ঈদ ও কুরবানী সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা

ঈদায়নের ছালাত

(১৯/জুন’১৬) প্রশ্ন (২৫/৩৪৫) : চাঁদ দেখার দো‘আটি কি কেবল ঈদের চাঁদের সাথে নির্দিষ্ট না ১২ মাস নতুন চাঁদ দেখলে উক্ত দো‘আটি পাঠ করা যাবে?

উত্তর :  দো‘আটি কেবল ঈদে নয় বরং প্রতি মাসে নতুন চাঁদ দেখে পাঠ করতে হবে। দো‘আটি হ’ল- আল্লা-হু আকবর, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াততাওফীক্বি লিমা তুহিববু ওয়া তারযা; রববী ওয়া রববুকাল্লা-হঅর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’ (দারেমী হা/১৬৮৭-৮৮; তিরমিযী হা/৩৪৫১; মিশকাত হা/২৪২৮; ছহীহাহ হা/১৮১৬)

(২১/আগষ্ট’১৮) প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। এভাবে তাকবীর ধ্বনি বলা ও বলতে বলা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ বলেন, আবু হুরায়রা ও ইবনু ওমর যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাযারে বের হতেন এবং সশব্দে তাকবীরধ্বনি দিতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিতেন। তারা কেবল এই কাজের জন্যই বাযারে আসতেন (ফাকেহী, আখবারু মাক্কা হা/১৬৪৪; বুখারী হা/৩৭৫, ৪/১২২ পৃ.; ইরওয়া হা/৬৫১, সনদ ছহীহ)। ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাঁবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং তাদের তাকবীর শুনে বাযারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১; আখবারু মাক্কা হা/২৫৮০; বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। মায়মূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান বিন ওছমান ও ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পিছনে আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলিতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন (বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। তবে এর মাধ্যমে যেন কেউ জামা‘আতবদ্ধ যিকিরের দলীল না নেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ জামা‘আতবদ্ধ যিকির বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/২৬৯)

(১৭/জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী’১৪) প্রশ্ন (৪০/১৬০) : ঈদের ছালাতের পূর্বে গযল গাওয়া বা বক্তব্য দেওয়া যায় কি?

উত্তর : ঈদের ছালাতের পূর্বে গযল গাওয়া বা বক্তব্য দেয়া যাবে না। কারণ এটা শরী‘আতে নতুন কাজ, যা পরিত্যাজ্য (মুসলিম হা/২০৮৬; মিশকাত হা/১৪০)। ঈদের মাঠে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করতেন। তারপর ছাহাবীগণের মুখোমুখী হয়ে খুৎবা দিতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪২৬)। ঈদের দিন সুন্নাত হ’ল, তাকবীর পাঠ করা। রাসূল (ছাঃ) উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে দিতে ঘর হ’তে ঈদগাহ অভিমুখে রওয়ানা দিতেন (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/৬৫০, ৩/১২৩ পৃঃ)। তাবেঈ বিদ্বান ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, লোকেরা ঈদের দিন সকালে তাকবীর ধ্বনি করতে করতে ঈদগাহে আসত। অতঃপর ইমাম এলে তাকবীর বন্ধ করত। এ সময় ইমামের সাথে তারাও তাকবীর দিত (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ইরওয়া ৩/১২১ পৃঃ; দারাকুৎনী হা/১৬৯৬, ১৭০০)

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (১/৪১) : ছহীহ হাদীছের আলোকে ঈদের ছালাতের সময় জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বসর (রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার ছালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী করে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায় শেষ করতাম। আর ছালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ)। অতএব ঈদুল আযহার ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত শুরু করা উচিত (দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : জুম‘আ ও ঈদের ছালাত একই দিনে হ’লে জুম‘আর ছালাত আদায় না করলে গোনাহ হবে কি?

উত্তর : জুম‘আ ও ঈদ একই দিনে হ’লে ঈদের ছালাত আদায় করার পর জুম‘আর ছালাত আদায় করা ইচ্ছাধীন বিষয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে ঈদ ও জুম‘আ একই দিনে হ’লে তিনি সকলকে নিয়ে ঈদের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর বলতেন, এক্ষণে জুম‘আ পড়তে আসা বা না আসা তোমাদের ইচ্ছাধীন বিষয়। তবে আমরা জুম‘আ পড়ব’ (আবুদাঊদ হা/১০৭৩)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (৪০/৪০) : ঈদের মাঠে মিম্বার কখন থেকে চালু হয়েছে? জনৈক আলেম কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, রাসূল (ছাঃ) মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে ঈদের খুৎবা দিতেন। এক্ষণে এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবায় মিম্বার ব্যবহার করতেন না। উমাইয়া খলীফা মারওয়ান বিন হাকাম (৬৪-৬৫ হিঃ) সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বার ব্যবহার করেন।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে পৌঁছে প্রথমে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর তারা তখন স্ব স্ব কাতারে বসা থাকত। ... রাবী বলেন, মানুষ এভাবে আমল করতে থাকে। পরে আমি মারওয়ানের সাথে ঈদুল ফিৎর অথবা ঈদুল আযহায় গেলাম। তখন তিনি মদীনার আমীর। মাঠে এসে দেখি কাছীর ইবনুছ ছালত মাটি ও কাঁচা ইট দ্বারা একটি মিম্বার তৈরী করেছে। মারওয়ান মিম্বরে চড়ে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিতে চাইলে আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি জোরপূর্বক মিম্বরে উঠে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ্র কসম! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করলে। মারওয়ান বললেন, আবু সাঈদ! তুমি যে নিয়ম জান ঐ নিয়ম এখন চলবে না। আমি বললাম, আমি যে নিয়ম জানি তাতেই কল্যাণ রয়েছে। তখন মারওয়ান বললেন, মানুষ ছালাতের পর আমার খুৎবা শুনার জন্য বসে না। তাই আমি খুৎবাকে ছালাতের পূর্বে করেছি’ (বুখারী হা/৯৫৬; মুসলিম, হা/৮৮৯ ‘ঈদায়েন-এর ছালাত’ অধ্যায়)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মারওয়ান ঈদের দিন মিম্বার নিয়ে বের হ’লেন এবং ছালাতের পূর্বেই খুৎবা শুরু করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের বিরোধিতা করলে। ঈদের দিন তুমি মিম্বর বের করলে যা কখনো এখানে বের হয়নি! আবার তুমি ছালাতের পূর্বে খুৎবাও শুরু করলে! একথা শুনে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি কে? তখন উপস্থিত অন্যরা বলল, অমুক। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান (আবুদাঊদ হা/১১৪০)। এই হাদীছ শুনানোর মাধ্যমে তিনি ঐ ব্যক্তির প্রতিবাদকে সমর্থন করলেন এবং প্রকারান্তরে তিনি ছালাতের পূর্বে খুৎবা ও মিম্বার উভয়েরই প্রতিবাদ করলেন।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে মিম্বর মসজিদ হ’তে বের করে মাঠে নিয়ে যাওয়া হ’ত না, সর্বপ্রথম মারওয়ান ইবনুল হাকাম এটি করেছেন’ (যাদুল মাআদ ১/৪৩১ পৃঃ)

উপরোক্ত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খলীফা মারওয়ানই তার শাসনামলে সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বারের প্রচলন ঘটান। আবু সাঈদ (রাঃ) ও অন্যান্যগণ যার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।

এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে দিয়েছেন মর্মে প্রশ্নকারীর উপস্থাপিত দলীলগুলির বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :

(১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি কুরবানীর ঈদে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন খুৎবা শেষ করলেন, তখন মিম্বার থেকে নামলেন’ (আহমাদ হা/১৪৯৩৮, আবুদাঊদ হা/২৮১০; তিরমিযী হা/১৫২১)

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি মুত্ত্বালিব ও জাবের (রাঃ)-এর মাঝে ইনক্বিতা‘ বা সনদে বিচ্ছিন্নতার দোষে দুষ্ট...। রাবী মুত্ত্বালিব একজন মুদাল্লিস রাবী। অতএব এরূপ বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। তাছাড়া অন্য বর্ণনায় এ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমে জাবের থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেখানে মিম্বারের কথা উল্লেখ নেই (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩-এর আলোচনা দ্রঃ)

(২) অন্যত্র জাবের (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা শেষে অবতরণ করে নারীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন(বুখারী হা/৯৭৮)। এ হাদীছের ব্যাপারে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘ইতিপূর্বে ‘মুছাল্লার দিকে বের হওয়া’ অনুচ্ছেদে পাওয়া গেছে যে, রাসূল (ছাঃ) ঈদের মুছাল্লায় যমীনের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তাই সম্ভবতঃ রাবী স্থান পরিবর্তনকে অবতরণ করা শব্দে এনেছেন’(ضَمَّنَ النُّزُولَ مَعْنَى الاِنْتِقَالِ) (ফাৎহুল বারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ২/৪৬৭)

(৩) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ঈদের মুছাল্লা সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঈদের দিন রাসূল (ছাঃ)(أَتَى الْعَلَمَ الَّذِى عِنْدَ دَارِ كَثِيرِ بْنِ الصَّلْتِ) কাছীর বিন ছালতের বাড়ির সামনে যে  নিশানা ছিল সেখানে আসলেন এবং ছালাত আদায়ের পর খুৎবা দিলেন (বুখারী হা/৯৭৭)

উল্লেখ্য যে, হাদীছে বর্ণিত নিশানা এবং কাছীর ইবনুছ ছালতের বাড়ী কোনটিই রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তা পরবর্তীতে তৈরীকৃত। কারণ হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ)-এর মুছাল্লা ছিল খোলা ময়দান। সেখানে কোন সুৎরা বা নিশানা ছিল না। ফলে তার সামনে একটি বর্শা পুঁতে দেওয়া হ’ত এবং তিনি সেদিকে ফিরে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু মাজাহ হা/১৩০৪, ইবনু রজব হাম্বলী, ফৎহুল বারী হা/৯৭৭ এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। অর্থাৎ পরবর্তীতে সেখানে বাড়ি এবং নিশানা নির্মিত হওয়ার পর ইবনু আববাস (রাঃ) ঐ ব্যক্তিকে সেগুলির মাধ্যমে স্থানটি চিনিয়ে দিচ্ছিলেন মাত্র।

(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে জুম‘আ, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিৎরের খুৎবা দিতেন’। এ হাদীছটি যঈফ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩)

সুতরাং সার্বিক পর্যালোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের খুৎবা মিম্বারে দেয়ার প্রমাণে কোন বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য দলীল নেই। সুতরাং মিম্বারহীন খোলা ময়দানে দাঁড়িয়েই খুৎবা দিতে হবে।

১৫/সেপ্টেম্বর’১২ (৩৫/৪৭৫) : ‘পাঁচটি রাত্রির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রজব মাসের ১ম রাত্রি, শা‘বানের মধ্যরাত্রি, জুম‘আর রাত্রি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রি।’ উক্ত হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : হাদীছটি মওযূ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৫২)।

(১৬/জুলাই’১৩) প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) : ঈদের রাত্রিতে সারারাত ইবাদত করার কোন বিশেষ ফযীলত আছে কি?

উত্তর : বিশেষ কোন ফযীলত ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (ইবনু মাজাহ হা/১৭৮২; যঈফাহ হা/৫২১, ৫১৬৩)। এ মর্মে আরো একটি জাল বর্ণনা এসেছে, যে ব্যক্তি চারটি রাত তথা- তারবিয়াহ, আরাফাহ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রি জাগরণ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২২)

(১৯/সেপ্টেম্বর’১৬) প্রশ্ন (৫/৪৪৫) : পুরুষদের সাথে নারীদের ঈদের ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা না থাকলে একই ইমাম পুরুষদের ছালাত আদায় করিয়ে পরে মহিলাদের নিয়ে পৃথক জামা‘আত খুৎবা সহ ছালাত আদায় করাতে পারবে কি?

উত্তর : পারবে। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে পিছনে এশার ছালাত পড়তেন এবং পরে নিজ মহল্লায় গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। এক্ষণে ইমাম না পাওয়ার কারণে যদি এরূপ করতে হয়, তাহ’লে তাতে কোন বাধা নেই।

(২০/ডিসেম্বর’১৬) প্রশ্ন (৩৪/১১৪) : ঈদের জামা‘আতে একবার শরীক হয়ে পরে কারণবশতঃ অন্য স্থানে এসে জামা‘আত হ’তে দেখলে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?

উত্তর : বিশেষ অবস্থায় এটি পড়া যাবে। প্রথমটি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ হিসাবে এবং পরেরটি নফল হিসাবে। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে জামা‘আতের সাথে এশার ছালাত পড়তেন এবং নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। পরেরটি তাঁর জন্য নফল হ’ত (বায়হাকী, দারাকুৎনী; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১৫১)

(১৬/জানুয়ারী’১৩) প্রশ্ন (৩৫/১৫৫): একজন ইমাম ঈদের দিন ১ ঘন্টার ব্যবধানে একাধিক জামা‘আতে ইমামতি করতে পারে কি? ছাহাবায়ে কেরামের জীবনে এরূপ কোন আমল আছে কি? শরী‘আতে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর: একই ইমাম একাধিক বার একই ছালাত পড়িয়েছেন মর্মে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণের কোন আমল পাওয়া যায় না। তবে একই ছালাত একাধিকবার পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে এশার ছালাত পড়তেন এবং নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। এক্ষণে ইমামের অভাবের কারণে যদি এরূপ করতে হয়, তাহলে তা শরী‘আতে গ্রহণযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৮/৪০৮) : ঈদের খুৎবা একটি না দু’টি? ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদায়নের খুৎবা ১টি। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে বের হ’লেন এবং সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করলেন এবং দান-ছাদাক্বার নির্দেশ দিলেন... (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯, ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি আযান ও ইক্বামত ছাড়াই খুৎবার পূর্বে ছালাত শুরু করলেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বেলালের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহ্র প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন এবং লোকদের উপদেশ দিলেন, পরকালের কথা স্মরণ করালেন এবং আল্লাহ্র আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর মহিলাদের দিকে অগ্রসর হ’লেন। এমতাবস্থায় তাঁর সাথে বেলাল ছিল। তাদেরকে তিনি আল্লাহভীতির উপদেশ দিলেন এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করালেন (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৪৬ ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের খুৎবার মাঝে বসতেন না এবং তাঁর খুৎবা ছিল একটি (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১৪৬)। দুই খুৎবার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই, বরং যা আছে তা যঈফ ও মুনকার (ইবনু মাজাহ হা/১২৮৯, মাজমাউয  যাওয়ায়েদ হা/৩২৩৯, যঈফাহ হা/৫৭৮৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩২২ পৃঃ)

ইমাম বায়হাক্বী, ছান‘আনী ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল (বায়হাক্বী ৩/২৯৯ পৃঃ  হা/৬০০৬-এর পরের আলোচনা;  মির‘আত ২/৩৩০-৩৩১; ৫/৩১; সুবুলুস সালাম ১/৪৩২)

উল্লেখ্য, যারা ঈদায়নের দু’টি খুৎবা সমর্থন করেন, তারা মূলত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন। যেমন সিমাক (রাঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তারপর অল্প বসতেন, অতঃপর পুনরায় দাঁড়াতেন (নাসাঈ হা/১৫৮৩-৮৪, ১৪১৮)। অত্র হাদীছে দু’খুৎবার মাঝে বসা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটি জুম‘আর খুৎবা না ঈদের খুৎবা তা প্রমাণিত হয় না। কিন্তু জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে সরাসরি জুম‘আর কথা বলা হয়েছে (নাসাঈ হা/১৪১৭; আবুদাঊদ হা/১০০৩)। এছাড়া হাদীছটি কুতুবে সিত্তাহসহ প্রায় সকল মুহাদ্দিছ ‘জুম‘আর খুৎবা’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কেউই ঈদের ছালাত অধ্যায়ে বর্ণনা করেননি। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটা জুম‘আর জন্য খাছ।

আলবানী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট, ঈদের সাথে নয় (যঈফাহ হা/৫৭৮৯)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব ঈদায়নের জন্য একটি খুৎবাই সুন্নাত। (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ২০৪ পৃ.)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২১/৪৬১) : ঈদের ছালাত আদায়ের পর একাধিক ব্যক্তি খুৎবা দিতে পারবেন কি?

