উত্তর : হাদীছের প্রামাণিকতাকে অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফের এবং ইসলামের গন্ডি বহির্ভূত। কেননা যে হাদীছকে অস্বীকার করে, সে মূলতঃ কুরআনকেই অস্বীকার করে। হাদীছ ব্যতীত দ্বীনের ওপর আমল করা অসম্ভব। এজন্য মুসলিম বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে হাদীছ অস্বীকারকারীকে কাফের আখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ যারা গোটা হাদীছশাস্ত্রকে অস্বীকার করে তারা স্পষ্ট কাফের, কেননা তা রাসূল (ছাঃ)-এর রিসালাতকেই অস্বীকার করার শামিল। অনুরূপভাবে যারা কোন হাদীছকে ছহীহ হিসাবে জানার পরও কোন প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া তা সরাসরি অস্বীকার করবে সেও কুফরী করবে।

এ বিষয়ে ইমামদের মতামত নিম্নে উল্লেখিত হ’ল- (১) খ্যাতনামা তাবেঈ আইয়ূব আস-সাখতিয়ানী (১৩১হি.) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তিকে তুমি হাদীছ শোনাও এবং সে বলে এসব ছাড়ো, আমাদেরকে কুরআন থেকে শোনাও, তবে জেনে রেখ সে একজন পথভ্রষ্ট’ (সুয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ. ৩৫) (২) ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ (২৩৮হি.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির নিকট রাসূল (ছা.)-এর কোন হাদীছ পৌঁছেছে যাকে সে সত্য বলে স্বীকার করেছে, অতঃপর প্রকাশ্যে তা পরিত্যাগ করেছে, সে কাফের (ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ১/৯৯)। (৩) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (২৪১হি.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর হাদীছকে অস্বীকার করল, সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিপতিত হ’ল (ইবনুল জাওযী, মানাক্বিবুল ইমাম আহমাদ, পৃ. ২৪৯)।’ (৪) ইমাম আল-বারবাহারী (৩২৯হি.) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর হাদীছের ব্যাপারে কটূক্তি করবে, তখন তার ইসলামের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হবে। কেননা সে নিকৃষ্ট বক্তব্য এবং নিকৃষ্ট পথের অনুসারী। সে মূলতঃ রাসূল (ছা.) ও তার ছাহাবীদের উপরই কটূক্তি করেছে (শারহুস সুন্নাহ, পৃ. ৮৯)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত অস্বীকার করে, সে যেন পুরো কিতাবকেই অস্বীকার করে। যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর কোন একটি হাদীছকে অস্বীকার করে, সে যেন পুরো হাদীছ সম্ভারকেই অস্বীকার করে (শারহুস সুন্নাহ, পৃ. ১০১-১০২)

(৫) ইমাম আল-আজুর্রী (৩৬০হি.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর কিতাবে যে সকল বিষয় ফরয করেছেন, তার কোনটিরই হুকুম জানার সুযোগ নেই রাসূল (ছা.)-এর সুন্নাহ ব্যতীত। এটিই মুসলিম বিদ্বানগণের অভিমত। সুতরাং যে ব্যক্তি এর বাইরে অন্য কোন কথা বলবে, সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে এবং অবিশ্বাসী নাস্তিকদের দলভুক্ত হবে (আশ-শারীআহ, ১/৪১২)।’ (৬) ইবনু হাযম (৪৫৬হি.) বলেন, ‘কোন মুসলিম যে তাওহীদকে স্বীকৃতি দিয়েছে তার পক্ষে বিতর্কের সময় কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাতে যা পেয়েছে তা অস্বীকার করারও কোন সুযোগ নেই। যদি সে তার নিকট দলীল স্পষ্ট হওয়ার পরও অস্বীকার করে তবে সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহর হুকুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া হালাল মনে করে এবং এ দু’টির যে কোন একটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করে, সে কাফির। এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ১/ ৯৯)

(৭) তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বলে যে কুরআনে যা পাব তা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করব না, তবে সে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে কাফির।... আর যদি কেউ কেবল মুসলিম উম্মাহর ইজমা‘কৃত বিষয়কে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের মধ্যে কুরআন ও হাদীছ থেকে উৎসারিত সকল মতভেদ পূর্ণ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, তবে সে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে ফাসিক (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ২/৮০)

(৮) ইবনু তায়মিয়াহ (৭২৮ হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসূল (ছা.) তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান আনা ওয়াজিব। তার অর্থ আমরা বুঝি আর না বুঝি। কেননা তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িত ব্যক্তি। কিতাব ও সুন্নাহে যা কিছু তিনি নিয়ে এসেছেন প্রত্যেক মুমিনের জন্য তার ওপর ঈমান আনা ওয়াজিব, যদিও সে তার অর্থ না বোঝে। এটাই সালাফে ছালেহীন এবং ইমামগণের ঐক্যমত দ্বারা সাব্যস্ত (মাজমূউল ফাতাওয়া, ৩/৪১)

