প্রশ্ন (৮/৮) : জনৈক আলেম বলেন, শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর প্রথম যিনি (শিশুর) পিতাকে সংবাদ দিবেন বা প্রথম বাচ্চা এনে (পিতার) কোলে তুলে দিবেন তাকে উপহার দেওয়া উচিত। দলীল হিসাবে তিনি আবু লাহাবের আঙ্গুলের ইশারায় দাসী আযাদ করার ঘটনাকে উল্লেখ করেন। তার উক্ত দলীল ও মাসআলা কি সঠিক?

প্রশ্নকারী : আব্দুল মালেক, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

উত্তর : আবু লাহাব কর্তৃক তার দাসী ছুওয়াইবাকে মুক্ত করার বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কারণ হিসাবে মৃত ছোট ভাই আব্দুল্লাহর পুত্র সন্তান হওয়ার আনন্দের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আবু লাহাবের কোন কর্মকান্ড শরী‘আতের দলীল নয় এবং সে মুসলমানও ছিল না। বরং সে ইসলামের বড় শত্রু ছিল (বুখারী হা/৫১০১, ৫৩৭২)। অতএব উক্ত আলেমের বক্তব্য সঠিক নয়।

প্রশ্ন (৯/৯) : জমি ক্রয়ের কিছুদিন পর খারিজ করতে গিয়ে জানতে পারি যে, জমির একটা অংশ বিক্রেতার ভাইয়ের। বিক্রেতার ঐ ভাই মারা গেছেন বলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। আবার কখনো বলেন তারা তো জমি দাবী করছে না। আপনার ভোগ করতে সমস্যা কোথায়? এক্ষণে উক্ত জমি ভোগ করা জায়েয হবে কি? আমাদের জন্য ঐ মৃত ভাইয়ের পরিবারকে বিষয়টা জানানো প্রয়োজন কি?

প্রশ্নকারী : মাহফূয, টাঙ্গাইল।

উত্তর : জমি বিক্রেতা ও মৃতের পরিবারের সাথে বসে এর সমাধান করতে হবে। কারণ জেনে-শুনে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং অন্যের সম্পদ গর্হিত পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তোমরা জেনে-শুনে তা বিচারকদের নিকট পেশ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)। অতএব দলীলকৃত সম্পদ অন্যের জানার পরে কোনভাবেই তা গোপন রেখে ভোগ করা যাবে না। মৃতের পরিবারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নিতে হবে।

প্রশ্ন (১০/১০) : বাঁশের বাঁশি বাজানো বা শোনা শরী‘আত সম্মত কি?

প্রশ্নকারী : গোলাম রববানী, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।

উত্তর : যেকোন বাঁশি বাজানো এবং শোনা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দু’টি বস্ত্ত দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত। আনন্দের সময় বাঁশি বাজানো এবং বিপদের সময় বিলাপ করা (বাযযার, ছহীহুত তারগীব হা/৩৫২৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪০১৭)। তিনি আরো বলেন, আমি দু’টি নির্বোধসূলভ ও পাপাচারমূলক চিৎকার নিষেধ করেছি। আনন্দের সময় খেল-তামাশা, শয়তানের বাঁশি বাজানো ও বিপদের সময় চিৎকার করা, মুখমন্ডলে আঘাত করা এবং জামার সম্মুখভাগ ছিঁড়ে ফেলা, আর শয়তানের মত (চিৎকার করে) কান্নাকাটি করা’ (হাকেম হা/৬৮২৫; তিরমিযী হা/১০০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৯৪)। অতএব যেকোন বাঁশি বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্ন (১১/১১) : আমি নৌবাহিনীর একজন কর্মচারী। শুধুমাত্র ব্যাচেলর নৌসেনাদের খাওয়ার জন্য ক্যাফেটেরিয়ায় প্রচুর খাবার থাকে। প্রতিদিন রাতে সকলে খাওয়ার পর সেদিনের অতিরিক্ত খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। ঐ অতিরিক্ত খাবার থেকে ফেলে দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে কিছু খাবার নিয়ে যদি আমি খাই সেটা আমার জন্য জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : ছাদিকুল ইসলাম, খিলক্ষেত, ঢাকা।

উত্তর : সাধারণ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে উক্ত খাবার গ্রহণে কোন বাধা নেই। তাছাড়া চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় এমন খাবার অনুমতি ছাড়া খাওয়াতেও দোষ নেই। তবে অতিরিক্ত খাদ্য বহন করে বাড়িতে বা বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে না (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)। আল্লাহ বলেন, রোগীর জন্য দোষ নেই এবং তোমাদের পরস্পরের জন্য দোষ নেই যে তোমরা আহার করবে তোমাদের নিজ গৃহে অথবা তোমাদের পিতাদের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাদের গৃহে অথবা তোমাদের ভাইদের গৃহে অথবা তোমাদের বোনদের গৃহে অথবা তোমাদের চাচাদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সেই গৃহে যার চাবি- সমূহের মালিকানা তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর বা পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই (নূর ২৪/৬১)। অতএব খাবারের অপচয় রোধ করতে কিংবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার গ্রহণে কোন দোষ নেই। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া ভাল।

প্রশ্ন (১২/১২) : মুসলিম, অমুসলিম বা ফাসেক শাসকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা জায়েয কি? বিশেষত গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানের সমালোচনা করা বিধিসম্মত। সেখানে করণীয় কি?

