উত্তর : ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ছালাতুর রাগায়েব নামে ১২ রাক‘আত ছালাত যা রজব মাসের প্রথম জুম‘আর দিন মাগরিব থেকে এশার মধ্যে পড়া হয় এবং মধ্য শা‘বানের রাতে যে ১০০ রাক‘আত ছালাত পড়া হয়, তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। এ বিষয়ে ‘কুতুল কুলূব’ ও ‘এহইয়াউ ঊলূমিদ্দীন’ নামে দু’টি বইয়ে বর্ণনা থাকায় কেউ যেন প্রতারিত না হয় (আল-মাজমূ‘ ৪/৫৬)। তিনি আরো বলেন, এই ছালাতের আবিষ্কারককে আল্লাহ ধ্বংস করুন। এটি অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতায় পরিপূর্ণ ঘৃণিত বিদ‘আত (নববী, শরহ মুসলিম ৮/২০)। মধ্য শা‘বানের দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত বিষয়ে যে হাদীছ এসেছে, তা যঈফ ও মওযূ‘ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮; মিশকাত হা/১৩০৮)।
ছালাতুর রাগায়েব-এর এই বিদ‘আত সর্বপ্রথম ৪৪৮ হিজরীতে জেরুযালেমের বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে চালু হয়। মসজিদের মূর্খ ইমামগণ ‘ছালাতুর রাগায়েব’ তথা রজবের প্রথম জুম‘আ ও মধ্য শা‘বানের রাত্রিতে ও অন্যান্য সময়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এইসব ছালাত চালু করে। এর মাধ্যমে তারা জনসাধারণকে একত্রিত করার এবং তাদের উপর নেতৃত্ব করার ও পেট পুর্তি করার একটা ফাঁদ পেতেছিল মাত্র।... এ বিষয়ে মিশকাত শরীফের খ্যাতনামা আরবী ভাষ্যকার মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেন, জেনে রাখ যে, ইমাম সুয়ূত্বী (৮৪৯-৯১১ হি.)-এর اللآلي الْمُصْنُوعَةُ فِي الْأَحَادِيثِ الْمَوْضُوعَةِ গ্রন্থে যা বর্ণিত হয়েছে যে, দায়লামী ও অন্যান্যদের আনীত হাদীছ সমূহ যেখানে মধ্য শা‘বানে প্রতি রাক‘আতে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ সহ ১০০ রাক‘আত ছালাতের যে অগণিত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তা সবই মওযূ‘। তাছাড়া আলী বিন ইবরাহীম কোন এক পুস্তিকায় বলেছেন, মধ্য শা‘বানের রাত্রিতে ছালাতে আল্ফিইয়াহ (الصَّلاَةُ الْأَلْفِيَةُ) নামে প্রতি রাক‘আতে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ সহ ১০০ রাক‘আত ছালাত জামা‘আত সহকারে যা আদায় করা হয় এবং যাকে লোকেরা জুম‘আ ও ঈদায়নের চাইতে গুরুত্ব দিয়ে আদায় করে থাকে, সে বিষয়ে যঈফ বা মওযূ‘ ব্যতীত কোন হাদীছ বা আছার বর্ণিত হয়নি। এব্যাপারে আবু তালেব মাক্কীর (মৃ. ৩৮৬ হি.) ‘কূতুল কুলূব’ (قُوْتُ الْقُلُوبِ) ও ইমাম গাযালীর (৪৫০-৫০৫ হি.) ‘এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন’(إِحْيَاءُ عُلُومِ الدِّينِ) কিতাবে তার উল্লেখ দেখে এবং এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীছ দেখে কেউ যেন ধোঁকায় না পড়েন। এই ছালাতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিরাট ফিৎনায় পড়ে যায়। এমনকি এই ছালাতের কারণে লোকেরা আলোকসজ্জা করে এবং নানাবিধ পাপাচারে লিপ্ত হয়। যার কারণে পরহেযগার ব্যক্তিগণ আল্লাহর গযবে যমীন ধ্বসে যাওয়ার ভয়ে শহর ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যান (মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘রামাযানের রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ, হা/১৩০৮-এর আলোচনা; দ্রঃ ‘শবেবরাত’ বই ১৮ পৃ.)।