উত্তর : না। বরং একজন ব্যক্তিই খুৎবা দিবেন। এটাই রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত (মুসলিম হা/৮৮৫, মিশকাত হা/১৪৪৬)। ওযরবশতঃ কাউকে মাঝপথে খুৎবা পরিত্যাগ করতে হ’লে অপরজন প্রথম থেকে খুৎবা শুরু করবেন (ওছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৮)

(১৬/অক্টো’১২) প্রশ্ন (১/১) : ঈদায়নের ছালাতের তাকবীর কয়টি? ছয় তাকবীরের পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদায়নের ছালাতে অতিরিক্ত তাকবীর ১২টি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহাতে প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন রুকূর দুই তাকবীর ব্যতীত’ এবং ‘তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’ (আবুদাঊদ হা/১১৫০; ইবনু মাজাহ হা/১২৮০, দারাকুৎনী হা/১৭০৪, ১৭১০, সনদ ছহীহ) কাছীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’। কাছীর বিন আব্দুল্লাহ বর্ণিত অত্র হাদীছ সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীছটির সনদ ‘হাসান’ এবং এটিই ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত ‘সর্বাধিক সুন্দর’ রেওয়ায়াত (তিরমিযী হা/৫৩৬ সনদ ছহীহ)। তিনি আরও বলেন যে, আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ঈদায়নের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিকতর ছহীহ আর কোন রেওয়ায়াত নেই এবং আমিও সে কথা বলি’ (বায়হাক্বী ৩/২৮৬; মির‘আত ২/৩৩৯)

চার খলীফা ও মদীনার শ্রেষ্ঠ সাত জন তাবেঈ ফক্বীহ ও খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয সহ প্রায় সকল ছাহাবী, তাবেঈ, তিন ইমাম ও অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ইমামগণ এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর দুই প্রধান শিষ্য আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বারো তাকবীরের উপরে আমল করতেন। ভারতের দু’জন খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী ও আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বারো তাকবীরকে সমর্থন করেছেন (মির‘আত ২/৩৩৮, ৩৪১; ঐ, ৫/৪৬, ৫২)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ছয় তাকবীরে’ ঈদের ছালাত আদায় করেছেন- মর্মে ছহীহ বা যঈফ কোন স্পষ্ট মরফূ হাদীছ নেই। ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায় চার তাকবীর’ বলে মিশকাতে এবং ‘নয় তাকবীর’ বলে মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে যে হাদীছ এসেছে, সেটিও মূলতঃ ইবনু মাসঊদের উক্তি। তিনি এটিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধিত করেননি। উপরন্তু উক্ত রেওয়ায়াতের সনদ সকলেই ‘যঈফ’ বলেছেন (বায়হাক্বী ৩/২৯০; নায়ল ৪/২৫৪, ২৫৬; মির‘আত ৫/৫৭; আলবানী, মিশকাত হা/১৪৪৩)

ঊল্লেখ্য যে, ইমাম ত্বাহাবী ‘কোন কোন ছাহাবী’ থেকে ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায়’ মর্মে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যা তিনি ও শায়খ  আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন (ছহীহাহ হা/২৯৯৭)। যদিও নববী, আসক্বালানী, যায়লাঈ প্রমুখ প্রায় সকল বিদ্বান হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। তবে আলবানী তাঁর দীর্ঘ আলোচনা শেষে বলেছেন, সবটাই জায়েয। যদিও সাত ও পাঁচ তাকবীর আমার নিকটে অধিকতর প্রিয়। কেননা এর বর্ণনাকারী সর্বাধিক’। আমরাও বলি, সাত ও পাঁচ মোট ১২ তাকবীরের হাদীছসমূহ অধিকতর ছহীহ এবং সংখ্যায় অধিক। অতএব বিতর্কিত বর্ণনাসমূহ বাদ দিয়ে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছের উপর আমল করাই উত্তম।

ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ) বলেন, ‘জানাযার চার তাকবীরে ন্যায়’ মর্মের বর্ণনাটি যদি ‘ছহীহ’ বলে ধরে নেওয়া হয়, তথাপি এর মধ্যে ছয় তাকবীরের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ তাকবীরে তাহরীমা সহ ১ম রাক‘আতে চার ও রুকূর তাকবীর সহ ২য় রাক‘আতে চার তাকবীর এবং ১ম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে ও ২য় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পরে তাকবীর দিতে হবে বলে কোন কথা সেখানে নেই (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ৫/৮৪ পৃঃ)। অতএব ১২ তাকবীরের স্পষ্ট ছহীহ হাদীছের উপরে আমল করাই একান্তভাবে কর্তব্য।

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৪০/৪৮০) : আমি একজন নতুন আহলেহাদীছ। আমাদের ঈদগাহে ছয় তাকবীরে ঈদের ছালাত হয়। এমতাবস্থায় ইমামের পিছনে ১২ তাকবীর দিলে আমার ছালাত হবে কি?

উত্তর : ইমামের পিছনে ১২ তাকবীর দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যক (বুখারী হা/৬৮৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। এতে ছালাতের ক্ষতি হ’লে সরাসরি ইমাম দায়ী হবেন (বুখারী গা/৬৯৪, মিশকাত হা/১১৩৩)। তাছাড়া ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীরে কমবেশী হ’লে তাতে ছালাতের ক্ষতি হয় না (মির‘আত ৫/৫৩)

(১৮/আগষ্ট’১৫) প্রশ্ন (১৪/৪১৪) : আমাদের এলাকা হানাফী অধ্যুষিত। আমি কি তাদের সাথে ৬ তাকবীরে ঈদের ছালাত পড়ব, না ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকব?

উত্তর : ঈদায়নের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছগুলি ছহীহ (আবুদাঊদ হা/১১৫০; ইবনু মাজাহ হা/১২৮০, দারাকুৎনী হা/১৭০৪, ১৭১০, সনদ ছহীহ)। সেকারণ ১২ তাকবীরে ঈদের ছালাত হয়, এমন জামা‘আতে শরীক হওয়া যরূরী। তবে সম্ভব না হ’লে ৬ তাকবীরের জামা‘আতেই শরীক হবে। কেননা এতে সুন্নাত অনুসরণ না হলেও ছালাত বাতিল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমামগণ তোমাদের ছালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষণে তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ’ (বুখারী হা/৬৯; মিশকাত হা/১১৩৩)

(২১/জুন’১৮) প্রশ্ন (৩৩/৩৫৩) : আমার এলাকাটি হানাফী অধ্যুষিত হওয়ায় ঈদের ছালাত অনেক দেরীতে আদায় করা হয়। এক্ষণে আমি আউয়াল ওয়াক্তে একাকী তা আদায় করে নিব কি?

উত্তর : না। কারণ ঈদের ছালাত একাকী আদায় করার বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছওম সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ছিয়াম রাখবে। ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা  সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ঈদ করবে (তিরমিযী হা/৭৯৭, ইবনু মাজাহ হা/১৬৬০; ছহীহাহ হা/২২৪)। বরং ঈদের ছালাতের শেষ সময় তথা সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত (আল-মাওসু‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৭/২৪৩) দেরীতে হ’লেও জামা‘আতের সাথে আদায় করবে। ঈদুল ফিৎরে সূর্য দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার ছালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী করে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায় শেষ করতাম। আর ছালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ; দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)

(১৯/নভেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৪/৪৪) : ঈদের ছালাতে ছানা পড়তে হবে কি? যদি পড়তে হয় তবে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো ছানা পাঠের আগে না পরে দিতে হবে?

উত্তর : ছানা পড়তে হবে এবং তা তাকবীরে তাহরীমার পর ও অতিরিক্ত তাকবীরের পূর্বে পাঠ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন তাকবীরে তাহরীমার পর দো‘আয়ে ইস্তিফতাহ বা ছানা পড়তেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে পাঠ্য’ অনুচ্ছেদ)। ঈদের ছালাতেও অনুরূপভাবে প্রথম তাকবীরের পর ছানা পাঠ করতে হবে (ইবনু কুদামা, মুগনী, মাসআলা নং ১৪১৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২০; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২৪০)

(১৭/ডিসেম্বর’১৩) প্রশ্ন (২১/১০১) : জনৈক আলেম বলেন যে, ঈদের ছালাতে ছানা পাঠ করা যাবে না। উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখনই কোন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখনই তাকবীরে তাহরীমের পর দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পড়তেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে পঠনীয়’ অনুচ্ছেদ)। ঈদের ছালাতেও অনুরূপভাবে প্রথম তাকবীরের পর ছানা পাঠ করতে হবে (ইবনু কুদামা, মুগনী মাসআলা নং ১৪১৬; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২৪০)। তবে জানাযার ছালাতে ছানা না পড়াই মুস্তাহাব (নববী, মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/২৩৪, মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ১৭/১১৯)

(২০/জুন’১৭) প্রশ্ন (২৩/৩৪৩) : ঈদের ছালাত আদায় করতে এসে অর্ধশতাধিক মানুষ পেলাম যারা ছালাত পায়নি এবং ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন। এক্ষণে তারা পুনরায় জামা‘আত করতে পারবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় পুনরায় জামা‘আত করবে। অর্থাৎ ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর সহ দু’রাক‘আত ছালাত জামা‘আতে আদায় করবে। তবে ইমামের খুৎবা শ্রবণের পর এটি আদায় করা উত্তম হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/৩০৬)। ইমাম বুখারী (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন, যার ঈদের ছালাত ছুটে যাবে, সে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিবে’। ঈদের জামা‘আত ছুটে গেলে আনাস (রাঃ) তার গোলামকে পরিবার-পরিজন ও অন্যদের নিয়ে জামা‘আত করে বাড়ীতে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। ইকরিমা ও আতা‘ এমন ফৎওয়াই প্রদান করেছেন (বুখারী ‘ঈদায়েন’ অধ্যায় ২৫ অনুচ্ছেদের তা‘লীক্ব, ৪/১৫৪ পৃ.)। এছাড়া ক্বাতাদা, নাখঈ, হাসান বছরীসহ বহু তাবেঈ এমন ফৎওয়া দিয়েছেন (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫৭১৬; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৮৫৭, ৫৮৫৮; আল-মুগনী ২/২৯০)

(২১/জুন’১৮) প্রশ্ন (৪/৩২৪) : একটি বইয়ে লেখা হয়েছে, ঈদায়নের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছগুলি যঈফ। শায়খ আলবানী ব্যতীত অন্য কোন মুহাদ্দিছ এসব হাদীছকে ছহীহ বলেননি। এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : বক্তব্যটি সত্য নয়। ঈদের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছকে ইমাম বুখারী, তিরমিযী, আবুদাউদ, নববী, হাফেয ইরাকী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু হাজার আসক্বালানী, আহমাদ শাকের ও হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্বসহ অসংখ্য মুহাদ্দিছ ছহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি উল্লেখ করে ‘হাসান’ বলার পর বলেন, নবী করীম (ছাঃ) থেকে এ ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে এটিই সর্বাধিক সুন্দর (তিরমিযী হা/৫৩৬-এর আলোচনা)। তিনি আরো বলেন, আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঈদায়নের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিক আর কোন ছহীহ রেওয়ায়াত নেই’ (ইলালুত তিরমিযী ১/২৮৭)।  ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ছাহাবী ও ইমাম প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/২২) । ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আমর ইবনু শু‘আইব বর্ণিত হাদীছটি ‘ছহীহ’। এটি আবুদাউদসহ অন্যান্যরা ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন (আল-মাজমূ‘ ৫/১৬)। ইরাক্বী বলেন, এর সনদ বিশুদ্ধ (নায়লুল আওতার ৩/৩৫৪)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ও আলী ইবনুল মাদীনী ও বুখারী একে ছহীহ বলেছেন (আত-তালখীছ ২/২০০)। আহমাদ শাকের বলেন, এর সনদ ‘ছহীহ’ (আহমাদ হা/৬৬৮৮)। হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্ব মুসনাদে আহমাদ, আবুদাউদ ও ইবনু মাজাহর তাহকীকে এর সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন (আহমাদ হা/৬৬৮৮, ২৪৪৫৪)। ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, সবচেয়ে উত্তম হ’ল প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বার তাকবীর দেওয়া। কারণ এর উপরে এসেছে অনেকগুলি মরফূ হাদীছ, যার কতকগুলি ‘ছহীহ’ ও কতকগুলি ‘হাসান’। ...আর বারো তাকবীরের উপরে আমল করেছেন মহান চার খলীফা হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ)’ (মির‘আত ৫/৫৩ পৃঃ)। অতএব ঈদের ছালাতে অতিরিক্ত ১২ তাকবীর প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত (বিস্তারিত দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ ৩৩-৩৭)

১৫/এপ্রিল’১২ (৭/২৪৭) : ঈদের মাঠে কোলাকুলি করা যাবে কি? কোলাকুলি কি এক দিকে করতে হয়?

উত্তর : ঈদের মাঠে কোলাকুলি করার বিষয়ে কোন দলীল পাওয়া যায় না। কোলাকুলি কোন দিকে কয়বার করতে হবে তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

(২১/সেপ্টেম্বর’১৮) প্রশ্ন (১/৪৪১) : ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তাকাববালাল্লাহু... বলা সাথে সাথে ঈদ মোবারক বলা বিদ‘আত হবে কি?

উত্তর : ঈদ মোবারক (আপনার ঈদ বরকতপূর্ণ হৌক) বলা বিদ‘আত নয়। কেননা এটি ইবাদত পালন বা বিশেষ ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় না। তাছাড়া ঈদের সময় অনেক ছাহাবী ও তাবেঈ এরূপ অভিনন্দনসূচক বাক্য ব্যবহার করেছেন। যেমন তাঁরা পরস্পর সাক্ষাৎকালে বলতেন, ‘তাকাববাল্লাহু মিন্না ও মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন) (মু‘জামুল কাবীর হা/১২৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭২০; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন হা/৪০০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩২৫৫; তামামুল মিন্না ১/৩৫৫, সনদ হাসান)। সুতরাং উক্ত দো‘আ বা আরও অনুরূপ দো‘আমূলক শব্দ ও বাক্য যেমন ঈদ মুবারাক, ঈদ সাঈদ প্রভৃতি ব্যবহার করায় দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ২৪/২৫৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১২৯; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৩/৩৭৭)

ঈদের তাকবীর

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২৯/১০৯) : রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত না হ’লেও সম্মানিত ইমামগণ থেকে বর্ণিত অনেক দো‘আ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহু আকবার কাবীরা.... আছীলা। এক্ষণে এসব দো‘আ পাঠ উত্তম বা সুন্নাত বলা যাবে কি?

উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত দো‘আটি জনৈক ছাহাবী পাঠ করলে রাসূল (ছাঃ) তার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, আমি বিস্মিত হ’লাম যে, তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হ’ল (মুসলিম হা/৬০১; মিশকাত হা/৮১৭)। এটি প্রমাণ করে যে, দো‘আটি রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক অনুমোদিত। তবে দো‘আটি ইমাম শাফেঈ ঈদায়েনের তাকবীর হিসাবে পড়তেন, যা রাসূল (ছাঃ) থেকে সরাসরি প্রমাণিত নয়। এতদসত্ত্বেও যেহেতু রাসূল (ছাঃ) ঈদের তাকবীর পাঠের জন্য আমভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তাই এর উপর আমল করা যাবে। অবশ্য একে সুন্নাত বলা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ম, বাণী ও মৌন সম্মতিকেই কেবল সুন্নাত বলা হয়। অনুরূপভাবে ছাহাবীগণের আমল বা বাণীর উপর শর্তসাপেক্ষে আমল করা যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১৪)। যেমন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে আরেকটি আছার বর্ণিত হয়েছে, যা সমাজে প্রসিদ্ধ- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ)

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (৩৩/৭৩) : ঈদের তাকবীর হিসাবে যে দো‘আগুলি পাঠ করা হয় তার কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : ঈদের তাকবীরের জন্য একাধিক দো‘আ সালাফে ছালেহীন থেকে প্রচলিত রয়েছে। ইমাম মালেক ও আহমাদ (রহঃ) বলেন, তাকবীরের শব্দ ও সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। হযরত ওমর, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ, ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ তাকবীর দিতেন ‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, বায়হাক্বী, সনদ ছহীহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪৩ পৃঃ)। অনেক বিদ্বান পড়েছেন, ‘আল্লা-হু আকবার কাবীরা, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাছীরা, ওয়া সুবহানাল্লা-হি বুকরাতাঁও ওয়া আছীলা’ (কুরতুবী ২/৩০৬-৭ পৃঃ)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এটাকে ‘সুন্দর’ বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ২/৩৬১ পৃঃ; নায়ল ৪/২৫৭ পৃঃ)। এছাড়া তাকবীর হিসাবে আরো দো‘আ বিভিন্ন আছারে বর্ণিত হয়েছে (বায়হাক্বী, ইরওয়া ৩/১২৬, ফৎহুলবারী ২/৪৬২; দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৯)

ঈদুল আযহা

১৫/ফেব্রুয়ারী’১২ (৬/১৬৬) : ঈদুল আযহার ছালাত শেষে খুৎবা না শুনে বাড়িতে এসে কুরবানী করলে উক্ত কুরবানী গ্রহণযোগ্য হবে কি?

