
কুদস বিজয়ের এক হাযার বছর পরে আমি যখন কুদস ও ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীকে নিয়ে লিখতে বসেছি তখন কুদস আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীর জীবনীর ওপর এই এক হাযার বছরে কয়েক হাযার ইতিহাস রচিত হয়েছে। তারা সকলেই তার বীরগাঁথা স্মরণ করেছেন বিনম্র শ্রদ্ধাভরে। তাই আমি আজ ইতিহাস শোনাবো না। আমি বলব, বীরগাঁথাকে স্মরণ নয়, বাস্তবায়ন করতে হবে। তার বিজয়কে উদযাপন নয়, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে উজ্জীবিত হ’তে হবে।
আজ আমার লিখতে কষ্ট হচ্ছে যে, কুদস আর আমাদের হাতে নেই। আমার কষ্ট হচ্ছে যে, আজ ফিলিস্তীনকে গোরস্থানে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে আমার অগণিত মা- বোনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। অবুঝ শিশুদের বুকে গুলি করে তাদের শহীদ করা হয়েছে। আজ একজন মুসলিম যুবক হিসাবে আমার চোখ থেকে তো অশ্রু নয়, আগুন ঝরার কথা ছিল। রক্তের তপ্ততা তো আগ্নেয়গিরির উজ্জবল লাভাকে হার মানানোর কথা ছিল। কোথায় আমাদের সেই গায়রত! কোথায় আমাদের সেই বদরী চেতনা! সত্যি আজ আমার খুব চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। তবে কন্ঠে রয়েছে কেবল মৃদু গোঙ্গানির ক্ষীণ শব্দ!
আমার কল্পনায় আজ সেই চিত্র ভেসে উঠছে যেখানে আরবের একটি যাত্রীবাহী জাহায ভারত উপসাগরে সিন্ধু রাজা দাহিরের জলদস্যুদের মাধ্যমে লুণ্ঠিত হয়েছিল। তারা জাহাযের সবাইকে মেরে ফেলে। সেই জাহাযে একজন মহিলাও ছিল। তাকে যখন মেরে ফেলা হয় তখন সে চিৎকার করে হাজ্জাজের[1] নাম ধরে বলেছিল, ওয়া...হাজ্জাজা...হ! এই খবর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে পৌঁছা মাত্রই সে বলেছিল, ‘হে আমার বোন! তুমি যখন আমাকে ডেকেছ, আমি উপস্থিত’! তিনি সাথে সাথেই মুহাম্মাদ ইবনু কাসিম আছ-ছাক্বাফীকে (৬৯৫-৭১৫ খৃ.) পাঠিয়ে দিলেন ভারত অভিযানে। মুহাম্মাদ বিন কাসিম সিন্ধু বিজয় করে রাজা দাহিরকে হত্যা করলেন।[2]
হ্যাঁ, হাজ্জাজ যালেম ছিল। তবে এই দো‘আ করতে আজ খুব ইচ্ছা করছে যে, আমাদের মত ভীরু সম্প্রদায়ে তো ছালাহুদ্দীন আইয়ুবী আসছেন না। অন্তত একজন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যেন অচিরেই আসে। এই পঙ্গুত্ব সত্যিই আর সহ্য হচ্ছে না। আমার মনে হয়, আমাদের বুকের তাযা রক্তে যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে, তা কাফের বিশ্বকে ভাসিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আজ লক্ষ-কোটি মশাল শুধু একটি দিয়াশলাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। জানি না, এই অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে?
