উত্তর : ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া ৬৪ হিজরীর ১৪ই রবীঊল আউয়াল ৩৫ বা ৩৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৮/২৪৭)।
মৃত্যুকালে ইয়াযীদের শেষ কথা ছিল, ‘হে আল্লাহ! আমাকে পাকড়াও করো না ঐ
বিষয়ে যা আমি চাইনি এবং আমি প্রতিরোধও করিনি এবং আপনি আমার ও ওবায়দুল্লাহ
বিন যিয়াদের মধ্যে ফায়ছালা করুন’ (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৯ পৃঃ)।
তার মৃত্যু সম্পর্কে যে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি শিকারে বের হলে হিংস্র পশুর হামলায় তাকে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়। এসব কথা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং এগুলি শী‘আদের অতিরঞ্জন মাত্র। ইবনু আসাকির স্বীয় ‘তারীখে’ ইয়াযীদকে মদখোর, ছালাত ত্যাগকারী, ফাসেক ইত্যাদি মন্দ স্বভাবের বর্ণনায় যে সব উদ্ধৃতি পেশ করেছেন, সে সম্পর্কে ইবনু কাছীর বলেন,وَقَدْ أَوْرَدَ ابْنُ عَسَاكِرَ أَحَادِيثَ فِي ذَمِّ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ كُلُّهَا مَوْضُوعَةٌ لاَ يَصِحُّ شَيْءٌ مِنْهَا ‘ইয়াযীদের মন্দ স্বভাব সম্পর্কে ইবনু আসাকির বর্ণিত উক্তি সমূহের সবগুলিই জাল। যার একটিও বিশুদ্ধ নয় (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৪ পৃঃ)।
ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়াহ-র চরিত্র সম্পর্কে হুসায়েন (রাঃ)-এর অন্যতম বৈমাত্রেয় ছোট ভাই ও শী‘আদের খ্যাতনামা ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিইয়াহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি তাঁর মধ্যে ঐ সব বিষয় দেখিনি, যেসবের কথা তোমরা বলছ। অথচ আমি তাঁর নিকটে হাযির থেকেছি ও অবস্থান করেছি এবং তাঁকে নিয়মিতভাবে ছালাতে অভ্যস্ত ও কল্যাণের আকাংখী দেখেছি। তিনি ‘ফিক্বহ’ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তিনি সুন্নাতের পাবন্দ ছিলেন’ (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৬)।
এছাড়া সমুদ্র অভিযান এবং রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে অংশগ্রহণকারীদেরকে রাসূল (ছাঃ) ক্ষমাপ্রাপ্ত ও তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেছেন (বুখারী হা/২৯২৪, ‘জিহাদ’ অধ্যায় ‘রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ)। মুহাল্লাব বলেন, এই হাদীছের মধ্যে হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) ও তাঁর পুত্র ইয়াযীদ-এর মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা হযরত ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (২৩-৩৫ হিঃ) সিরিয়ার গভর্ণর থাকাকালীন সময়ে মু‘আবিয়া (রাঃ) ২৭ হিজরী সনে রোমকদের বিরুদ্ধে ১ম সমুদ্র অভিযান করেন। অতঃপর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (৪১-৬০হিঃ) ৫১ হিজরী মতান্তরে ৪৯ হিজরী সনে ইয়াযীদের নেতৃত্বে রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের উদ্দেশ্যে যুদ্ধাভিযান প্রেরিত হয় (ইবনু হাজার, ফৎহুল বারী ৬/১২০-২১)।
ইবনু কাছীর বলেন, ইয়াযীদের সেনাপতিত্বে পরিচালিত উক্ত অভিযানে স্বয়ং হুসায়েন (রাঃ) অংশ গ্রহণ করেন (আল-বিদায়াহ ৮/১৫৩ পৃঃ)। এতদ্ব্যতীত যোগদান করেছিলেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আব্দুল্লাহ বিন আববাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের, আবু আইয়ূব আনছারী প্রমুখ খ্যাতনামা ছাহাবীগণ (ইবনুল আছীর, ‘আল-কামেল ফিত-তারীখ’ ৩/৫৭; দ্রষ্টব্যঃ আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়’ বই)।