প্রশ্নকারী : নযরুল ইসলাম, সিলেট।

উত্তর : সাধারণভাবে প্রকাশ্যে শাসকদের সমালোচনা করা ইসলামের নীতি নয় (বুখারী হা/৭০৫২, ৫৩)। কেননা এতে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী হয়। তবে বর্তমান গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাষ্ট্রপ্রধানের সমালোচনা অনুমোদিত। সেজন্য জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের মন্দ দিকগুলো প্রকাশ্যে আলোচনা বা সমালোচনা করা যেতে পারে। রাসূল (ছা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম জিহাদ হ’ল অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে সঠিক কথা বলা’ (আবূদাউদ হা/৪৩৪৪, তিরমিযী হা/২১৭৪)

তবে সমালোচনার ক্ষেত্রেও কিছু মূলনীতি মনে রাখা কর্তব্য। যেমন- (১) নিয়ত বিশুদ্ধ থাকা : অর্থাৎ সমালোচনা হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ রক্ষার জন্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একজন মুমিন তাঁর ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তার কোন ধরনের ভুল দেখলে সংশোধন করে দেয়’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/৯২৬)। (২) কল্যাণকামী হওয়া : সমালোচনা হ’তে হবে মানুষের প্রতি নছীহত হিসাবে। বিরাগ বা বিদ্বেষবশত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দ্বীন হ’ল নছীহত (মুসলিম হা/৫৫; মিশকাত হা/৪৯৬৬)। (৩) নম্র ভাষা ব্যবহার করা : সমালোচিত ব্যক্তির ব্যাপারে শালীন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। ফেরাঊনের ব্যাপারে আল্লাহ মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে বলেছিলন, ‘অতঃপর তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বল। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বোয়াহা, ২০/৪৪)। (৪) উত্তমভাবে বলা : আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সাথে উত্তম কথা বলবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। (৫) অর্থহীন তর্ক এড়িয়ে যাওয়া : অর্থহীন তর্ক ও সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘আর যদি তারা তোমার সাথে ঝগড়া করে, তবে বলে দাও যে, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্যক অবহিত। যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছ, সে বিষয়ে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন’ (হজ্জ ২২/৬৮-৬৯)। (৬) সম্ভব হ’লে পরিচয় গোপন করা : সমালোচিত ব্যক্তির নাম ও পরিচয় গোপন রেখে তাঁর ভুলগুলো আলোচনা করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে যখন তাঁর কোন ছাহাবীর ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসত, তখন তিনি বলতেন না যে, অমুকের কি হ’ল? বরং তিনি বলতেন, মানুষের কি হ’ল যে তারা এমন কাজ করে! (নাসাঈ হা/৩২১৭; আবুদাউদ হা/৪৭৮৮; ছহীহাহ হা/২০৬৪)। (৭) গোপনে সংশোধনের চেষ্টা করা : একান্তে ও গোপনে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করা ইসলামের শিষ্টাচার। তবে যখন মুসলমান ও সমাজের বৃহত্তর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে। ফুযাইল বিন ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‘মুমিন (মুমিনের দোষ) গোপন করে এবং তাকে উপদেশ দেয়। পাপিষ্ঠ তা প্রকাশ করে এবং লজ্জিত করে (ইবনু রজব, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ১/৮২)। (৮) মূর্খদের প্রতিপক্ষ না বানানো : বিপরীত পক্ষের লোক অজ্ঞ বা মূর্খ হ’লে বিশেষ কারণ ছাড়া সমালোচনা পরিহার করা উচিৎ (ফুরক্বান ২৫/৬৩; বিস্তারিত দ্র. রায়েদ আমীর আব্দুল্লাহ রাশেদ, আন-নাকদু বাইনাল বিনা ওয়াল হাদম পৃ. ৪৯)

প্রশ্ন (১৩/১৩) : দাড়ি রাখা নিষেধ এরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : আবিদুয্যামান, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী।

উত্তর : দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কোন অবস্থাতে দাড়ি কাটা যাবে না। এক্ষণে কোন প্রতিষ্ঠান যদি দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করে তাহ’লে ইসলামের বিধান অমান্য করে সে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা যাবে না। ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলতেন, ‘দাড়ি মুন্ডন করা অঙ্গহানি করার শামিল। আর রাসূল (ছাঃ) অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন (ইবনু আসাকির, তারীখে দিমাশক ১৯/৫৩৩; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২১১ পৃ.)

ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘দাড়ি মুন্ডন করা হারাম’ (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩০২)। সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফৎওয়া বোর্ড ‘ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা’ দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং মুন্ডন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন’ (ফৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৫২, ৫/১৫৮)

প্রশ্ন (১৪/১৪) : ব্যাপক বন্যার সময় লাশ দাফন করার জন্য মাটি পাওয়া না গেলে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে কি?

প্রশ্নকারী : মাহদী হাসান রেযা, হালসা, নাটোর।

উত্তর : প্রথমত : যেকোন মাধ্যমে লাশ স্থলভাগে নিয়ে যাবে এবং সেখানে দাফন করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে বরফ ব্যবহার করে লাশ অক্ষত রেখে স্থলভাগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং কবরস্থ করার ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয়ত : যদি স্থলভাগে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ না থাকে বা লাশ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহ’লে যথারীতি গোসল, কাফন, ও জানাযা শেষে বন্যার প্রবহমান পানিতে ভাসিয়ে দিবে, যাতে পরিবেশ নষ্ট না হয় (শরহু মুখতাছারু খলীল ২/১৪৬; মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৫০৫)