ঐতিহাসিক পটভূমি : ১১ শতকের শেষভাগ। তখন মুসলিম বিশ্বে চলছিল বংশগত রেশারেশি। ফলে মুসলিম উম্মাহ ছিল দুর্বল ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। ক্ষমতার লোভ তাদের গ্রাস করছিল দিন-রাত। ফাতেমীয়, আববাসীয় ও অন্যান্য বংশের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছিল। তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা সবিস্তার তুলে ধরলে আলোচনা তার লক্ষ্য হারাবে। তাই আমি এই বিষয়টিকে প্রলম্বিত করতে চাচ্ছি না। তবে এই কারণেই যেহেতু ঘটনার সূত্রপাত তাই অল্পকথায় বলে রাখাই শ্রেয়।
মুসলমানদের দলে দলে বিভক্ত হয়ে ক্ষমতার জন্য লড়াই করা তাদেরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলেছিল। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টান ইউরোপ প্রথম ক্রুসেড[3] ঘোষণা করে এবং ৭ শাওয়াল ৪৯২ হিজরীতে জেরুজালেম দখল করে নেয়[4]। আমরা হারাই আমাদের প্রাণের স্পন্দন, প্রথম কিবলা ‘বায়তুল মাক্বদিস’। যে কুদস অগণিত নবী ও রাসূলের আগমনে মর্যাদামন্ডিত হয়ে আছে, সে কুদস চলে যায় ইসলাম বিরোধী নাপাক শক্তির হাতে। শুধু এতটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। কুদস দখলের সময় তারা এক ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। প্রায় ৭০,০০০ মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে[5]।
ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী কে : কখনো ব্যক্তির পরিচয়ে স্থান পরিচিত হয়। কখনো পরিচিত হয় বংশ। কখনো পরিচিত হয় জাতি। ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী তেমনই একজন। যার পরিচয়ে বায়তুল মাক্বদিসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ইহুদী-খৃস্টানরা মুসলিম জাতিকে চিনে। ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী আমাদের পরিচয়; আমাদের পূর্বসূরী। আমাদের প্রথম কিবলা আল-কুদস রক্ষায় যারা জীবন দিতে চায়, ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী তাদের জন্য চেতনার বাতিঘর। এটাই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়।
ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী একজন কুর্দি মুসলিম সেনাপতি। তিনি ৫৩২ হিজরীতে ইরাকের উত্তরাঞ্চল তিকরিতে জন্মগ্রহণ করেন[6] এবং ৫৮৯ হিজরীতে ৫৬ বছর বয়সে সিরিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্মের ৩৮ বছর আগেই জেরুজালেম ক্রুসেডাররা দখল করেছিল। তিনি জন্মের পর থেকেই মুসলিমদের মাঝে ক্ষমতার লড়াই দেখে এসেছেন। এটা তাকে খুব কষ্ট দিত। তিনি ৫৬৯ হিজরীতে ৩৭ বছর বয়সে সিরিয়ার শাসক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মিসর ও শাম অঞ্চল একত্রিত করে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৫৮৩ হিজরীতে হিত্তীন যুদ্ধ জয়ের পর তিনি জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন।[7]
