমন অন্তরের ধুলো ছাফ হবে তেমনি পারস্পরিক বন্ধন হবে মযবূত ।
শরতের শরলীকরণ : শরৎ! ঋতুর মধ্যে তুলনামূলক মায়াময় তার বেশ। স্নিগ্ধ শান্ত একটি ঋতু। শরতের আকাশ মানেই চোখভরা মুগ্ধতা। চোখ জুড়ানোর জন্য আকাশে পেঁজা তুলোর মত থরে থরে সাজানো মেঘমালা সারাদিন এ প্রান্ত হ’তে ঐ প্রান্তে ছুটোছুটি করে। কিঞ্চিৎ শিশির ভেজা শাপলাপাতা আর শিউলিগুলো হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। কাশবনের স্নিগ্ধ পরশ আমাদেরকে তার সাদা সৌন্দর্যে কখনো আনন্দিত করে আবার কখনো কাফনের রং মনে করিয়ে দেয়।
শরৎ ঋতু প্রাণবন্ত। সরল ঋতু শরৎ যেন মানুষের সরলতা, কোমলতা আর চারিত্রিক সৌন্দর্যের অনন্য প্রতীক। শরৎ কেমন যেন সাদা সাদা। আকাশে সাদা মেঘ, নদীর তীরে সফেদ কাশফুল, সাদা শিশিরিত শাপলা সবকিছুই যেন অন্তরের শুভ্রতা নির্দেশ করে। সুতরাং সার্বিক জীবনে হওয়া চাই শরতের জ্যোৎস্নার ন্যায় কোমল, মহৎ, উদার। সতেজ প্রকৃতির মতো চিরহরিৎ। যে প্রাণের গহীনে টইটম্বুর তাক্বওয়া। হে প্রতিপালক! শরতের মায়াবী স্নিগ্ধ সফেদ পবিত্রতা আমাদের অন্তরে তোমার তাক্বওয়ারূপে ঢেলে দাও। আমীন!
হেমন্ত ক্ষণস্থায়ী : আমাদের উঠানে ক্ষণিকের জন্য উঁকি দেয় হেমন্ত। ছ’ঋতুর মধ্যে এটি সবচেয়ে অল্পকাল ব্যাপী। হেমন্ত যেন আমাদের অনুকালের মত জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রতিচ্ছবি। হেমন্ত অর্জনমুখী ও সঞ্চয়কারী ঋতু বলে আমার ধারণা। হেমন্ত যেমন ছ’ঋতুর মধ্যে আমাদের কাছে তুলনামূলক কম অবস্থান করে, তেমনি আমরাও পৃথিবীর বুকে অন্যান্যদের তুলনায় অল্পকাল অবস্থান করি। শীত এসে যাবে বলে হেমন্তের কৃষক যেমন তার ফসলাদি ঘরে এনে গোলা ভরে রাখে, ঠিক তেমনই জীবনের শেষ আয়োজন কখন সমাপ্ত হবে তা না জানার কারণে আমাদের অর্জন করতে হবে পুণ্য। হঠাৎ শীত এসে গেলে যেমন চলে যায় হেমন্ত, ঠিক তেমনি আমার হায়াত শেষ হ’লে পৃথিবীর আনন্দ উল্লাসও বন্ধ হয়ে যাবে। হেমন্তহারা পৃথিবী এক সময় যেমন মেতে উঠে বসন্তের মুগ্ধতায়, তেমনই আমার আত্মীয়-স্বজন দু’দিন বাদেই কোলাহল-মুখর হয়ে পড়বে। মাঝখানে কেবল নিস্তব্ধ হয়ে যাব আমি। তাই হেমন্ত হ’ল জীবনের মতো ক্ষুদ্র পরিসরের ঋতু। জীবনবোধ আর নেকীর সঞ্চয়মুখীতাসহ হেমন্ত তার প্রকৃত ধারায় নেমে আসুক আমাদের জীবনে। আজ এই প্রত্যাশা! আমাদের হৃদয়ে জাগুক দীর্ঘস্থায়ী হেমন্তের বোধ, কলবে জাগুক আমলের সুপ্ত বারিধারা।