প্রশ্ন (১৫/১৫) : হানাফী মসজিদে যোহর ও আছরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এক্ষণে এ মসজিদে হানাফীদের আযানের পূর্বে কয়েকজন মিলে সঠিক সময়ে নিয়মিতভাবে জামা‘আত করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর : নির্ধারিত ইমামের পিছনে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করাই কর্তব্য (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৫৪)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির নেতৃত্বস্থলে ইমামতি না করে এবং গৃহে তার বিশেষ আসনে তার বিনা অনুমতিতে না বসে (তিরমিযী হা/২৭৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৮১)। তবে কর্তৃপক্ষ বা ইমামের অনুমতি সাপেক্ষে আউয়াল ওয়াক্তের ছওয়াব পেতে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ওয়াক্ত হওয়ার পর মসজিদে মূল জামা‘আতের পূর্বে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ কোথাও চলে গেলে এবং ফিরে আসতে দেরী হ’লে ও ওয়াক্ত চলে যাওয়ার ভয়ে আব্দুর রহমান বিন আউফ রাসূল (ছাঃ)-এর ইমামতির স্থানে নিজে ইমামতি করেন (মুসলিম হা/২৭৪; আবুদাউদ হা/১৪৯)

প্রশ্ন (১৬/১৬) : আমি সঊদী আরবে কোম্পানীর মাল ক্রয়ের কাজ করি। বিল পরিশোধের পর কোন কোন দোকান থেকে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে এটা আপনার জন্য হাদিয়া। এটা আমার জন্য জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : আলী হায়দার, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।

উত্তর : এটি জায়েয হবে না। বরং ঘুষ হিসাবে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যাকে আমরা কোন দায়িত্বে নিয়োগ করি আমরা তার রুযীর ব্যবস্থা করে থাকি’ (আবূদাঊদ হা/৩৫৮৮; মিশকত হা/৩৭৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০২৩)। তবে নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার নিযুক্ত ব্যক্তিদের খুশী হয়ে কিছু দিলে তারা তা গ্রহণ করতে পারে (বুখারী হা/২৬১৯; মিশকাত হা/৩৭৪৫) কারণ উক্ত হাদিয়া কোম্পানির সুবাদেই দেয়া হয়। ইবনু লুৎবিয়া যাকাতের মাল সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছু হাদিয়া পেলে সে দুই সম্পদকে আলাদা করে এবং বলে এগুলো যাকাতের মাল এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ভীষণ রেগে যান এবং বলেন যে, যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে তার বাপ ও মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে কোন উপহার দেওয়া হয় কি-না? (বুখারী হা/৬৯৭৯; মুসলিম হা/১৮৩২)

প্রশ্ন (১৭/১৭) : আমি আল্লাহর নিকটে একটা বিষয়ে বারবার দো‘আ করছি। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেল তা কবুল হচ্ছে না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর : ধৈর্য ধারণ করতে হবে, দো‘আ করা অব্যাহত রাখবে এবং দো‘আ কবূল না হওয়ার কারণগুলো বর্জন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দো‘আ করলে তার দো‘আ কবুল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায় অথবা তা তার আখিরাতের জমা রাখা হয় অথবা তার দো‘আর সমপরিমাণ গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দো‘আ করে অথবা দো‘আ কবুলের জন্য তড়িঘড়ি করে। ছাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি বলেন, সে বলে, আমি আমার আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিলাম, কিন্তু আমার দো‘আ তিনি কবুল করেননি (তিরমিযী হা/৩৬০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭১৪)। দো‘আ কবুলের জন্য নিম্নের আমলগুলো করা কর্তব্য। ১. দো‘আয় ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা প্রয়োজন (আ‘রাফ ৭/২৯)। ২. অধিকহারে ইস্তিগফার পাঠ করা (নূহ ৭১/১০-১২)। ৩. বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা (আ‘রাফ ৭/৫৫)। ৪. দো‘আর শব্দগুলো একাধিকবার উল্লেখ করা (আবুদাউদ হা/১৫২৪)। ৫. স্বচ্ছল ও ভালো থাকা অবস্থায় দো‘আ করা (আহমাদ হা/২৮০৪)। ৬. আল্লাহর গুণবাচক নাম ব্যবহার করে দো‘আ করা (আ‘রাফ ৭/১৮০)। ৭. ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য ব্যবহার করে দো‘আ করা (মুসলিম হা/৫২৩)। ৮. হালাল রিযিক গ্রহণ করা (মুসলিম হা/১০১৫)। এছাড়া শেষ রাতে দো‘আ করা, হাতে তুলে দো‘আ করা, দো‘আর সময় কিবলামুখী হওয়া, পবিত্র অবস্থায় দো‘আ করা, দো‘আর পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা ইত্যাদি দো‘আ কবুলের অন্যতম আদব। 

প্রশ্ন (১৮/১৮) : ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে কি বুঝায়? ছূফীদের এ আক্বীদা গ্রহণযোগ্য কি? তাদের পিছনে ছালাত হবে কি?

প্রশ্নকারী : বাঁধন, রাজশাহী।

*[আরবীতে সুন্দর ইসলামী নাম রাখুন (স.স.)]

উত্তর : ইত্তেহাদ বা ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে অদ্বৈতবাদী দর্শন বুঝায়, যা ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এর অর্থ হ’ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ)-এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলত আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব মানুষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মূর্তিপূজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পূজা করে, সে মূলত আল্লাহকেই পূজা করে। সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা কাফের এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই প্রভু বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহ’লে তারা কাফের হ’ত না। বলা বাহুল্য এটাই হ’ল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট হ’লেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃ. ৬৩৮ হি.)। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ’ল এই যে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে।

সর্বোপরি ইসলামী আক্বীদার সাথে মা‘রেফাতের নামে প্রচলিত ছূফীবাদী আক্বীদার কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম ও ছূফীদর্শন সরাসরি সংঘর্ষশীল। ছূফীবাদের ভিত্তি হ’ল আউলিয়াদের কাশ্ফ, স্বপ্ন, মুরশিদের ধ্যান ও ফয়েয ইত্যাদির উপরে। পক্ষান্তরে ইসলামের ভিত্তি হ’ল আল্লাহর প্রেরিত ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপরে। ছূফীদের আবিষ্কৃত তরীকা সমূহ তাদের কপোলকল্পিত। এর সাথে কুরআন, হাদীছ, ইজমায়ে ছাহাবা, ক্বিয়াসে ছহীহ কোন কিছুরই দূরতম সম্পর্ক নেই। ছূফীদের ইমারত খৃষ্টানদের বৈরাগ্যবাদ-এর উপরে দন্ডায়মান। ইসলাম যাকে প্রথমেই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে (হাদীদ ২৭)(দ্রঃ দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, আত-তাহরীক ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯)

ছূফীদের মধ্যে যারা হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে, যা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত। এমন ইমামের পিছনে জেনে-শুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন (১৯/১৯) : স্বামী বা স্ত্রীর কেউ যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে, তবে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক থাকবে কি? এরূপ ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর করণীয় কি?