হিত্তীন যুদ্ধের[8] সূত্রপাত; কুদস বিজয়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপ : ৪৯২ হিজরী মোতাবেক ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখলের পর থেকে কুদস ও তার আশেপাশের অঞ্চল দখল করার প্রতি মনোযোগী হয়। ফলে আশেপাশের এলাকাগুলো দখল করে তারা একটি খৃস্টান রাষ্ট্র গঠনও করে ফেলে। খৃস্টান রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে তারা বিভিন্নভাবে মুসলিমদের ওপর যুলুম শুরু করে; হজ্জযাত্রীদের পথ রোধ করে, বাণিজ্য কাফেলা লুট করে, বিভিন্ন মুসলিম জনপদে হামলা চালায়। এগুলো ছিল তখনকার নিত্যদিনের ঘটনা। বিশ্ব মুসলিমের ওপর নির্যাতনে এখনকার মুসলিম শাসকগণ যেভাবে নিশ্চুপ ভুমিকায় আছেন, তখনও ঠিক এমনই ছিলেন। কারণ মুসলিমদের ভেতরে তখনও ঐক্যের বেশ ঘাটতি ছিল।
তবে হিত্তীন যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ভিন্ন কারণে। খৃস্টান নেতা রাইনাল্ড অব শাতিলিওঁ মুসলিম হজ্জযাত্রী ও বণিক কাফেলাকে লুট করার পাশাপাশি রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যাপারে অবমাননাকর মন্তব্য করে। যা মুসলিমদের বহুদিনের সঞ্চিত ক্ষোভে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই ঘটনা ছালাহুদ্দীনের কাছে পৌঁছলে তিনি শপথ করেন, ‘অবমাননাকারীর রক্ত হাতে না নেয়া পর্যন্ত আমি শান্ত হব না’। পরক্ষণে ছালাহুদ্দীন দেখলেন, তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক মোক্ষম সময় এসেছে। কারণ এটা এমন একটি বিষয় যা দ্বারা পুরো উম্মাহকে জাগ্রত করা সম্ভব। তিনি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিসর, সিরিয়া ও অন্যান্য অঞ্চল এক করে একটি বৃহত্তর শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে ফেলেন।
সে সময়ে ক্রুসেডারদের মাঝেও দ্বন্দ্ব চলছিল বিভিন্ন বিষয়ে। এদিকে ছালাহুদ্দীন মুসলিম সেনাদের মাঝে কুদস মুক্ত করার স্বপ্ন ও নবীজীর অপমানের ক্ষোভের সংমিশ্রণে এক অনির্বাণ আগুন জ্বালিয়ে দেন। তিনি সৈন্যদের বলেন, ‘সামনে চল! আজ শুধু যমীন নয়, আজ আসমানও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে’। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে ক্রুসেডারদের তুলনায় মুসলিম সৈন্য সংখ্যা অধিক ছিল। সংখ্যায় বিভিন্ন মতভেদ থাকায় এখানে তা উল্লেখ করছি না। যুদ্ধে ক্রুসেডাররা মুসলিম সৈন্যদের সংখ্যা দেখেই বুঝতে পারে, আজ তাদের পরাজয় অবধারিত। তাই তারা যুদ্ধের পূর্বে ছালাহুদ্দীনের সাথে চুক্তিতে আসতে চায়।
ক্রুসেডাররা তাকে জিজ্ঞেস করে, আল-কুদসের দাম কত? তিনি প্রথমে উত্তর দেন, ‘কিছুই না’। এরপর মুচকি হেসে বললেন, ‘না! বরং সবকিছু’। তখন ক্রুসেডারদের আর বুঝতে বাকী থাকে না, ছালাহুদ্দীন আসলে কি করতে যাচ্ছেন! তারা বাধ্য হয়ে যুদ্ধে জড়ালেও তাদের মনোবল আগে থেকেই ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী। সুতরাং যুদ্ধে বিশাল মুসলিম বাহিনীর সামনে ক্রুসেডাররা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। ক্রুসেডার রাজা গাই অব লুসিগনান বন্দী হয়। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর অপমানের শাস্তি স্বরূপ কুখ্যাত রাইনাল্ডকে ছালাহুদ্দীন নিজ হাতে হত্যা করেন।
হিত্তীন যুদ্ধে বিজয় লাভ করার পরেই ছালাহুদ্দীন কুদস মুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে তিনি পবিত্র স্থানকে রক্তপাতের মাধ্যমে অপবিত্র করতে চাননি। তিনি কুদসের আশেপাশের উল্লেখযোগ্য শহর ও দুর্গগুলো যেমন আক্রা, নাবলুস, জাফা, গাযা এবং আশকেলন দখল করেন এবং কুদসকে চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। ফলে কুদস চারিদিক থেকে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অবশেষে ১১৮৭ সালের ২রা অক্টোবর কোনরকম রক্তপাত ছাড়াই ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী কুদস বিজয় করেন। এটা ছিল হিত্তীন যুদ্ধের কৌশলগত বিজয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কাঙ্ক্ষিত ফল।
