উত্তর : ফরয
এবং ওয়াজিব অর্থ ও হুকুমের দিক থেকে কাছাকাছি পরিভাষা। শরীআ‘তের দৃষ্টিতে
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিধানগুলিকে ফরয ও ওয়াজিব দ্বারা
নির্দেশ করা হয়। অর্থাৎ এমন বিধান যা পালনে ছওয়াব পাওয়া যায় এবং পরিত্যাগে
শাস্তি পেতে হয়। তবে উভয়ের মধ্যে ব্যবহারিক পার্থক্য হ’ল, ফরয বিধানসমূহ
ওয়াজিবের তুলনায় কিছুটা বেশী গুরুত্ব বহন করে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-মুসওয়াদ্দাহ ফী উছূলিল ফিক্বহ পৃ. ৫০; আব্দুল করীম যায়দান, আল-ওয়াজীয ফী উছূলিল ফিক্বহ পৃ. ৩১-৩২)।
যেমন হজ্জের কোন ফরয ছুটে গেলে পুনরায় হজ্জ করতে হয়। কিন্তু ওয়াজিব ছুটে
গেলে হজ্জ বাতিল হয় না; বরং কাফফারা দিলে হজ্জ আদায় হয়ে যায়। অনুরূপভাবে
ছালাতের কোন ফরয ছুটে গেলে তা পুনরায় আদায় করতে হয়। কিন্তু কোন ওয়াজিব ছুটে
গেলে সহো সিজদা দিলেই তা সম্পন্ন হয়ে যায় (ইবনু হাজার হায়তামী, আল-ফাতাওয়াল হাদীছিয়াহ ১/১৫৭)।
ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত অন্যান্য ইবাদতসমূহ পালন করলে ছওয়াব পাওয়া যাবে এবং যা পরিহারে ব্যক্তি পাপী হবে না; কিন্তু নিন্দাযোগ্য হবে। এগুলোর মধ্যে আবার গুরুত্বের কিছু তারতম্য রয়েছে। যেমন যে সকল ইবাদত রাসূল (ছাঃ) প্রায় নিয়মিতই করতেন ও করার জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন সেগুলো সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। উদাহরণ স্বরূপ ঈদায়েনের ছালাত, দিনে-রাতে বারো রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ, বিতরের ছালাত ইত্যাদি। আর যে সকল আমল রাসূল (ছাঃ) কখনও করেছেন, কখনও ছেড়েছেন; কিন্তু বিশেষ গুরুত্বারোপ করেননি, সেগুলো সুন্নাতে যায়েদাহ বা গায়ের মুওয়াক্কাদাহ। তবে এ সকল আমল অনেক ফযীলতপূর্ণ। যেমন আছরের পূর্বে দুই বা চার রাক‘আত ছালাত আদায় করা। আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’রাক‘আত ছালাত, মাগরিবের আযানের পরে ও জামা‘আতের পূর্বে দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোকে মুস্তাহাবও বলা হয়। আবার শরী‘আত যে কাজটি করা বা না করার ইখতিয়ার দিয়েছে সেটি মুবাহ, জায়েয বা হালাল। একে মানদুবও বলা হয় (আব্দুল করীম যায়দান, আল-ওয়াজীয ফী উছূলিল ফিক্বহ পৃ. ৩৯)। আবার কতগুলো আমল আছে, যা হারাম অর্থাৎ করলে শাস্তি রয়েছে এবং পরিহার করলে ছওয়াব পাওয়া যায়। যেমন মিথ্যা বলা, অযথা তর্ক করা ইত্যাদি (আবুদাউদ হা/৪৮০০; ছহীহুত তারগীব হা/২৬৪৮)। আবার কিছু আমল হারাম নয়; তবে রাসূল (ছাঃ) অপসন্দ করেছেন। এগুলোকে মাকরূহ বলা হয়। যেমন ঠেস বা হেলান দিয়ে বসে খাওয়া (বুখারী হা/৫৩৯৮; মিশকাত হা/৪১৬৮; আল-ওয়াযেহ ফী উছুলিল ফিক্বহ ৩৪ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুজাহিদুর রহমান, তলুইগাছা, সাতক্ষীরা।