প্রশ্নকারী : আব্দুস সালাম, চকশ্যামরামপুর, ময়মনসিংহ।

উত্তর : পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া জঘন্য পাপ। তবে এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভঙ্গের কারণ নয়। স্বামী বা স্ত্রী যে-ই এমন পাপে জড়িয়ে পড়ুক, তাকে অবশ্যই অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করে তা থেকে ফিরে আসতে হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (ইসরা ১৭/৩২)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যেনা বৈবাহিক বন্ধনকে হারাম করে না’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, বায়হাক্বী, ইরওয়া ৬/২৮৭ পৃঃ, হা/১৮৮১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তারা পাপী। কিন্তু এ পাপ তার স্ত্রীকে তার জন্য হারাম করে না’ (বায়হাক্বী, ইরওয়া ৬/২৮৮ পৃঃ)। আলী (রাঃ) বলেন, যেনা বৈধ বিবাহ বন্ধনকে হারাম করতে পারে না (ইরওয়া ৬/২৮৮ পৃঃ, তা‘লীক্ব বুখারী)। উল্লেখ্য যে, এমন ক্ষেত্রে স্বামী একাধিক বিবাহ করতে চাইলে স্ত্রীর তাতে সম্মতি দেয়া উচিৎ (বিস্তারিত নিসা ৪/৩-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য)

প্রশ্ন (২০/২০) : জনৈক আলেম বলেছেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর নূর দ্বারাই চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বক্তব্য সঠিক কি?

প্রশ্নকারী : সাঈদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর : এ বক্তব্য ভিত্তিহীন। এ মর্মে যেসব বক্তব্য সমাজে ছড়িয়ে রয়েছে, তা বিভ্রান্ত ছূফীদের কল্পিত বক্তব্য। কুরআন ও হাদীছে এর কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (২১/২১) : বিভিন্ন সম্মেলন ও ইজতেমায় দেখা যায় একদল লোক ইমামসহ উঁচু স্থানে (স্টেজে) ছালাত আদায় করে। আর মুছল্লীরা নীচে থেকে ইমামের অনুসরণ করে। অথচ এমন কাজ থেকে শরী‘আতে নিষেধ করা হয়েছে বলে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সঠিক সমাধান কি?

প্রশ্নকারী : মুরসালীন, বড়দাদপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

উত্তর : সাধারণভাবে ইমাম যদি একাকী অল্প উঁচুতে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেন বা ইমামের সাথে একাধিক মুছল্লী থাকে তাহ’লে ইমামের উঁচু স্থানে বা স্টেজে অবস্থান করে ইমামতি করা দোষণীয় নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মিম্বারের উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ছাহাবীগণের ছালাতের জামা‘আতে ইমামতি করেছিলেন (আবুদাউদ হা/১০৮০)। সেজন্য বিদ্বানগণ মনে করেন, প্রয়োজনে ইমাম উঁচু স্থানে বা স্টেজে দাঁড়িয়ে ছালাতে ইমামতি করতে পারেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২৯৫; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৫৪; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৪৩; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২৩/৯৫)। উল্লেখ্য যে, দুই অবস্থায় ইমামের উঁচু স্থানে অবস্থান করে ইমামতি করা মাকরূহ। ১. যদি এর দ্বারা ইমামের অহংকার প্রকাশ পায়। ২. যদি ইমাম একাকী অনেক উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করে এবং মুছল্লীরা অনেক নীচে থেকে তার অনুকরণ করে।

প্রশ্ন (২২/২২) : সালমান ফারেসী (রাঃ) মৃত্যুকালীন যে সুগন্ধি ব্যবহার করেছিলেন (তাবারাণী কাবীর হা/৬০৪৩; ইবনু সা‘দ, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা ৪/৬৯ পৃ.) তা থেকে বর্তমানে মৃতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করার দলীল গ্রহণ করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : হাসীবুর রশীদ, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর : যাবে। বিশেষ করে লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকলে মাইয়েতের কাফনে বা দেহে যে কোন সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার মৃত কন্যার গোসলকালীন যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাতে বলেছিলেন ‘তাকে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনবোধে এর চেয়ে অধিক বড়ইপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও এবং শেষে কিছুটা কর্পূর (এক প্রকারের সুগন্ধি) দিয়ে দাও (বুখারী হা/১২৫৩; মিশকাত হা/১৬৩৪)। রাসূলুল্লাহ আরো বলেন, তোমরা যখন মাইয়েতকে সুগন্ধি মাখাবে তখন বেজোড় সংখ্যায় মাখাবে (আহমাদ হা/১৪৫৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৮)। অতএব মাইয়েতকে যেকোন সুগন্ধি মাখানোতে কোন দোষ নেই। উল্লেখ্য যে, কোন কোন এলাকায় দেখা যায় মুছল্লীদের লক্ষ্য করে একাধিকবার গোলাপ পানি ছিটানো হয়, এটা ঠিক নয়। কারণ এতে কোন কোন মুছল্লীর ক্ষতি হ’তে পারে বা বিরক্তির কারণ হ’তে পারে।

প্রশ্ন (২৩/২৩) : হাঁসের ডিম মুরগীর পেটের নীচে রেখে বাচ্চা ফুটানো যাবে কি?