আজকের আল-কুদস; আমাদের পরিকল্পনা : ক্রুসেডারদের নাপাক হাত থেকে কুদসকে পুনরুদ্ধার করার পর থেকে তা মুসলিমদের হাতেই ছিল। তবে আমাদের ঈমান ও সংহতিগত অবক্ষয়ের কারণে আজ আর তা আমাদের হাতে নেই। এই অবক্ষয় একদিনে আসেনি। আবার এই ক্ষতিপূরণও একদিনে সম্ভব নয়। আমরা যদি এখন থেকে সুপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারি তবে ধীরে ধীরে আমরা দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তি ও সামর্থ্যে বলিয়ান হ’তে পারব ইনশাআল্লাহ। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা যে বিষয়গুলোতে সংশোধনী পদক্ষেপ নিতে পারি তার একটি খসড়া আলোচনা এখানে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এখানে আমরা দু’টি বিষয় প্রস্তাবনায় আনব। একটি প্রতিরক্ষামূলক। যা আমাদের ক্ষত সারিয়ে তোলা পর্যন্ত আমাদেরকে ডিফেন্স করবে। অপরটি চূড়ান্ত বিজয়ের প্রস্ত্ততিমূলক। যা আমদের দুর্বলতাগুলো সারিয়ে আমাদেরকে শক্ত-সবল করবে।
প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ : আমাদের প্রাথমিক প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হ’তে পারে কুদস নিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক মঞ্চ’ তৈরি করা। আমরা দেখেছি, ফিলিস্তীনের গণহত্যায় মুসলিম দুনিয়া কার্যত নীরব ছিল। কিছু প্রতিবাদ ও কূটনৈতিক বিবৃতির বাইরে কোন বাস্তব প্রতিরোধ হয়নি। মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কুদস নিয়ে আমাদের সীমাহীন আবেগ থাকলেও রাজনৈতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। আমাদের কুদসপ্রেম যদি কেবল ইভেন্ট নির্ভর হয়, তবে তা আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের এই আবেগ দুনিয়াতেও কোন কাজে আসবে না।
সেজন্য আমরা কুদস নিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক মঞ্চ’ তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছি। যেখানে মুসলিম দেশগুলোর প্রধানগণ বিশ্ব দরবারে কুদস নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিবেন। যে বার্তায় স্পষ্টভাবে বলা থাকবে, ‘কুদস মুসলমানদের জাতীয় সম্পদ। কোন নির্দিষ্ট দেশের সম্পদ নয়। সুতরাং কুদসের ওপরে আক্রমণ হ’লে আমরা সকল মুসলিম দেশ সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে আক্রমণকারীদের প্রতিহত করব ইনশাআল্লাহ’। এতে আক্রমণকারীরা কিছুটা হ’লেও চাপের মুখে পড়বে। তারা হয়ত তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করবে। এতে আমরা নিজেদেরকে গুছিয়ে নেয়ার সময় পাবো। মনে রাখতে হবে, এটা কখনোই সমাধান নয়। এটা কেবল সাময়িক প্রতিরক্ষা। যা আমাদেরকে স্থায়ীভাবে মুক্তির পথ দেখাবে না। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যে সময় প্রয়োজন সেটা আমরা পেয়ে যাব।
