উত্তম মৃত্যুর কিছু নিদর্শন ও আমাদের করণীয়

উপস্থাপনা : মৃত্যু অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। তিনি আরো বলেন, ‘কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং জানে না কোন্ মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোক্বমান ৩১/৩৪)। এই অনিবার্য ও অমোঘ সত্য বিষয়টিকে পাশ কাটানোর কোন সুযোগই কারু নেই। সুতরাং আমাদের মৃত্যু যেন উত্তমভাবে হয়, সেজন্য বিশুদ্ধ ঈমান সহকারে সদা কর্মতৎপর থাকতে হবে। নিম্নে উত্তম মৃত্যুর বর্ণনা, উত্তম মৃত্যুর কতিপয় নিদর্শন, উত্তম মৃত্যুর জন্য করণীয় প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হ’ল।  

উত্তম মৃত্যু : উত্তম মৃত্যু হ’ল মৃত্যুর পূর্বে মানুষের এমন কর্ম সম্পাদন করা, যা তার প্রতিপালকের ক্রোধ হ’তে তাকে বাঁচাতে সাহায্য করে এবং সে মৃত্যুর পূর্বেই তওবায়ে নাছূহা সম্পন্ন করে। সেই সাথে সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করতে করতেই সে একসময় মৃত্যুবরণ করে এবং পাপমুক্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমায়।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ، فَقِيلَ : كَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ المَوْتِ- ‘যখন আল্লাহ কোন বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে যোগ্য করে তোলেন। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কিভাবে তিনি তাকে যোগ্য করে তোলেন? তিনি বললেন, তিনি তাকে তার মৃত্যুর পূর্বে সৎকর্ম সম্পাদনের তাওফীক দান করেন’।[1]

অন্যত্র তিনি বলেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِعَبْدٍ خَيْراً عَسَلَهُ، قِيلَ وَمَا عَسَلُهُ؟ قَالَ : يَفْتَحُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ عَمَلاً صَالِحاً قَبْلَ مَوْتِهِ ثُمَّ يَقْبِضُهُ عَلَيْهِ- ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ করেন, তখন তাকে সক্ষমতা দান করেন। বলা হ’ল, (عَسَلُهُ) ‘সক্ষমতা’ বিষয়টা কি? তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকর্মের সক্ষমতা দান করেন। যা বাস্তবায়ন করেই সে মৃত্যুবরণ করে’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الْعَبْدَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَإِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ- ‘কোন বান্দা জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে, অথচ সে মূলতঃ জান্নাতী। এভাবে কোন বান্দা জান্নাতীদের কাজ করতে থাকে, অথচ সে জাহান্নামী। বস্ত্ততঃ শেষ আমল সমূহই গ্রহণযোগ্য (যার উপরে পরকালীন সবকিছু নির্ভর করে’)।[3]

সৎকর্মশীল মুমিনগণের মৃত্যুকালীন সুসংবাদ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,اَلْمَيِّتُ تَحْضُرُهُ الْمَلاَئِكَةُ، فَإِذَا كَانَ الرَّجُلُ صَالِحًا قَالُوا : اُخْرُجِي أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ، اُخْرُجِي حَمِيدَةً وَأَبْشِرِي بِرَوْحٍ وَرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ، فَلاَ تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذَلِكَ حَتَّى تَخْرُجَ ثُمَّ يُعْرَجُ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ فَيُفْتَحَ لَهَا، فَيُقَالُ : مَنْ هَذَا؟ فَيَقُولُونَ فُلاَنٌ، فَيُقَالُ : مَرْحَبًا بِالنَّفسِ الطّيبَة كَانَت فِي الْجَسَدِ الطَّيِّبِ، اُدْخُلِي حَمِيدَةً وَأَبْشِرِي بِرَوْحٍ وَرَيْحَانٍ وَرَبٍّ غَيْرِ غَضْبَانَ، فَلاَ تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذَلِكَ حَتَّى تَنْتَهِيَ إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي فِيهَا اللهُ- ‘মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় ফেরেশতাগণ বলেন, বের হয়ে এসো হে পবিত্র আত্মা! যা পবিত্র দেহে ছিলে। প্রশংসার সাথে বের হয়ে এসো এবং চির সুখ-শান্তির ও প্রতিপালকের সন্তুষ্টির সুসংবাদ গ্রহণ কর। এভাবে তাকে বলা হ’তে থাকবে, যতক্ষণ না তার রূহ বের হয়ে আসে। অতঃপর তাকে আকাশের দিকে উঠানো হয়, তখন তার জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়, এই কে? ফেরেশতাগণ বলেন, অমুক। তখন বলা হয়, অভিনন্দন! হে পবিত্র আত্মা! যা পবিত্র দেহে ছিলে। প্রশংসার সাথে প্রবেশ কর এবং সুখ-শান্তির ও প্রতিপালকের সন্তুষ্টির সুসংবাদ গ্রহণ কর। এভাবে বলা হ’তে থাকে যতক্ষণ না সে ব্যক্তি ঐ আকাশে উপনীত হয়, যেখানে মহান আল্লাহ রয়েছেন’।[4]