প্রশ্নকারী : যিয়ারুল ইসলাম, বালিয়াডাঙ্গা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

উত্তর : যাবে। যেকোন বৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের জন্য উপকারী হালাল প্রাণী উৎপাদন করা জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে যা আছে সবকিছু’ (বাক্বারাহ ২/২৯)। অতএব বৈধ পন্থায় মানব কল্যাণে প্রাণী উৎপাদনে দোষ নেই। 

প্রশ্ন (২৪/২৪) : ফেরাঊন ও নমরূদের পতনের পর ৪০ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছিল। তারপর জমি উর্বর হয়েছিল। এই কথা কি সঠিক?

প্রশ্নকারী : মোরশেদ, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

উত্তর : এরূপ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে মূসা (আঃ) তার দলবল নিয়ে যখন নদী অতিক্রম করে চলে যান। তারা আর মিসরে ফিরে আসেননি। বরং ফিলিস্তীনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং রাস্তায় মূর্তিপূজক সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। এরই মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিনের জন্য বিশেষ ইবাদত পালন ও তাওরাত প্রদানের উদ্দেশ্যে মূসা (আঃ)-কে তূর পর্বতে আহবান করেন। তিনি সেখানে চল্লিশ দিন অবস্থান করে তাওরাত নিয়ে ফিরে আসেন। তিনি দেখতে পান তাঁর সম্প্রদায়ের কিছু লোক গো-বৎস পূজায় জড়িয়ে পড়েছে। মূসা (আঃ) সম্পর্কে ঘটনাবলী এভাবেই বর্ণিত হয়েছে (বাক্বারাহ ২/৫১; আ‘রাফ ৭/১৩৮, ১৪২-১৪৫)

প্রশ্ন (২৫/২৫) : হালাল পন্থায় উপার্জন করে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হওয়ায় যদি হারাম পন্থায় ইনকাম করে সেই ঋণ পরিশোধ করা হয় তাহ’লে তা বৈধ হবে কি?

প্রশ্নকারী : হাবীব, রাজশাহী।

উত্তর : হালাল পন্থায় উপার্জন করেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কারণ হারাম পন্থায় উপার্জন করা আরেক বড় হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (বাক্বারাহ ২/১৬৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জিব্রীল আমার হৃদয়ে প্রক্ষিপ্ত করেছেন যে, কোন আত্মাই তার ভাগ্যে নির্ধারিত সর্বশেষ আয়ু ও রুযী পূর্ণ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রুযী সন্ধানে মধ্যবর্তী পন্থা (সুন্দর ও স্বাভাবিক বৈধ পথ) অবলম্বন কর। রুযী আসতে দেরী দেখে তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তার সন্ধানে উদ্বুদ্ধ না হয়। যেহেতু (রুযী আল্লাহর হাতে আর) তা তাঁর অবাধ্য হয়ে অর্জন করা যায় না (ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৬৬)। আর ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা থাকলে বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে লোক পরিশোধের নিয়তে অপর লোকের মাল (ঋণরূপে) গ্রহণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার ঋণ পরিশোধ করে দেন। আর যে লোক বিনষ্ট করার নিয়তে ঋণদাতার মাল গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন (বুখারী হা/২৩৮৭; মিশকাত হা/২৯১০)। তবে বিভিন্ন দাতা সংস্থা কিংবা ধনী ব্যক্তিদের নিকট থেকে যাকাত বা অন্য কোন খাত থেকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সহায়তা নেওয়া যাবে।

প্রশ্ন (২৬/২৬) : স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি সামাজিক ফেৎনা থেকে বাঁচার জন্য অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া একজনকে বিবাহ করি। কিছুদিন সংসার করার পর স্বামী বলছেন, আমাদের বিবাহ হয়নি। এক্ষণে আমি কি যেনার পাপে অপরাধী হিসাবে গণ্য হব?

প্রশ্নকারী : উমাইয়া, সিলেট।

উত্তর : উক্ত বিবাহ সঠিক নিয়মে হয়নি। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নারীদের বিবাহ বৈধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অলী ব্যতীত বিবাহ নেই’ (তিরমিযী হা/১১০১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩০)। তিনি বলেন ‘কোন মহিলা যদি অলীর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করে তাহ’লে তার ঐ বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (তিরমিযী হা/১১০২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩১)। নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেন, ‘কোন মহিলা কোন মহিলাকে বিবাহ দিতে পারবে না এবং কোন মহিলা নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২; মিশকাত হা/৩১৩৭)। এক্ষণে খালেছভাবে তওবা করতে হবে এবং শারঈ নিয়মে বর্তমান অভিভাবকের সম্মতিতে নতুনভাবে বিবাহ পড়িয়ে নিবে।

প্রশ্ন (২৭/২৭) : মসজিদের ভিতরে বা বাহিরের দেয়ালে আরবী বা বাংলা ক্যালিওগ্রাফি করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?