বিজয়ের প্রস্ত্ততিমূলক পদক্ষেপ : নিজেদের দুর্বলতা কাটানোর যে স্বল্প সময় আমরা পাব, সে সময়ের মধ্যেই আমাদেরকে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে ফেলতে হবে। বিজয়ের প্রস্ত্ততিমূলক পদক্ষেপে আমরা তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করব। আমাদের দাওয়াত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জুম‘আর মিম্বার থেকে। মাঠ-ঘাট থেকে। গ্রামের চা-স্টল থেকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও কামিল মাদ্রাসার সকল পর্যায় থেকে। আমরা প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করব মানুষের ঈমানী অবক্ষয় সংশোধনের মাধ্যমে। আমাদের এই চেতনা সর্বদা জাগ্রত থাকতে হবে যে, ‘আমরা যতই সমৃদ্ধ হই, যতই অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত হই আমাদের ঈমানী দুর্বলতা আমাদের চরমভাবে ব্যর্থ করতে পারে। পক্ষান্তরে আমরা যতই দুর্বল হই, যতই নিঃস্ব হই আমাদের ঈমানী শক্তি আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এনে দিতে পারে’। বর্তমানে অনেকেই বলছেন, আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দৈন্য। এই কথা আমিও বলব। তবে আমাদের মূল দৈন্য ঈমানে।
ঈমানের দীনতা কাটানোর জন্য আমাদেরকে ঈমানের চর্চা করতে হবে। ঈমানের চর্চা হ’ল, আল্লাহমুখী হওয়া। অধিক ইবাদতে সময় দেয়া। শুধু জাযবা দিয়ে কিছু হবে না। আমরা যদি শেষ রাতে জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারি তবে আমরা রাত জেগে সৈন্য শিবির পাহারা দেব কিভাবে? আমরা যদি আল্লাহর সাথে নিজেদের সম্পর্কই অটুট করতে না পারি তবে তার সাহায্যপ্রাপ্ত হব কিভাবে? এজন্য আমাদেরকে সবার আগে ঈমানের জায়গায় মযবূত হ’তে হবে।
সাম্প্রতিককালে ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের আগে বাংলাদেশের একজন আলেম ছালাতের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলায় সারা দেশের আপামর জনতা তার বিরোধিতা করেছে। যার যেভাবে ভাল লেগেছে, বলেছে। মনে হচ্ছিল, মানুষ ইসরাঈলের সকল ক্ষোভ তার ওপরে মিটাচ্ছে। আবার অনেকে ছওয়াব মনে করেই বিভিন্ন গালিগালাজ করেছে। আপনি তাকে গালি দেয়ার আগে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ দেখা প্রয়োজন ছিল! অনেক হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বোত্তম আমলের কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তিনি বেশ কিছু হাদীছে ছালাত ও জিহাদের কথা একসাথে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি জিহাদকে কখনোই ছালাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দেননি। কারণ এটাই শরী‘আত।
আমরা আবেগী মুসলমান। এটা বুঝি না যে, জিহাদের জন্য ছালাত; নাকি ছালাতের জন্য জিহাদ। আমার ঘরের গোড়ায় যে মসজিদ আছে সেখানে আমি কোনদিন মুছল্লা (জায়নামায) বিছাতে পারিনি তবে আমি ফজরের ছালাতের সময় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি, একদিন বায়তুল মাক্বদিসে মুছাল্লা (জায়নামায) বিছাব। এটা স্পষ্ট শয়তানী ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। কল্পনায় এসব কতকিছুই আঁকা যায়। তবে যখন ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ চোখের সামনে শুরু হয়ে যাবে, বুকের তাযা রক্ত ঢেলে দেয়ার ময়দান কায়েম হয়ে যাবে, তখন সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তে খুব শক্ত ঈমানের প্রয়োজন হবে। যা আপাতত আমাদের নেই।
ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্য থাকতে হবে অটুট। পদক্ষেপ হ’তে হবে সুদৃঢ়। ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীকে যখন জিজ্ঞেস করা হ’ল, ‘কুদসের দাম কত’? তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছু’। এখান থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে, আমাদের লক্ষ্য কেমন হওয়া চাই। আমদের লক্ষ্য যদি হয়, ‘আপাতত টার্গেট এমন, তবে এটা না হ’লে ঐটা’। এই ধরনের অপশন ভিত্তিক লক্ষ্য নিয়ে বিজয় কেতন উঁচু করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। লক্ষ্য এমন হ’তে হবে যে, ‘হয় লক্ষ্য সাধন, না হয় জীবন পতন’। তারপরে কিছু হ’লে হ’তে পারে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনে কাজ করে যেতে হবে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। শুরুর দিকে মনে হ’তে পারে, সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে তো অনেক সময় লেগে যাবে! তবে এমন চিন্তা সঠিক নয়। সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যদি নিরলস কাজ করা হয় তবে সর্বোচ্চ দুইটি জেনারেশন পরিবর্তন হ’তেই মূলধারায় পরিবর্তন আসবে। এটার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা ইসরাঈল থেকেই নিতে পারি। তারা যখন ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র গঠন করল তখন তাদের কী ছিল? আর আজ তারা কোথায়! জ্ঞান-বিজ্ঞানে, ব্যবসা-বাণিজ্যে তারা যে উন্নতি সাধন করেছে তা কিভাবে সম্ভব হ’ল? অবশ্যই তারা চার আনা কাজ করে ষোল আনা প্রচার করেনি। তারা ষোল আনা কাজ করেছে এক আনাও প্রচার না করে। এমনিতেই তারা উন্নতির শিখরে পৌঁছেনি। এক শতকের কম সময়ে তারা যদি এই পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয় তবে আমরা কেন পারব না?
আমাদের তৃতীয় পদক্ষেপ আসবে ঐক্যের স্থানে। ছালাহুদ্দীন আইয়ূবীর সময়ে মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত ছিল। মুসলমানদের এক কাতারে আনতে তিনি দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ের মেহনতে মানুষের মন মোটামুটি ঐক্যের দিকে ঝুঁকেই ছিল। সেজন্যই ছালাহুদ্দীন একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশাল এক শক্তি একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের মাঝে আজ বিভক্তি যদিও আরো অনেক বেশী, তবুও আমাদের ঐক্যের আহবান সর্বদা চালু রাখতে হবে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, ছালাহুদ্দীন যে ইস্যুতে মুসলিমদের এক করেছিলেন সেখানে সকল মতবিরোধ শেষ হয়ে গেছে। তা হচ্ছে, রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মান।
যদি কখনো আক্রমণ হয় আল্লাহর শানের ওপরে, রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মানের ওপরে তখন আমরা আমাদের সকল ভেদাভেদ ভুলে যাই। আজকের এই মতভেদের যুগেও আমাদের এমন অনেকগুলো জায়গা আছে যেখানে আমরা একত্রিত হ’তে পারি। আল্লাহ আমাদের একক কালেমা দান করেছেন এটা অনেক বড় হিকমাহ। আল্লাহ এই কালিমা ব্যবহারের পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বল! এসো সেই কথায় যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে এক’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)। সেই কালিমার দাওয়াতেই আমরা হয়ত আবারো এক হব। তবে সে লক্ষ্যে দাওয়াতের মেহনত চালু থাকতে হবে।