উত্তর : ঈদুল আযহার ছালাতের পূর্বে কুরবানী করলে তা কবুল হবে না (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৭২)। ছালাত ও খুৎবা দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঈদের খুৎবা শুনার জন্য ঋতুবতী মহিলাদেরকেও ঈদগাহে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে (বুখারী হা/৩২৪)। তবে কোন যরূরী কারণে ছালাত শেষ করার পর খুৎবা না শুনেই যদি কেউ কুরবানী করে তবে তা কবুল হবে (নাসাঈ হা/১৫৭০; ইবনু মাজাহ হা/১২৯০)

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৫/৬৫) : ঈদের ছালাতের পর খুৎবার পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমরা প্রথম ছালাত দিয়ে শুরু করি। অতঃপর ফিরে আসি এবং কুরবানী করি। এক্ষণে যে ব্যক্তি এটা করল, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি তার পূর্বে করল, সে তার নিজের পরিবারের জন্য গোশত পাঠালো। এতে কুরবানীর কোন অংশ নেই’ (বুখারী হা/৯৬৫, মুসলিম হা/১৯৬১, মিশকাত হা/১৪৩৫)। এখানে ছালাত বলতে খুৎবাসহ ছালাত বুঝানো হয়েছে। ইবনু কুদামা বলেন, ছালাত ও খুৎবা সম্পন্ন হওয়ার পরই কুরবানী করা হালাল হবে (মুগনী ৯/৪৫২, মাসআলা নং ৭৮৮৩)। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কেউ খুৎবার পূর্বে কুরবানী করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এরূপ কাজ হ’তে বিরত থাকাই কর্তব্য। এক্ষণে যদি কেউ বাধ্যগত অবস্থায় খুৎবার পূর্বে কুরবানী করে, তবে তার বিষয়টি বাধ্যগত বলেই গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

ঈদের ছালাতের স্থান

১৫/এপ্রিল’১২ (২২/২৬২) : ঈদগাহ তৈরীর জন্য জমি ওয়াকফ করা কি শর্ত? সরকারী বা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের মাঠে অথবা সরকারী জমিতে ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : ঈদগাহ হ’ল ছালাতের স্থান। যাতে তা উক্ত কাজেই ব্যবহৃত হয়, তার নিশ্চয়তার জন্য ওয়াফক করা আবশ্যক। মসজিদে নববীর জন্য মাটি ক্রয় করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জার সেটা বিনা পয়সায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে দিয়ে দেন। ওমর (রাঃ) যখন খায়বারের প্রাপ্ত জমি ওয়াক্ফ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরামর্শক্রমে বললেন, এটি বিক্রি হবে না, কাউকে দান করা যাবে না এবং এতে কেউ ওয়ারিছ হবে না। এটাই ছিল ইসলামে প্রথম ওয়াক্ফের ঘটনা (ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘ওয়াক্বফ’ অধ্যায়)। অতএব ভবিষ্যতে ফিৎনার হাত থেকে বাঁচার জন্য মসজিদ বা ঈদগাহের জমি লিখিতভাবে ওয়াক্বফ হওয়াই উত্তম। অন্যের মালিকানাধীন কোন জায়গায় ঈদের ছালাত আদায় করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

(১৬/নভে’১২) প্রশ্ন (৭/৪৭) : ঈদের মাঠ পাকা করা যাবে কি?

উত্তর : ঈদগাহের জন্য মেঝে পাকা করা, ছায়ার জন্য সামিয়ানা টাঙানো বা ছাদ করা কোনটাই আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) বা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে তোমরা অনেক ইখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আবশ্যিক হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অাঁকড়ে ধরা এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/১৬৫)। রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববীর মাত্র ৫০০ গজ পূর্বে ‘বাত্বহান’ সমতলভূমিতে খোলা ময়দানে ঈদের ছালাত আদায় করতেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭, মির‘আত ৫/২২ পৃঃ)। আমাদেরও সেটাই করা কর্তব্য।

(১৬/জানুয়ারী’১৩) প্রশ্ন (৩৪/১৫৪):  ঈদের ময়দানে ছওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়াই শামিয়ানা টানানো ও সাজ-সজ্জা করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? থাকলে তা কোন দলীলের ভিত্তিতে, জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদের ময়দানে মুছল্লীদের জন্য শামিয়ানার মাধ্যমে ছায়ার ব্যবস্থা করার কোন বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এবং তাঁর ছাহাবীগণ মসজিদে নববী থেকে ৫০০ গজ পূর্বে বাত্বহান প্রান্তরে খোলা ময়দানে ঈদায়নের ছালাত আদায় করতেন (মির‘আত ৫/২২)। সেখানে কোন ছায়ার ব্যবস্থা ছিল না। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) এক নেযা (সাড়ে ছয় হাত) পরিমাণ সূর্যোদয়ের পর ঈদুল আযহা এবং দুই নেযা পরিমাণ সূর্যোদয়ের পর ঈদুল ফিৎরের ছালাত আদায় করতেন (মির‘আত ৫/৬২, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৮)। অতএব সুন্নাত মেনে ছালাত আদায় করলে শামিয়ানার কোন প্রয়োজন হয় না।

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৮/৬৮) : মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করলে তাহিইয়াতুল মসজিদ পড়তে হবে কি?

উত্তর : ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করা হ’লে ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত তাহ্ইয়াতুল মসজিদ ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এটি মসজিদের সাথে সম্পর্কিত সুন্নাত, ঈদের ছালাতের সাথে নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে না বসে (বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪)। সুতরাং ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করলে তার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যদিও তখন নিষিদ্ধ সময় হয় (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু বায ১৩/১৫, শারহুল মুমতে‘ ৫/১৫৩)। আর ঈদগাহে আদায় করলে তার পূর্বে ও পরে কোন ছালাত নেই (বুখারী হা/৫৮৮৩; ইবনু মাজাহ হা/১২৯২)

(২২/জুলাই’১৯) প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) : সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। আনাস (রাঃ) বলেন, মদীনায় হিজরত করার পর মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাজ্জারকে বললেন, তোমরা তোমাদের বাগানটি আমার নিকটে বিক্রয় করে দাও। জবাবে তারা বলল, আমরা আপনার নিকট থেকে এর বিনিময়ে কোন মূল্য নেব না। কেবল আল্লাহ্র নিকট থেকে বিনিময় চাই। অতঃপর আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) তাদের সম্মতিক্রমে সেটি গ্রহণ করলেন ও সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন’ (বুখারী হা/১৮৬৮; মুসলিম হা/১২০১; আবুদাঊদ হা/৪৫৩; নাসাঈ হা/৭১০, ইবনু মাজাহ হা/৭৯১)। তাছাড়া সাধারণভাবে যেকোন স্থানে ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য ছালাতের স্থান এবং মাটিকে পবিত্র করে দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৬)।

কুরবানীর পশু

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (২৩/৬৩) :  ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কুরবানী করার বিধান কি? ঋণ পরিশোধ না করে কুরবানী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : কুরবানী করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব, ওমর ফারূক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী কখনো কখনো কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১১৩৯; মির‘আত ৫/৭২-৭৩)। এক্ষণে ঋণ যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করা যরূরী। তবে দাতার সম্মতিতে ঋণ দেরীতে পরিশোধ করে কুরবানী দেওয়ায় কোন বাধা নেই।

(১৭/ডিসেম্বর’১৩) প্রশ্ন (৯/৮৯) : জন্মগতভাবে শিং বা কান না থাকলে উক্ত পশু কুরবানী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : এরূপ পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যেহেতু রাসূল (ছাঃ) শিংওয়ালা পশু কুরবানী দিয়েছেন (বুখারী হা/১৭১২; মিশকাত হা/১৪৫৩) সেহেতু শিংওয়ালা পশু কুরবানী করাই উত্তম।

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (৮/৮) : দাঁত পড়ে যাওয়া পশু কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মোট চার ধরণের পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। যথা  স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণ-শীর্ণ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৪৬৫)। হাতমা (الْهَتْمَاءُ) অর্থাৎ কিছু দাঁত পড়ে যাওয়া পশু এর অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এরূপ পশু কুরাবানী করায় কোন বাধা নেই। তবে নিখুঁত ও সুন্দর পশু ক্রয় করাই উত্তম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু তায়মিয়াহ ২৬/৩০৮; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৩২)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৭/৪২৭) : খাসীকৃত প্রাণী কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? এ ধরনের প্রাণী দ্বারা কুরবানী কিভাবে জায়েয হবে? আমরা দেখেছি পাকিস্তান বা ভারতের অনেক এলাকায় খাসী কুরবানী না করার প্রচলন রয়েছে।

উত্তর : খাসীকৃত প্রাণী ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি ছাগলের  কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে সর্বদা দু’টি করে ‘খাসী’ (خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম হা/৭৫৪৭; আহমাদ হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭, সনদ ছহীহ)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৩১/৪৭১) : ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে কুরবানীর পশু মোটাতাজা করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : বিষাক্ত ইনজেকশন, ইউরিয়া সার বা ট্যাবলেট খাইয়ে পশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এটি কুরবানী বা সকল সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। কেননা এসব ব্যবহারে পশুর গোশত বিষাক্ত হয়ে যায়, যা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এতে মানুষ লিভার, কিডনী, ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সুতরাং নিশ্চিত ক্ষতিকর জেনেও এসব ব্যবহার করা কবীরা গোনাহ। এর মাধ্যমে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০২)। প্রতারণা করা ও ধোঁকা দেওয়ার কারণে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৬৭, ছহীহাহ হা/১০৫৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্ষতি করো না এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪১; আহমাদ হা/২৮৬৭)

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : কুরবানীর পশু ক্রয়ের কয়েকদিন পর কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা বা ক্রয় করার পর যদি কোন ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহ’লে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর নিকট হজ্জের হাদ্ঈ সমূহ আনা হ’লে তার মধ্যে একটি এক চক্ষুহীন ট্যারা উট পাওয়া যায়। তখন তিনি বলেন, ক্রয়ের পর এরূপ হ’লে এটা দিয়েই কাজ সম্পন্ন কর। আর ক্রয়ের পূর্বে এরূপ পেলে তা পাল্টে নাও’ (বায়হাক্বী হা/১০৫৪৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৩৬৩, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; মির‘আত ৫/৯৯)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (২৩/২৩) : হজ্জে গমনকারী পিতা সেখানে কুরবানী দিবেন। এক্ষণে বাড়ীতে অবস্থানকারী পরিবারের জন্য কুরবানী দিতে হবে কি?

উত্তর : হজ্জপালনকারীকে হজ্জের ওয়াজিব হিসাবে সেখানে নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে হয়। যা অনাদায়ে ফিদইয়া দিতে হয় (বাক্বারাহ ২/১৯৬)। এর সাথে পরিবারের কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। সেকারণ সামর্থ্য থাকলে বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করবে (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩, সনদ হাসান)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (২৮/২৮) : আমাদের এলাকায় ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ পূর্বেই কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি হয়ে যায়। এটা শরী‘আত সম্মত কি?

উত্তর : এরূপ ক্রয়-বিক্রয় দোষণীয় নয়। কারণ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে, যদি সেখানে পরিমাপ, পরিমাণ ও মেয়াদ নির্ধারিত থাকে (বুখারী হা/২২৪০, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৮৩)

(১৯/সেপ্টেম্বর’১৬) প্রশ্ন (২৭/৪৬৭) : কুরবানী মোট কয়দিন করা যাবে?

উত্তর : ১১, ১২, ১৩ই যিলহজ্জ তিনদিনের রাত-দিন যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে (বায়হাক্বী ৯/২৯৬-৯৭ পৃ. হা/১৯০২৯-৩৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩০, মির‘আত ৫/১০৬-০৯)

(২০/নভেম্বর’১৬) প্রশ্ন (১/৪১) : কুরবানীর নিয়তে ক্রয় করা পশু মৃতপ্রায় অবস্থা দেখলে করণীয় কি? যবেহ করে ছাদাক্বা করা, খেয়ে ফেলা বা বিক্রি করা যাবে কি?

উত্তর : এরূপ পশু যবেহ করে গোশত খাওয়া, ছাদাক্বা করা বা বিক্রয় করা সবই জায়েয। এর পরিবর্তে অন্য একটি পশু কুরবানী দেওয়া যরূরী নয়। তবে সক্ষমতা থাকলে দিতে পারবেন (দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ ২৫ পৃঃ)

কুরবানীর বিবিধ মাসায়েল

[১৩/ডিসে ’০৯] প্রশ্ন (৩৯/১১৯) যুলহিজ্জার চাঁদ উঠলে নখ, চুল ইত্যাদি না কেটে ঈদের ছালাতের পর কাটার এই সুন্নাতটি কি কেবল কুরবানী দাতার জন্য প্রযোজ্য হবে? সঠিক উত্তর দানে বাধিত করবেন।

উত্তরঃ হুকুমটি মূলতঃ কুরবানীদাতাদের জন্য প্রযোজ্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী প্রদানের ইচ্ছা রাখে সে যেন কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত স্বীয় চুল ও নখ কর্তন থেকে বিরত থাকে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৯)। তবে যারা কুরবানী দিতে অপারগ তারাও যদি খালেছ নিয়তে এ হুকুমটি পালন করেন তবে আল্লাহর নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে বলে আশা করা যায় (আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৭৯ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘আতীরাহ’ অনুচ্ছেদ)।

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৫/৬৫) : ঈদের ছালাতের পর খুৎবার পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমরা প্রথম ছালাত দিয়ে শুরু করি। অতঃপর ফিরে আসি এবং কুরবানী করি। এক্ষণে যে ব্যক্তি এটা করল, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি তার পূর্বে করল, সে তার নিজের পরিবারের জন্য গোশত পাঠালো। এতে কুরবানীর কোন অংশ নেই’ (বুখারী হা/৯৬৫, মুসলিম হা/১৯৬১, মিশকাত হা/১৪৩৫)। এখানে ছালাত বলতে খুৎবাসহ ছালাত বুঝানো হয়েছে। ইবনু কুদামা বলেন, ছালাত ও খুৎবা সম্পন্ন হওয়ার পরই কুরবানী করা হালাল হবে (মুগনী ৯/৪৫২, মাসআলা নং ৭৮৮৩)। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কেউ খুৎবার পূর্বে কুরবানী করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এরূপ কাজ হ’তে বিরত থাকাই কর্তব্য। এক্ষণে যদি কেউ বাধ্যগত অবস্থায় খুৎবার পূর্বে কুরবানী করে, তবে তার বিষয়টি বাধ্যগত বলেই গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

(১৮/ডিসেম্বর’১৪)প্রশ্ন (১৭/৯৭) : কুরবানী একটির বেশী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : সামর্থ্য থাকলে একাধিক কুরবানী করায় কোন বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হ’তে দু’টি ‘খাসি’ কুরবানী করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫৩)। এছাড়া বিদায় হজ্জের দিন তিনি একশত উট কুরবানী করেছিলেন (ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৬)। তবে নিজ ও পরিবারের পক্ষে একটি ছাগল কুরবানী করাই যথেষ্ট (মুসলিম হা/১৯৬৭, মিশকাত হা/১৪৫৪)। তাবেঈ বিদ্বান ‘আতা বিন ইয়াসার (রহঃ) বলেন, আমি আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে কুরবানী কেমন ছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘ একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিতেন। অতঃপর তা খেতেন ও অন্যকে খাওয়াতেন। অবশেষে এখন লোকেরা গর্ব করছে, যেমন তুমি দেখছ’ (তিরমিযী হা/১৫০৫, ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৭)। ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, ‘আমার পরিবার আমাকে কঠোরতার অভিযোগ করে যখন থেকে আমি সুন্নাত জানতে পারি। তখন লোকেরা পরিবার পিছু একটি বা দু’টি করে বকরী কুরবানী দিত। অথচ এখন আমার প্রতিবেশীরা আমাকে কৃপণ বলে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৮)

(২৩/ অক্টোবর’১৯) প্রশ্ন (১৫/১৫) : বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ঈদের জামা‘আত মসজিদে হয়েছে। ফলে পূর্বে পুরুষদের জামা‘আত ও পরে মহিলাদের জামা‘আত হয়। এক্ষণে মহিলাদের জামা‘আতের পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : পুরুষদের ঈদের জামা‘আত সম্পন্ন হ’লেই কুরবানী করা যাবে। উক্ত স্থানে মহিলাদের ঈদের জামা‘আত অতিরিক্ত। অতএব সেজন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।

(২০/নভেম্বর’১৬) প্রশ্ন (১৫/৫৫) : সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও অবস্থানগত কারণে কুরবানী করার সুযোগ না থাকলে সমপরিমাণ মূল্য দান করে দিলে তাতে কুরবানীর নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : নেকী পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় নিজে করতে না পারলে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে কুরবানী করিয়ে নেওয়ায় বাধা নেই।

(২০/মার্চ’১৭) প্রশ্ন (২০/২২০) : কুরবানীর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর চামড়া মসজিদের উন্নয়নে লাগানো যাবে না। কারণ সূরা তওবাহর ৬০ আয়াতে যাকাতের যে ৮টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : কেউ যদি আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিনে কুরবানী করতে চায়, তবে সে ঈদের দিন নখ-চুল কর্তন করতে পারবে কি?

