উত্তর : ভুয়া নাম ও ঠিকানা সম্বলিত সুদৃশ্য মলাটে মোড়ানো ২২৪ পৃষ্ঠার উক্ত বইটি সম্প্রতি আমাদের কাছে এসেছে। পুরো বইটিতে যে প্রচন্ড হিংসা ও বিদ্বেষের বিষ ছড়ানো হয়েছে, তাতে পরিচয়হীন এই লেখকের অসৎ উদ্দেশ্য পরিষ্কার। যদিও তার লেখনীর মধ্যেই তার দাবীর বিরুদ্ধে জওয়াব বিদ্যমান। যেমন তিনি সূরা তওবা ৫ আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন যে, ভূপৃষ্ঠের যেখানে মুশরিকদের পাও, তাদেরকে বধ কর, পাকড়াও কর’ হারাম শরীফ ব্যতীত’ (পৃঃ ৯২)। অতঃপর তিনি হাদীছ পেশ করে বলেছেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি গোটা মানব সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য, যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই...’। তিনি যেহেতু শেষনবী, অতএব এই নির্দেশ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে’। এরপর তিনি উপসংহার টেনে বলেছেন, আমরা উপরের কয়েকটি আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রথমে মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর মদীনায় হিজরতের পর জিহাদ ও ক্বিতাল ফরয করে দেন। এই ফরয আদায়ের জন্য তিনি ও সাহাবাগণ আমরণ জিহাদে লিপ্ত ছিলেন। এই জিহাদের মাধ্যমেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় (পৃঃ ৯৪)। অর্থাৎ লেখকের দাবী মতে, এখন দেশের যেখানেই অমুসলিম পাবে, সেখানেই তাকে হত্যা করবে এবং এখুনি সেটা করতে হবে। আমরা যেহেতু সেটা করছি না, সেহেতু আমরা ‘শয়তান’ এবং ‘ইহুদীদের এজেন্ট’। বস্ত্ততঃ সংস্কারমুখী আন্দোলনের কারণে ১৯৮০ সাল থেকেই আমাদের নেতৃবৃন্দ ঘরে-বাইরে এরূপ গালি খেয়ে আসছেন। যেহেতু আমরা এগুলি নই, তাই হাদীছ অনুযায়ী এগুলি অপবাদ দানকারীদের উপরেই বর্তাবে (মুসলিম হা/৬০)। শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী (রহঃ)-এর ভাষায় ‘এসবই আহলেহাদীছ-এর বিরুদ্ধে বিদ‘আতীদের ক্রোধাগ্নি ও হঠকারিতার বহিঃপ্রকাশ ব্যতীত কিছুই নয়’ (কিতাবুল গুনিয়াহ ১/৯০)

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছে ‘উক্বাতিলা’ (পরস্পরে যুদ্ধ করা) বলা হয়েছে, ‘আক্বতুলা’ (হত্যা করা) বলা হয়নি। ‘যুদ্ধ’ দু’পক্ষে হয়। কিন্তু ‘হত্যা’ এক পক্ষ থেকে হয়। যেটা বোমাবাজির মাধ্যমে ক্বিতালপন্থীরা করতে চাচ্ছে। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে যে, কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করতে এলে তোমরাও যুদ্ধ করবে। কিংবা তাদের মধ্যকার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে। কিন্তু নিরস্ত্র, নিরপরাধ বা দুর্বলদের বিরুদ্ধে নয়। কাফির পেলেই তাকে হত্যা করবে সেটাও নয়। তাছাড়া উক্ত হাদীছে ‘যারা কালেমার স্বীকৃতি দেবে, তাদের জান-মাল নিরাপদ থাকবে ইসলামের হক ব্যতীত এবং তাদের বিচারের ভার আল্লাহর উপর রইল’ বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, আমাদের দায়িত্ব মানুষের বাহ্যিক আমল দেখা। কারু অন্তর ফেড়ে দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। অতএব সরকার যদি বাহ্যিকভাবে মুসলিম হয় এবং ইসলামী দাওয়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়, তাহ’লে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের সুযোগ কোথায়?

