উত্তর : ইবনু আববাস (রাঃ) তাফসীর বা অন্য কোন গ্রন্থ রচনা করে যাননি। ‘তাফসীর ইবনু আববাস’ নামে যে তাফসীর গ্রন্থ প্রচলিত রয়েছে তা পরবর্তীতে রচিত। তাই তাঁর প্রতি এই তাফসীর গ্রন্থটি সম্বন্ধিত করা যাবে না।
ইবনু আববাসের তাফসীর হিসাবে একটি তাফসীর রচনা করেছেন মূসা বিন আব্দুর রহমান। তার ব্যাপারে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সে মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত। ইবনু আদী বলেন, সে মুনকিরুল হাদীছ। ইবনু হিববান বলেন, সে দাজ্জাল ও হাদীছ জালকারী। সে ইবনু আববাস থেকে আতা হয়ে ইবনু জুরাইজের সূত্রে মুক্বাতিল ও কালবীর বক্তব্য জমা করে ইবনু আববাসের নামে একটি তাফসীর রচনা করে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/২৫৯)।
‘তানবীরুল মিক্বয়াস মিন তাফসীরে ইবনে আববাস’ নামে আরেকটি তাফসীর রয়েছে। যে ব্যাপারে মুহাম্মাদ হোসাইন যাহাবী (১৯১৫-১৯৭৭ ইং) বলেন, বৃহদায়তন এই তাফসীরটি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যা ‘তানবীরুল মিকয়াস মিন তাফসীরে ইবনে আববাস’ নামে মিসর থেকে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে। যা আবু তাহের মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব ফিরোযাবাদী শাফেঈ জমা করেছেন...। তিনি বলেন, কিন্তু এটা ইবনু আববাসের দিকে সম্পর্কিত করা ঠিক নয়। বরং ফিরোযাবাদী এটি জমা করেছেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ইবনু আববাসের দিকে বাজে বর্ণনা সমূহ সম্পর্কিত করেছেন। সূত্রটি হ’ল- ইবনু আববাস থেকে আবু ছালেহ, তার থেকে কালবী, তার থেকে মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান সুদ্দী (আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরূন ২/২৬)।
এর মধ্যে মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান ‘মিথ্যাবাদী’ হিসাবে অভিযুক্ত, কালবী প্রসিদ্ধ হাদীছ জালকারী, আর আবু ছালেহ ইবনু আববাসের সাক্ষাৎ লাভ করেননি (যাহাবী, মীযানুল ই‘তেদাল ৪/৩২; ৩/৫৫৭-৫৫৯)।
আল্লামা সুয়ূতীও এব্যাপারে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন (আল-ইৎক্বান ফি ঊলূমিল কুরআন ২/৪৯৭-৪৯৮)। তবে বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থ থেকে কেবলমাত্র বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ইবনু আববাসের তাফসীরসমূহ জমা করে বেশ কিছু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। যেমন- আব্দুল আযীয হুমাইদীর ‘তাফসীর ইবনু আববাস ওয়া মারবিয়াতুহূ ফিত তাফসীর মিন কুতুবিস সুন্নাহ’ এবং আদম মুহাম্মাদ আলীর ‘ইবনু আববাস ওয়া মানহাজুহূ ফিত তাফসীর’। জানা আবশ্যক যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর তাফসীরই যথেষ্ট নয়। বরং অন্যান্য ছাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে এবং পরবর্তী বিদ্বানগণ থেকে তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। কেননা আল্লাহ সব জ্ঞান একজনের নিকট সীমাবদ্ধ রাখেননি।