উত্তম মৃত্যুর কতিপয় নিদর্শন

উত্তম মৃত্যুর অন্যতম নিদর্শন হ’ল সৎকর্মশীল বান্দাকে তার মৃত্যুর সময় তার প্রতিপালকের সন্তুষ্টির সংবাদ প্রদান করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানের কথা জানানো। এক্ষেত্রে প্রতিটি সৎকর্মশীল মুমিনের কর্তব্য হবে, আমৃত্যু দ্বীনে হকের উপর দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ أَلاَّ تَخَافُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ- ‘নিশ্চয়ই যারা দৃঢ়তার সাথে বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তার উপর অবিচল থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৩০)। আব্দুর রহমান নাছের আস-সা‘দী (রহঃ) বলেন, مُبَشِّرِيْنَ لَهُمْ عِنْدَ الاِحْتِضَارِ- ‘এই সুসংবাদ মুমিনের মৃত্যুর সময় জানানো হয়’।[5] ফলে সন্তুষ্টচিত্তে মুমিন তার রবের সাথে সাক্ষাৎ লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ أَوْ بَعْضُ أَزْوَاجِهِ : إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ، قَالَ : لَيْسَ ذَلِكَ، وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرِضْوَانِ اللهِ وَكَرَامَتِهِ، فَلَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَأَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ وَأَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حَضَرَ بُشِّرَ بِعَذَابِ اللهِ وَعُقُوبَتِهِ، فَلَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَهُ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَكَرِهَ لِقَاءَ اللهِ وَكَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভকে ভালবাসে, আল্লাহর তার সাক্ষাৎকে ভালবাসেন এবং যে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভকে অপসন্দ করে, আল্লাহর তার সাক্ষাৎকে অপসন্দ করেন। এটা শুনে আয়েশা কিংবা রাসূল (ছাঃ)-এর কোন একজন স্ত্রী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো মৃত্যুকে অপসন্দই করি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এর অর্থ তা নয়। বরং এর অর্থ হ’ল এই যে, মুমিনের কাছে যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্মান প্রদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। ফলে তার সম্মুখে যা রয়েছে, তা অপেক্ষা অন্য কোন জিনিসই প্রিয়তর হয় না। সুতরাং সে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভকে ভালবাসে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎকে ভালবাসেন। পক্ষান্তরে কাফেরের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও শাস্তির দুঃসংবাদ দেওয়া হয়। এর ফলে তার সম্মুখে যা রয়েছে, তা অপেক্ষা অধিক অপসন্দনীয় আর কিছুই বাকী থাকে না। সুতরাং সে আল্লাহর সাক্ষাৎকে অপসন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎকে অপসন্দ করেন’।[6]

১. কষ্টকর মৃত্যুই উত্তম মৃত্যু : অনেকের ধারণা হ’তে পারে যে, উত্তম মৃত্যু বলতে সহজভাবে ও রোগ-দুঃখ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করাকে বুঝায়। এটা সবক্ষেত্রে না-ও ঘটতে পারে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ يُّرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ- ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’।[7]

অন্যদিকে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বে ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হ’লে তিনি নিকটস্থ পানির পাত্রে হাত ভিজিয়ে মুখমন্ডল মাসাহ করে বললেন, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নিশ্চয়ই মৃত্যুর যন্ত্রণা ভীষণ কঠিন’।[8]

একদিন সা‘দ বিন আবী ওয়াক্বাছ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, يَا رَسُولَ اللهِ! أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلاءً؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন কারা হবে?’ তিনি বলেন,الْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، يُبْتَلَى الْعَبْدُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلاَؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ اُبْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلاَءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ- ‘নবীগণ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন। অতঃপর মর্যাদার দিক থেকে তাঁদের পরবর্তীগণ, অতঃপর তাঁদের পরবর্তীগণ। মানুষকে তার ঈমান ও ধর্মানুরাগ অনুপাতে পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দ্বীনদারীতে অবিচল থাকে, তবে তার পরীক্ষাও তত কঠিন হয়। আর যদি সে তার দ্বীনদারীতে শিথিল হয়, তবে তার পরীক্ষাও তদানুপাতে হাল্কা হয়। বান্দা এভাবে হর-হামেশা বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষিত হ’তে থাকে। অবশেষে যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত-পরিচ্ছন্ন হয়ে সে পৃথিবীতে বিচরণ করে’।[9]

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ভীষণ জ্বরে আপনি তো পর্যুদস্ত হয়ে আছেন। তিনি বললেন,أَجَلْ، إِنِّى أُوْعَكُ كَمَا يُوْعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ، ‘হ্যাঁ, আমি তোমাদের দু’জনের জ্বরের সমপরিমাণ জ্বরে আক্রান্ত হই’। তখন আমি বললাম, এটা এজন্য যে, আপনার জন্য ছওয়াবও দ্বিগুণ রয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই তা সঠিক। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا- ‘যে কোন মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়, তা একটি কাঁটা বিদ্ধ হওয়া কিংবা আরো তুচ্ছ কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপরাশি মোচন করেন, যেভাবে বৃক্ষ তার পত্রপল্লব ঝেড়ে ফেলে’।[10]

জনৈকা হাবশী নারী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল (ছাঃ)! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই। রোগের তীব্রতায় আমি বিবস্ত্র হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُّعَافِيَكِ- ‘তুমি চাইলে ধৈর্যধারণ করতে পার। তাহ’লে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর তুমি চাইলে আমি তোমার রোগমুক্তির জন্য দো‘আ করব, যেন আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ সুস্থ করে দেন’। তখন মহিলাটি জবাবে বলল, আমি বরং ধৈর্যধারণ করব। অতঃপর সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ি, তখন বিবস্ত্র হয়ে যাই। আমি যেন বিবস্ত্র না হয়ে পড়ি, সেজন্য দো‘আ করুন। ফলে রাসূল (ছাঃ) তার জন্য দো‘আ করলেন।[11]

অতএব কারু জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর সময় কেউ অধিক পরিমাণে কষ্ট পেলে তার উপর মন্দ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। কারণ এর দ্বারা আল্লাহ মুমিনকে দুনিয়া থেকেই পাপমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন অবস্থায় আখেরাতের জন্য প্রস্ত্তত করেন।