উত্তর : না। যেদিন কুরবানী করবে সেদিনই নখ ও চুল কাটাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার এরাদা রাখে, তারা যেন যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী করা পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’ (মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশখাত হা/১৪৫৯)। অত্র হাদীছে কুরবানী করাকে শেষ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে (উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন হা/১৭০৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : কুরবানীর পশু ক্রয়ের কয়েকদিন পর কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা বা ক্রয় করার পর যদি কোন ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহ’লে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর নিকট হজ্জের হাদ্ঈ সমূহ আনা হ’লে তার মধ্যে একটি এক চক্ষুহীন ট্যারা উট পাওয়া যায়। তখন তিনি বলেন, ক্রয়ের পর এরূপ হ’লে এটা দিয়েই কাজ সম্পন্ন কর। আর ক্রয়ের পূর্বে এরূপ পেলে তা পাল্টে নাও’ (বায়হাক্বী হা/১০৫৪৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৩৬৩, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; মির‘আত ৫/৯৯)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (১৯/৪৫৯) : স্বামী-সন্তানহীন বিধবা নারী সক্ষম হলে তার জন্য কুরবানী করা কর্তব্য হবে কি?

উত্তর : হ্যাঁ। কারণ কুরবানী করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ইবনু হাযম বলেন, কুরবানীর বিধান মুক্বীম-মুসাফির সবার জন্য প্রযোজ্য এতে কোন পার্থক্য নেই, অনুরূপভাবে নারীদের জন্যও প্রযোজ্য (মুহাল্লা ৬/৩৭)। উল্লেখ্য যে, পরিবারের সাথে থাকলে পরিবার প্রধান কিংবা পরিবারের কোন একজনের কুরবানীই সবার জন্য যথেষ্ট হবে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২৫/৪৬৫) : পরিবারসহ বিদেশে অবস্থানকারী কোন প্রবাসী অধিক মূল্যের কারণে সেখানে কুরবানী না করে দেশে ভাই-বোনের পরিবারে কুরবানী করতে পারবে কি?

উত্তর : সামর্থ্য থাকলে নিজ অবস্থানস্থলেই কুরবানী করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও যারা চায় না তাদেরকে ও যারা চায় তাদেরকে’ (হজ্জ ২২/৩৬)। অত্র আয়াতে নিজে ভক্ষণ ও অপরকে দান করার নির্দেশনা এসেছে।

অতএব অবস্থানস্থলের মূল্য অনুযায়ী সামর্থ্য থাকলে কুরবানী করবে। অন্যথায় বিরত থাকবে। অন্যদেশে কুরবানী করলে তা সুন্নাত মোতাবেক হবে না (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২২৪)।

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : আমি বিদেশে গবেষণারত। এখানে পশু কুরবানীর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমি কি নিজ দেশে কিংবা কোন গরীব মুসলিম দেশে কুরবানীর টাকা পাঠিয়ে নিজের কুরবানীর হক আদায় করতে পারি?

উত্তর : সুন্নাত হ’ল যেখানে অবস্থান করবে সেখানে কুরবানী করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও যারা চায় না তাদেরকে ও যারা চায় তাদেরকে’ (হজ্জ ২২/৩৬)। অত্র আয়াতে নিজে ভক্ষণ করা ও অপরকে দান করার নির্দেশনা এসেছে। তবে অবস্থানরত দেশে কুরবানী করার কোন উপায় না থাকলে নিজ দেশে আত্মীয়-স্বজনের নিকট টাকা পাঠিয়েও কুরবানীর হক আদায় করা যাবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২২৪, ২৫/৭৬-৭৭)

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (১৯/৯৯) : রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ‘তুমি (কুরবানীর দিনে) তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ খাট করবে এবং নাভীর নীচের লোম ছাফ করবে। এটাই তোমার জন্য আল্লাহ্র নিকট পূর্ণ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে’। অত্র হাদীছটির ব্যাপারে শু‘আইব আরনাউত্ব সনদ হাসান এবং আলবানী সনদ যঈফ বলেছেন। উপরোক্ত মতামতগুলির মধ্যে কোনটি অগ্রাধিকারযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে?

উত্তর :  হাদীছটি মুসনাদে আহমাদ (হা/৬৫৭৫), আবুদাঊদ (হা/২৭৮৯), নাসাঈ (হা/৪৪৩৯), ছহীহ ইবনে হিববান (হা/৫৯১৪), ত্বাবারাণী মু‘জামুল কাবীর (হা/১৫৭, ১৫৮), সুনান দারাকুৎনী (হা/৪৭৪৯), হাকেম মুস্তাদরাক (হা/৭৫২৯), বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা (হা/১৯০২৮-২৯) প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী দু’টি কারণে হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। (১) তিনি ঈসা বিন হেলাল আছ-ছাদাফীকে অজ্ঞাত ও অপ্রসিদ্ধ বলেছেন এবং (২) হাদীছটির মতনে কিছু অসংগতি রয়েছে (যঈফ আবুদাঊদ হা/৪৮২, ২/৩৭০ পৃ.; মিশকাত হা/১৪৭৯)। তবে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব রাবী ঈসা বিন হেলালকে শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ মন্তব্য করে হাদীছটির সনদ ‘শক্তিশালী’ বলেছেন (তাহকীক সুনান আবুদাঊদ হা/২৭৮৯, ৪/৪১৭)। তাহকীকে দেখা যায়, ঈসা বিন হেলাল অপ্রসিদ্ধ রাবী নন, বরং তাঁর থেকে বেশকিছু রাবী হাদীছ বর্ণনা করেছেন (তাহযীবুল কামাল, ক্রমিক ৪৪৬৯)। ইয়াকূব আল-ফাসাভী (২৭৭ হিঃ) ঈসা বিন হেলালকে মিসরবাসী ‘ছেক্বাহ’ তাবেঈদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন (আল-মা‘রিফাতু ওয়াত তারীখ ২/৫১৫)। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে সত্যবাদী (صدوق) বলেছেন (তাক্বরীব, ক্রমিক ৫৩৩৭) এবং যাহাবী সহ একদল বিদ্বান তাকে ‘বিশ্বস্ত’ বলেছেন (আল-কাশিফ, ক্রমিক ৪৪০৫)। এছাড়া ইমাম তিরমিযী ঈসা বিন হেলাল বর্ণিত অন্য একটি হাদীছকে ‘ছহীহ’ বলেছেন (তিরমিযী হা/২৫৮৮)। যার অর্থ তিনিও ঈসা বিন হেলালকে শক্তিশালী মনে করেন। ইমাম নাসাঈ হাদীছটি বর্ণনা করলেও কোন ত্রুটি উল্লেখ করেননি। সুতরাং শু‘আইব আরনাউত্বের মন্তব্যটিই এখানে অগ্রাধিকারযোগ্য এবং হাদীছটি কমপক্ষে ‘হাসান’ পর্যায়ের। সম্ভবতঃ শায়খ আলবানী রাবী ঈসা বিন হেলাল সম্পর্কে ইয়াকূব আল-ফাসাভীর ‘তাওছীক’ লক্ষ্য করেননি। এছাড়াও তিনি হাদীছটির মতনে যে অসংগতির কথা বলেছেন সেটি মৌলিক ত্রুটি নয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩২/১১২) : যাকাত ফরয হয়, এরূপ সম্পদ থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় কি?

উত্তর : কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; হাকেম হা/৩৪৬৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৮৭)। এটা ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) ও ওমর ফারূক (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৮৮৯৩, সনদ হাসান; মাসায়েলে কুরবানী ৭ পৃ.)

(২১/আগষ্ট’১৮) প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। এভাবে তাকবীর ধ্বনি বলা ও বলতে বলা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ বলেন, আবু হুরায়রা ও ইবনু ওমর যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাযারে বের হতেন এবং সশব্দে তাকবীরধ্বনি দিতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিতেন। তারা কেবল এই কাজের জন্যই বাযারে আসতেন (ফাকেহী, আখবারু মাক্কা হা/১৬৪৪; বুখারী হা/৩৭৫, ৪/১২২ পৃ.; ইরওয়া হা/৬৫১, সনদ ছহীহ)। ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাঁবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং তাদের তাকবীর শুনে বাযারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১; আখবারু মাক্কা হা/২৫৮০; বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। মায়মূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান বিন ওছমান ও ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পিছনে আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলিতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন (বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। তবে এর মাধ্যমে যেন কেউ জামা‘আতবদ্ধ যিকিরের দলীল না নেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ জামা‘আতবদ্ধ যিকির বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/২৬৯)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৯/৪২৯) : অমুসলিমদের কুরবানীর গোশত প্রদান করা যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর গোশত মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা উত্তম। তবে অমুসলিম প্রতিবেশী দুস্থ-অভাবীদের কিছু দেওয়ায় দোষ নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৪২৪)। কেননা এটি যাকাত বহির্ভূত নফল ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত (আল-মুগনী ৩/৫৮৩, ৯/৪৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাঁর ইহূদী প্রতিবেশীকে দিয়েই গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারী, তিরমিযী হা/১৯৪৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮, সনদ ছহীহ, ‘ইহূদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ)। ‘তোমরা মুসলমানদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করাবে না’ মর্মে যে হাদীছ এসেছে তা ‘যঈফ’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯১১৩)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৬/৪২৬) : আমি একটি গরু কুরবানীর জন্য রেখেছি। সেটি ২ বছর অতিক্রম করেছে এবং যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্টও হয়েছে। কিন্তু এখনো দাঁত ওঠেনি। গরুটি কি কুরবানী করা যাবে?

উত্তর : কুরবানীর জন্য গরুর বয়স হ’ল দু’বছর পূর্ণ হওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবেহ কর না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৫)। জমহূর বিদ্বানগণ অন্যান্য হাদীছের আলোকে এই হাদীছের নির্দেশিত ‘মুসিন্নাহ’ পশুকে কুরবানীর জন্য উত্তম হিসাবে গণ্য করেছেন (মির‘আত ২/৩৫৩ পৃঃ)

‘মুসিন্নাহ’ পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয় (মির‘আত, ২/৩৫২ পৃঃ, আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৫৪/৫১ পৃঃ)। কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ এই সব পশুর দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা কোন দোষের হবে না ইনশাআল্লাহ (মাসায়েলে কুরবানী ১৪-১৫ পৃঃ)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : গরু কুরবানীর সাথে বিবাহের ওয়ালীমা বা আক্বীক্বার নিয়ত করা যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ দু’টি পৃথক ইবাদত। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)

তবে কুরবানীর গোশত দ্বারা বিবাহের ওয়ালীমা খাওয়ানো যাবে। কুরবানীর গোশত ঈদের পরে জমা রেখে খাওয়া জায়েয (ইবনু মাজাহ হা/৩১৫৯, মিশকাত হা/১৭৬২)। তুরতুসী বলেন, কেউ যদি বিবাহের ওয়ালীমায় কুরবানীর গোশত খাওয়ায় সেটিই তার জন্য যথেষ্ট হবে’ (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল লি মুখতাছারে খলীল ৪/৩৭৬)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : রাসূল (ছাঃ) কতবার কুরবানী করেছিলেন?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর কুরবানী করেছেন (তিরমিযী হা/১৫০৭; মিশকাত হা/১৪৭৫, সনদ যঈফ হলেও মর্ম ছহীহ)। সে হিসাবে রাসূল (ছাঃ) দশবার কুরবানী করেছেন। কারণ তিনি সফরে থাকা অবস্থাতেও কুরবানী পরিত্যাগ করেননি (মুসলিম হা/১৯৭৫; ইরওয়া হা/১১৫৮)। রাসূল (ছাঃ) প্রতি বছর দু’টি করে কুরবানী দিতেন। একটি তাঁর ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে, আরেকটি তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা কুরবানী করেনি, তাদের পক্ষ থেকে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৪৫৩; আবুদাঊদ হা/২৮১০)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (৩২/৪৩২) : কুরবানীর সময় পশুর দেহের প্রবাহিত রক্ত কাপড়ে লাগলে সেই কাপড়ে কি ছালাত আদায় করা যাবে?

উত্তর : পশুর প্রবাহিত রক্ত অপবিত্র (আন‘আম ৬/১৪৫)। সুতরাং কারো কাপড়ে কুরবানী করার সময় পশুর প্রবাহিত রক্ত লাগলে তা পরিষ্কার করে ছালাত আদায় করতে হবে। কেউ জেনেশুনে উক্ত রক্ত মাখা কাপড়ে ছালাত আদায় করলে তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৫৭৬; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহু উমদাতুল ফিক্বহ ১/১০৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৩৫২)। তবে যবহের পর গোশতের মধ্যে থাকা সাধারণ রক্ত পোশাকে লেগে থাকলে উক্ত পোষাকে ছালাত হয়ে যাবে। কেননা তা প্রবাহিত রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয় (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৭২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২১৯)

[১৩/সেপ্টে ’১০] প্রশ্ন (৩৪/৪৩৪) : ঋণ করে ফিৎরা দেওয়া ও কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। যদি পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরকে ঋণ দিতেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৮৪ পৃঃ)। তাছাড়া কুরবানীর বিষয়টি সামর্থ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। যার সামর্থ্য আছে সেই কুরবানী করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না যায়’ (আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; বুলূগুল মারাম হা/১৩৪৯)

(১৭/অক্টোবর’১৩) প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : সন্তান জন্মের ৭ম দিনে যদি কুরবানীর ঈদের দিন হয় তবে ক্রয়কৃত পশু শিশুর আকীকা হিসাবে দিতে হবে, না কুরবানী হিসাবে?

উত্তর : কুরবানী ও আকীকা দু’টি পৃথক সুন্নাত। সুতরাং তা একই দিনে হ’লে সাধ্যমতে দু’টিই আদায় করবে। নইলে কেবল আকীকা করবে। কেননা আকীকা জীবনে একবার হয় এবং তা সপ্তম দিনেই করতে হয় (আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪১৫৩; ইরওয়া হা/১১৬৫)। কিন্তু কুরবানী প্রতি বছরই করা যায়। সমাজে প্রচলিত কুরবানীর পশুতে আকীকার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)

১২/প্রশ্নঃ (৫/৪৫)ঃ কুরবানীর পশু যবহ করার পর হিন্দু লোক দ্বারা চামড়া ছাড়ানো যায় কি?

উত্তরঃ কুরবানী হালাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্র নামে যবহ করা শর্ত। চামড়া ছাড়ানো বা কুটাবাছার জন্য মুসলিম-অমুসলিম কোন শর্ত নয়। তাই হিন্দু লোক দ্বারা কুরবানীর পশুর চামড়া ছাড়ানো যেতে পারে। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে কুরবানীর পশু দেখা-শুনা করতে বলেন এবং তার গোশত চামড়া ও তার গায়ের ঝুল মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করার নির্দেশ দেন। তবে কসাইকে সেখান থেকে কিছু দিতে নিষেধ করেন (ছহীহ বুখারী, মুসলিম, বুলূগুল মারাম হা/১২৫৭)। এখানে কসাই বলতে মুসলমানদের খাছ করা হয়নি। বরং মুসলিম-অমুসলিম যেকোন ব্যক্তি হ’তে পারে।

১২/প্রশ্নঃ (১৫/৫৫)ঃ কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের মাঠে তার লোম, শিং ও ক্ষুর সহ উপস্থিত হবে। একথা কি ঠিক?

