উত্তর : আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হ’তে চারজন সাক্ষী উপস্থিত কর’ (নিসা ৪/১৫)। তিনি আরো বলেন, ‘আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়। অথচ চারজন (প্রত্যক্ষদর্শী) সাক্ষী হাযির করতে পারে না। তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর। আর তোমরা কখনোই তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। বস্ত্ততঃ এরাই হ’ল পাপাচারী’ (নূর ২৪/৪)। একদা (খাযরাজ গোত্রের নেতা) সা‘দ বিন উবাদা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোন পরপুরুষকে (সহবাসরত) দেখতে পাই, তবে কি আমি তাকে পাকড়াও করব না, যতক্ষণ না চারজন সাক্ষী হাযির করি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন সা‘দ বলেন, কখনোই তা সম্ভব নয়। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, তার কসম করে বলছি, আমি এর আগেই তাকে তরবারি দিয়ে খতম করে দিব। তখন রাসূল (ছাঃ) আনছারদের ডেকে বললেন, তোমাদের নেতা কি বলছেন শোন। তিনি অবশ্যই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি। আর আমি তার চেয়েও বেশী। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশী’ (মুসলিম হা/১৪৯৮; মিশকাত হা/৩৩০৮)।
সা‘দ বিন উবাদাহ উপরোক্ত কথা বলার পরপরই হেলাল বিন উমাইয়াহ স্বীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হন। এমন সময় সূরা নূরের ১০ আয়াত নাযিল হয়। যার ভিত্তিতে তিনি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। তখন রাসূল (ছাঃ) উভয়কে লে‘আন করান এবং বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং বলেন যে, আখেরাতের শাস্তি দুনিয়ার শাস্তির চেয়ে অনেক ভয়াবহ’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নূর ৪ আয়াত)। অর্থাৎ ব্যভিচারের শাস্তি দুনিয়াতে গ্রহণ করলে এটি তার জন্য কাফফারা হ’ত (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮) এবং সে সম্ভবতঃ আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে বেঁচে যেত।
ইমাম কুরতুবী বলেন, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহের কারণে এবং তাদের পাপ গোপন রাখার কারণে (কুরতুবী, তাফসীর সূরা নূর ৪ আয়াত)। ‘অনুগ্রহ’ বলতে বান্দাকে তওবা করার সুযোগ দান এবং ‘গোপন রাখা’ অর্থ এই অন্যায় কর্মটি জানাজানি না হওয়া। যাতে সমাজে নির্লজ্জতার প্রসার না ঘটে। ছাহেবে হেদায়াহ বলেন, চারজন সাক্ষীর শর্ত রাখার অর্থ হ’ল এটিকে গোপন রাখা এবং প্রচার না করা (হেদায়াহ ২/৯৫)।
ইসলামী আইনে যেনার অপরাধ সাব্যস্ত হয় ৪ জন সাক্ষী অথবা স্বীকৃতি অথবা গর্ভবতী হওয়ার মাধ্যমে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও যেনার অপরাধ সাব্যস্ত হ’তে পারে। কিন্তু শতভাগ সন্দেহমুক্ত নয় বলে এর মাধ্যমে ‘হদ’ আরোপিত হবে না; কেননা সন্দেহের অবস্থায় ‘হদ’ প্রযোজ্য নয়। যেনার শাস্তি বাহ্যতঃ খুবই কঠিন মনে হ’লেও এর সামাজিক কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। সে তুলনায় উক্ত শাস্তি সহজতর (ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়; রাবেতার অধীনস্ত ইসলামী ফিক্বহ কাউন্সিলের ষোড়শ অধিবেশন সিন্ধান্ত, জানুয়ারী ২০০২, মক্কা, ৩য় প্রকাশ, পৃঃ ৩৯০)।