বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম
- আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যশীল থাকা : যেকোন বিপদ আল্লাহর পরীক্ষা। যেমন তিনি বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও’। ‘যাদের কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব’। ‘তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে রয়েছে অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহ। আর তারাই হ’ল সুপথপ্রাপ্ত’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-৫৭)। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্লেগ-মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি একটি আযাব। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার উপর এটি প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর মুমিন বান্দাগণের জন্য এটাকে ‘রহমত’ স্বরূপ করেছেন। ফলে কোন ব্যক্তি যদি মহামারী এলাকায় ধৈর্যের সাথে ও ছওয়াবের আশায় অবস্থান করে এবং হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাই হবে, তবে সে একজন শহীদের সমান পুরস্কার লাভ করবে’ (বুখারী হা/৩৪৭৪)। তিনি বলেন, ‘মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী মুসলিম শহীদ হিসাবে গণ্য হবে’ (মুসলিম হা/১৯১৬)। সংক্রমিত উটের দ্বারা অন্য উট সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে সংক্রমিত করল কে? (বুখারী হা/৫৭১৭)। অতএব রোগ ছোঁয়াচে হলেও আল্লাহর হুকুম ছাড়া তা কার্যকর হয় না।
- তাক্বদীরের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা : আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ চান, তবে তার অনুগ্রহকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে খুশী তিনি তা দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইউনুস ১০/১০৭)। তিনি স্বীয় রাসূলকে বলেন, ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তওবা ৯/৫১)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আললাহ তার জন্য একটি পথ বের করে দেন... এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন’ (তালাক ৬৫/২-৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেন, ‘যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর নিকট চাইবে। আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে। জেনে রাখ, যদি উম্মতের সবাই তোমার কোন উপকারের জন্য একত্রিত হয়, তারা তোমার কোন উপকার করতে সক্ষম হবে না অতটুকু ব্যতীত, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি সবাই তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়, তবে কেবল অতটুকুই পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন’... (তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২)।
- নিজের ঈমান ও আমলকে পরিশুদ্ধ করা : আমল কবুলের শর্ত হ’ল ৩টি : ছহীহ আক্বীদা, ছহীহ তরীকা ও ইখলাছপূর্ণ আমল। অতএব সর্বাগ্রে নিজের আমলসমূহ যাচাই করে নিন। শিরক ও বিদ‘আত পরিত্যাগ করুন। ছোট-বড় সকল পাপ বর্জন করুন। ঋণগ্রস্ত থাকলে দ্রুত পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। কারো উপর যুলুম করে থাকলে মাফ চেয়ে নিন এবং সকলের প্রতি সদাচরণ করুন। অধিকহারে ছাদাক্বা করুন।
- বেশী বেশী তওবা-ইস্তেগফার করা : নিজ কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে বারবার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং যাবতীয় অশ্লীলতা ও অন্যায়-অপকর্ম থেকে বিরত থাকার শপথ নিন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যেসব বিপদাপদ হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ মার্জনা করে দেন’ (শূরা ৪২/৩০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে : (১) যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (২) যখন কোন জাতি ওযন ও মাপে কারচুপি করে, তখন তাদের উপর দুর্ভিক্ষ, কঠিন দারিদ্র্য ও শাসকদের নিষ্ঠুর নিপীড়ন নেমে আসে। (৩) যখন কোন জাতি তাদের ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত, তাহ’লে কখনো বৃষ্টিপাত হ’ত না। (৪) যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কৃত (ঈমানের) অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং তারা তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। (৫) যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়ছালা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান ব্যতীত অন্য বিধান গ্রহণ করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৪০১৯; ছহীহাহ হা/১০৬)।
- ইবাদতে মনোযোগী হওয়া : ফরয ছালাতের সাথে সাথে নফল ছালাত সমূহ আদায় করুন। তাহাজ্জুদ ছালাত ও নফল ছিয়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। কুরআন ও হাদীছ নিয়মিত অধ্যয়ন করুন। পরকালীন চেতনা বৃদ্ধি করে এমন বইসমূহ বেশী বেশী পড়ুন। নিয়মিতভাবে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করুন। ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করুন। আল্লাহ আপনার গৃহ ও গৃহবাসীদের নিরাপত্তার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন (বুখারী হা/২৩১১)।
- সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা : পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে ভালভাবে ওযূ করুন। খাওয়ার পূর্বে হাত-মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। দৈনিক স্বল্পমাত্রায় মধু ও কালোজিরা খান। আল্লাহ বলেন, মধুতে আরোগ্য রয়েছে (নাহল ১৬/৬৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ (বুখারী হা/৫৬৮৭)। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন। অকারণে জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। কোলাকুলি বর্জন করুন ও মুছাফাহা-র সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। কম্পিউটারে কাজ করার সময় মাউস ও মাউস প্যাড এবং কী-বোর্ড পরিষ্কার করে নিন। এজন্য হাতে গ্লোভ্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আক্রান্ত এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিজ এলাকা আক্রান্ত হ’লে সেখানেই অবস্থান করা : রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তোমরা কোন স্থানে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে বলে শুনতে পাও, তাহ’লে সেখানে যেয়ো না। আর নিজ এলাকা আক্রান্ত হলে সেখান থেকে বের হয়ো না (বুখারী হা/৫৭২৮)।
- ভাইরাসে আক্রান্ত হ’লে বা কোয়ারেন্টাইনে থাকলে জনসমাবেশ পুরোপুরি এড়িয়ে চলা : একজন মানুষও যেন আপনার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যের ক্ষতি করো না এবং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০)।
- আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবায় এগিয়ে আসা : পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে সাধ্যমত আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করুন। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
১০. নিম্নোক্ত দো‘আগুলি বার বার পাঠ করা।-
(ক) بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ‘বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইয়ুন ফিল্ আর্যি ওয়া লা ফিসসামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম’ (আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি, যাঁর নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোন বস্ত্তই কোনরূপ ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি উক্ত দো‘আ সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে পড়ে, কোন বালা-মুছীবত তাকে স্পর্শ করবে না’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত এবং সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকস্মিক কোন বিপদ ঔতার উপরে আপতিত হবে না’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৯১)।
(খ) اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনূনি ওয়াল জুযা-মি ওয়া মিন সাইয়িইল আসক্বা-ম’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই শ্বেতী রোগ, মস্তিষ্ক বিকৃতি, কুষ্ঠ এবং সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি হ’তে) (আবুদাঊদ হা/১৫৫৪; মিশকাত হা/২৪৭০)।
(গ) أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব’ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টকারিতা হ’তে পানাহ চাচ্ছি) (মুসলিম হা/২৭০৮, মিশকাত হা/২৪২২)।
(ঘ) আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য দো‘আ : أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا ‘আয্হিবিল বা’স, রববান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা’ (কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগকে বাকী রাখেনা) (বুখারী হা/৫৭৫০)।
আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ
নওদাপাড়া (আম চত্বর), পোঃ সপুরা, রাজশাহী। ফোন : (০৭২১) ৭৬০৫২৫, ০১৯১৬-১২৫৫৮৩
প্রকাশক : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৪৪১ হি./১৪২৬ বাং/মার্চ ২০২০ খৃ.।