২. মৃত্যুর সময় কপাল মৃদু ঘর্মাক্ত হওয়া : মুমিনের উত্তম মৃত্যুর আরেকটি নিদর্শন হ’ল, মৃত্যুর সময় যন্ত্রণার প্রচন্ডতায় মুমিনের কপাল মৃদুভাবে ঘর্মাক্ত হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, المُؤْمِنُ يَمُوتُ بِعَرَقِ الجَبِينِ- ‘মুমিন মৃত্যুবরণ করে কপালে মৃদু ঘাম নিয়ে’।[12] অন্য বর্ণনায় এসেছে,لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، فَإِنَّ نَفْسَ الْمُؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا، وَنَفْسَ الْكَافِرِ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الْحِمَارِ- ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইলাল্লাহ শিক্ষা দাও। কেননা মুমিনের আত্মা বের হয় ঘাম বের হওয়ার ন্যায় (সহজভাবে)। আর কাফেরের আত্মা বের হয় মুখ দিয়ে যেমন গাধার আত্মা বের হয় (কঠিনভাবে)’।[13]

৩. জুম‘আর রাত্রি বা দিবসেমৃত্যুবরণ করা : মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনের যেকোন সময় মৃত্যুরবণ করা উত্তম মৃত্যুর অন্যতম নিদর্শন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلاَّ وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ- ‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিবসে অথবা রাত্রিতে মারা যায়, তাহ’লে আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হ’তে রক্ষা করেন’।[14]

৪. শহীদীমৃত্যু ও মর্যাদাগত শহীদ : আল্লাহর কালেমা উড্ডীন করণার্থে ময়দানে শহীদ হওয়া উত্তম মৃত্যুর অন্যতম প্রধান আলামত। আল্লাহ বলেন,وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا، بَلْ أَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ- فَرِحِينَ بِمَآ آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلاَّ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ- يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّأَنَّ اللهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ- ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তাদেরকে মৃত ভেবো না। বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট হ’তে রিযিকপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হ’তে যা দিয়েছেন, তাতেই তারা আনন্দিত। আর তারা আনন্দ প্রকাশ করে তাদের পিছনে রেখে আসা মুজাহিদগণের জন্য, যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি এই বলে যে, তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তাদের চিন্তারও কোন কারণ নেই। তারা আল্লাহর নিকট থেকে অনুগ্রহ ও কল্যাণ লাভের কারণে আনন্দ প্রকাশ করে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করবেন না’ (আলে ইমরান ৩/১৬৯-৭১)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا تَعُدُّونَ الشَّهِيدَ فِيكُمْ؟ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، قَالَ : إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ، مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي الطَّاعُونِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي الْبَطْنِ فهوَ شهيدٌ- ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা শহীদ বলে গণ্য কর? ছাহাবীগণ বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়, সেই তো শহীদ। তিনি বলেন, তাহ’লে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। বরং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে মত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (নিয়োজিত থেকে স্বাভাবিকভাবে) মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ এবং যে ব্যক্তি প্লেগে (মহামারিতে) মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ। আর যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ’।[15]

তিনি আরো বলেন,اَلشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ : الْمَطْعُوْنُ وَالْمَبْطُوْنُ وَالْغَرِقُ وَصَاحِبُ الْهَدْمِ وَالشَّهِيْدُ فِىْ سَبِيلِ اللهِ- ‘পাঁচ শ্রেণীর মানুষ শহীদ হিসাবে গণ্য হয়। যেমন (১) মহামারীতে নিহত ব্যক্তি, (২) পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (৩) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, (৪) মাটি বা যেকোন বস্ত্ততে চাপা পড়ে নিহত ব্যক্তি এবং (৫) আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকা অবস্থায় মৃত ব্যক্তি’।[16] তিনি আরও বলেন,مَنْ سَأَلَ اللهَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ- ‘যে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে শাহাদতের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত করেন; যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’।[17]

বদরের যুদ্ধে উমায়ের বিন হুমাম (রাঃ) শাহাদতের অমিয় সুধা পান করে জান্নাতী হওয়ার উদগ্র বাসনা পোষণ করেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি জান্নাতের অধিবাসী হবে’। অতঃপর তিনি বীর-বিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন’।[18]

বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিকটবর্তী মু’তা নামক স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হিসাবে যায়েদ বিন হারেছাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি যায়েদ শহীদ হয়, তবে তার স্থলে জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব সেনাপতি হবে। যদি সে শহীদ হয়, তাহ’লে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবে।[19] মৃত্যুর কথা জেনেও ছাহাবায়ে কেরাম কেবল শাহাদাত লাভের উদগ্র বাসানায় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

৫. মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী মুসলিম ব্যক্তি : রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلطَّاعُونُ شَهَادَةٌ لِّكُلِّ مُسْلِمٍ- ‘প্লেগে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক মুসলমান শাহাদাতের মর্যাদা পাবে’।[20] আয়েশা (রাঃ) মহামারীতে মৃত্যুবরণকারীদের পরকালীন অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,أَنَّهُ عَذَابٌ يَبْعَثُهُ اللهُ عَلَى مَنْ يَّشَاءُ، وَأَنَّ اللهَ جَعَلَهُ رَحْمَةً لِّلْمُؤْمِنِينَ، لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُوْنُ فَيَمْكُثُ فِى بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيدٍ- ‘এটি হ’ল শাস্তি। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা করেন, তা প্রেরণ করেন। কিন্তু আল্লাহ মুমিনদের জন্য তাকে রহমত স্বরূপ গণ্য করেছেন। যে কোন ব্যক্তি প্লেগে (মহামারী) আক্রান্ত অঞ্চলে থাকলে ছওয়াবের নিয়তে সেখানেই অবস্থান করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ যা তার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা ব্যতীত তার উপর অন্য কিছুই পতিত হবে না, তবে তার জন্য শহীদের অনুরূপ ছওয়াব রয়েছে’।[21]