প্রশ্নকারী : জোবায়েদ জুয়েল, রৌমারী, কুড়িগ্রাম।

উত্তর : মসজিদের প্রাচীরে কোন কিছু লেখা সমীচীন নয়। বিশেষ করে সামনে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কোন কিছু লেখা বা টাঙানো মোটেও ঠিক নয়। কারণ এতে মুছল্লীর মনোযোগ বিনষ্ট হ’তে পারে, যা ছালাতের আদবের খেলাফ। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী ছালাতের মধ্যে আল্লাহর সাথে গোপনে আলাপ করে’ (বুখারী হা/৫৩১; মিশকাত হা/৭৪৬)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, নিশ্চয়ই ছালাতের মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১১৯৯; মুসলিম হা/৫৩৮; মিশকাত হা/৯৭৯)। তবে মুছল্লীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না এমন স্থানে মুছল্লীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ বা প্রয়োজনীয় কথা লিখে টাঙানো যায় (বিন বায, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৮/১৯৭; ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ২/৭৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৯১)

প্রশ্ন (২৮/২৮) : আমার স্বামী আমাকে কপালের উপরে এবং চোখের উপরের বাড়তি বা অবাঞ্ছিত লোম কাটার জন্য বলেন। এটা জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : কানীয ফাতেমা, শরীয়তপুর।

উত্তর : মুখের যে অবাঞ্ছিত লোমের কারণে নারীকে অসুন্দর দেখায় তা তুলে ফেলাতে কোন দোষ নেই। কারণ এগুলোর ব্যাপারে ইসলাম কোন বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। অবশ্য ভ্রূ কোনভাবেই তুলে ফেলা যাবে না। কারণ এ ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে (মুসলিম হা/২১২৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৩৮২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৯৯)

প্রশ্ন (২৯/২৯) : আমার বন্ধু নিয়মিত ছালাত আদায় করেন, মানুষের অনেক উপকার করেন এবং খুবই ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু তিনি নিয়মিত সিগারেটের সাথে গাজা মিশিয়ে সেবন করেন। এটা খেলে নাকি তার মধ্যে পাপবোধ কাজ করে। ফলে গুনাহ থেকে বাঁচা এবং নেকীর কাজ করা সহজ হয়। এ চিন্তাধারা সঠিক কি?

প্রশ্নকারী : আসাদুয্যামান বাবলু, কিশোরগঞ্জ।

উত্তর : উক্ত চিন্তাধারা ভুল। কেননা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণ করা হারাম এবং এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (বাক্বারাহ ২/১৬৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম বলেছেন। তার একশ্রেণী যারা নেশাদ্রব্য পানকারী (আহমাদ হা/৫১১৭; নাসাঈ, হা/২৫৬২; মিশকাত হা/৩৬৫৫)। অতএব কোন খোঁড়া যুক্তি পেশ না করে যাবতীয় নেশাদার দ্রব্য বর্জন করতে হবে।

প্রশ্ন (৩০/৩০) : ‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট’। শায়েখ আলবানী হাদীছটি হাসান বললেও অনেক আহলেহাদীছ বিদ্বান হাদীছটিকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। এক্ষণে কোন তাহকীকটি সঠিক হিসাবে গ্রহণ করতে হবে?

প্রশ্নকারী : যিয়াউল হক শাহীন, শান্তিবাগ, ঢাকা।

উত্তর : শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদীছটিকে মওকূফ হিসাবে হাসান বলেছেন। কারণ এ ব্যাপারে এক ডজনের অধিক ছাহাবী ও তাবেঈ থেকে বর্ণনা এসেছে (ইরওয়া হা/৫০০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে এটি আলবানী (রহঃ)-এর ব্যক্তিগত গবেষণা। আর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বহু বিদ্বান উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলোর সনদকে যঈফ বলেছেন এবং সরাসরি ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতএব একাকী বা ইমামের পিছনে ছালাত আদায়কালে মুক্তাদী সর্বাবস্থায় সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/২৪২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৪৩-২৪৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৭)

প্রশ্ন (৩১/৩১) : আমি প্রতিদিন ১ ঘন্টা মটরসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাই। এসময় আমি দো‘আ পাঠ করতে পারি কি?

প্রশ্নকারী : ওয়াসিম রেযা, রাজশাহী।

উত্তর : অন্যমনস্ক না হ’লে যিকর-আযকারে বাধা নেই। কেননা মুমিনের জিহবা সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকরে সিক্ত থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ কর (আহযাব ৩৩/৪১)। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামী বিধান তো আমার ক্ষেত্রে অনেক বেশী। সুতরাং আপনি আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন, যেটাকে আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি। তিনি বললেন, আল্লাহর যিকরে তোমার জিহবা যেন সর্বদা সিক্ত থাকে (তিরমিযী হা/৩৩৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৯১)। অতএব যেকোন সময় বা যানবাহনে যেকোন যিকর বা দো‘আ পাঠ করা যায়।

প্রশ্ন (৩২/৩২) : আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বৃক্ষ মেলায়, পার্কে, খেলনা ট্রেন বা চরকি ইত্যাদি স্থাপন করে ছেলে-মেয়ে উভয়কে তুলে ব্যবসা করি। আমার এ ব্যবসা হালাল হবে কি?

প্রশ্নকারী : আরীফুল ইসলাম, চাটমোহর, পাবনা।

উত্তর : উক্ত ব্যবসা হালাল। তবে উক্ত খেলনা গায়ের মাহরাম ছেলে-মেয়েদের জন্য অবৈধভাবে আনন্দের উপকরণ যেন না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ পাপের কাজে সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আললাহকে ভয় কর। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দানকারী’ (মায়েদাহ ৫/০২)

প্রশ্ন (৩৩/৩৩) : আমার খামারের লেয়ার মুরগীর বিষ্ঠা বা মল দিয়ে মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করি। এটা ব্যবহার করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : ইশতিয়াক, পাবনা।

উত্তর : হারাম ও দুর্গন্ধযুক্ত বস্ত্ত দ্বারা হালাল প্রাণীর খাদ্য

তৈরি করা সমীচীন নয়। তবে হালাল প্রাণীর বিষ্ঠা মৌলিক ভাবে নাপাক না হওয়ায় এগুলো দ্বারা বিশেষ প্রক্রিয়ায় অন্য প্রাণী বা মাছের খাদ্য বানানোতে দোষ নেই (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৮/১২২)

প্রশ্ন (৩৪/৩৪) : ছালাতে দাঁড়িয়ে একটি সিজদা হয়েছে নাকি দু’টি সিজদা হয়েছে এরূপ সন্দেহ হ’লে করণীয় কি? আর সালাম ফেরানোর পর এরূপ মনে হলে করণীয় কি?

