উত্তর :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ
এই উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর মাথায় একজন যুগসংস্কারক (মুজাদ্দিদ)
পাঠাবেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার সাধন করবেন’ (আবুদাঊদ হা/৪২৯১, মিশকাত হা/২৪৭; ছহীহাহ হা/৫৯১)।
অত্র হাদীছে বর্ণিত مَنْ শব্দটির ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, এর অর্থ
‘একজন’ বা ‘একদল’ দু’টিই হ’তে পারে। যিনি বা যাঁরা উম্মতের সংস্কার সাধন
করবেন। এখানে يجدد لها دينها অর্থ إحياء ما اندرس من العمل من الكةاب
والسنة الصحيحة ‘কিতাব ও ছহীহ সুন্নাহর যেসব আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, তা
পুনর্জীবিত করা’। অথবা دينها অর্থ أهل دينها ‘দ্বীনের অনুসারীগণ’। কেননা
দ্বীন আল্লাহ প্রেরিত এবং আল্লাহই এর হেফাযতকারী (হিজর ৯)। এতে কোন সংস্কার
প্রয়োজন নেই। সংস্কার প্রয়োজন দ্বীনের অনুসারীদের। যারা দ্বীনের অনুসরণে
গাফেল এবং বিশুদ্ধ আক্বীদা হ’তে বিচ্যুত হয়। হাদীছে বর্ণিত ‘সংস্কার’ অর্থ
মূলতঃ আক্বীদার সংস্কার। যার মাধ্যমে আমলের সংস্কার হয়ে থাকে। আর দ্বীন-এর
ব্যাখ্যা হ’ল, শিরকবিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস এবং ছহীহ হাদীছ
ভিত্তিক নেক আমল। উম্মত যখন এ দু’টির মূল ধারা থেকে সরে যায়, তখনই আল্লাহর
রহমতে যুগে যুগে প্রেরিত হন যুগ-সংস্কারক কোন আপোষহীন ব্যক্তি ও তাঁর
সহযোগী একটি দল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেখানেই উম্মতের মধ্যে এরূপ
ভ্রান্তি দেখা দিবে, সেখানেই এরূপ মুজাদ্দিদ আসতে পারেন। এখন নবী আসবেন না,
তাই আল্লাহর পক্ষ হ’তে উম্মতের জন্য এটি একটি বিশেষ রহমত স্বরূপ। হাদীছে
‘প্রতি শতাব্দীর মাথায়’ বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার বলেন,
এটি আবশ্যিক নয়, বরং যেকোন সময়ে এটি হ’তে পারে। তবে উমাইয়া খলীফা ওমর বিন
আব্দুল আযীয (খেলাফতকাল : ৯৯-১০১ হিঃ) সম্পর্কে
বিদ্বানগণ সকলে একমত যে, তিনিই ছিলেন প্রথম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ। বাকী ইমাম
শাফেঈ, ইমাম ইবনে হযম, ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ প্রমুখ বিদ্বানগণ স্ব স্ব যুগের
মুজাদ্দিদ বলে খ্যাত। তবে এটির কোন সময় ও সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। আল্লাহ
তাঁর রহমতের জন্য কখন কাকে খাছ করে নিবেন, এটা সম্পূর্ণ তাঁরই এখতিয়ারে।