আমরা বলি, লেখক যদি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের দাবীতে সত্য হন, তাহ’লে তিনি নিজে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে জিহাদ ও ক্বিতালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন না কেন? তার বীরত্ব দেখে অন্যেরাও ঝাঁপিয়ে পড়ত। সরকারও গদি ছেড়ে পালাতো। তিনিও সহজে ক্ষমতা দখল করে দ্বীন কায়েম করতে পারতেন! কেবল বইয়ের পাতা ও ইন্টারনেট গরম করে কি জিহাদ হয়? মূলতঃ জিহাদের নামে এই সকল অতি উৎসাহী মুফতীরা যে অর্থহীন হম্বি-তম্বি করে থাকেন, তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এই শ্রেণীর বায়বীয় আবেগপ্রবণ ব্যক্তিদের কাজে লাগিয়ে মুসলিম দেশগুলিতে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করছে আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী চক্র ও তাদের দোসররা। উল্লেখ্য যে, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের পূর্বে আমাদের প্রকাশিত ‘দাওয়াত ও জিহাদ’ বইয়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে ভুয়া নাম-ঠিকানাধারী জনৈক লেখক সশস্ত্র জিহাদ ও ক্বিতালের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে বই লিখে আমাদের মারকাযে পাঠিয়েছিলেন। বর্তমান তৎপরতা তারই ধারাবাহিকতা হওয়াটা বিচিত্র নয়।

জেনে রাখা উচিৎ যে, মানুষ হত্যা করা ইসলামের মিশন নয়। কোন নবী মানবহত্যার দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হননি। আল্লাহ প্রেরিত ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানবজাতিকে দুনিয়াবী কল্যাণের পথ দেখানো ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রদর্শনই ছিল তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তারা অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন মূলতঃ আত্মরক্ষার জন্য এবং অন্যায়কে প্রতিরোধের জন্য। মুশরিকদের হত্যা করাই যদি আল্লাহর নির্দেশ হ’ত, তাহ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কেন মদীনায় গিয়ে ইহুদীদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি করলেন? কেন ইহুদী বালককে তাঁর বাড়ীতে গোলাম হিসাবে রাখলেন? এমনকি মৃত্যুকালেও খাদ্যের বিনিময়ে জনৈক ইহুদীর কাছে তাঁর বর্মটি বন্ধক ছিল। বস্ত্ততঃ ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী ব্যতীত অন্য কারু প্রতি অস্ত্র ধারণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শই বাস্তব প্রমাণ হিসাবে যথেষ্ট। অতএব জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ না করেই যারা চটকদার কথা বলে জিহাদের নামে জঙ্গীবাদকে উসকে দিচ্ছে, তারা ইসলামের বন্ধু তো নয়ই, বরং ইসলামের শত্রু এবং খারেজী চরমপন্থীদের দলভুক্ত। যাদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বহুপূর্বেই মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে গিয়েছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৯৪; মিশকাত (বঙ্গানুবাদ) হা/৫৬৪২)

২য় প্রশ্নের জবাব এই যে, রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ মোতাবেকই আমরা কোন মুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ সমর্থন করি না (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৭১; মিশকাত (বঙ্গানুবাদ) ৭/২৩৩ পৃঃ, বিস্তারিত দ্রঃ ‘ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি’ বই)। ৩য় প্রশ্নের জবাব এই যে, নবীদের হেদায়াত অনুযায়ী মানুষের আক্বীদা ও আমল সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনই আহলেহাদীছ আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য। সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র ইসলামী আইন ও বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য এ আন্দোলন সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছা হ’লে এর মাধ্যমেই একদিন ‘খেলাফাত আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’ প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। বড় কথা হ’ল অমুসলিম বা কপট মুসলিম সবাইকে যদি হত্যাই করে ফেলা হয়, তাহ’লে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে কোথায়? আমাদের রাসূল (ছাঃ) এসেছিলেন জগদ্বাসীর জন্য রহমত হিসাবে (আম্বিয়া ১০৭)। তিনি মানুষ হত্যার মাধ্যমে দ্বীন কায়েম করেননি; বরং কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে মানুষের আক্বীদা ও আমল সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করেছেন (জুম‘আ ২)। আর তাদের হাতে গড়া সেই সোনার মানুষগুলোর মাধ্যমেই ইসলামের চূড়ান্ত সামাজিক বিপ্লব সাধিত হয়েছিল। আমরাও সে লক্ষ্যে সাধ্যমত আন্দোলন পরিচালনা করে যাচ্ছি।

