উত্তর : ১১ বা ১৩ রাক‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসে বিতর সহ ১১ রাক‘আতের বেশী রাতের ছালাত (তারাবীহ) আদায় করেননি (বুখারী ১/১৫৪ পৃঃ; মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ; আবুদাঊদ ১/১৮৯পৃঃ; নাসাঈ ১/১৯১ পঃ:; তিরমিযী ১-৯৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ ১/৯৬-৯৭ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক ১/৭৪ পৃঃ)। ওমর (রাঃ) উবাই বিন কা’ব ও তামীম দারী (রাঃ)-কে রামাযান মাসে লোকদের নিয়ে ১১ রাকা‘আত (তারাবীহর) ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুওয়াত্ত্বা ১/৭১ পৃঃ; মিশকাত হা/১৩০২, হাদীছ ছহীহ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/১২২৮ রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ অনুচ্ছেদ)।
বঙ্গানুবাদ মিশকাতে মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী মুওয়াত্ত্বা মালেক বর্ণিত উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় দু’কুল বাঁচিয়ে লিখেছেন, ‘সম্ভবতঃ হযরত ওমর (রাঃ) প্রথমে বিতর সহ এগার রাকাত পড়ারই ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। পরে তাঁহার আমলেই তারাবীহ বিশ রাকাত স্থির হয়, অথবা স্থায়ীভাবে ২০ রাকাতই স্থির হয়, কিন্তু কখনও আট রাকাত পড়া হইত’ (ঐ, ৩/১৯৯)। উক্ত দাবী যে ভিত্তিহীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক স্বীয় বঙ্গানুবাদ বুখারীতে ১১ রাক‘আতের ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করেছেন (ঐ, তারাবীর নামাজ অধ্যায় ২/১৯৬) এবং তাঁর হিসাব মতে ২০ রাক‘আতের সাত খানা যঈফ হাদীছ দিয়ে বুখারীর ছহীহ হাদীছকে রদ করার চেষ্টায় গলদঘর্ম হয়ে অবশেষে বলেন, ‘দুর্বল রাবী সম্বলিত কতিপয় হাদীছ একত্রিত ও একই মর্মে বর্ণিত হইলে তাহা গ্রহনীয় হইবে’ (ঐ)।
মাওলানা মওদূদী একইভাবে কতগুলো জাল-যঈফ হাদীছ ও আছার একত্রিত করে যুক্তিবাদের সাহায্যে ছহীহ হাদীছ সমূহকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন (দ্র: বঙ্গানুবাদ রাসায়েল ও মাসায়েল পৃঃ৩/২৮২-২৮৬: বঙ্গানুবাদ বুখারী (আধুনিক প্রকাশনী) ২/২৭৯-৮২ হা/১৮৭০-এর টীকা-২৮)। অথচ এটাই সর্বসম্মত মূলনীতি যে, ‘যখনই হাদীছ উপস্থিত হবে, তখনই যুক্তি বাতিল হবে’। এখানে ছহীহ হাদীছের বিধান সেটাই, যা উপরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের উপরে অপরিহার্য হ’ল, আমার সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত এবং তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা। তোমরা দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। কেননা সকল বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫ ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুওয়াত্ত্বায় বর্ণিত ইয়াযীদ বিন রূমান কর্তৃক যে বর্ণনাটি এসেছে যে, ‘লোকেরা ওমরের যামানায় ২৩ রাক‘আত তারাবীহ পড়ত’ একথাটি যঈফ। কেননা ইয়াযীদ বিন রূমান ওমর (রাঃ)-এর যামানা পাননি (দ্র: আলবানী, মিশকাত হা/১৩০২ টীকা-২)। অতএব ইজমায়ে ছাহাবা কর্তৃক ওমর, ওছমান ও আলীর যামানা থেকে ২০ রাক‘আত তারাবীহ সাব্যস্ত বলে যে কথা বাজারে চালু রয়েছে, তার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। একথাটি পরবর্তীকালে সৃষ্ট। হাদীছের বর্ণনাকারী ইমাম মালেক নিজে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়তেন, যা রাসূল (ছাঃ) হ’তে প্রমাণিত (হাশিয়া মুওয়াত্ত্বা পৃঃ৭১; দ্র: তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী হা/৮০৩-এর ব্যাখ্যা ৩/৫২৬-৩২)।
বিশ রাক‘আত তারাবীহ-এর প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটি জাল (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৪৪৫, ২/১৯১ পৃঃ)। ভারত বিখ্যাত হানাফী মনীষী আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ:) বলেন, বিশ রাক‘আত সম্পর্কে যত হাদীছ এসেছে, তার সবগুলিই যঈফ (আরফুশ শাযী, তারাবীহ অধ্যায়, পৃঃ ৩০৯)। হেদায়া-র ভাষ্যকার ইবনুল হুমাম হানাফী বলেন, ২০ রাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২০৫ পৃঃ)। আল্লামা যায়লাঈ হানাফী বলেন, বিশ রাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২০৫পৃ:)। আল্লামা যায়লাঈ হানাফী বলেন, বিশ রাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছের বিরোধী (নাছবুর রা’য়াহ ২/১৫৩ পৃ:)। আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বিশ রাক‘আত তারাবীহ প্রমাণিত নয়, যা বাজারে প্রচলিত আছে। এছাড়া ইবনু আবী শায়বাহ বর্ণিত বিশ রাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী (ফাৎহু সির্রিল মান্নান লিতা’য়ীদি মাযহাবিন নু‘মান, পৃঃ ৩২৭)। দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ক্বাসিম নানুতুবী বলেন, বিতরসহ ১১ রাক‘আত তারাবীহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত, যা বিশ রাক‘আতের চাইতে যোরদার (ফুয়ূযে ক্বাসিমিয়াহ, পৃঃ১৮)। হানাফী ফিক্বহ কানযুদ দাক্বায়েক্ব-এর টীকাকার আহসান নানুতুবী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়েননি; বরং আট রাক‘আত পড়েছেন (হাশিয়া কানযুদ দাক্বায়েক্ব, পৃঃ৩৬: এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী প্রণীত ছালাতুত তারাবীহ নামক তথ্যবহুল গ্রন্থ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ, পৃঃ ১৭৩-৭৮)।