৬. আগুনে পুড়ে, পিষ্ট হয়ে এবং সন্তান প্রসবকালেমৃত্যুবরণকারী : রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ، وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ- ‘যে ব্যক্তি পুড়ে মারা যায়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি কোন কিছু চাপা পড়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায়, সে শহীদ এবং প্রসবকালীন কষ্টে প্রসূতী মৃত নারী শহীদ’।[22] তিনি আরো বলেন, وَالْمَرْأَةُ يَقْتُلُهَا وَلَدُهَا جَمْعَاءَ شَهَادَةٌ- ‘যে নারী সন্তান প্রসবকালে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ হিসাবে গণ্য হবে’।[23] অন্য বর্ণনায় এসেছে,وَالنُّفَسَاءُ يَجُرُّهَا وَلَدُهَا بِسُرَرِهِ إِلَى الْجَنَّةِ- ‘সন্তান ভূমিষ্টকালে মৃত্যুবরণকারিণী মাতাকে তার বাচ্চাটি নাভিস্থিত নাড়ীতে টেনে টেনে জান্নাত অভিমুখে নিয়ে যাবে’।[24]

৭. দ্বীন, সম্পদ, জীবন ও স্বজন রক্ষায় নিহত ব্যক্তি : সমাজে অহরহ ঘটছে খুনাখুনি। প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে এ রকম চিত্র দেখা যায়। এগুলির মধ্যে দ্বীন, সম্পদ, জীবন ও স্বজন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি শাহাদতের মর্যাদায় বিভূষিত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ-

‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার আত্মীয়-স্বজন রক্ষার্থে নিহত হয়, সেও শহীদ’।[25]

৮. আল্লাহর পথে সর্বদা প্রস্ত্তত দায়িত্ত্বশীলগণ : আল্লাহ বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর এবং সদা প্রস্ত্তত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (আলে ইমরান ৩/২০০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِّنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، وَإِنْ مَّاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ-

‘আল্লাহর রাস্তায় এক দিন ও এক রাতের সীমান্ত পাহারা দেওয়া, একমাস ছিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত্রি জাগরণের চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার আমলের ছওয়াব প্রবহমান থাকবে এবং তার জন্য শহীদী রিযিক জারী করা হবে। আর সে ব্যক্তি পরকালীন যাবতীয় বালা-মুছীবত হ’তে নিরাপদে থাকবে’।[26]

৯.সৎকর্মের উপর সুদৃঢ় থেকে মৃত্যুবরণকারী : রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ قَالَ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ صَلَّى صَلاَةً ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর চেহারা কামনায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এ আমলই তার সর্বশেষ আমল হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনায় ছালাত, ছিয়াম এবং দান-ছাদাক্বা করবে এবং এ আমলগুলিই তার সর্বশেষ কর্ম হবে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[27] তিনি আরো বলেন, مَنْ مَاتَ عَلَى شَىْءٍ بَعَثَهُ اللهُ عَلَيْهِ- ‘কোন ব্যক্তি যে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাকে সে অবস্থায়ই পুনরুত্থিত করবেন’।[28] অর্থাৎ যাবতীয় সৎকর্মের উপর সুদৃঢ় থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীগণ শাহাদতের সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবেন।

১০. মৃত্যুকালীন প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতর হওয়া :

রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর সময় প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভূত হ’লে ফাতেমা (রাঃ) বলেন, وَاكَرْبَ أَبَاهُ! ‘হায় আববা, কি ভীষণ যন্ত্রণা’! তখন তিনি বলেন, لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبٌ بَعْدَ الْيَوْمِ، ‘আজকের দিনের (মৃত্যুর) পর তোমার আববার আর কোনই যন্ত্রণা থাকবে না’।[29]

অনুরূপভাবে বেলাল (রাঃ) মৃত্যুকালীন যন্ত্রণায় ছটফট করলে তাঁর স্ত্রী বেদনাবিধূর হয়ে বললেন, وَابِلاَلاََهُ وَاحَزَنَاهُ! ‘হায় বেলাল! কি দুঃসহ যন্ত্রণা!’ অতঃপর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্বে স্বীয় স্ত্রীকে এমন এক কথা বললেন, যাতে মৃত্যু যন্ত্রণার সাথে মাধুর্যও মিশানো ছিল। তিনি বলেন, وَافَرْحَاهُ! ‘আহা কি আনন্দ!’ কেননা মৃত্যু হয়ে গেলেই রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের রাস্তা খোলাছা হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি বললেন,غَدًا نَلْقَى الْأَحِبَّةَ مُحَمَّدًا وَصَحْبَهُ- ‘এইতো আমাগীকালই প্রিয়তম রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব’।[30]

মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-এর মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বলেন,مَرْحَبًا بِالْمَوْتِ مَرْحَبًا، زَائِرٌ مُغِبٌّ، حَبِيبٌ جَاءَ عَلَى فَاقَةٍ، ‘সু-স্বাগতম হে মৃত্যু, তোমাকে অভিনন্দন! দেরীতে আগত, ক্ষুধার্ত অবস্থায় আগমনকারী অন্তরঙ্গ বন্ধু হে!’[31]

খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীযের মৃত্যুর সময় তিনি বললেন, তোমরা সবাই আমার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাও। সবাই বেরিয়ে কক্ষের দরজায় বসল। অতঃপর ফেরেশতাগণের উদ্দেশ্যে তারা তাঁকে বলতে শুনল যে,مَرْحَبًا بِهَذِهِ الْوُجُوهِ لَيْسَتْ بِوُجُوهِ إِنْسٍ وَلاَ جَانٍّ، ‘এই যে উজ্জ্বল চেহারাগুলি, যেখানে কোন মানুষ বা জিনের চেহারা নেই; অভিনন্দন তোমাদের!’ অতঃপর তিনি কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন,تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لاَ يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلاَ فَسَادًا وَّالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ- ‘আখেরাতের এই (জান্নাতী) গৃহ আমরা প্রস্ত্তত করে রেখেছি ঐসব মুমিনের জন্য, যারা দুনিয়াতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না এবং বিশৃংখলা কামনা করে না। আর শুভ পরিণাম হ’ল মুত্তাক্বীদের জন্য’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৩)। فَوَجَدُوهُ قَدْ قُبِضَ وَغُمِّضَ وَسُوِّيَ- ‘অতঃপর উপস্থিত লোকজন তাঁকে মৃত দেখতে পেলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁর চোখ মুদিত ছিল এবং সোজা করে ক্বিবলামুখী করে শোয়ানো হয়েছিল’।[32] উপরোক্ত মৃত্যুকালীন প্রচন্ড যন্ত্রণাকাতর হওয়ার বিশেষ নিদর্শনগুলি উত্তম মৃত্যুর প্রমাণ বহন করে।

১১. হজ্জের সফরে মৃত্যুবরণ করা : আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি আরাফার ময়দানে উকূফ করা অবস্থায় হঠাৎ তার বাহন উটনী হ’তে আছড়ে পড়ল। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল এবং সে মারা গেল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,اَغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِى ثَوْبَيْنِ وَلاَ تُحَنِّطُوهُ وَلاَ تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ، فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا- ‘পানিতে বরই পাতা মিশিয়ে তাকে গোসল দাও এবং দু’টি কাপড়ে তার কাফন পরিধান করাও। তবে তাকে সুগন্ধি লাগবে না এবং তার মস্তক আবৃত করবে না। কেননা সে ক্বিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে’।[33]

১২. মৃত্যুর সময় কালেমা শাহাদতের স্বীকৃতি :

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করানো উচিৎ। আর প্রকৃত মুমিনগণ মৃত্যুর সময় কালেমা উচ্চারণ করতে পারবে এবং এটা মহা সৌভাগ্যেরও বিষয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ- ‘যার শেষ বাক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[34] সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ- ‘তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইলাল্লাহ স্মরণ করাও’।[35] মুমূর্ষু ব্যক্তির আশেপাশের লোকেরা সরবে বারবার লা ইলাহা ইলাল্লাহ বলতে থাকবে। তবে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা উচ্চারণের জন্য চাপ প্রয়োগ করা কিংবা বারবার তাকে পীড়াপীড়ি করা অনুচিত। কেননা তার মুখ থেকে অযাচিত ও বেফাঁস মন্তব্য উচ্চারিত হয়ে যেতে পারে।

নিকৃষ্ট মৃত্যু : যে ব্যক্তি মন্দকর্মে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তওবা করার সুযোগ না পায়, তাকে আমরা নিকৃষ্ট মৃত্যু বলতে পারি। মুজাহিদের বরাতে আল্লামা যাহাবী উল্লেখ করেন যে, জনৈক ব্যক্তি দাবা খেলায় আসক্ত ছিল এবং দাবাড়ুদের সাথেই তার উঠাবসা হ’ত। একদা সে মুমূর্ষু অবস্থায় পতিত হ’লে তাকে বলা হ’ল তুমি বল,لَآ إِلَه إِلاَّ الله، ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু সে বলল, شَاهَكَ ‘তোমার দাবার গুটি’। তার মুখ দিয়ে সেটাই বেরিয়ে গেল, যার সাথে সে নিমগ্ন থাকত। অতঃপর লোকটি মৃত্যুবরণ করল। সে কালেমায়ে তাওহীদের পরিবর্তে শয়তানী বাক্য উচ্চারণ করল।[36]

অনুরূপভাবে মাদকসেবী জনৈক লোকের মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হ’লে একজন ব্যক্তি তাকে কালেমা শাহাদতের তালক্বীন দিল। সে বলল, اِشْرَبْ وَاسْقِنِي، ‘তুমি মদ্যপান কর এবং আমাকেও মদ পরিবেশন কর’। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করল।[37]

সুপ্রিয় পাঠক, এর চাইতে নিকৃষ্ট অবস্থায় অপমানজনক মৃত্যু আর কি হ’তে পারে! আল্লাহর ক্রোধ ও নাফরমানীর উপর মৃত্যুবরণের চাইতে দুর্ভাগ্য এবং পথভ্রষ্টতা আর কিছু আছে কি?

এ ধরনের নিকৃষ্ট অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَإِذَا كَانَ الرَّجُلُ السُّوءُ قَالَ اخْرُجِي أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الْخَبِيثِ اخْرُجِي ذَمِيمَةً وَأَبْشِرِي بِحَمِيمٍ وَغَسَّاقٍ، وَآخَرَ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ فَمَا تَزَالُ يُقَالُ لَهَا ذَلِكَ حَتَّى تَخْرُجَ ثُمَّ يُعْرَجُ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ، فَيُفْتَحُ لَهَا فَيُقَالُ : مَنْ هَذَا؟ فَيُقَالُ فُلاَنٌ فَيُقَالُ لاَ مَرْحَبًا بِالنَّفْسِ الْخَبِيثَةِ كَانَتْ فِي الْجَسَدِ الْخَبِيثِ ارْجِعِي ذَمِيمَةً فَإِنَّهَا لاَ تفتح لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ فَتُرْسَلُ مِنَ السَّمَاءِ ثُمَّ تَصِيرُ إِلَى الْقَبْر- ‘বদকার ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ বলেন, বের হয়ে আস হে নিকৃষ্ট আত্মা! যা নিকৃষ্ট দেহে ছিলে। তিরস্কৃত অবস্থায় বের হয়ে আস এবং দুঃসংবাদ গ্রহণ কর ফুটন্ত গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির, আরও অনুরূপ নিকৃষ্ট জিনিসের। তাকে এরূপ বলা হ’তে থাকবে যতক্ষণ না তার প্রাণ বের হয়ে আসে। অতঃপর তাকে আকাশের দিকে উঠানো হয় এবং তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দিতে বলা হয়। তখন জিজ্ঞেস করা হয়, এটা কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, এ নিকৃষ্ট আত্মার জন্য কোন শুভেচ্ছা নেই। যা নিকৃষ্ট দেহে ছিল। ফিরে যাও লাঞ্ছনা ও তিরস্কারের সাথে! কেননা তোমার জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। সুতরাং তাকে আকাশ হ’তে নীচে পাঠানো হয়। অতঃপর সে কবরের দিকে ফিরে যায়’।[38]