শীতে মৃত্যুর ঈদ : হেমন্ত পেরোতেই পথের ধারের ঘাসে শিশির পড়ে। খানিক পর! ধুসর-সাদা কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দেয় পূর্বদিগন্ত জুড়ে প্রকান্ড লাল সূর্য। আধহাত-একহাত দূরত্বে সাদা অন্ধকার তুল্য কুয়াশা ধীরে ধীরে কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। দূরে কোথাও তখনো যেন তক্ষক ডাকতে থাকে আপন চেতনায়। দুপুরবেলা গোসল করা বা না করা নিয়ে রীতিমত নফসের সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনের পর ফলাফলে গোসল বিজয়ী হ’লে সেই সূর্যের তীর্যক আলো বেশ মায়াবী ঠেকে। শীতকে কি বলব! এটাতো যেন মানুষের অন্তরের দ্বিচারিতা ও নিষ্ঠুরতার ঋতুভিত্তিক আদর্শ প্রতীক। শীত নিষ্ঠুর যেমন, তেমনি দ্বিচারী। একশ্রেণীর ধনিক ব্যক্তি যখন কম্বলের নিচে মুড়ি দিয়ে ভোরের মিথ্যে সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত থাকে এক মগ গরম কফি হাতে, ঠিক তখনই কাছে কিংবা দূরে একজন পথশিশুর চলে দু’মুঠো খড় জ্বালানোর অকৃত্রিম-অসফল সংগ্রাম। শীত সহ্য করতে না পেরে হয়তো কতজনকে গুনতে হয় মৃত্যুর প্রহর। যেন ওরা মেনে নিয়েছে ঋতুবৈরিতার এই নিষ্ঠুর সত্যতা।
শীত মৃত্যুর ঈদ। জানি না, সবাই এভাবে খেয়াল করে কি-না! তবে জীবনের দেখা অনুযায়ী শীত এলেই যেন শুরু হয়ে যায় মৃত্যুর এ‘লান। মাত্র ক’দিন আগে মসজিদে ছালাত শেষে শোনা গেল, জনৈক ব্যক্তি ওপারে চলে গেছেন। তারপর চারদিন হ’ল প্রিয় বন্ধু তন্ময়ের বাবা না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। আমার নিজের বাবাকে মাটি চাঁপা দেবার মৌসুম ছিল শীত। রোগ-শোক যেন এই ঋতুকে ঘিরে রাখে। শীতার্ত হয়ে মৃত্যু অনেক দেখেছি। কিন্তু অন্য মৌসুমের প্রভাবে মৃত্যু আমার চোখে পড়েনি। হয়ত এমনিভাবে আমাদেরকেও চলে যেতে হবে কোন এক শীতে বা অন্য কোন ঋতুতে। তবে শীতের পরে যে বসন্ত আসে তা সকলের কামনার বস্ত্ত। তাই তোমার মৃত্যু যদি শীত হয় তবে তোমার অবদান যেন হয় বসন্তের মত। তোমার চলে যাবার পর যেন পৃথিবী জুড়ে থেকে যায় তোমার গর্বিত পদচিহ্ন। তোমার সংস্কারে পৃথিবীতে বিরাজ করুক বসন্তের স্নিগ্ধতার ন্যায় উষ্ণ পবিত্রতা। এটুকুই কামনা করি।
বসন্ত এসেছে ধরায় : শীতের হিমপর্দায় মৃত্যুর ঈদ পালন শেষে পৃথিবীতে নেমে আসে যেন রঙ। গুল্ম লতার বাহারী রূপ মানুষের চোখ জুড়িয়ে দেয়, মুখে ফোটায় মুচকি হাসি, অন্তরে আনে স্নিগ্ধতা। শীতের শেষে ন্যাড়া গাছগুলোতে বসন্ত গজিয়ে দেয় সবুজ সতেজতার চুল। কচি কচি নতুন পাতা দেখতেই আনন্দ লাগে। ফুলেল সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে কখনো অপলক চেয়ে থাকি কুঞ্জপানে। বন-বাদাড়ে নতুন জাতের ফুলের বিশ্লেষণে চোখ সরু হয়ে আসে। কপাল হয় কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত। প্রকৃতি তার ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয় গ্রামের সবখান থেকে শুরু করে শহরের কংক্রিটের দালানের অলিগলি পথ পর্যন্ত।