(৯) শাত্বেবী (৭৯০হি.) বলেন, ‘একটি দল রয়েছে যারা কেবলমাত্র কুরআনকে যথেষ্ট মনে করে, তারা চরম দুর্ভাগা। তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত থেকে বহির্ভূত (আল-মুওয়াফাক্বাত, ৪/৩২৫-৩২৬)।’ (১০) ইবনু ওয়াযীর (৮৪০ হি.) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ প্রমাণিত হওয়ার পরও যারা তা অস্বীকার করে, তারা সুস্পষ্ট কাফের (আল-আওয়াছিম মিনাল ক্বাওয়াছিম ২/২৭৪)। (১১) সুয়ূত্বী (৯১১হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি রাসূল (ছা.)-এর কোন ভাষ্য বা কর্মগত হাদীছ অস্বীকার করে এবং সে জানে যে হাদীছ হ’ল ইসলামের মৌলিক দলীল, সে ব্যক্তি কুফরী করল এবং ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে গেল এবং তার হাশর হবে ইহূদী এবং নাছারাদের সাথে অথবা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কোন কাফের দলের সাথে (সুয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ. ৬)

(১২) শাওকানী (১২৫০হি.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই পবিত্র সুন্নাহর প্রামাণিকতা এবং শরী‘আতের আহকাম প্রণয়নে তাঁর একচ্ছত্র দ্বীনের অবধারিত জ্ঞান। এ বিষয়ে কেউই মতভেদ করে না, ইসলাম থেকে বহির্ভূত ব্যক্তি ব্যতীত’ (ইরশাদুল ফুহূল, ১/৯৭)

(১৩) বর্তমান যুগের সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে, হাদীছ অস্বীকারকারীরা মুরতাদ ও কাফির। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করে। এদের সাথে কোন প্রকার ধর্মীয় ও সামাজিক সম্পর্ক রাখা বৈধ নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৩/১৯৪, মাজমু ফাতাওয়া বিন বায ২/৪০৩, ৩/২৭৩)

প্রশ্নকারী : নাছরুল্লাহ, মাধবদী, নরসিংদী।








বিষয়সমূহ: বিবিধ
প্রশ্ন (১৭/২৯৭) : নাপাক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করে তেলাওয়াত করলে পাপ হবে কি? কুরআন যখন গ্রন্থাকারে ছিল না, তখন এর হুকুম কি ছিল। বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল, ভিডিও চিত্রের মাধ্যমেও কুরআন পড়া যায়। তা হলে স্পর্শ করা আর না করার গুরুত্ব থাকলো কোথায়?
প্রশ্ন (৪/৪০৪) : ‘মাসআলা ও হাকীকত’ নামক বইয়ে জনৈক লেখক লিখেছেন, দাড়ির সর্বোচ্চ পরিমাণ এক মুষ্টি। এর অতিরিক্ত লম্বা দাড়ি রাখা হারাম। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা দাড়ি অল্প লম্বা কর। অনুরূপ চুল-দাড়িতে কালো খেযাব, কালো মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাত। আবুবকর, ওমর, ওছমান (রাঃ) সহ অনেক ছাহাবী কালো কলপ ব্যবহার করেছেন। কালো খেযাব ব্যবহার করার বিরুদ্ধে যেসব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো সবই জাল, যঈফ। লেখকের উক্ত দাবী কি সঠিক?
প্রশ্ন (৪০/৪০০) : মসজিদের মুছল্লী সংকুলান হয় না। এমতাবস্থায় মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী কবরগুলোকে শামিল করে মসজিদের পিলার দেওয়া হয়েছে। নীচতলায় প্রাচীর দিয়ে কবরগুলোকে মসজিদ থেকে পৃথক করা হয়েছে। তবে উপর তলা কবরস্থানের উপর নির্মিত হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? না গেলে বিকল্প করণীয় কি?
প্রশ্নঃ (৩/২৮৩) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি নিজ পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য জমা রাখতেন?
প্রশ্ন (২০/৩০০) : শুধু রামযান মাসে সাহারীর আযান দেয়া হয়, বাকী ১১ মাস দেয়া হয় না। এটা কি বিদ‘আত নয়?
প্রশ্ন (২৫/১৮৫) : জেহরী ছালাতে নারীরা কি সরবে কুরআন তেলাওয়াত করবে?
প্রশ্ন (২১/১০১) : ওযূ করার সময় অঙ্গগুলো তিনবারের বেশী বা কম হয়ে গেলে গোনাহগার হ’তে হবে কি?
প্রশ্ন (১/৪১) : প্যাথলজি টেস্টের পেশাবের শিশি সাথে নিয়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৩৭/৩৭৭) : জনৈক ব্যক্তি একজন বৌদ্ধ ধর্মের লোকের সাথে ব্যবসা করেন। অনেক সময় তাদের নিকটে থাকতে হয় এবং খেতে হয়। এভাবে থাকা-খাওয়া ও সম্পর্ক রাখা যাবে কি? - -ফরীদ, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন (১০/২৯০) : কোন জারজ নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৩৩/২৭৩) : সফর অবস্থায় তাহাজ্জুদের ছালাত আদায়ের পদ্ধতি কি?
প্রশ্ন (১/২৪১) : রিজাল শাস্ত্র কি? প্রত্যেক আলেমের জন্য রিজাল শাস্ত্র সম্পর্কে জানা আবশ্যক কি? - -মামূন, বাগমারা, রাজশাহী।
আরও
আরও
.