আল্লাহ বলেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَآءُ- ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা মযবূত রাখেন ইহকালীন জীবনে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যা চান তাই করেন’ (ইব্রাহীম ১৪/২৭)

উত্তম মৃত্যুর জন্য করণীয়

১. আল্লাহর বিধানের নিকট সর্বদা প্রণত হওয়া : মুমিনকে সদা-সর্বদা ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান থাকতে হবে। ছাহাবায়ে কেরামের ন্যায় ধৈর্য ও ত্যাগের বাস্তব নমুনা হ’তে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এবং জান্নাতের অতুলনীয় পুরস্কার লাভের আশায় সদা কর্মচঞ্চল থাকতে হবে। কারণ আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের সবকিছুই জানেন, তার সকল কথা শুনেন ও সকল কাজ দেখেন। এই ঈমানী দৃঢ়তা সর্বদা সজাগ রাখতে হবে।[39] প্রগতির নামে জাহেলিয়াত এবং ধর্মের নামে শিরক-বিদ‘আতের নাগপাশ থেকে সর্বদা দূরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ইউসুফ (আঃ)-এর দো‘আটি প্রণিধানযোগ্য।-رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنْتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَّأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ- ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছ এবং আমাকে স্বপ্ন সমূহের ব্যাখ্যাদানের শিক্ষা প্রদান করেছ। হে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা! দুনিয়া ও আখেরাতে তুমিই আমার একমাত্র অভিভাবক। তুমি আমাকে ‘মুসলিম’ হিসাবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর’ (ইউসুফ ১২/১০১)। কারণ দুনিয়ায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃত সৎকর্মের বিনিময় মুমিনগণ উত্তমরূপে পাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, هَلْ جَزَآءُ الْإِحْسَانِ إِلاَّ الْإِحْسَانُ؟ ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার বৈ অন্য কিছু হ’তে পারে কি?’ (আর-রহমান ৫৫/৬০)

২. আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা : রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ بِاللهِ الظَّنَّ- ‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর উপর সুধারণা পোষণ করা ব্যতীত কোনভাবেই মৃত্যুমুখে পতিত না হয়’।[40] তিনি বলেন, আল্লাহ বলেন,أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِى، فَإِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى نَفْسِى، وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلأٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلأٍ خَيْرٍ مِّنْهُمْ، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً، وَمَنْ لَقِيَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطِيئَةً لاَ يُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً- ‘আমি আমার বান্দার নিকটে তার ধারণার অনুরূপ। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, তবে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে, আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম বৈঠকে স্মরণ করি। সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হ’লে, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর সে এক হাত আমার নিকটে আসলে আমি তার এক বাহু নিকটবর্তী হই। আর সে আমার নিকটে হেঁটে আসলে, আমি তার নিকটে দেঁŠড়ে যাই এবং সে আমার নিকটে শিরক বিমুক্ত অবস্থায় পৃথিবীপূর্ণ গুনাহ নিয়ে আসলে, আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করব সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে’।[41]

৩. প্রকৃত আল্লাহভীতি অর্জন করা : আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا- ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কর্ম সহজ করে দেন’ (তালাক ৬৫/৪)। তিনি বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوآ إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ- ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হ’লেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ اَلْجَنَّةَ تَقْوى اللهِ وَحُسْنُ اَلْخُلُقِ- ‘যে দু’টি কারণে মানুষ সর্বাধিক জান্নাতে প্রবেশ করবে, তা হ’ল আল্লাহভীতি ও সুন্দর চরিত্র’।[42]

৪. সর্বদা আমলে ছালেহ সম্পাদন করা : আল্লাহ বলেন,وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَآ أُولِي الْأَلْبَابِ- ‘তোমরা যেসব সৎকর্ম কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন। আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করো। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হ’ল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, صَنَائِعُ الْمَعْرُوفِ تَقِي مَصَارِعَ السَّوْءِ، ‘সৎকর্মসমূহ সম্পাদন, মন্দের করে অপনোদন’।[43] তিনি বলেন,أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ- ‘আল্লাহর নিকটে অধিক পসন্দনীয় আমল হচ্ছে, যা নিয়মিতভাবে করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়’।[44] তিনি আরও বলেন, بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا، ‘ফিৎনাসমূহ উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল সম্পাদন কর’।[45]

৫. অধিকহারে দো‘আ করা : রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُّدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ- ‘তোমাদের কেউ যখন তাশাহহুদের শেষ বৈঠকের দো‘আসমূহ সমাপ্ত করে, সে যেন আল্লাহর নিকট ৪টি বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। জাহান্নামের আযাব হ’তে, কবরের আযাব হ’তে, জীবন ও মৃত্যুকালীন ফিৎনা হ’তে এবং দাজ্জালের ফিৎনা হ’তে’।[46]