প্রশ্নকারী : মিনহাজ পারভেয, রাজশাহী।

উত্তর : একটি বিষয়ের উপর দৃঢ় হ’তে হবে। যদি মনে হয় একটি সিজদা হয়েছে তাহ’লে তৎক্ষণাৎ আরেকটি সিজদা দিবে এবং শেষ বৈঠকে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর যদি মনে হয় দু’টি সিজদাই হয়েছে তাহ’লে তার উপর ভরসা রেখে ছালাত সম্পন্ন করবে। এমতাবস্থায় সহো সিজদা না দিলেও চলবে। উল্লেখ্য, ছালাত শেষ করার পর যদি মনে হয় কোন এক রাক‘আতে একটি মাত্র সিজদা হয়েছে তাহ’লে আরেক রাক‘আত ছালাত আদায় করে সহো সিজদা দিয়ে সালামের মাধ্যমে ছালাত সমাপ্ত করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৩০; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৩৮৪)

প্রশ্ন (৩৫/৩৫) : দোকানে নারী ক্রেতা আসলে চোখের হেফাযত করার ক্ষেত্রে করণীয় কি? বিশেষত কথা বলতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একাধিকবার চোখাচোখি হয়ে যায়। এতে গুনাহ হবে কি?

প্রশ্নকারী :ইমন হোসাইন, টঙ্গী, গাযীপুর।

*[আরবীতে সুন্দর ইসলামী নাম রাখুন (স.স.)]

উত্তর : ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাধ্যমত দৃষ্টিপাত এড়িয়ে কথা বলবে। আর দৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ কামনামুক্ত রাখবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে’ (নূর ২৪/৩০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘চোখের যেনা হ’ল (বেগানা) নারীর প্রতি (কামনাপূর্ণ) দৃষ্টিপাত করা’ (বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬)। রাসূল (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য মাফ। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়’ (আবুদাঊদ হা/২১৪৯; মিশকাত হা/৩১১০)

প্রশ্ন (৩৬/৩৬) : দোকানের জুস, চিপস সহ নানা খাবার পাওয়া যায়, যা মুখরোচক হ’লেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো বিক্রি করা জায়েয হবে কি?

প্রশ্নকারী : লুৎফাতুল ইসলাম, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা।

উত্তর : এগুলো সাধারণ খাদ্য। আর সাধারণ খাদ্য বিক্রয় করা দোষণীয় নয়। তবে শরীরের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রমাণিত হ’লে উক্ত পণ্য বিক্রয় করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)

প্রশ্ন (৩৭/৩৭) : একটি কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদের দেয়ালে লিখে রেখেছে যে, যোহরের মূল জামা‘আতের আগে কোন প্রকার একক জামা‘আত করা নিষেধ। কিন্তু যোহরের জামা‘আত অনেক দেরী করে আদায় করা হয়, এমতাবস্থায় করণীয় কি?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর : এভাবে লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা সঠিক নয়। কেননা ওয়াক্ত হয়ে গেলে বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদের মূল জামা‘আতের পূর্বে ছালাত আদায় করায় বাধা নেই। যেমন ছালাতের সময় হয়ে যাওয়ার পরে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুপস্থিতিতে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) জামা‘আতে ইমামতি করেছেন (মুসলিম হা/২৭৪; আবুদাউদ হা/১৪৯)

প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : গত ছয় মাস আগে পারিবারিকভাবে একমত হয়ে বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু বিবাহের অনুষ্ঠান, টাকা-পয়সা খরচ ইত্যাদি ভেবে উভয় পরিবার বিবাহ আরো ৬ মাস পিছিয়ে দিচ্ছে। এদিকে আমরা উভয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। মাঝে মাঝে কথাও হয়ে যাচ্ছে। উভয় পরিবার দ্বীনদার না হওয়ায় বুঝানোও সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষণে উভয়ের অভিভাবক যেহেতু একমত তাই আমরা গোপনে

বিবাহ করতে পারব কি?

প্রশ্নকারী : ওয়াকীল আব্দুল্লাহ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

উত্তর : গোপনে বিবাহ করা যাবে না। বরং বিষয়টি অভিভাবকদের যথাযথভাবে জানাবে ও বুঝাবে। এমতাবস্থায় অভিভাবকদের কর্তব্য হচ্ছে দ্রুত বৈধভাবে বিবাহের ব্যবস্থা করা। কারণ যে বিবাহ অধিক সহজ হয় সে বিবাহে বরকত বেশী হয় (আহমাদ হা/২৪৫২২, ২৪৬৫১; ইরওয়া হা/১৯২৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। এক্ষণে অভিভাবকেরা যদি কোনভাবেই সম্মতি না দেয় তাহ’লে মেয়ের পরবর্তী স্তরের অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১৫-১৭)

প্রশ্ন (৩৯/৩৯) : একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকায় এক পর্যায়ে পেটে সন্তান চলে আসলে মায়ের পরামর্শে সন্তান নষ্ট করা হয়। পরবর্তীতে মেয়ের পরিবার পুরোপুরি রাযী থাকলেও আমার পরিবার ঐ মেয়ের সাথে বিবাহ দিতে রাযী নয়। এক্ষণে পিতা-মাতার অমতে ঐ মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কি?