উত্তরঃ উক্ত বিষয়ে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফ ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৭০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘কুরবানীর গোশত ও রক্ত আল্লাহ্র নিকটে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাক্বওয়া আল্লাহ্র নিকট পৌঁছে’ (হজ্জ ২২/৩৭)। যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির আশায় বৈধ পয়সা দ্বারা কুরবানী করবে তারাই কুরবানীর নেকী পাবে।

[১৩/নভে ’০৯] প্রশ্ন (১০/৫০) মহিলারা কুরবানীর পশু যবেহ করতে পারে কি?

উত্তরঃ মহিলারা কুরবানীর পশু সহ যেকোন পশু যবেহ করতে পারে। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তার একটি  ছাগল ‘সালআ’ নামক চারণক্ষেত্রে ছিল। তাঁর এক দাসী ছাগলটিকে মরণাপন্ন দেখে পাথর দ্বারা যবেহ করে দেয়। বিষয়টি তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি ছাগলটি খাওয়ার নির্দেশ দেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪০৭২)

১২/প্রশ্নঃ (৩২/৭২)ঃ কুরবানীর পশূতে আক্বীক্বার নিয়ত করে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তরঃ কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত। কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)। এই ভিত্তিহীন প্রথা পরবর্তীতে চালু হয়েছে। যা আমাদের দেশেও কোন কোন স্থানে চালু আছে। এই রেওয়াজ বর্জন করা আবশ্যক।

(১৮/আগষ্ট’১৫) প্রশ্ন (১১/৪১১) : আমাদের সমাজে ৫০টি পরিবারে ২৩১ জন লোক। আমরা কুরবানীর গোশত এক জায়গায় জমা করে ২৩১ ভাগ করে যে পরিবারে যত লোক সেই কয় ভাগ তাদেরকে দেই। এভাবে গোশত বণ্টন করা যাবে কি?

উত্তর : এরূপ কোন বিধান শরী‘আতে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(কুরবানীর গোশত) তোমরা নিজেরা খাও, যারা চায় না তাদের খাওয়াও এবং যারা নিজেদের প্রয়োজন পেশ করে তাদের খাওয়াও’ (হজ্জ ৩৬)। অতএব কুরবানী দাতাগণ স্ব স্ব কুরবানীর গোশতের এক-তৃতীয়াংশ একস্থানে জমা করে মহল্লায় যারা কুরবানী করতে পারেনি, তাদের তালিকা করে সুশৃংখলভাবে তাদের মধ্যে বিতরণ করবেন ও প্রয়োজনে তাদের বাড়ীতে পৌঁছে দিবেন। বাকী এক-তৃতীয়াংশ ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করবেন (দ্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই, পৃঃ ২৩)

(২০/অক্টোবর’১৬) প্রশ্ন (২৫/২৫) : আমরা তিন ভাই পৃথক পৃথক পরিবার নিয়ে বসবাস করি। আমাদের মা জীবিত আছেন তবে আমাদের রান্না পৃথকভাবে হয় এবং জমিজমা এখনো বণ্টিত হয়নি। এমতাবস্থায় সবাই মিলে একত্রে একটি পশু কুরবানী দিলে তা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

উত্তর : কবুলযোগ্য হবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৭; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ১১/৪০৬)। তবে একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪)

(২১/অক্টোবর’১৭) প্রশ্ন (৮/৮) : তিন ভাই তাদের স্ত্রী-সন্তান সহ একত্রে বসবাস করে। প্রত্যেকের উপার্জন পৃথক। তবে একসাথেই রান্না-বান্না হয়। এক্ষণে যৌথ পরিবারে থাকার কারণে একটি কুরবানীই কি যথেষ্ট হবে? এক্ষেত্রে কুরবানী করার সময় কোন ভাইয়ের নাম বলবে?

উত্তর : একটি কুরবানীই যথেষ্ট হবে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২৫/৭)। এক্ষেত্রে পরিবার প্রধানের নাম ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে বলবে।

(২১/অক্টোবর’১৭) প্রশ্ন (৮/৮) : তিন ভাই তাদের স্ত্রী-সন্তান সহ একত্রে বসবাস করে। প্রত্যেকের উপার্জন পৃথক। তবে একসাথেই রান্না-বান্না হয়। এক্ষণে যৌথ পরিবারে থাকার কারণে একটি কুরবানীই কি যথেষ্ট হবে? এক্ষেত্রে কুরবানী করার সময় কোন ভাইয়ের নাম বলবে?

উত্তর : একটি কুরবানীই যথেষ্ট হবে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২৫/৭)। এক্ষেত্রে পরিবার প্রধানের নাম ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে বলবে

(২০/অক্টোবর’১৬) প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : আমাদের এলাকায় কুরবানীর গোশত এক-তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতে জমা করার পর সেখান থেকে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কিন্তু সবসময় দেখা যায় সবাইকে দেওয়ার পর অনেক গোশত বেঁচে যায় এবং পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা নিজেদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী নিজেরা ভাগ করে নেন। এভাবে নিজেরা গোশত বণ্টন করে নেওয়া শরী‘আত সম্মত হবে কি?

উত্তর : গরীবদের মাঝে বিতরণের জন্য জমাকৃত গোশত বন্টনের পর অতিরিক্ত গোশত নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেওয়া জায়েয নয়। কেননা দান করে ফেরত নেওয়াকে রাসূল (ছাঃ) বমি করে পুনরায় তা ভক্ষণ করার সাথে তুলনা করেছেন (বুখারী হা/১৪৯০, মিশকাত হা/১৯৫৪)। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিমাণ বৃদ্ধি করে হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। অথবা অতিরিক্ত অংশ পার্শ্ববর্তী গ্রামের হকদারদের নিকটে পৌঁছে দিতে হবে। তবে পঞ্চায়েতের কোন সদস্য দরিদ্র হ’লে এবং কুরবানী না দিয়ে থাকলে তাকেও এর অংশ দেওয়ায় কোন বাধা নেই (দ্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা পৃ. ২২-২৩)

(২০/মার্চ’১৭) প্রশ্ন (২০/২২০) : কুরবানীর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর চামড়া মসজিদের উন্নয়নে লাগানো যাবে না। কারণ সূরা তওবাহর ৬০ আয়াতে যাকাতের যে ৮টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) : রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে কুরবানী করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন অনুমোদন আছে কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বা কোন মৃতের জন্য পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন বিধান নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)- এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী করেছিলেন মর্মে যে বর্ণনা এসেছে (আহমাদ হা/১২৭৮; তিরিমিযী হা/১৪৯৫; মিশকাত হা/১৪৬২), তা নিতান্তই যঈফ। কোন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য বা রাসূল (ছাঃ) তার প্রিয় স্ত্রী ও সন্তানাদি বা প্রিয় চাচা হামযা বা অন্য কোন মৃতব্যক্তির জন্য এভাবে কুরবানী করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এসব থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২০/৪২০) :  মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : মৃত ব্যক্তির নামে পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী দিয়েছেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা অত্যন্ত যঈফ (আহমাদ হা/১২৭৮; আবূদাঊদ হা/২৭৯; মিশকাত হা/১৪৬২)। মূলত কুরবানীর বিধান কেবল জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ যদি কুরবানীর পূর্ব মুহূর্তে মারা যায় তাহ’লে তার উপর থেকে বিধান রহিত হয়ে যাবে। অতএব মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সুন্নাত নয় (উছায়মীন, আহকামুল উযহিয়াহ ১/৩-৪)

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩২/১১২) : যাকাত ফরয হয়, এরূপ সম্পদ থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় কি?

উত্তর : কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; হাকেম হা/৩৪৬৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৮৭)। এটা ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) ও ওমর ফারূক (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৮৮৯৩, সনদ হাসান; মাসায়েলে কুরবানী ৭ পৃ.)

(১৯/জুন’১৬) প্রশ্ন (২৫/৩৪৫) : চাঁদ দেখার দো‘আটি কি কেবল ঈদের চাঁদের সাথে নির্দিষ্ট না ১২ মাস নতুন চাঁদ দেখলে উক্ত দো‘আটি পাঠ করা যাবে?

উত্তর :  দো‘আটি কেবল ঈদে নয় বরং প্রতি মাসে নতুন চাঁদ দেখে পাঠ করতে হবে। দো‘আটি হ’ল- আল্লা-হু আকবর, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াততাওফীক্বি লিমা তুহিববু ওয়া তারযা; রববী ওয়া রববুকাল্লা-হঅর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’ (দারেমী হা/১৬৮৭-৮৮; তিরমিযী হা/৩৪৫১; মিশকাত হা/২৪২৮; ছহীহাহ হা/১৮১৬)

(২১/আগষ্ট’১৮) প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। এভাবে তাকবীর ধ্বনি বলা ও বলতে বলা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ বলেন, আবু হুরায়রা ও ইবনু ওমর যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাযারে বের হতেন এবং সশব্দে তাকবীরধ্বনি দিতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিতেন। তারা কেবল এই কাজের জন্যই বাযারে আসতেন (ফাকেহী, আখবারু মাক্কা হা/১৬৪৪; বুখারী হা/৩৭৫, ৪/১২২ পৃ.; ইরওয়া হা/৬৫১, সনদ ছহীহ)। ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাঁবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং তাদের তাকবীর শুনে বাযারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১; আখবারু মাক্কা হা/২৫৮০; বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। মায়মূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান বিন ওছমান ও ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পিছনে আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলিতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন (বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। তবে এর মাধ্যমে যেন কেউ জামা‘আতবদ্ধ যিকিরের দলীল না নেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ জামা‘আতবদ্ধ যিকির বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/২৬৯)

(১৭/জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী’১৪) প্রশ্ন (৪০/১৬০) : ঈদের ছালাতের পূর্বে গযল গাওয়া বা বক্তব্য দেওয়া যায় কি?

উত্তর : ঈদের ছালাতের পূর্বে গযল গাওয়া বা বক্তব্য দেয়া যাবে না। কারণ এটা শরী‘আতে নতুন কাজ, যা পরিত্যাজ্য (মুসলিম হা/২০৮৬; মিশকাত হা/১৪০)। ঈদের মাঠে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করতেন। তারপর ছাহাবীগণের মুখোমুখী হয়ে খুৎবা দিতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪২৬)। ঈদের দিন সুন্নাত হ’ল, তাকবীর পাঠ করা। রাসূল (ছাঃ) উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে দিতে ঘর হ’তে ঈদগাহ অভিমুখে রওয়ানা দিতেন (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/৬৫০, ৩/১২৩ পৃঃ)। তাবেঈ বিদ্বান ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, লোকেরা ঈদের দিন সকালে তাকবীর ধ্বনি করতে করতে ঈদগাহে আসত। অতঃপর ইমাম এলে তাকবীর বন্ধ করত। এ সময় ইমামের সাথে তারাও তাকবীর দিত (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ইরওয়া ৩/১২১ পৃঃ; দারাকুৎনী হা/১৬৯৬, ১৭০০)

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (১/৪১) : ছহীহ হাদীছের আলোকে ঈদের ছালাতের সময় জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বসর (রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার ছালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী করে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায় শেষ করতাম। আর ছালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ)। অতএব ঈদুল আযহার ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত শুরু করা উচিত (দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : জুম‘আ ও ঈদের ছালাত একই দিনে হ’লে জুম‘আর ছালাত আদায় না করলে গোনাহ হবে কি?

উত্তর : জুম‘আ ও ঈদ একই দিনে হ’লে ঈদের ছালাত আদায় করার পর জুম‘আর ছালাত আদায় করা ইচ্ছাধীন বিষয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে ঈদ ও জুম‘আ একই দিনে হ’লে তিনি সকলকে নিয়ে ঈদের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর বলতেন, এক্ষণে জুম‘আ পড়তে আসা বা না আসা তোমাদের ইচ্ছাধীন বিষয়। তবে আমরা জুম‘আ পড়ব’ (আবুদাঊদ হা/১০৭৩)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (৪০/৪০) : ঈদের মাঠে মিম্বার কখন থেকে চালু হয়েছে? জনৈক আলেম কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, রাসূল (ছাঃ) মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে ঈদের খুৎবা দিতেন। এক্ষণে এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবায় মিম্বার ব্যবহার করতেন না। উমাইয়া খলীফা মারওয়ান বিন হাকাম (৬৪-৬৫ হিঃ) সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বার ব্যবহার করেন।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে পৌঁছে প্রথমে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর তারা তখন স্ব স্ব কাতারে বসা থাকত। ... রাবী বলেন, মানুষ এভাবে আমল করতে থাকে। পরে আমি মারওয়ানের সাথে ঈদুল ফিৎর অথবা ঈদুল আযহায় গেলাম। তখন তিনি মদীনার আমীর। মাঠে এসে দেখি কাছীর ইবনুছ ছালত মাটি ও কাঁচা ইট দ্বারা একটি মিম্বার তৈরী করেছে। মারওয়ান মিম্বরে চড়ে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিতে চাইলে আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি জোরপূর্বক মিম্বরে উঠে ছালাতের পূর্বে খুৎবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ্র কসম! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করলে। মারওয়ান বললেন, আবু সাঈদ! তুমি যে নিয়ম জান ঐ নিয়ম এখন চলবে না। আমি বললাম, আমি যে নিয়ম জানি তাতেই কল্যাণ রয়েছে। তখন মারওয়ান বললেন, মানুষ ছালাতের পর আমার খুৎবা শুনার জন্য বসে না। তাই আমি খুৎবাকে ছালাতের পূর্বে করেছি’ (বুখারী হা/৯৫৬; মুসলিম, হা/৮৮৯ ‘ঈদায়েন-এর ছালাত’ অধ্যায়)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মারওয়ান ঈদের দিন মিম্বার নিয়ে বের হ’লেন এবং ছালাতের পূর্বেই খুৎবা শুরু করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের বিরোধিতা করলে। ঈদের দিন তুমি মিম্বর বের করলে যা কখনো এখানে বের হয়নি! আবার তুমি ছালাতের পূর্বে খুৎবাও শুরু করলে! একথা শুনে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি কে? তখন উপস্থিত অন্যরা বলল, অমুক। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ ‘মুনকার’ কিছু দেখলে তা যেন হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান (আবুদাঊদ হা/১১৪০)। এই হাদীছ শুনানোর মাধ্যমে তিনি ঐ ব্যক্তির প্রতিবাদকে সমর্থন করলেন এবং প্রকারান্তরে তিনি ছালাতের পূর্বে খুৎবা ও মিম্বার উভয়েরই প্রতিবাদ করলেন।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে মিম্বর মসজিদ হ’তে বের করে মাঠে নিয়ে যাওয়া হ’ত না, সর্বপ্রথম মারওয়ান ইবনুল হাকাম এটি করেছেন’ (যাদুল মাআদ ১/৪৩১ পৃঃ)

উপরোক্ত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খলীফা মারওয়ানই তার শাসনামলে সর্বপ্রথম ঈদগাহে মিম্বারের প্রচলন ঘটান। আবু সাঈদ (রাঃ) ও অন্যান্যগণ যার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।

এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে দিয়েছেন মর্মে প্রশ্নকারীর উপস্থাপিত দলীলগুলির বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :

(১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি কুরবানীর ঈদে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন খুৎবা শেষ করলেন, তখন মিম্বার থেকে নামলেন’ (আহমাদ হা/১৪৯৩৮, আবুদাঊদ হা/২৮১০; তিরমিযী হা/১৫২১)

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি মুত্ত্বালিব ও জাবের (রাঃ)-এর মাঝে ইনক্বিতা‘ বা সনদে বিচ্ছিন্নতার দোষে দুষ্ট...। রাবী মুত্ত্বালিব একজন মুদাল্লিস রাবী। অতএব এরূপ বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। তাছাড়া অন্য বর্ণনায় এ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমে জাবের থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেখানে মিম্বারের কথা উল্লেখ নেই (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩-এর আলোচনা দ্রঃ)