আল্লাহর শিখানো দো‘আটি অধিকহারে পাঠ করা। যেখানে তিনি বলেন,رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের পর আমাদের হৃদয়সমূহকে বক্র করে দিয়ো না। আর তুমি আমাদেরকে তোমার পক্ষ হ’তে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদান কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বাধিক দানকারী’ (আলে ইমরান ৩/৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ، اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ- ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তরসমূহের রূপান্তরকারী! তোমার আনুগত্যের দিকে আমাদের অন্তরসমূহকে ঘুরিয়ে দাও’।[47]

৬. সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া : আল্লাহ বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلاَ تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا، ‘তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁর চেহারা কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়’ (কাহফ ১৮/২৮)। আল্লাহ আরো বলেন,رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দাও এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান কর’ (আ‘রাফ ৭/১২৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর ও আমাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ মার্জনা কর এবং আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের মধ্যে শামিল করে মৃত্যুদান কর’ (আলে ইমরান ৩/১৯৩)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا، ‘তোমরা সত্যবাদিতাকে আবশ্যক করে নাও। কেননা সত্যবাদিতা সৎকর্মের দিকে পথ প্রদর্শন করে, আর সৎকর্ম জান্নাতের পথনির্দেশ করে। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলা এবং সত্য সন্ধান করতে থাকলে অবশেষে আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তি মহা সত্যবাদী হিসাবে পরিগণিত হয়’।[48]

৭. মৃত্যুকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং দুনিয়াবী উচ্চাকাঙ্খা পরিহার করা : আল্লাহ বলেন,حَتَّى إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ- لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ، كَلَّآ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَا، وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- ‘অবশেষে যখন তাদের কারু কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে, হে আমার পালনকর্তা! দুনিয়াতে আমাকে পুনরায় ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকর্ম সম্পাদন করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়। এটা তো তার একটি উপকথা মাত্র যা সে বলে। বরং তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০০)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَمَنْ أَرَادَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ، ‘যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করতে চায়, সে তা করতে পারে। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়’।[49] তিনি আরো বলেন, أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ الْمَوْتِ- ‘তোমরা স্বাদ ধবংসকারী মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ কর’।[50]

তিনি আরও বলেন, مَوْتُ الْفُجَاءَة أَخْذَةُ الْأَسَفِ- ‘আকস্মিক মৃত্যু পরিতাপের কারণ’।[51] কেননা এতে কাফির আকস্মিকভাবে ধরাশায়ী হয় এবং মুমিন পাপ থেকে মুক্ত হয়ে চিরশান্তির অনাবিল জান্নাতের প্রতি ধাবিত হয়।[52] আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় আনছারদের জনৈক ব্যক্তি এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন মুমিন সবচেয়ে বিচক্ষণ? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ- ‘মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণকারী এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য সুন্দরতম প্রস্ত্ততি গ্রহণকারী। মূলতঃ তারাই হ’ল সর্বাধিক বিচক্ষণ ব্যক্তি’।[53]

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার দেহের একাংশে তাঁর হাত রেখে বললেন,كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَعُدَّ نَفْسَكَ فِى أَهْلِ الْقُبُورِ- ‘আগন্তুক অথবা পথযাত্রীর ন্যায় তুমি দুনিয়াতে বসবাস কর এবং নিজকে সর্বদা কবরবাসীদের মধ্যে গণ্য কর’।[54]

৮. অধিকহারে তওবা করা : আল্লাহ বলেন,وَتُوبُوآ إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেন তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ২৪/৩১)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوآ إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا، ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকটে তওবা কর একনিষ্ঠ তওবা’ (তাহরীম ৬৬/৮)। তিনি বলেন,وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ- ‘আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে’ (আনফাল ৮/৩৩)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, إِنَّ اللهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ- ‘আল্লাহ কবুল করেন বান্দার তওবা, যতক্ষণ না তার মৃত্যুকালীন গর্গরা শব্দ শুরু হয়’।[55]

উপসংহার : সম্মানিত দ্বীনী ভাই, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক থাকলে তা পরিহার করতঃ তওবায়ে নাছূহা সম্পন্ন করুন! মনে মনে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে স্বীয় জিহবাকে আপ্লুত রাখুন! যেখানেই আপনি থাকুন না কেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করুন! আর মৃত্যু যেহেতু অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী, সেহেতু শহীদী মৃত্যুর প্রত্যাশা বুকে লালন করুন। দুনিয়া থেকেই যেন পাপ-পঙ্কিলতা হ’তে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করা যায়, নিরন্তর সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। মহান আল্লাহ আমাদের মৃত্যুকালে কালেমা শাহাদাতের সাথে উত্তম পন্থায় মৃত্যুবরণকারীগণের কাতারে শামিল করুন, আমীন!

-ইহসান ইলাহী যহীর

পিএইচ.ডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[1].তিরমিযী হা/২১৪২; মিশকাত হা/৫২৮৮; ছহীহাহ হা/১৩৩৪।

[2].আহমাদ হা/১৭৮১৯;ছহীহ ইবনু হিববানহা/৩৪৩-৩৪৪;ছহীহাহ হা/১১১৪।

[3].বুখারী হা/৬৬০৭; মিশকাত হা/৮৩।

[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬২; মিশকাত হা/১৬২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৬৮।

[5].তাফসীরসা‘দী,সূরা হা-মীমসাজদাহ ৪১/৩০আয়াতের ব্যাখ্যা,৭৪৮ পৃ.।

[6].বুখারী হা/৬৫০৭; মুসলিম হা/২৬৮৪; মিশকাত হা/১৬০১।

[7].বুখারী হা/৫৬৪৫; মিশকাত হা/১৫৩৬।

[8].বুখারী হা/৪৪৪৯; মিশকাত হা/৫৯৫৯।

[9].তিরমিযী হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০২।

[10].বুখারী হা/৫৬৪৮; মুসলিম হা/২৫৭১; মিশকাত হা/১৫৩৮।

[11].বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭৬; মিশকাত হা/১৫৭৭।

[12].তিরমিযী হা/৯৮২; নাসাঈ হা/১৮২৯, ১৮২৮; আহমাদ হা/২৩০৭২; মিশকাত হা/৫২৮৮।

[13].ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০৪১৭; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৬৭৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৪৯।