বসন্ত সকলের প্রিয় ঋতু, যেমন এক স্নিগ্ধ পবিত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তি সবার কাছে প্রিয়। মানুষের অন্তরে গ্রীষ্মের তাপদাহ, বর্ষার বজ্রধ্বনি না হয় শরৎ-হেমন্তের সফেদ অর্জনমুখিতা কিংবা শীতের নিষ্ঠুর-শীতলতা থাকতে পারে। তবে একজন মানুষের অন্তরে যত যাই থাকুক, যখন তাতে প্রবেশ করে তাক্বওয়া ও ঈমানের স্বাদ নামক বসন্ত ঋতু, ঠিক তখনই সব দ্বেষ-অনাচার ভুলে মানুষ তাকে উষ্ণ-আলিঙ্গনে স্থান দেয় হৃদঅন্তরালে। ফুলের গাছের প্রথম কলি কেমন ছিল তা মানুষ চিন্তাধারায় বিশ্লেষণ করে না, বরং ফুলেল সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করে। এতটা পথ পাড়ি দিতে তার গায়ে কতটা কদর্য লেগেছে তা কেউ ভেবে দেখে না।
হে মানুষ! ধরায় বসন্ত এসে গেছে। এই বসন্ত শিক্ষা দেবে অনেক কিছু। তার স্নিগ্ধতা জানান দেবে আমাদের স্নিগ্ধ হ’তে। শেখাবে নিজেকে তাক্বওয়ার চাদরে জড়াতে। বসন্তের নতুন গজানো পাতা-ফুল অন্তরের নব-উদ্যমে ফিরিয়ে আনা দ্বীনের মাধ্যমে নতুন চেতনায় আমাদের বাঁচতে শেখাবে। আপনি নিজ অন্তর ফুলেল মোহনায় মুক্ত করে দিন। প্রাণ খুলে মানুষকে ভালবাসুন। ধরায় যে বসন্ত এসেছে, তা আজ সাদরে গ্রহণ করুন, একপশলা স্নিগ্ধতার মোহনীয় চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিন।
অসমাপ্ত সমাপ্তি : জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ গভীর চিন্তার দাবী রাখে। সবকিছুর মধ্যেই অন্তর্নিহিত থাকে এমন এমন তথ্য, যা কল্পনাতীত। হঠাৎ মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান সেই লুক্কায়িত বোধের ছন্দবিন্যাসে ধরে ফেলে এবং অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগায়। তেমনি হঠাৎ এক পড়ন্ত শীতের হিমেল গোধূলি বেলায় নিঃশব্দ চিন্তার আড় আমার কাছে ধরা পড়ে, ঋতুবৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্যে অবগুণ্ঠিত বিচিত্র জীবনবোধ। নিজের ক্ষুদ্র চিন্তামানসে যতটুকু ধরা পড়েছে, তা দিয়েই এই লেখাটির মন না-ভরা সমাপ্তি টানছি। হে জীবন! তোমার চারপাশের পৃথিবীকে আনমনে বিশ্লেষণ করো। জীবনের সাথে মিল খুঁজে দেখ। আসল-নকল আলাদা করে মেনে নাও মহাসত্যের বোধটুকু। কৃত্রিমতাকে ছুঁড়ে দাও নোংরা নর্দমায়। হে প্রভু! তোমার প্রতিটি সৃষ্টির অন্তর্নিহিত জীবনকে অনুভব করে তোমার ইবাদতে মশগূল হয়ে তোমার খালেছ বান্দা হবার তাওফীক দাও-আমীন!
মুহাম্মাদ মুবাশশিরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।