
উত্তর : শরী‘আতের কিছু বিধান রহিত হওয়া বা পরিবর্তন হওয়া কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমরা কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা তা ভুলিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তদনুরূপ আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী? (বাক্বারাহ ২/১০৬)। তিনি আরো বলেন, আমরা যখন এক আয়াত পরিবর্তন করে তার স্থলে অন্য আয়াত আনি, আর আল্লাহ যা নাযিল করেন তিনিই তা ভাল জানেন, তখন তারা বলে, তুমি তো মনগড়া কথা বল। বরং তাদের অধিকাংশই (প্রকৃত বিষয়) জানে না (নাহল ১৬/১০১)।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল যে, ‘দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়’। অতঃপর তা রহিত হয়ে যায় ‘পাঁচবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়’ এর দ্বারা ‘পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তেলাওয়াত করা হ’ত (মুসলিম হা/১৪৫২; মিশকাত হা/৩১৬৭)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক কোন আমল চলছিল। পরবর্তীতে তারা যদি অন্য আমল করে তাহ’লে বুঝতে হবে পূর্বের আমল রহিত হয়ে গেছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করার পর ১৬/১৭ মাস বায়তুল মুক্বাদ্দাসকে কিবলা করে ছালাত আদায় করেন। পরবর্তীতে বায়তুল্লাহকে কিবলা করে ছালাত আদায় করেন। এক্ষণে বায়তুল মুক্বাদ্দাস এর দিকে মুখ করে ছালাত আদায় করার বিধানটি মানসূখ হয়ে গেছে।
তবে জোরে আমীন বলা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর বিষয়টি মানসূখ বা রহিত হয়নি। কারণ উক্ত বিষয়ে ওমর ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছারগুলো ছহীহ নয়। (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ২/২৯৪)। তাছাড়া বর্ণনাটির পূর্ণ সনদ না থাকায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বলেছেন, ইমাম তিনটি বিষয় নিঃশব্দে পড়বে। আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং আমীন (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ২/২৯৪)। উক্ত বর্ণনার পূর্ণ সনদ নেই। তাছাড়া ইব্রাহীম নাখঈ তাদলীস করেছেন যা গ্রহণযোগ্য নয় (ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক ৩৫)। ইমাম ইবনু হাযম উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেছেন ইমাম আবু হানীফা ও সুফিয়ান ছাওরী ওমর ও ইবনু মাসঊদের তাকলীদ করেছেন। অথচ তাদের কারো কথা রাসূলের আমল ও কথার উপর দলীল নয় (মুহাল্লা ২/২৯৫)। অতএব জোরে আমীন বলা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর বিধান মানসূখ নয়, বরং বলবৎ আছে।
প্রশ্নকারী : জসীমুদ্দীন, গোমস্তাপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।