প্রশ্নকারী : আরাফাত, নারায়ণগঞ্জ।

উত্তর : পিতা-মাতাকে বুঝিয়ে বিবাহ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি (ছহীহুত তারগীব হা/২৫০৩)। এক্ষণে পিতা ছেলের বিবাহে রাযী না হ’লে ছেলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে নিজেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারে। কারণ ছেলের জন্য অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া শর্ত নয় (ইবনুল মুফলেহ, আল-আদাবুশ শারঈয়া ১/৪৪৮)

প্রশ্ন (৪০/৪০) : আমার তিনজন বিবাহিতা মেয়ে রয়েছে। আমার একটি বাড়ি আছে এবং গ্রামে কিছু জমি আছে। আমি বিগত ২০১৮ সালে আমার বাড়িটা মেয়েদের লিখে দেই। বর্তমানে আমি অসুস্থ। আমার চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন। আমি বাড়িটা বিক্রয় করে চিকিৎসার খরচ নির্বাহ করতে চাই। এভাবে দান করার করার পর তা ফিরিয়ে নেয়া শরী‘আতসম্মত হবে কি?

প্রশ্নকারী : মোঃ সেকান্দার আলী, বসুয়া, রাজশাহী।

উত্তর : মেয়েদের থেকে জমিসহ বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে তা চিকিৎসায় ব্যয় করা যাবে। কারণ অন্য মানুষকে দান করার পর তা ফিরিয়ে নেওয়া হারাম হলেও সন্তানকে দান করা সম্পদ পিতা-মাতা ফিরিয়ে নিতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে কাউকে দান করে তা ফেরত নেবে। কিন্তু পিতা যা সে তার সন্তানকে দান করে তা ফেরত নিতে পারে’ (তিরমিযী হা/২১৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৫৫)। নূ‘মান বিন বাশীরের পিতা তাকে কিছু দান করার পর যখন জানতে পারলেন যে, এটা হারাম। তখন তিনি নূমানের নিকট থেকে উক্ত সম্পদ ফেরত নেন (বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯)। সেজন্য ইমাম শাফেঈ (রহঃ) সহ অন্যান্য বিদ্বান বলেন, কাউকে কিছু দিয়ে তা প্রত্যাহার করা কারো জন্য হালাল নয়। তবে পিতা তার সন্তানকে কিছু দিলে তা তিনি প্রত্যাহার করতে পারেন (তিরমিযী হা/২১৩২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/৫৫)






প্রশ্ন (৩৯/৪৭৯) : মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলার বিধান কি? ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলবে তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?
প্রশ্ন (৩৭/২৭৭) : জনৈক আলেম আবুদাউদের ১৫৬৫ নং হাদীছের দলীল দিয়ে বলেন, ব্যবহৃত স্বর্ণ যদি একটি আংটিও হয় তাহ’লে সেটার যাকাত দিতে হবে, নিছাব পরিমাণ হওয়ার প্রয়োজন নেই। একথার সত্যতা আছে কি?
প্রশ্ন (৩৪/৩৪) : কারো মনের অজান্তে মুখ দিয়ে কুফরী বা শিরকী কথা বেরিয়ে গেলে সে কি কাফের বা মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে?
প্রশ্ন (৮/৩২৮) : না জানার কারণে কয়েক বছরের ফিৎরা আদায় করা হয়নি। এক্ষণে তওবা করতে হ’লে করণীয় কি?
প্রশ্ন (২/৪২) : মসজিদে মহিলাদের ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা না থাকায় ৫০ গজ দূরে একটি ঘরে সাউন্ডবক্সের মাধ্যমে তাদের জন্য জুম‘আ ও তারাবীহর ছালাতের ব্যবস্থা করা হয়। এটা কি শরী‘আতসম্মত হবে?
প্রশ্ন (৩০/১১০) : মনের যেনা বলতে কি বুঝায়? উদাহরণ সহ জানতে চাই।
প্রশ্ন (৩৯/১৯৯) : আমার ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা আছে। সেখানে প্রতিবছর সূদ হয়। আবার বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ কাটা হয়। আমি সূদের টাকা থেকে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করি। বাকি টাকা ছওয়াবের আশা ছাড়াই দান করে দেই। এটা সঠিক হচ্ছে কি?
প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : আমরা জানি, মেঘের উপরে থাকে পজিটিভ চার্জ আর নীচে থাকে নেগেটিভ চার্জ। যেহেতু বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই এই পজিটিভ চার্জ ও নেগেটিভ চার্জ পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে উপর থেকে নীচের দিকে চার্জের নির্গমন ঘটে। এর ফলে শক্তির নিঃসরণ ঘটে, শব্দ হয় ও আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয়। কিন্তু হাদীছে (তিরমিযী হা/৩১১৭) এই শব্দকে ফেরেশতাদের হাকডাক বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এ হাকডাক দিয়েই মেঘমালাকে নির্দিষ্ট দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।
প্রশ্ন (৪/৪৪৪) : ‘কালেমা তাইয়েবা’র বাক্যটি কি? এটা নিয়ে মতবিরোধের কারণ কি? - -ওমর ফারূক, পীরগাছা, রংপুর।
প্রশ্ন (২১/৪৬১) : সমাজে প্রচলিত রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) যে আংটি ব্যবহার করতেন সেখানে আল্লাহ, রাসূল এবং মুহাম্মাদ লেখা ছিল। এ বক্তব্যের কোন সত্যতা আছে কি?
প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : মসজিদে জানাযার খাটলি রাখা যাবে কি?
প্রশ্ন (২৬/৪৬৬) : অবৈধ কর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণে সমাজ কর্তৃক জরিমানা হিসাবে আদায়কৃত টাকা মসজিদ বা কবরস্থানের উন্নতিকল্পে লাগানোয় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? - -পারভেয আলম, আন্ধুয়া, ফারাক্কা, ভারত।
আরও
আরও
.