উত্তর :
উচ্চৈঃস্বরে দলবদ্ধভাবে যিকর করা বিদ‘আত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রতিপালককে
স্মরণ কর আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং স্বর উঁচু না করে
(আ‘রাফ ২০৫)। রাসূল (ছাঃ)ও সশব্দে যিকর করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/২৭০৪, মিশকাত হা/২৩০৩)।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) একদল মুছল্লীকে মদীনার মসজিদে নববীতে
গোলাকার হয়ে তাসবীহ-তাহলীল করতে দেখে বলেন, ‘হে মুহাম্মাদের উম্মতগণ! কত
দ্রুত তোমাদের ধ্বংস এসে গেল’? (দারেমী হা/২১০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০০৫)।
দো‘আ করার জন্য একদল মুসলমানের নিয়মিতভাবে একত্রিত হওয়ার খবর পেয়ে ওমর (রাঃ) তাদের নেতাকে ডাকিয়ে এনে চাবুক মারেন’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/২৬৭১৫)। তবে যিকরের মজলিসের ফযীলত সংক্রান্ত কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে; যা ছিল তা‘লীম বা শিক্ষার মজলিস। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা জান্নাতের বাগিচা অতিক্রম করবে, তখন তার কিছু ফল তোমরা ভক্ষণ করবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের বাগিচা কি? তিনি বললেন, যিকরের মজলিস’ (তিরমিযী হা/৩৫১০, মিশকাত হা/২২৭১, সনদ হাসান)। তিনি বলেন, যখন কোন কওম আল্লাহর যিকর করতে বসে তখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাগণের নিকট তাদের সম্পর্কে প্রশংসামূলক আলোচনা করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২২৬১)। এই যিকরের অর্থ কুরআন-হাদীছের পর্যালোচনা। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন কওম কোন গৃহে বসে, অতঃপর কুরআন তেলাওয়াত করে এবং তা পর্যালোচনা করে (يَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ), সেখানে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রশান্তি নাযিল হয় ও ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে... (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)। যেমন তা‘লীমী বৈঠক, ওয়ায মহফিল, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অন্য যেকোন দ্বীন শিক্ষার মজলিস ইত্যাদি।
আত্বা বিন আব রিবাহ (রহঃ) বলেন, যিকরের মজলিস অর্থ হালাল-হারাম জানার জন্য শিক্ষার মজলিস (তারীখু দিমাশক ৪০/৪৩২, ইবনু তায়মিয়াহ, জামে‘ঊল মাসায়েল ৩/৩৮৫)। ইমাম শাত্বেবী (রহঃ) বলেন, কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আ-দরূদের বাইরে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে নির্দিষ্ট তরীকায় বানোয়াট যিকর দলবদ্ধভাবে সমস্বরে করা নিকৃষ্ট বিদ‘আতসমূহের অন্তর্ভুক্ত (শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম ১/৫৩)।
স্মর্তব্য যে, প্রচলিত ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’, ‘হু হু’ বা ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দে কোন যিকর নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি রয়েছে তার অর্থ হ’ল ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (মুসলিম হা/১৪৮, আহমাদ হা/১৩১৬০; মিশকাত হা/৫৫১৬)। শায়খ আলবানী বলেন, ‘শুধু আল্লাহ শব্দে যিকর করা বিদ‘আত। সুন্নাতে যার কোন ভিত্তি নেই’ (মিশকাত ১৫২৭ পৃঃ ১ নং টীকা)। সর্বোত্তম যিকর হচ্ছে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩০৬)। যা নিরিবিলি ও নিম্নস্বরে হবে।