(২) অন্যত্র জাবের (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) ঈদের খুৎবা শেষে অবতরণ করে নারীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন(বুখারী হা/৯৭৮)। এ হাদীছের ব্যাপারে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘ইতিপূর্বে ‘মুছাল্লার দিকে বের হওয়া’ অনুচ্ছেদে পাওয়া গেছে যে, রাসূল (ছাঃ) ঈদের মুছাল্লায় যমীনের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তাই সম্ভবতঃ রাবী স্থান পরিবর্তনকে অবতরণ করা শব্দে এনেছেন’(ضَمَّنَ النُّزُولَ مَعْنَى الاِنْتِقَالِ) (ফাৎহুল বারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ২/৪৬৭)

(৩) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ঈদের মুছাল্লা সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঈদের দিন রাসূল (ছাঃ)(أَتَى الْعَلَمَ الَّذِى عِنْدَ دَارِ كَثِيرِ بْنِ الصَّلْتِ) কাছীর বিন ছালতের বাড়ির সামনে যে  নিশানা ছিল সেখানে আসলেন এবং ছালাত আদায়ের পর খুৎবা দিলেন (বুখারী হা/৯৭৭)

উল্লেখ্য যে, হাদীছে বর্ণিত নিশানা এবং কাছীর ইবনুছ ছালতের বাড়ী কোনটিই রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তা পরবর্তীতে তৈরীকৃত। কারণ হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ)-এর মুছাল্লা ছিল খোলা ময়দান। সেখানে কোন সুৎরা বা নিশানা ছিল না। ফলে তার সামনে একটি বর্শা পুঁতে দেওয়া হ’ত এবং তিনি সেদিকে ফিরে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু মাজাহ হা/১৩০৪, ইবনু রজব হাম্বলী, ফৎহুল বারী হা/৯৭৭ এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। অর্থাৎ পরবর্তীতে সেখানে বাড়ি এবং নিশানা নির্মিত হওয়ার পর ইবনু আববাস (রাঃ) ঐ ব্যক্তিকে সেগুলির মাধ্যমে স্থানটি চিনিয়ে দিচ্ছিলেন মাত্র।

(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে জুম‘আ, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিৎরের খুৎবা দিতেন’। এ হাদীছটি যঈফ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৩)

সুতরাং সার্বিক পর্যালোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের খুৎবা মিম্বারে দেয়ার প্রমাণে কোন বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য দলীল নেই। সুতরাং মিম্বারহীন খোলা ময়দানে দাঁড়িয়েই খুৎবা দিতে হবে।

১৫/সেপ্টেম্বর’১২ (৩৫/৪৭৫) : ‘পাঁচটি রাত্রির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রজব মাসের ১ম রাত্রি, শা‘বানের মধ্যরাত্রি, জুম‘আর রাত্রি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রি।’ উক্ত হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : হাদীছটি মওযূ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৫২)।

(১৬/জুলাই’১৩) প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) : ঈদের রাত্রিতে সারারাত ইবাদত করার কোন বিশেষ ফযীলত আছে কি?

উত্তর : বিশেষ কোন ফযীলত ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (ইবনু মাজাহ হা/১৭৮২; যঈফাহ হা/৫২১, ৫১৬৩)। এ মর্মে আরো একটি জাল বর্ণনা এসেছে, যে ব্যক্তি চারটি রাত তথা- তারবিয়াহ, আরাফাহ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রি জাগরণ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২২)

(১৯/সেপ্টেম্বর’১৬) প্রশ্ন (৫/৪৪৫) : পুরুষদের সাথে নারীদের ঈদের ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা না থাকলে একই ইমাম পুরুষদের ছালাত আদায় করিয়ে পরে মহিলাদের নিয়ে পৃথক জামা‘আত খুৎবা সহ ছালাত আদায় করাতে পারবে কি?

উত্তর : পারবে। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে পিছনে এশার ছালাত পড়তেন এবং পরে নিজ মহল্লায় গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। এক্ষণে ইমাম না পাওয়ার কারণে যদি এরূপ করতে হয়, তাহ’লে তাতে কোন বাধা নেই।

(২০/ডিসেম্বর’১৬) প্রশ্ন (৩৪/১১৪) : ঈদের জামা‘আতে একবার শরীক হয়ে পরে কারণবশতঃ অন্য স্থানে এসে জামা‘আত হ’তে দেখলে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?

উত্তর : বিশেষ অবস্থায় এটি পড়া যাবে। প্রথমটি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ হিসাবে এবং পরেরটি নফল হিসাবে। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে জামা‘আতের সাথে এশার ছালাত পড়তেন এবং নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। পরেরটি তাঁর জন্য নফল হ’ত (বায়হাকী, দারাকুৎনী; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১৫১)

(১৬/জানুয়ারী’১৩) প্রশ্ন (৩৫/১৫৫): একজন ইমাম ঈদের দিন ১ ঘন্টার ব্যবধানে একাধিক জামা‘আতে ইমামতি করতে পারে কি? ছাহাবায়ে কেরামের জীবনে এরূপ কোন আমল আছে কি? শরী‘আতে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর: একই ইমাম একাধিক বার একই ছালাত পড়িয়েছেন মর্মে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণের কোন আমল পাওয়া যায় না। তবে একই ছালাত একাধিকবার পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে এশার ছালাত পড়তেন এবং নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে আবার তাদের ইমামতি করতেন (বুখারী হা/৭১১, মুসলিম হা/৪৬৫)। এক্ষণে ইমামের অভাবের কারণে যদি এরূপ করতে হয়, তাহলে তা শরী‘আতে গ্রহণযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৮/৪০৮) : ঈদের খুৎবা একটি না দু’টি? ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদায়নের খুৎবা ১টি। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে বের হ’লেন এবং সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করলেন এবং দান-ছাদাক্বার নির্দেশ দিলেন... (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯, ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি আযান ও ইক্বামত ছাড়াই খুৎবার পূর্বে ছালাত শুরু করলেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বেলালের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহ্র প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন এবং লোকদের উপদেশ দিলেন, পরকালের কথা স্মরণ করালেন এবং আল্লাহ্র আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর মহিলাদের দিকে অগ্রসর হ’লেন। এমতাবস্থায় তাঁর সাথে বেলাল ছিল। তাদেরকে তিনি আল্লাহভীতির উপদেশ দিলেন এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করালেন (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৪৬ ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের খুৎবার মাঝে বসতেন না এবং তাঁর খুৎবা ছিল একটি (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১৪৬)। দুই খুৎবার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই, বরং যা আছে তা যঈফ ও মুনকার (ইবনু মাজাহ হা/১২৮৯, মাজমাউয  যাওয়ায়েদ হা/৩২৩৯, যঈফাহ হা/৫৭৮৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩২২ পৃঃ)

ইমাম বায়হাক্বী, ছান‘আনী ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল (বায়হাক্বী ৩/২৯৯ পৃঃ  হা/৬০০৬-এর পরের আলোচনা;  মির‘আত ২/৩৩০-৩৩১; ৫/৩১; সুবুলুস সালাম ১/৪৩২)

উল্লেখ্য, যারা ঈদায়নের দু’টি খুৎবা সমর্থন করেন, তারা মূলত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন। যেমন সিমাক (রাঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তারপর অল্প বসতেন, অতঃপর পুনরায় দাঁড়াতেন (নাসাঈ হা/১৫৮৩-৮৪, ১৪১৮)। অত্র হাদীছে দু’খুৎবার মাঝে বসা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটি জুম‘আর খুৎবা না ঈদের খুৎবা তা প্রমাণিত হয় না। কিন্তু জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে সরাসরি জুম‘আর কথা বলা হয়েছে (নাসাঈ হা/১৪১৭; আবুদাঊদ হা/১০০৩)। এছাড়া হাদীছটি কুতুবে সিত্তাহসহ প্রায় সকল মুহাদ্দিছ ‘জুম‘আর খুৎবা’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কেউই ঈদের ছালাত অধ্যায়ে বর্ণনা করেননি। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটা জুম‘আর জন্য খাছ।

আলবানী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট, ঈদের সাথে নয় (যঈফাহ হা/৫৭৮৯)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব ঈদায়নের জন্য একটি খুৎবাই সুন্নাত। (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ২০৪ পৃ.)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২১/৪৬১) : ঈদের ছালাত আদায়ের পর একাধিক ব্যক্তি খুৎবা দিতে পারবেন কি?

উত্তর : না। বরং একজন ব্যক্তিই খুৎবা দিবেন। এটাই রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত (মুসলিম হা/৮৮৫, মিশকাত হা/১৪৪৬)। ওযরবশতঃ কাউকে মাঝপথে খুৎবা পরিত্যাগ করতে হ’লে অপরজন প্রথম থেকে খুৎবা শুরু করবেন (ওছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৮)

(১৬/অক্টো’১২) প্রশ্ন (১/১) : ঈদায়নের ছালাতের তাকবীর কয়টি? ছয় তাকবীরের পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদায়নের ছালাতে অতিরিক্ত তাকবীর ১২টি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহাতে প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন রুকূর দুই তাকবীর ব্যতীত’ এবং ‘তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’ (আবুদাঊদ হা/১১৫০; ইবনু মাজাহ হা/১২৮০, দারাকুৎনী হা/১৭০৪, ১৭১০, সনদ ছহীহ) কাছীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’। কাছীর বিন আব্দুল্লাহ বর্ণিত অত্র হাদীছ সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীছটির সনদ ‘হাসান’ এবং এটিই ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত ‘সর্বাধিক সুন্দর’ রেওয়ায়াত (তিরমিযী হা/৫৩৬ সনদ ছহীহ)। তিনি আরও বলেন যে, আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ঈদায়নের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিকতর ছহীহ আর কোন রেওয়ায়াত নেই এবং আমিও সে কথা বলি’ (বায়হাক্বী ৩/২৮৬; মির‘আত ২/৩৩৯)

চার খলীফা ও মদীনার শ্রেষ্ঠ সাত জন তাবেঈ ফক্বীহ ও খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয সহ প্রায় সকল ছাহাবী, তাবেঈ, তিন ইমাম ও অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ইমামগণ এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর দুই প্রধান শিষ্য আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বারো তাকবীরের উপরে আমল করতেন। ভারতের দু’জন খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী ও আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বারো তাকবীরকে সমর্থন করেছেন (মির‘আত ২/৩৩৮, ৩৪১; ঐ, ৫/৪৬, ৫২)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ছয় তাকবীরে’ ঈদের ছালাত আদায় করেছেন- মর্মে ছহীহ বা যঈফ কোন স্পষ্ট মরফূ হাদীছ নেই। ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায় চার তাকবীর’ বলে মিশকাতে এবং ‘নয় তাকবীর’ বলে মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে যে হাদীছ এসেছে, সেটিও মূলতঃ ইবনু মাসঊদের উক্তি। তিনি এটিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধিত করেননি। উপরন্তু উক্ত রেওয়ায়াতের সনদ সকলেই ‘যঈফ’ বলেছেন (বায়হাক্বী ৩/২৯০; নায়ল ৪/২৫৪, ২৫৬; মির‘আত ৫/৫৭; আলবানী, মিশকাত হা/১৪৪৩)

ঊল্লেখ্য যে, ইমাম ত্বাহাবী ‘কোন কোন ছাহাবী’ থেকে ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায়’ মর্মে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যা তিনি ও শায়খ  আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন (ছহীহাহ হা/২৯৯৭)। যদিও নববী, আসক্বালানী, যায়লাঈ প্রমুখ প্রায় সকল বিদ্বান হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। তবে আলবানী তাঁর দীর্ঘ আলোচনা শেষে বলেছেন, সবটাই জায়েয। যদিও সাত ও পাঁচ তাকবীর আমার নিকটে অধিকতর প্রিয়। কেননা এর বর্ণনাকারী সর্বাধিক’। আমরাও বলি, সাত ও পাঁচ মোট ১২ তাকবীরের হাদীছসমূহ অধিকতর ছহীহ এবং সংখ্যায় অধিক। অতএব বিতর্কিত বর্ণনাসমূহ বাদ দিয়ে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছের উপর আমল করাই উত্তম।

ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ) বলেন, ‘জানাযার চার তাকবীরে ন্যায়’ মর্মের বর্ণনাটি যদি ‘ছহীহ’ বলে ধরে নেওয়া হয়, তথাপি এর মধ্যে ছয় তাকবীরের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ তাকবীরে তাহরীমা সহ ১ম রাক‘আতে চার ও রুকূর তাকবীর সহ ২য় রাক‘আতে চার তাকবীর এবং ১ম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে ও ২য় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পরে তাকবীর দিতে হবে বলে কোন কথা সেখানে নেই (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ৫/৮৪ পৃঃ)। অতএব ১২ তাকবীরের স্পষ্ট ছহীহ হাদীছের উপরে আমল করাই একান্তভাবে কর্তব্য।

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৪০/৪৮০) : আমি একজন নতুন আহলেহাদীছ। আমাদের ঈদগাহে ছয় তাকবীরে ঈদের ছালাত হয়। এমতাবস্থায় ইমামের পিছনে ১২ তাকবীর দিলে আমার ছালাত হবে কি?

উত্তর : ইমামের পিছনে ১২ তাকবীর দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যক (বুখারী হা/৬৮৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। এতে ছালাতের ক্ষতি হ’লে সরাসরি ইমাম দায়ী হবেন (বুখারী গা/৬৯৪, মিশকাত হা/১১৩৩)। তাছাড়া ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীরে কমবেশী হ’লে তাতে ছালাতের ক্ষতি হয় না (মির‘আত ৫/৫৩)

(১৮/আগষ্ট’১৫) প্রশ্ন (১৪/৪১৪) : আমাদের এলাকা হানাফী অধ্যুষিত। আমি কি তাদের সাথে ৬ তাকবীরে ঈদের ছালাত পড়ব, না ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকব?

উত্তর : ঈদায়নের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছগুলি ছহীহ (আবুদাঊদ হা/১১৫০; ইবনু মাজাহ হা/১২৮০, দারাকুৎনী হা/১৭০৪, ১৭১০, সনদ ছহীহ)। সেকারণ ১২ তাকবীরে ঈদের ছালাত হয়, এমন জামা‘আতে শরীক হওয়া যরূরী। তবে সম্ভব না হ’লে ৬ তাকবীরের জামা‘আতেই শরীক হবে। কেননা এতে সুন্নাত অনুসরণ না হলেও ছালাত বাতিল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমামগণ তোমাদের ছালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষণে তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছে। আর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ’ (বুখারী হা/৬৯; মিশকাত হা/১১৩৩)

(২১/জুন’১৮) প্রশ্ন (৩৩/৩৫৩) : আমার এলাকাটি হানাফী অধ্যুষিত হওয়ায় ঈদের ছালাত অনেক দেরীতে আদায় করা হয়। এক্ষণে আমি আউয়াল ওয়াক্তে একাকী তা আদায় করে নিব কি?

উত্তর : না। কারণ ঈদের ছালাত একাকী আদায় করার বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছওম সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ছিয়াম রাখবে। ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা  সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ঈদ করবে (তিরমিযী হা/৭৯৭, ইবনু মাজাহ হা/১৬৬০; ছহীহাহ হা/২২৪)। বরং ঈদের ছালাতের শেষ সময় তথা সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত (আল-মাওসু‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৭/২৪৩) দেরীতে হ’লেও জামা‘আতের সাথে আদায় করবে। ঈদুল ফিৎরে সূর্য দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার ছালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী করে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায় শেষ করতাম। আর ছালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ; দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)

(১৯/নভেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৪/৪৪) : ঈদের ছালাতে ছানা পড়তে হবে কি? যদি পড়তে হয় তবে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো ছানা পাঠের আগে না পরে দিতে হবে?