আমাদের উচিৎ, বিভিন্ন স্থানে ‘মুজাহিদ কমিটি’ গঠন না করে পুরো উম্মাহকে জিহাদের চেতনায় উজ্জীবিত করা। শুধু সেমিনার করে সে ভিডিওগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে জিহাদী নাশীদ লাগিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করলেই মুজাহিদ উম্মাহ গঠন হয় না। এটা কাজ নয়, বরং এটা প্রচার। যা নবীগণের পদ্ধতি নয়। যা আমাদের পূর্বসূরীদেরও পদ্ধতি নয়। এমনকি এই কাজ ইসরাঈলও কোনদিন করেনি। সুতরাং মানুষের আমূল পরিবর্তনের চির বহমান ধারা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর সমাজ পরিবর্তনকারী পদক্ষেপগুলোতে যুক্ত থেকে মানুষের মাঝে জিহাদী চেতনা উজ্জীবিত করুন।
একমাত্র আমরাই বলে আসছি, ‘মুক্তির একই পথ, দাওয়াত ও জিহাদ’। আহলেহাদীছের একজন ছোট্ট সোনামণিও এই শ্লোগানের সাথে পরিচিত। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, এই আলোচনাতেও আমরা দাওয়াত ও জিহাদের বাইরে কোন সমাধানই প্রস্তাব করিনি। এটাই আমাদের চিন্তাধারা। আর কোন ইসলামী দল বা সংগঠন সরাসরি ‘জিহাদ’ শব্দটি তাদের শ্লোগানে যুক্ত করতে পারেনি। কারণ তাদের জিহাদী চেতনা ইস্যুভিত্তিক। তারা রাজপথে এসে বলে, ‘সাবিলুনা সাবিলুনা, আল-জিহাদ আল-জিহাদ’। এটা তাদের টেম্পোরারি শ্লোগান। তবে আমাদের চেতনা ক্ষণস্থায়ী নয়। আমরা জিহাদী চেতনা লালনকারী এক উম্মাহর স্বপ্ন দেখি।
উম্মাহর চিস্তাধারা পরিবর্তনে জুম‘আর খুৎবার বিষয়বস্ত্ততে পরিবর্তন আনতে হবে। মিম্বারে এতদিন খুৎবায় বলা হয়েছে, ‘খাইরুকুম মান তা‘আল্লামাল কুরআন...’। এখন সেই হাদীছের সাথে এটাও সংযুক্ত করা হবে যে, রাসূল (ছাঃ) তীর চালানো ও ঘোড়া চালানো শিখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এতদিন তো এভাবে মাসআলা ইস্তেম্বাত করে এসেছেন যে, ‘বর্তমান যুগের যে অবস্থা! এই যুগে অবশ্যই রাসূল (ছাঃ) মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন। সুতরাং মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ’। আজ থেকে এভাবে মাসআলা ইস্তেম্বাত করুন, ‘এই যুগে রাসূল (ছাঃ) অবশ্যই বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতেন। পারমাণবিক বোমা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি ঘোড়া চালানোর কথা না বলে ফাইটিং জেট চালানো শিখতে বলতেন’। আপনি বলতে পারেন, এভাবে তো হয় না! আমি বলব, সেই যুগে যদি যুদ্ধের সরঞ্জাম কমে যাওয়া রোধে ঘোড়া খাওয়া হারাম করা হ’তে পারে তবে সেদিকে লক্ষ্য করে এই যুগে অনেক কিছুই হ’তে পারে। সুতরাং জাতিকে উৎসাহিত করুন এই সকল অঙ্গনে পদচারণার জন্য।
খুৎবায় মানুষ গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই আপনারা তাদেরকে বিভিন্ন ওলী-আওলিয়ার মিথ্যা গল্প শোনান। এটা না করে মানুষকে ইয়ারমুকের যুদ্ধের কাহিনী শোনান। হিত্তীন যুদ্ধের কাহিনী শোনান। ইতিহাসের চুলচেরা বিশ্লেষণ করুন। মানুষ যেন জানতে পারে, কোন যুদ্ধে আমাদের সেনাপতিরা কি কৌশল অবলম্বন করেছেন। কিভাবে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিতে হয়? কিভাবে তারা নিয়েছেন? মানুষ যেমনভাবে আব্দুল কাদের জিলানী, খাযা মঈনুদ্দীন চিশতীকে চিনে তার চেয়ে ভালভাবে যেন খালিদ বিন ওয়ালিদ, তারিক বিন যিয়াদ, মুহাম্মাদ বিন কাসিমকে চিনে। এটা আগে নিশ্চিত করুন। তারপরে জিহাদী চেতনা সম্পন্ন জাতি গড়ে ওঠা কেবল সময়ের ব্যাপার।
