উত্তর
: আয়াতের অর্থ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত
সমূহকে তার যথার্থ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে
বিচার করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোত্তম
উপদেশ দান করছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। হে
বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের
নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও
রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে
থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৮-৫৯)।
এখানে ‘আমানত’ কথাটি বহুবচনে এসেছে। যার দ্বারা আমভাবে কথা ও কাজসহ সবধরনের আমানত বুঝানো হয়েছে। বিগত দিনের সবচেয়ে বড় আমানত হ’ল ‘আহদে আলাস্ত্তর আমানত। যেদিন রূহানী জগতে সকল মানুষকে সামনে রেখে আল্লাহ বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রভু নই। জবাবে সবাই বলেছিল, হ্যাঁ’ (আ‘রাফ ৭/১৭২)। অথচ দুনিয়াতে এসে মানুষ অনেকে কাফির-মুনাফিক হয়ে গেছে এবং ফেলে আসা সেই স্বীকৃতি দানের আমানতের কথা ভুলে গেছে। অনুরূপভাবে নেতৃত্বের আমানতও এর অন্তর্ভুক্ত। সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন অযোগ্য ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তোমরা ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর’ (বুখারী হা/৫৯; মিশকাত হা/৫৪৩৯)। অনুরূপভাবে শরী‘আতের যাবতীয় বিধি-বিধানকেও বান্দার জন্য আমানত বলা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এই ‘আমানত’ অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল’ (আহযাব ৩৩/৭২)। এখানে আমানত অর্থ আনুগত্য, শরী‘আতের বিধি-বিধান, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ প্রভৃতি (তাফসীর ইবনু কাছীর ৬/৪৮৮-৮৯)। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত আয়াতের আলোকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচন বা ভোট প্রদান করা ফরযে আইন সাব্যস্ত করা কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল। পূর্বসূরী কোন মুফাস্সির এই আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেননি। উল্লেখ্য যে, নেতৃত্ব নির্বাচন, রাজনৈতিক সমর্থন বা ভোট প্রদান সকলের জন্য আমানত নয়। এটা শুধু বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা শূরা সদস্যদের জন্য আমানত, যারা নেতা নির্বাচনের জন্য আদিষ্ট।
-মো‘আয্যম হোসাইন, সিঙ্গাপুর।