উত্তর : রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই, পেঁচার
মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং ছফর মাসেও কোন অশুভ নেই। একথা শুনে জনৈক বেদুঈন বলল,
হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে পালের মধ্যে একটা চর্মরোগী উট আসলে বাকীগুলি
চর্মরোগী হয় কেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে
চর্মরোগী বানালো কে?’ (বুখারী হা/৫৭৭০; মুসলিম হা/২২২০; মিশকাত হা/৪৫৭৭-৭৮)।
উক্ত হাদীছে ছোঁয়াচে রোগ নেই তা বলা হয়নি। বরং জাহেলী যুগে মানুষ বিশ্বাস
করত যে ছোঁয়াচে রোগ নিজে নিজেই অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়। এই ভ্রান্ত
বিশ্বাস অপনোদনের জন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন যে, ছোঁয়াচে রোগ থাকলেও তা
আল্লাহর হুকুম ব্যতীত অন্যের দেহে সংক্রমিত হয় না (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৯৫; উছায়মীন, শারহু কিতাবুত তাওহীদ ২/৮০)।
যেমন একই হাদীছে তিনি বলেছেন, তবে কুষ্ঠরোগী হ’তে এমনভাবে পলায়ন কর, যেভাবে তোমরা বাঘ থেকে পলায়ন করে থাক’ (বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭)। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না’ (বুখারী হা/৫৭৭৪; মুসলিম হা/২২২১)। ছাক্বীফ গোত্রের জনৈক কুষ্ঠ রোগীর হাতে হাত রেখে বায়‘আত গ্রহণ করতে রাসূল (ছাঃ) অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বরং তার নিকটে লোক পাঠিয়ে তিনি বলেন, আমরা তোমার বায়‘আত নিয়েছি’ (মুসলিম হা/২২৩১; মিশকাত হা/৪৫৮১)। সুতরাং যদি রোগের সংক্রমণকে রাসূল (ছাঃ) অস্বীকারই করতেন, তবে কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলতেন না বা সুস্থ উটকে অসুস্থ উট থেকে দূরে রাখার কথা বলতেন না।
অতএব ছোঁয়াচে রোগ আছে। তবে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। কেবল আল্লাহর হুকুম ব্যতীত এ রোগ কারু দেহে ছড়াতে পারে না। তাছাড়া রোগের জীবাণু সংক্রমিত হ’লেই তাতে রোগের সংক্রমণ হয় না। এজন্য দেখা যায় যে, ভাইরাস আক্রান্ত স্থানেও অনেক ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয় না। আবার আক্রান্ত হ’লেও সুস্থ হয়ে যায়। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। মূল বিষয় হ’ল আক্বীদার পরিশুদ্ধি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শিরক। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে অশুভ লক্ষণের ধারণার উদ্রেক হয় না। অথচ আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ তা দূরীভূত করে দেন’ (আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৫৮৪)।