শেষকথা : রোমানদের সাথে যুদ্ধের সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-কে যখন রোমানদের পক্ষ থেকে বলা হ’ল, ‘তোমরা হয়ত অনেক বিজয় অর্জন করেছ। তবে আজ তোমরা যে যোদ্ধাদের মুখোমুখি হ’তে চলেছ, তাদের কাছে তোমাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। তোমরা যদি যুদ্ধ না করে ফেরত যাও তবে তোমাদের সকলকে একটি করে পোষাক, একটি পাগড়ী ও একটি করে দীনার দেয়া হবে। জবাব দেয়ার পূর্বে ভালভাবে ভেবে দেখ’! তখন খালিদ (রাঃ) বলেছিলেন, ‘আমার উত্তর তিনটি শব্দ। ইসলাম, জিযইয়াহ অথবা তরবারী। এখন তোমরা ভেবে দেখ’।
আমরা তো সেই খালিদের উত্তরসূরী! আমাদের শরীরে বইছে হাযার বীরের রক্ত! আমরা সেই জাতি। আমরা কখনো মাথা নীচু করে বাঁচিনি, বাঁচবও না। আমরা কখনো মুখ লুকিয়ে বাঁচব না। আমরা যতদিন বাঁচব যালেমদের চোখে চোখ রেখেই বাঁচব। এভাবে বাঁচতে গিয়ে যদি দুইদিন কম বাঁচি তাহ’লে আমাদের কোন পরওয়া নেই। শাহাদতের তামান্নাই আমাদের জীবন দর্শন। আমরা শহীদ হওয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছি। রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে এভাবেই শিখিয়েছেন। তাঁর মুখ থেকে আমরা জেনেছি, জান্নাতে যাওয়ার পরে সকল আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তবে শহীদ হওয়ার তামান্না রয়ে যাবে।
সেই জান্নাতের আশা আমাদের বুকে সদা জাগ্রত। যে কোন মূল্যে জান্নাতে যাওয়ার নেশা আমাদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। আমরা সেই নেশার ঘোরে শুধু এক জীবন নয়, হাযার জীবন ত্যাগের পথেই কাটিয়ে দিতে পারি। যে জীবন আল্লাহর পথে লাঞ্ছিত হয়, বঞ্চিত হয়, কুরবান হয়; সেই জীবনই আমাদের আদর্শ জীবন। জিহাদের ময়দান কখনো আমাদের অপরিচিত নয়। আমরা তো ঘুমের ঘোরেও মৃদু স্বরে উচ্চারণ করি, আল্লাহুম্মা ছাবিবত আক্বদামানা! আল্লাহুম্মা নাছরাকাল্লাযি ওয়াদতা! আল্লহুম্মা আনতা মাওলানা, ফানছুরনা আলাল কওমিল কাফেরীন!
সারওয়ার মিছবাহ
শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. হাজ্জাজ বিন ইউসুফ (৪১ হি. - ৯৫ হি.)। তিনি উমাইয়া খিলাফতের একজন প্রভাবশালী গভর্নর ও সেনাপতি ছিলেন। বিস্তারিত : সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪/৩৪২।
[2]. ফুতূহুল বুলদান পৃ. ৬১২।
[3]. ক্রুসেডার মূলত সেই খৃস্টান যোদ্ধাদের বলা হয় যারা ১১শ থেকে ১৩শ শতাব্দীর মধ্যে পোপদের আহবানে মুসলমানদের হাত থেকে জেরুজালেম মুক্ত করতে ইউরোপ থেকে যুদ্ধ করতে এসেছিল।
[4]. আল-কামেল ফিত-তারীখ, ১০/২৭২।
[5]. প্রাগুক্ত, ১০/২৭৩।
[6]. ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী; ক্বাহেরুল উদওয়ানিছ ছালীবী পৃ. ১১।
[7]. প্রাগুক্ত পৃ. ১২।
[8]. ২৫শে রজব ৫৮৩ হিজরীতে বর্তমান ইস্রাঈলের উত্তরভাগ গালিলি অঞ্চলে এই যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। বিস্তারিত : আল-কামাল ফিত তারীখ, ১১/৫৩৪।