উত্তর :
সন্তান মূলতঃ পিতার। তবে শৈশবে তার লালন-পালনের অধিকারী হ’লেন মা। কিন্তু
মা অন্যত্র বিবাহ করলে তার এ অধিকার আর থাকে না। তখন সন্তান পিতার পূর্ণ
দায়িত্বে থাকবে। আমর তাঁর পিতা শু‘আইব হ’তে, তিনি তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ এবং
তিনি তার পিতা আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জনৈক স্ত্রীলোক
বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার ছেলে। আমার পেট ছিল তার পাত্র, আমার স্তন
ছিল তার মশক এবং আমার কোল ছিল তার দোলনা। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। সে
এখন আমার ছেলে নিয়ে টানাটানি করছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যতক্ষণ তুমি
অন্যত্র বিবাহ না করবে, ততক্ষণ তুমিই তার অধিক হকদার’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৩৭৮)।
তবে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর সন্তান যার নিকটে ইচ্ছা থাকতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ছেলে আমার উপকার করে। সে আমাকে কূয়া থেকে পানি এনে দেয়। এসময় তার পিতা এলে নবী করীম (ছাঃ) ছেলেকে বললেন, ইনি তোমার পিতা আর ইনি তোমার মাতা- যাকে ইচ্ছা তুমি তার হাত ধর। ছেলে তার মায়ের হাত ধরল। অতঃপর মা তাকে নিয়ে চলে গেল’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৩৮০, সনদ ছহীহ)।
ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছেলে হৌক বা মেয়ে হৌক, সন্তানের ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মতভেদ করেন, তাহ’লে সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়াই শরী‘আত সম্মত’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬০ পৃঃ, ‘সন্তান পালনের অধিক হকদার কে?’ অনুচ্ছেদ)।
তবে মা কাফির হয়ে গেলে, মুসলিম সন্তানের উপরে তার কোন হক থাকবে না। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কাফিরদের জন্য মুমিনদের উপরে কোন অধিকার রাখেননি’ (নিসা ৪/১৪১)। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়ার পূর্বে তার অধিকতর কল্যাণ বিবেচনা করা কর্তব্য। কেননা আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬)। তিনি তাঁর উস্তাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক সন্তান তার পিতার নিকটে যেতে চাইলে তার কারণ হিসাবে বলে যে, মা আমাকে মাদরাসায় পাঠায়, আর উস্তাদ আমাকে মারেন। কিন্তু আববা আমাকে খেলতে দেন। একথা শুনে বিচারক তাকে তার মায়ের কাছে পাঠাবার নির্দেশ দেন’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬২)।
-আব্দুল ক্বাইয়ূম,
নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।