উত্তর :
মালাকুল মউত মূসা (আঃ)-এর নিকট আগমন করলে তিনি তাকে থাপ্পড় মেরে চোখ নষ্ট
করে দেন মর্মে ঘটনাটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। হাদীছটি নিম্নরূপ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, মালাকুল মউত মূসা (আঃ)-এর নিকট আসেন তাঁর জান কবয করার জন্য। তখন তিনি তাকে থাপ্পড় মারেন। ফলে তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তখন মালাকুল মউত তার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং বলেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন, যিনি মরতে চান না। আল্লাহ তার চোখ ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, তুমি পুনরায় যাও এবং তাকে বল, আপনি কতদিন বাঁচতে চান? অতঃপর তুমি একটি ষাঁড়ের দেহে হাত রেখে বলবে, এর মধ্যে যত লোম আছে ততদিন আপনার হায়াত বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বললেন, অতঃপর কি হবে? তিনি বললেন, আপনি মৃত্যুবরণ করবেন। তখন মূসা বললেন, তাহ’লে এখুনি হৌক। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস থেকে একটি ঢিল ছোঁড়ার দূরত্বে নিয়ে যাও। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি সেখানে থাকতাম, তাহ’লে আমি তোমাদেরকে রাস্তার ধারে সেই লাল ঢিবির স্থানটি দেখিয়ে দিতাম’ (বুখারী হা/৩৪০৭; মুসলিম হা/২৩৭২; মিশকাত হা/৫৭১৩)।
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনু খুযায়মাহ (রহঃ) বলেন, অনেক বিদ‘আতী ব্যক্তি এই হাদীছকে অস্বীকার করে। তারা বলে, মূসা (আঃ) যদি তাকে চিনে থাকেন, তাহ’লে তিনি তাকে হীন গণ্য করেছেন। আর যদি না চিনে থাকেন, তাহ’লে তার ক্বিছাছ নেওয়া হ’ল না কেন? এর উত্তর এই যে, আল্লাহ ঐ সময় মূসার রূহ কবয করার জন্য পাঠাননি, বরং তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আর মূসা মালাকুল মউতকে থাপ্পড় মেরেছিলেন এজন্য যে, তিনি মনুষ্যবেশে বিনা অনুমতিতে তার গৃহে প্রবেশ করেছিলেন। যেভাবে দু’জন ফেরেশতা ইব্রাহীম (আঃ) ও লূত (আঃ)-এর বাড়ীতে এসেছিলেন অচেনা মানুষের বেশ ধরে। ফলে ইব্রাহীম (আঃ) তাদের আপ্যায়নের জন্য বাছুরের ভুনা গোশত নিয়ে আসেন (যারিয়াত ৫১/২৪-২৮)। আর লূত (আঃ) তাদের উপর নিজের সমকামী সম্প্রদায়ের হাতে ইয্যত হারানোর ভয় পেয়েছিলেন (হূদ ১১/৮০-৮১)। আর বিদ‘আতীদের দাবী অনুযায়ী একজন ফেরেশতা কিভাবে মানুষের কাছ থেকে ক্বিছাছ নিতে পারেন? অন্য বিদ্বানগণ বলেন, মালাকুল মউত তাকে এখতিয়ার না দিয়ে জান কবয করতে উদ্যত হওয়ায় মূসা (আঃ) তাকে থাপ্পড় মারেন। কেননা নবী-রাসূলগণকে মৃত্যুর আগে এখতিয়ার দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) স্বীয় মৃত্যুকালে বলেন, ‘কোন নবীই মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষণ না তাঁকে (দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্য থেকে) একটিকে বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়’ (বুখারী হা/৪৪৩৫; মুসলিম হা/২৪৪৪; মিশকাত হা/৫৯৬৪)। কিন্তু মালাকুল মউত মূসা (আঃ)-কে সে এখতিয়ার নেওয়ার সুযোগ দেননি (ফাৎহুল বারী হা/৩৪০৭-এর আলোচনা, ৬/৪৪২ পৃ.)।
ইমাম কুরতুবী বলেন, মালাকুল মউত অচেনা মানুষের বেশ ধরে তাঁর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। সেকারণ মূসা (আঃ) তাকে থাপ্পড় মারেন। এটাই হ’ল সুন্দর ব্যাখ্যা (কুরতুবী, তাফসীর মায়েদাহ ২১ আয়াত, ৬/১৩২)। সর্বোপরি ফেরেশতা অদৃশ্য সত্তা। তাকে থাপ্পড় মারা কোন মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়; যদি না তিনি মনুষ্যবেশে আগমন করেন। সর্বোপরি বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়াও অপ্রয়োজনীয়। কেননা লৌকিক জ্ঞান দিয়ে কোন অলৌকিক বিষয়কে ব্যাখ্যা করা মানুষের সাধ্যাতীত। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্নকারী : ডা. রফীক হাসান, নলতা, সাতক্ষীরা।