উত্তর : ছানা পড়তে হবে এবং তা তাকবীরে তাহরীমার পর ও অতিরিক্ত তাকবীরের পূর্বে পাঠ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন তাকবীরে তাহরীমার পর দো‘আয়ে ইস্তিফতাহ বা ছানা পড়তেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে পাঠ্য’ অনুচ্ছেদ)। ঈদের ছালাতেও অনুরূপভাবে প্রথম তাকবীরের পর ছানা পাঠ করতে হবে (ইবনু কুদামা, মুগনী, মাসআলা নং ১৪১৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২০; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২৪০)

(১৭/ডিসেম্বর’১৩) প্রশ্ন (২১/১০১) : জনৈক আলেম বলেন যে, ঈদের ছালাতে ছানা পাঠ করা যাবে না। উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখনই কোন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখনই তাকবীরে তাহরীমের পর দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পড়তেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে পঠনীয়’ অনুচ্ছেদ)। ঈদের ছালাতেও অনুরূপভাবে প্রথম তাকবীরের পর ছানা পাঠ করতে হবে (ইবনু কুদামা, মুগনী মাসআলা নং ১৪১৬; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২৪০)। তবে জানাযার ছালাতে ছানা না পড়াই মুস্তাহাব (নববী, মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/২৩৪, মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ১৭/১১৯)

(২০/জুন’১৭) প্রশ্ন (২৩/৩৪৩) : ঈদের ছালাত আদায় করতে এসে অর্ধশতাধিক মানুষ পেলাম যারা ছালাত পায়নি এবং ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন। এক্ষণে তারা পুনরায় জামা‘আত করতে পারবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় পুনরায় জামা‘আত করবে। অর্থাৎ ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর সহ দু’রাক‘আত ছালাত জামা‘আতে আদায় করবে। তবে ইমামের খুৎবা শ্রবণের পর এটি আদায় করা উত্তম হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/৩০৬)। ইমাম বুখারী (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন, যার ঈদের ছালাত ছুটে যাবে, সে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিবে’। ঈদের জামা‘আত ছুটে গেলে আনাস (রাঃ) তার গোলামকে পরিবার-পরিজন ও অন্যদের নিয়ে জামা‘আত করে বাড়ীতে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। ইকরিমা ও আতা‘ এমন ফৎওয়াই প্রদান করেছেন (বুখারী ‘ঈদায়েন’ অধ্যায় ২৫ অনুচ্ছেদের তা‘লীক্ব, ৪/১৫৪ পৃ.)। এছাড়া ক্বাতাদা, নাখঈ, হাসান বছরীসহ বহু তাবেঈ এমন ফৎওয়া দিয়েছেন (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫৭১৬; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৮৫৭, ৫৮৫৮; আল-মুগনী ২/২৯০)

(২১/জুন’১৮) প্রশ্ন (৪/৩২৪) : একটি বইয়ে লেখা হয়েছে, ঈদায়নের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছগুলি যঈফ। শায়খ আলবানী ব্যতীত অন্য কোন মুহাদ্দিছ এসব হাদীছকে ছহীহ বলেননি। এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : বক্তব্যটি সত্য নয়। ঈদের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছকে ইমাম বুখারী, তিরমিযী, আবুদাউদ, নববী, হাফেয ইরাকী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু হাজার আসক্বালানী, আহমাদ শাকের ও হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্বসহ অসংখ্য মুহাদ্দিছ ছহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি উল্লেখ করে ‘হাসান’ বলার পর বলেন, নবী করীম (ছাঃ) থেকে এ ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে এটিই সর্বাধিক সুন্দর (তিরমিযী হা/৫৩৬-এর আলোচনা)। তিনি আরো বলেন, আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঈদায়নের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিক আর কোন ছহীহ রেওয়ায়াত নেই’ (ইলালুত তিরমিযী ১/২৮৭)।  ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ছাহাবী ও ইমাম প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/২২) । ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আমর ইবনু শু‘আইব বর্ণিত হাদীছটি ‘ছহীহ’। এটি আবুদাউদসহ অন্যান্যরা ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন (আল-মাজমূ‘ ৫/১৬)। ইরাক্বী বলেন, এর সনদ বিশুদ্ধ (নায়লুল আওতার ৩/৩৫৪)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ও আলী ইবনুল মাদীনী ও বুখারী একে ছহীহ বলেছেন (আত-তালখীছ ২/২০০)। আহমাদ শাকের বলেন, এর সনদ ‘ছহীহ’ (আহমাদ হা/৬৬৮৮)। হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্ব মুসনাদে আহমাদ, আবুদাউদ ও ইবনু মাজাহর তাহকীকে এর সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন (আহমাদ হা/৬৬৮৮, ২৪৪৫৪)। ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, সবচেয়ে উত্তম হ’ল প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বার তাকবীর দেওয়া। কারণ এর উপরে এসেছে অনেকগুলি মরফূ হাদীছ, যার কতকগুলি ‘ছহীহ’ ও কতকগুলি ‘হাসান’। ...আর বারো তাকবীরের উপরে আমল করেছেন মহান চার খলীফা হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ)’ (মির‘আত ৫/৫৩ পৃঃ)। অতএব ঈদের ছালাতে অতিরিক্ত ১২ তাকবীর প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত (বিস্তারিত দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ ৩৩-৩৭)

১৫/এপ্রিল’১২ (৭/২৪৭) : ঈদের মাঠে কোলাকুলি করা যাবে কি? কোলাকুলি কি এক দিকে করতে হয়?

উত্তর : ঈদের মাঠে কোলাকুলি করার বিষয়ে কোন দলীল পাওয়া যায় না। কোলাকুলি কোন দিকে কয়বার করতে হবে তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

(২১/সেপ্টেম্বর’১৮) প্রশ্ন (১/৪৪১) : ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তাকাববালাল্লাহু... বলা সাথে সাথে ঈদ মোবারক বলা বিদ‘আত হবে কি?

উত্তর : ঈদ মোবারক (আপনার ঈদ বরকতপূর্ণ হৌক) বলা বিদ‘আত নয়। কেননা এটি ইবাদত পালন বা বিশেষ ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় না। তাছাড়া ঈদের সময় অনেক ছাহাবী ও তাবেঈ এরূপ অভিনন্দনসূচক বাক্য ব্যবহার করেছেন। যেমন তাঁরা পরস্পর সাক্ষাৎকালে বলতেন, ‘তাকাববাল্লাহু মিন্না ও মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন) (মু‘জামুল কাবীর হা/১২৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭২০; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন হা/৪০০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩২৫৫; তামামুল মিন্না ১/৩৫৫, সনদ হাসান)। সুতরাং উক্ত দো‘আ বা আরও অনুরূপ দো‘আমূলক শব্দ ও বাক্য যেমন ঈদ মুবারাক, ঈদ সাঈদ প্রভৃতি ব্যবহার করায় দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ২৪/২৫৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১২৯; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৩/৩৭৭)

ঈদের তাকবীর

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২৯/১০৯) : রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত না হ’লেও সম্মানিত ইমামগণ থেকে বর্ণিত অনেক দো‘আ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহু আকবার কাবীরা.... আছীলা। এক্ষণে এসব দো‘আ পাঠ উত্তম বা সুন্নাত বলা যাবে কি?

উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত দো‘আটি জনৈক ছাহাবী পাঠ করলে রাসূল (ছাঃ) তার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, আমি বিস্মিত হ’লাম যে, তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হ’ল (মুসলিম হা/৬০১; মিশকাত হা/৮১৭)। এটি প্রমাণ করে যে, দো‘আটি রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক অনুমোদিত। তবে দো‘আটি ইমাম শাফেঈ ঈদায়েনের তাকবীর হিসাবে পড়তেন, যা রাসূল (ছাঃ) থেকে সরাসরি প্রমাণিত নয়। এতদসত্ত্বেও যেহেতু রাসূল (ছাঃ) ঈদের তাকবীর পাঠের জন্য আমভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তাই এর উপর আমল করা যাবে। অবশ্য একে সুন্নাত বলা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ম, বাণী ও মৌন সম্মতিকেই কেবল সুন্নাত বলা হয়। অনুরূপভাবে ছাহাবীগণের আমল বা বাণীর উপর শর্তসাপেক্ষে আমল করা যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১৪)। যেমন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে আরেকটি আছার বর্ণিত হয়েছে, যা সমাজে প্রসিদ্ধ- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ)

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (৩৩/৭৩) : ঈদের তাকবীর হিসাবে যে দো‘আগুলি পাঠ করা হয় তার কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : ঈদের তাকবীরের জন্য একাধিক দো‘আ সালাফে ছালেহীন থেকে প্রচলিত রয়েছে। ইমাম মালেক ও আহমাদ (রহঃ) বলেন, তাকবীরের শব্দ ও সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। হযরত ওমর, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ, ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ তাকবীর দিতেন ‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’ (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, বায়হাক্বী, সনদ ছহীহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪৩ পৃঃ)। অনেক বিদ্বান পড়েছেন, ‘আল্লা-হু আকবার কাবীরা, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাছীরা, ওয়া সুবহানাল্লা-হি বুকরাতাঁও ওয়া আছীলা’ (কুরতুবী ২/৩০৬-৭ পৃঃ)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এটাকে ‘সুন্দর’ বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ২/৩৬১ পৃঃ; নায়ল ৪/২৫৭ পৃঃ)। এছাড়া তাকবীর হিসাবে আরো দো‘আ বিভিন্ন আছারে বর্ণিত হয়েছে (বায়হাক্বী, ইরওয়া ৩/১২৬, ফৎহুলবারী ২/৪৬২; দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৯)

ঈদুল আযহা

১৫/ফেব্রুয়ারী’১২ (৬/১৬৬) : ঈদুল আযহার ছালাত শেষে খুৎবা না শুনে বাড়িতে এসে কুরবানী করলে উক্ত কুরবানী গ্রহণযোগ্য হবে কি?

উত্তর : ঈদুল আযহার ছালাতের পূর্বে কুরবানী করলে তা কবুল হবে না (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৭২)। ছালাত ও খুৎবা দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঈদের খুৎবা শুনার জন্য ঋতুবতী মহিলাদেরকেও ঈদগাহে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে (বুখারী হা/৩২৪)। তবে কোন যরূরী কারণে ছালাত শেষ করার পর খুৎবা না শুনেই যদি কেউ কুরবানী করে তবে তা কবুল হবে (নাসাঈ হা/১৫৭০; ইবনু মাজাহ হা/১২৯০)

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৫/৬৫) : ঈদের ছালাতের পর খুৎবার পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমরা প্রথম ছালাত দিয়ে শুরু করি। অতঃপর ফিরে আসি এবং কুরবানী করি। এক্ষণে যে ব্যক্তি এটা করল, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি তার পূর্বে করল, সে তার নিজের পরিবারের জন্য গোশত পাঠালো। এতে কুরবানীর কোন অংশ নেই’ (বুখারী হা/৯৬৫, মুসলিম হা/১৯৬১, মিশকাত হা/১৪৩৫)। এখানে ছালাত বলতে খুৎবাসহ ছালাত বুঝানো হয়েছে। ইবনু কুদামা বলেন, ছালাত ও খুৎবা সম্পন্ন হওয়ার পরই কুরবানী করা হালাল হবে (মুগনী ৯/৪৫২, মাসআলা নং ৭৮৮৩)। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কেউ খুৎবার পূর্বে কুরবানী করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এরূপ কাজ হ’তে বিরত থাকাই কর্তব্য। এক্ষণে যদি কেউ বাধ্যগত অবস্থায় খুৎবার পূর্বে কুরবানী করে, তবে তার বিষয়টি বাধ্যগত বলেই গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

ঈদের ছালাতের স্থান

১৫/এপ্রিল’১২ (২২/২৬২) : ঈদগাহ তৈরীর জন্য জমি ওয়াকফ করা কি শর্ত? সরকারী বা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের মাঠে অথবা সরকারী জমিতে ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : ঈদগাহ হ’ল ছালাতের স্থান। যাতে তা উক্ত কাজেই ব্যবহৃত হয়, তার নিশ্চয়তার জন্য ওয়াফক করা আবশ্যক। মসজিদে নববীর জন্য মাটি ক্রয় করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জার সেটা বিনা পয়সায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে দিয়ে দেন। ওমর (রাঃ) যখন খায়বারের প্রাপ্ত জমি ওয়াক্ফ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরামর্শক্রমে বললেন, এটি বিক্রি হবে না, কাউকে দান করা যাবে না এবং এতে কেউ ওয়ারিছ হবে না। এটাই ছিল ইসলামে প্রথম ওয়াক্ফের ঘটনা (ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘ওয়াক্বফ’ অধ্যায়)। অতএব ভবিষ্যতে ফিৎনার হাত থেকে বাঁচার জন্য মসজিদ বা ঈদগাহের জমি লিখিতভাবে ওয়াক্বফ হওয়াই উত্তম। অন্যের মালিকানাধীন কোন জায়গায় ঈদের ছালাত আদায় করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

(১৬/নভে’১২) প্রশ্ন (৭/৪৭) : ঈদের মাঠ পাকা করা যাবে কি?

উত্তর : ঈদগাহের জন্য মেঝে পাকা করা, ছায়ার জন্য সামিয়ানা টাঙানো বা ছাদ করা কোনটাই আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) বা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে তোমরা অনেক ইখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আবশ্যিক হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অাঁকড়ে ধরা এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/১৬৫)। রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববীর মাত্র ৫০০ গজ পূর্বে ‘বাত্বহান’ সমতলভূমিতে খোলা ময়দানে ঈদের ছালাত আদায় করতেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭, মির‘আত ৫/২২ পৃঃ)। আমাদেরও সেটাই করা কর্তব্য।

(১৬/জানুয়ারী’১৩) প্রশ্ন (৩৪/১৫৪):  ঈদের ময়দানে ছওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়াই শামিয়ানা টানানো ও সাজ-সজ্জা করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? থাকলে তা কোন দলীলের ভিত্তিতে, জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ঈদের ময়দানে মুছল্লীদের জন্য শামিয়ানার মাধ্যমে ছায়ার ব্যবস্থা করার কোন বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এবং তাঁর ছাহাবীগণ মসজিদে নববী থেকে ৫০০ গজ পূর্বে বাত্বহান প্রান্তরে খোলা ময়দানে ঈদায়নের ছালাত আদায় করতেন (মির‘আত ৫/২২)। সেখানে কোন ছায়ার ব্যবস্থা ছিল না। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) এক নেযা (সাড়ে ছয় হাত) পরিমাণ সূর্যোদয়ের পর ঈদুল আযহা এবং দুই নেযা পরিমাণ সূর্যোদয়ের পর ঈদুল ফিৎরের ছালাত আদায় করতেন (মির‘আত ৫/৬২, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৮)। অতএব সুন্নাত মেনে ছালাত আদায় করলে শামিয়ানার কোন প্রয়োজন হয় না।

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৮/৬৮) : মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করলে তাহিইয়াতুল মসজিদ পড়তে হবে কি?

উত্তর : ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করা হ’লে ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত তাহ্ইয়াতুল মসজিদ ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এটি মসজিদের সাথে সম্পর্কিত সুন্নাত, ঈদের ছালাতের সাথে নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে না বসে (বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪)। সুতরাং ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করলে তার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যদিও তখন নিষিদ্ধ সময় হয় (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু বায ১৩/১৫, শারহুল মুমতে‘ ৫/১৫৩)। আর ঈদগাহে আদায় করলে তার পূর্বে ও পরে কোন ছালাত নেই (বুখারী হা/৫৮৮৩; ইবনু মাজাহ হা/১২৯২)

(২২/জুলাই’১৯) প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) : সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। আনাস (রাঃ) বলেন, মদীনায় হিজরত করার পর মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাজ্জারকে বললেন, তোমরা তোমাদের বাগানটি আমার নিকটে বিক্রয় করে দাও। জবাবে তারা বলল, আমরা আপনার নিকট থেকে এর বিনিময়ে কোন মূল্য নেব না। কেবল আল্লাহ্র নিকট থেকে বিনিময় চাই। অতঃপর আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) তাদের সম্মতিক্রমে সেটি গ্রহণ করলেন ও সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন’ (বুখারী হা/১৮৬৮; মুসলিম হা/১২০১; আবুদাঊদ হা/৪৫৩; নাসাঈ হা/৭১০, ইবনু মাজাহ হা/৭৯১)। তাছাড়া সাধারণভাবে যেকোন স্থানে ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য ছালাতের স্থান এবং মাটিকে পবিত্র করে দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৬)।

কুরবানীর পশু

(১৭/নভেম্বর’১৩) প্রশ্ন (২৩/৬৩) :  ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কুরবানী করার বিধান কি? ঋণ পরিশোধ না করে কুরবানী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : কুরবানী করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব, ওমর ফারূক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী কখনো কখনো কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১১৩৯; মির‘আত ৫/৭২-৭৩)। এক্ষণে ঋণ যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করা যরূরী। তবে দাতার সম্মতিতে ঋণ দেরীতে পরিশোধ করে কুরবানী দেওয়ায় কোন বাধা নেই।

(১৭/ডিসেম্বর’১৩) প্রশ্ন (৯/৮৯) : জন্মগতভাবে শিং বা কান না থাকলে উক্ত পশু কুরবানী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : এরূপ পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যেহেতু রাসূল (ছাঃ) শিংওয়ালা পশু কুরবানী দিয়েছেন (বুখারী হা/১৭১২; মিশকাত হা/১৪৫৩) সেহেতু শিংওয়ালা পশু কুরবানী করাই উত্তম।