জানা আবশ্যক যে, কেবল ‘রাফঊল ইয়াদায়েন’ করলেই তাকে ‘আহলেহাদীছ’ বলা হয় না। বরং ছহীহ আক্বীদা ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমলের মাধ্যমেই প্রকৃত ‘আহলেহাদীছ’ হওয়া যায়। অতএব আহলেহাদীছ তরুণরা সাবধান!






প্রশ্ন (৯/২৪৯) : হজ্জের সফরে আরাফার দিনে গোসল করা কি সুন্নাত? - -মুশতাক আহমাদ, মোহনপুর, রাজশাহী।
প্রশ্ন (২৮/৬৮) : প্রশ্নোত্তর পর্বে ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন, এক মুষ্টি দাড়ির অতিরিক্ত অংশ ছেটে ফেলা যায় (বুখারী)। এর সমাধান জানতে চাই?
প্রশ্ন (২১/৩৮১) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, গাছ-গাছড়া তাবীয হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে কুরআনের আয়াত তাবীয হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এর কোন সত্যতা আছে কি?
প্রশ্ন (১/২৮১) : চার বা তিন রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৯/৯) : কায়িক শ্রমরত ঘর্মাক্ত শ্রমিক ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে সময়স্বল্পতার কারণে কেবল ওযূ করে ছালাতে যোগদান করতে পারবে কি, না গোসল করতে হবে? - -ইদ্রীস মিয়া, মোহনপুর, রাজশাহী।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : আমার কাপড়ের দোকানে মেয়েদের টপস, জিপসি, প্যান্ট, টাইটস ইত্যাদি আধুনিক পোষাক বিক্রয় করে থাকি। এটা শরী‘আতসম্মত হবে কি?
প্রশ্ন (২৬/৩০৬) : উচ্চশিক্ষার জন্য নারীরা বিদেশে মাহরাম ব্যতীত একাকী গমন করতে এবং অবস্থান করতে পারবে কি?
প্রশ্ন (৭/২৪৭) : গৃহপালিত পশু মারা গেলে কবর দিয়ে আসতে হবে না কোন নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে আসতে হবে? - -ইমতিয়াযুদ্দীনসাগরদিঘী, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
প্রশ্ন (১৯/৪১৯) : যাকাতের মাল দ্বারা মাদরাসার ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থা করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৮/২৮৮) : কোন প্রয়োজন পূরণার্থে জালালী খতম আমাদের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ইমামগণকে এজন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থও প্রদান করা হয়। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?
প্রশ্ন (৩৪/২৩৪) : জনৈক আলেম বলেন, ‘আল-হামদুলিল্লাহিল্লাযী আত্ব‘আমানা...’ মর্মে খাওয়ার পরের দো‘আটি যঈফ। তাহলে ছহীহ দো‘আ কী?
প্রশ্ন (১/৮১) : ২০১৫ সালে জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার বোনের বিবাহ হয়। ঝগড়া-বিবাদ করে একাধিকবার সে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। সর্বশেষ চলে আসার বিশদিন পর সামাজিক ভাবে ও কাযীর উপস্থিতিতে তালাকের কার্যক্রম আরম্ভ করা হয় এবং উভয়পক্ষ সালিসের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক্ষণে উক্ত তালাক কি কার্যকর হয়েছে? এখন আমার বোন অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে কি?
আরও
আরও
.