[14].তিরমিযী হা/১০৭৪; মিশকাত হা/১৩৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫৭৩।

[15].মুসলিম হা/১৯১৫; মিশকাত হা/৩৮১১।

[16].বুখারী হা/২৮২৯;মুসলিম হা/১৯১৪;তিরমিযী হা/১০৬৩।

[17].মুসলিম হা/১৯০৯;মিশকাত হা/৩৮০৮।

[18]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), (রাজশাহী : হাফাবা, ৩য় মুদ্রণ : ২০১৬ খৃ.), ২৯৯ পৃ.।

[19]. বুখারী হা/৪২৬১

[20].বুখারী হা/২৮৩০, ৫৭৩২; মুসলিম হা/১৯১৬; মিশকাত হা/১৫৪৫।

[21].বুখারী হা/৩৪৭৪; মিশকাত হা/১৫৪৭।

[22].আবুদাঊদ হা/৩১১১; মিশকাত হা/১৫৬১; ছহীহুত তারগীব হা/১৩৯৮।

[23].আহমাদ হা/২২৮০৮, ১৭৮৩০, ২২৭৬৩, সনদ ছহীহ; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৩৯ পৃ.।

[24].আহমাদ হা/১৬০৪১; ছহীহুত তারগীব হা/১৩৯৬।

[25].তিরমিযী হা/১৪২১; নাসাঈ হা/৪০৯৫; আহমাদ হা/১৬৫২; ছহীহুত তারগীব হা/১৪১১।

[26].মুসলিম হা/১৯১৩; ছহীহুত তারগীব হা/১২১৭।

[27].আহমাদ হা/২৩৩৭২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩৯১৯, ১১৯৩৫; আহকামুল জানায়েয ১/৪৩ পৃ.; ছহীহুত তারগীব হা/৯৮৫।

[28].হাকেম হা/৭৮৭২; আহমাদ হা/১৪৪১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৪৩।

[29].বুখারী হা/৪৪৬২; মিশকাত হা/৫৯৬১।

[30]. শারহুয যুরক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিইয়া ১/৪৯৯; ক্বাযী ইয়ায, আশ-শিফা ২/৫৮ পৃ.।

[31]. আবু নু‘আইম ইস্ফাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/২৩৯; ইবনু আব্দিল বার্র, জামিউল বায়ানিল ইলম ওয়া ফাযলিহ ১/২২৬।

[32]. জামালুদ্দীন ইবনুল জাওযী, আছ-ছাবাতু ‘ইনদাল মামাত, ১৫০ পৃ.।

[33]. বুখারী হা/১৮৫১; মুসলিম হা/১২০৬; মিশকাত হা/১৬৩৭।

[34].আবুদাঊদ হা/৩১১৬; মিশকাত হা/১৬২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৫০।

[35].মুসলিম হা/৯১৬-৯১৭; মিশকাত হা/১৬১৬।

[36]. শামসুদ্দীন যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের, ৯১ পৃ.।

[37]. তদেব।

[38]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬২; মিশকাত হা/১৬২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৬৮।

[39].বাক্বারাহ ২/২৮৫; ত্বোয়াহা ২০/৪৬।

[40].মুসলিম হা/২৮৭৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৩৬।

[41].বুখারী হা/৭৪০৫; মুসলিম হা/২৬৭৫; মিশকাত হা/২২৬৪-২২৬৫।

[42]. তিরমিযী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৬; মিশকাত হা/৪৮৩২; ছহীহাহ হা/৯৭৭।

[43].ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬০৮৬; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮০১৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৪৬৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৯৫।

[44].মুসলিম হা/৭৮৩; বুখারী হা/৬৪৬৫; মিশকাত হা/১২৪২।

[45].মুসলিম হা/১১৮; মিশকাত হা/৫৩৮৩।

[46].মুসলিম হা/৫৮৮; মিশকাত হা/৯৪০।

[47]. তিরমিযী হা/২১৪০ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১০২; মুসলিম হা/২৬৫৪; মিশকাত হা/৮৯।

[48]. বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম হা/২৬০৭; মিশকাত হা/৪৮২৪।

[49].নাসাঈ হা/৫৬৫১, ৪৪৩০; তিরমিযী হা/১০৫৪; ইরওয়া হা/৭৭২।

[50].মুসলিম হা/৫৮৮; মিশকাত হা/৯৪০।

[51].আহমাদ হা/১৭৯২৪-২৫; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১২০০৫; মিশকাত হা/১৬১১; ছহীহাহ হা/২২৯২-এর আলোচনা।

[52].মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১২০০৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৬৭৮১।

[53]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহাহ হা/১৩৮৪।

[54]. বুখারী হা/৬৪১৬; তিরমিযী হা/২৩৩৩; মিশকাত হা/৫২৭৪।

[55]. তিরমিযী হা/৩৫৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৩; মিশকাত হা/২৩৪৩।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
বিদ‘আত ও তার ভয়াবহতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
চুল ও দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহারের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
চিন্তার ইবাদত (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরিখে যেলাসমূহের মাঝে সময়ের পার্থক্যের কারণ - তাহসীন আল-মাহী
আকাশের দরজাগুলো কখন ও কেন খোলা হয়? (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
গীবত : পরিণাম ও প্রতিকার (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
রাস্তার আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার গুরুত্ব - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ঈদে মীলাদুন্নবী - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.