উত্তর : ইবরাহীম
(আঃ) তাঁর প্রথম ও জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানী করেছিলেন। এটাই
কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। নিঃসন্তান ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে
সুসন্তান প্রার্থনা করেছিলেন। সেই দো‘আর বদৌলতে যে সন্তানকে তিনি পেয়েছিলেন
তাকেই কুরবানী করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হন
(ছাফফাত ১০০-১০৮)। আর প্রথম ও বড় সন্তান যে ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন তা কুরআনের বর্ণনায় বুঝা যায়। যেমন
قُوْلُوْا
آمَنَّا بِاللهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى
إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ
‘তোমরা বল, আমরা ঈমান আনলাম আল্লাহর উপরে এবং যা নাযিল হয়েছে আমাদের প্রতি
এবং যা নাযিল হয়েছিল ইবরাহীমের প্রতি এবং ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের
বংশধরগণের প্রতি...’
(বাক্বারাহ ১৩৬)। অনুরূপ বর্ণনা এসেছে
বাক্বারাহ ১৩৩, ১৪০ এবং আলে ইমরান ৮৪; নিসা ১৬৩; ইবরাহীম ৩৯; ছাফফাত
১১২-১১৩ নং আয়াতে। তন্মধ্যে সূরা ইবরাহীম ৩৯ আয়াতে হযরত ইবরাহীম আল্লাহর
প্রশংসায় বলছেন,
الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَاء ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দান করেছেন ইসমাঈল ও ইসহাককে।
নিশ্চয়ই
আমার প্রতিপালক অবশ্যই দো‘আ কবুলকারী’। আল্লাহ রাববুল আলামীন ইবরাহীমকে
দু’টি পুত্র সন্তান দান করেছিলেন। তন্মধ্যে মা হাজেরার গর্ভে ইসমাঈল (আঃ)
জন্মগ্রহণ করেন, যখন ইবরাহীমের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। পক্ষান্তরে ইবরাহীম
(আঃ)-এর ১০০ বছর বয়সে অন্যূন ৯০ বছর বয়সী সারার গর্ভে ইসহাকের জন্ম হয়। এ
হিসাবে ইসহাক (আঃ) ইসমাঈল (আঃ)-এর চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। আর ইবরাহীম
(আঃ)-কে তাঁর প্রথম সন্তান ও অন্য বর্ণনায় একমাত্র ছেলেকে কুরবানী করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল
(তাফসীর ইবনে কাছীর, ৪/১৬-১৯)।
(২)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলেকে মক্কার প্রায় ৮ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে মিনা
প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে কুরবানী করেছিলেন। আর এই ছেলে নিঃসন্দেহে ইসমাঈল
ছিলেন। কেননা ইসমাঈল ও তাঁর মা হাজেরাকে মক্কায় রেখে গিয়েছিলেন ইবরাহীম
(আঃ)
(ইবরাহীম ১৪/৩৭; ছহীহ বুখারী হা/৩৩৬৪)। শৈশব কাল থেকে তিনি
এখানেই বড় হয়েছেন, তিনি এখানকার আদি বাসিন্দা ও ‘আবুল আরব’ নামে খ্যাত।
অপরদিকে ইসহাক (আঃ) প্রায় ১৪ বছর পরে কেন‘আনে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবে
তিনি মক্কায় এসেছেন, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এক্ষণে যারা ইসহাক্ব
(আঃ)-কে কুরবানীর কথা বলেন তাদের বিশেষ দলীল হ’ল সূরা ছাফফাতের ১১২ নং
আয়াতে উল্লেখিত সুসংবাদ। অথচ এই সুসংবাদ ছিল পরের এবং তা ছিল নিঃসন্তান
সারার জন্য। যা কুরআনের বর্ণনাভঙ্গিতেই বুঝা যায়
(দ্রঃ নবীদের কাহিনী ১/১৪২-৪৩ পৃঃ)। তাছাড়া অন্য আয়াতে এসেছে, ‘অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরে ইয়াকূবেরও’
(হূদ ৭১)।
সুতরাং আল্লাহ যেহেতু ইবরাহীম (আঃ)-কে পূর্বেই সুসংবাদ দিয়েছেন ইসহাকের
জন্মের এবং তার পরে ইয়াকূবের, অথচ ইসহাককে শৈশবেই যবেহ করার নির্দেশ দিবেন
ইয়াকূবের জন্মের পূর্বেই এটা কি করে সম্ভব?
দ্বিতীয়তঃ যারা ইসহাককে
যবীহুল্লাহ বলেন তারা ইসরাঈলী বর্ণনার উপর নির্ভর করেন। অথচ ইসরাঈলীদের
গ্রন্থ সমূহ বিকৃত ও পরিবর্তিত। এটা আরবদের প্রতি ইহুদীদের চিরন্তন
প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কেননা ইসমাঈল ছিলেন আরব জাতির পিতা, যিনি
হেজাযে বসবাস করতেন। আর তাঁর বংশেই এসেছিলেন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)।
পক্ষান্তরে ইসহাক ছিলেন ইয়াকূবের পিতা, আর ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ইসরাঈল,
যার দিকে ইসরাঈলীদের সম্বন্ধিত করা হয়। ফলে হিংসুক ইসরাঈলীরা আরবদের সম্মান
ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করেছে ও তাতে বৃদ্ধি করেছে,
যেটা অপবাদ মাত্র
(তাফসীর ইবনে কাছীর, ৪/১৮-১৯)।