উত্তর :
শারঈ কারণ ব্যতীত কবর খনন করে লাশ উঠানো বা গোরস্থান স্থানান্তর করা জায়েয
নয়। তাতে লাশের অসম্মান করা হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা
জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সমান (মুওয়াত্ত্বা, আবূদাউদ হা/৩২০৭; মিশকাত হা/১৭১৪ ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ)।
লাশ বহন সময়কালীন করণীয় সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা লাশ উঠাবে
তখন ধাক্কা-ধাক্কি এবং জোরে নাড়া-চাড়া করো না; বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে’ (বুখারী হা/৫০৬৭; মিশকাত হা/৩২৩৭)।
অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা
যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’
(ফাৎহুল বারী ৯/১১৩)।
তবে যদি বাধ্যগত প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহ’লে কবর খনন করে লাশ উঠানো জায়েয’ (আল-বাজী, আল-মুনতাক্বা শারহুল মু্ওয়াত্ত্বা ৩/২২৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৩/২১৫; আলবানী, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং ১০৭, পৃঃ ৬৯ ও ৯১)। যেমন মু‘আবিয়া (রাঃ) একটি পানির নহর প্রবাহিত করার জন্য ওহোদ যুদ্ধে শহীদ কতিপয় ছাহাবীর কবর খনন করে তাঁদের লাশ অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করেন (ইবনুল মুবারাক, কিতাবুল জিহাদ হা/৯৮)। অনুরূপভাবে জাবের (রাঃ) তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ওহোদ যুদ্ধে শাহাদত বরণের ছয় মাস পর তাঁকে কবর থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফন করেন (বুখারী হা/১৩৫১)। এছাড়া কবর যদি বহু পুরানো হয় এবং তাতে লাশের হাড়-হাড্ডির কোন চিহ্ন না থাকে তাহ’লে মুসলমানদের কল্যাণে সেখানে নতুন লাশ দাফন করা বা সেখানে মসজিদ ও বাড়ি-ঘর নির্মাণ, চাষাবাদ ইত্যাদি করা যেতে পারে’ (ইমাম নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০৩; ইবনু কুদামা, মুগনী ২/১৯৪, ৪১৩)।
তবে প্রশ্নোল্লেখিত অবস্থায় কয়েকটি কারণে গোরস্থানটি স্থানান্তর করা ঠিক হবে না। এক. কবরস্থানটি ওয়াকফকৃত। আর ওয়াক্ফকৃত স্থান একান্ত বাধ্যগত অবস্থা ব্যতীত স্থানান্তর করা জায়েয নয় (বুখারী হা/২৭৬৪; মুসলিম হা/১৬৩২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/২৫২, ২৬৫)। দুই. এখানে শক্তিশালী কোন শারঈ কারণ নেই। কেননা পার্ক কর্তৃপক্ষের খেল-তামাশার স্বার্থে মুসলমানের ওয়াকফকৃত কবরস্থান স্থানান্তর করা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। তিন. শারঈ প্রয়োজন ব্যতীত কবর স্থানান্তর করা মুসলিম মাইয়েতগণের প্রতি অমর্যাদাকর। অতএব সার্বিক বিবেচনায় উক্ত কবরস্থানটি স্থানান্তর করা সঠিক হবে না।