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (৮/৮) : দাঁত পড়ে যাওয়া পশু কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মোট চার ধরণের পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। যথা  স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণ-শীর্ণ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৪৬৫)। হাতমা (الْهَتْمَاءُ) অর্থাৎ কিছু দাঁত পড়ে যাওয়া পশু এর অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এরূপ পশু কুরাবানী করায় কোন বাধা নেই। তবে নিখুঁত ও সুন্দর পশু ক্রয় করাই উত্তম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু তায়মিয়াহ ২৬/৩০৮; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৩২)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৭/৪২৭) : খাসীকৃত প্রাণী কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? এ ধরনের প্রাণী দ্বারা কুরবানী কিভাবে জায়েয হবে? আমরা দেখেছি পাকিস্তান বা ভারতের অনেক এলাকায় খাসী কুরবানী না করার প্রচলন রয়েছে।

উত্তর : খাসীকৃত প্রাণী ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি ছাগলের  কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে সর্বদা দু’টি করে ‘খাসী’ (خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম হা/৭৫৪৭; আহমাদ হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭, সনদ ছহীহ)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)

(১৮/সেপ্টেম্বর’১৫) প্রশ্ন (৩১/৪৭১) : ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে কুরবানীর পশু মোটাতাজা করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : বিষাক্ত ইনজেকশন, ইউরিয়া সার বা ট্যাবলেট খাইয়ে পশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এটি কুরবানী বা সকল সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। কেননা এসব ব্যবহারে পশুর গোশত বিষাক্ত হয়ে যায়, যা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এতে মানুষ লিভার, কিডনী, ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সুতরাং নিশ্চিত ক্ষতিকর জেনেও এসব ব্যবহার করা কবীরা গোনাহ। এর মাধ্যমে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০২)। প্রতারণা করা ও ধোঁকা দেওয়ার কারণে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৬৭, ছহীহাহ হা/১০৫৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্ষতি করো না এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪১; আহমাদ হা/২৮৬৭)

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : কুরবানীর পশু ক্রয়ের কয়েকদিন পর কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা বা ক্রয় করার পর যদি কোন ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহ’লে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর নিকট হজ্জের হাদ্ঈ সমূহ আনা হ’লে তার মধ্যে একটি এক চক্ষুহীন ট্যারা উট পাওয়া যায়। তখন তিনি বলেন, ক্রয়ের পর এরূপ হ’লে এটা দিয়েই কাজ সম্পন্ন কর। আর ক্রয়ের পূর্বে এরূপ পেলে তা পাল্টে নাও’ (বায়হাক্বী হা/১০৫৪৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৩৬৩, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; মির‘আত ৫/৯৯)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (২৩/২৩) : হজ্জে গমনকারী পিতা সেখানে কুরবানী দিবেন। এক্ষণে বাড়ীতে অবস্থানকারী পরিবারের জন্য কুরবানী দিতে হবে কি?

উত্তর : হজ্জপালনকারীকে হজ্জের ওয়াজিব হিসাবে সেখানে নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে হয়। যা অনাদায়ে ফিদইয়া দিতে হয় (বাক্বারাহ ২/১৯৬)। এর সাথে পরিবারের কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। সেকারণ সামর্থ্য থাকলে বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করবে (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩, সনদ হাসান)

(১৯/অক্টোবর’১৫) প্রশ্ন (২৮/২৮) : আমাদের এলাকায় ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ পূর্বেই কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি হয়ে যায়। এটা শরী‘আত সম্মত কি?

উত্তর : এরূপ ক্রয়-বিক্রয় দোষণীয় নয়। কারণ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে, যদি সেখানে পরিমাপ, পরিমাণ ও মেয়াদ নির্ধারিত থাকে (বুখারী হা/২২৪০, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৮৩)

(১৯/সেপ্টেম্বর’১৬) প্রশ্ন (২৭/৪৬৭) : কুরবানী মোট কয়দিন করা যাবে?

উত্তর : ১১, ১২, ১৩ই যিলহজ্জ তিনদিনের রাত-দিন যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে (বায়হাক্বী ৯/২৯৬-৯৭ পৃ. হা/১৯০২৯-৩৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩০, মির‘আত ৫/১০৬-০৯)

(২০/নভেম্বর’১৬) প্রশ্ন (১/৪১) : কুরবানীর নিয়তে ক্রয় করা পশু মৃতপ্রায় অবস্থা দেখলে করণীয় কি? যবেহ করে ছাদাক্বা করা, খেয়ে ফেলা বা বিক্রি করা যাবে কি?

উত্তর : এরূপ পশু যবেহ করে গোশত খাওয়া, ছাদাক্বা করা বা বিক্রয় করা সবই জায়েয। এর পরিবর্তে অন্য একটি পশু কুরবানী দেওয়া যরূরী নয়। তবে সক্ষমতা থাকলে দিতে পারবেন (দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ ২৫ পৃঃ)

কুরবানীর বিবিধ মাসায়েল

[১৩/ডিসে ’০৯] প্রশ্ন (৩৯/১১৯) যুলহিজ্জার চাঁদ উঠলে নখ, চুল ইত্যাদি না কেটে ঈদের ছালাতের পর কাটার এই সুন্নাতটি কি কেবল কুরবানী দাতার জন্য প্রযোজ্য হবে? সঠিক উত্তর দানে বাধিত করবেন।

উত্তরঃ হুকুমটি মূলতঃ কুরবানীদাতাদের জন্য প্রযোজ্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী প্রদানের ইচ্ছা রাখে সে যেন কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত স্বীয় চুল ও নখ কর্তন থেকে বিরত থাকে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৯)। তবে যারা কুরবানী দিতে অপারগ তারাও যদি খালেছ নিয়তে এ হুকুমটি পালন করেন তবে আল্লাহর নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে বলে আশা করা যায় (আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৭৯ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘আতীরাহ’ অনুচ্ছেদ)।

(১৮/নভেম্বর’১৪)প্রশ্ন (২৫/৬৫) : ঈদের ছালাতের পর খুৎবার পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমরা প্রথম ছালাত দিয়ে শুরু করি। অতঃপর ফিরে আসি এবং কুরবানী করি। এক্ষণে যে ব্যক্তি এটা করল, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি তার পূর্বে করল, সে তার নিজের পরিবারের জন্য গোশত পাঠালো। এতে কুরবানীর কোন অংশ নেই’ (বুখারী হা/৯৬৫, মুসলিম হা/১৯৬১, মিশকাত হা/১৪৩৫)। এখানে ছালাত বলতে খুৎবাসহ ছালাত বুঝানো হয়েছে। ইবনু কুদামা বলেন, ছালাত ও খুৎবা সম্পন্ন হওয়ার পরই কুরবানী করা হালাল হবে (মুগনী ৯/৪৫২, মাসআলা নং ৭৮৮৩)। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কেউ খুৎবার পূর্বে কুরবানী করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এরূপ কাজ হ’তে বিরত থাকাই কর্তব্য। এক্ষণে যদি কেউ বাধ্যগত অবস্থায় খুৎবার পূর্বে কুরবানী করে, তবে তার বিষয়টি বাধ্যগত বলেই গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

(১৮/ডিসেম্বর’১৪)প্রশ্ন (১৭/৯৭) : কুরবানী একটির বেশী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : সামর্থ্য থাকলে একাধিক কুরবানী করায় কোন বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হ’তে দু’টি ‘খাসি’ কুরবানী করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫৩)। এছাড়া বিদায় হজ্জের দিন তিনি একশত উট কুরবানী করেছিলেন (ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৬)। তবে নিজ ও পরিবারের পক্ষে একটি ছাগল কুরবানী করাই যথেষ্ট (মুসলিম হা/১৯৬৭, মিশকাত হা/১৪৫৪)। তাবেঈ বিদ্বান ‘আতা বিন ইয়াসার (রহঃ) বলেন, আমি আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে কুরবানী কেমন ছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘ একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিতেন। অতঃপর তা খেতেন ও অন্যকে খাওয়াতেন। অবশেষে এখন লোকেরা গর্ব করছে, যেমন তুমি দেখছ’ (তিরমিযী হা/১৫০৫, ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৭)। ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, ‘আমার পরিবার আমাকে কঠোরতার অভিযোগ করে যখন থেকে আমি সুন্নাত জানতে পারি। তখন লোকেরা পরিবার পিছু একটি বা দু’টি করে বকরী কুরবানী দিত। অথচ এখন আমার প্রতিবেশীরা আমাকে কৃপণ বলে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৮)

(২৩/ অক্টোবর’১৯) প্রশ্ন (১৫/১৫) : বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ঈদের জামা‘আত মসজিদে হয়েছে। ফলে পূর্বে পুরুষদের জামা‘আত ও পরে মহিলাদের জামা‘আত হয়। এক্ষণে মহিলাদের জামা‘আতের পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : পুরুষদের ঈদের জামা‘আত সম্পন্ন হ’লেই কুরবানী করা যাবে। উক্ত স্থানে মহিলাদের ঈদের জামা‘আত অতিরিক্ত। অতএব সেজন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।

(২০/নভেম্বর’১৬) প্রশ্ন (১৫/৫৫) : সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও অবস্থানগত কারণে কুরবানী করার সুযোগ না থাকলে সমপরিমাণ মূল্য দান করে দিলে তাতে কুরবানীর নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : নেকী পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় নিজে করতে না পারলে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে কুরবানী করিয়ে নেওয়ায় বাধা নেই।

(২০/মার্চ’১৭) প্রশ্ন (২০/২২০) : কুরবানীর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর চামড়া মসজিদের উন্নয়নে লাগানো যাবে না। কারণ সূরা তওবাহর ৬০ আয়াতে যাকাতের যে ৮টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : কেউ যদি আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিনে কুরবানী করতে চায়, তবে সে ঈদের দিন নখ-চুল কর্তন করতে পারবে কি?

উত্তর : না। যেদিন কুরবানী করবে সেদিনই নখ ও চুল কাটাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার এরাদা রাখে, তারা যেন যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী করা পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’ (মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশখাত হা/১৪৫৯)। অত্র হাদীছে কুরবানী করাকে শেষ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে (উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন হা/১৭০৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

(২০/আগষ্ট’১৭) প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : কুরবানীর পশু ক্রয়ের কয়েকদিন পর কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : কোন পশুকে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা বা ক্রয় করার পর যদি কোন ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহ’লে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর নিকট হজ্জের হাদ্ঈ সমূহ আনা হ’লে তার মধ্যে একটি এক চক্ষুহীন ট্যারা উট পাওয়া যায়। তখন তিনি বলেন, ক্রয়ের পর এরূপ হ’লে এটা দিয়েই কাজ সম্পন্ন কর। আর ক্রয়ের পূর্বে এরূপ পেলে তা পাল্টে নাও’ (বায়হাক্বী হা/১০৫৪৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৩৬৩, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; মির‘আত ৫/৯৯)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (১৯/৪৫৯) : স্বামী-সন্তানহীন বিধবা নারী সক্ষম হলে তার জন্য কুরবানী করা কর্তব্য হবে কি?

উত্তর : হ্যাঁ। কারণ কুরবানী করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ইবনু হাযম বলেন, কুরবানীর বিধান মুক্বীম-মুসাফির সবার জন্য প্রযোজ্য এতে কোন পার্থক্য নেই, অনুরূপভাবে নারীদের জন্যও প্রযোজ্য (মুহাল্লা ৬/৩৭)। উল্লেখ্য যে, পরিবারের সাথে থাকলে পরিবার প্রধান কিংবা পরিবারের কোন একজনের কুরবানীই সবার জন্য যথেষ্ট হবে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮)

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (২৫/৪৬৫) : পরিবারসহ বিদেশে অবস্থানকারী কোন প্রবাসী অধিক মূল্যের কারণে সেখানে কুরবানী না করে দেশে ভাই-বোনের পরিবারে কুরবানী করতে পারবে কি?

উত্তর : সামর্থ্য থাকলে নিজ অবস্থানস্থলেই কুরবানী করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও যারা চায় না তাদেরকে ও যারা চায় তাদেরকে’ (হজ্জ ২২/৩৬)। অত্র আয়াতে নিজে ভক্ষণ ও অপরকে দান করার নির্দেশনা এসেছে।

অতএব অবস্থানস্থলের মূল্য অনুযায়ী সামর্থ্য থাকলে কুরবানী করবে। অন্যথায় বিরত থাকবে। অন্যদেশে কুরবানী করলে তা সুন্নাত মোতাবেক হবে না (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২২৪)।

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : আমি বিদেশে গবেষণারত। এখানে পশু কুরবানীর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমি কি নিজ দেশে কিংবা কোন গরীব মুসলিম দেশে কুরবানীর টাকা পাঠিয়ে নিজের কুরবানীর হক আদায় করতে পারি?

উত্তর : সুন্নাত হ’ল যেখানে অবস্থান করবে সেখানে কুরবানী করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও যারা চায় না তাদেরকে ও যারা চায় তাদেরকে’ (হজ্জ ২২/৩৬)। অত্র আয়াতে নিজে ভক্ষণ করা ও অপরকে দান করার নির্দেশনা এসেছে। তবে অবস্থানরত দেশে কুরবানী করার কোন উপায় না থাকলে নিজ দেশে আত্মীয়-স্বজনের নিকট টাকা পাঠিয়েও কুরবানীর হক আদায় করা যাবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২২৪, ২৫/৭৬-৭৭)

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (১৯/৯৯) : রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ‘তুমি (কুরবানীর দিনে) তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ খাট করবে এবং নাভীর নীচের লোম ছাফ করবে। এটাই তোমার জন্য আল্লাহ্র নিকট পূর্ণ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে’। অত্র হাদীছটির ব্যাপারে শু‘আইব আরনাউত্ব সনদ হাসান এবং আলবানী সনদ যঈফ বলেছেন। উপরোক্ত মতামতগুলির মধ্যে কোনটি অগ্রাধিকারযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে?

উত্তর :  হাদীছটি মুসনাদে আহমাদ (হা/৬৫৭৫), আবুদাঊদ (হা/২৭৮৯), নাসাঈ (হা/৪৪৩৯), ছহীহ ইবনে হিববান (হা/৫৯১৪), ত্বাবারাণী মু‘জামুল কাবীর (হা/১৫৭, ১৫৮), সুনান দারাকুৎনী (হা/৪৭৪৯), হাকেম মুস্তাদরাক (হা/৭৫২৯), বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা (হা/১৯০২৮-২৯) প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী দু’টি কারণে হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। (১) তিনি ঈসা বিন হেলাল আছ-ছাদাফীকে অজ্ঞাত ও অপ্রসিদ্ধ বলেছেন এবং (২) হাদীছটির মতনে কিছু অসংগতি রয়েছে (যঈফ আবুদাঊদ হা/৪৮২, ২/৩৭০ পৃ.; মিশকাত হা/১৪৭৯)। তবে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব রাবী ঈসা বিন হেলালকে শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ মন্তব্য করে হাদীছটির সনদ ‘শক্তিশালী’ বলেছেন (তাহকীক সুনান আবুদাঊদ হা/২৭৮৯, ৪/৪১৭)। তাহকীকে দেখা যায়, ঈসা বিন হেলাল অপ্রসিদ্ধ রাবী নন, বরং তাঁর থেকে বেশকিছু রাবী হাদীছ বর্ণনা করেছেন (তাহযীবুল কামাল, ক্রমিক ৪৪৬৯)। ইয়াকূব আল-ফাসাভী (২৭৭ হিঃ) ঈসা বিন হেলালকে মিসরবাসী ‘ছেক্বাহ’ তাবেঈদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন (আল-মা‘রিফাতু ওয়াত তারীখ ২/৫১৫)। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে সত্যবাদী (صدوق) বলেছেন (তাক্বরীব, ক্রমিক ৫৩৩৭) এবং যাহাবী সহ একদল বিদ্বান তাকে ‘বিশ্বস্ত’ বলেছেন (আল-কাশিফ, ক্রমিক ৪৪০৫)। এছাড়া ইমাম তিরমিযী ঈসা বিন হেলাল বর্ণিত অন্য একটি হাদীছকে ‘ছহীহ’ বলেছেন (তিরমিযী হা/২৫৮৮)। যার অর্থ তিনিও ঈসা বিন হেলালকে শক্তিশালী মনে করেন। ইমাম নাসাঈ হাদীছটি বর্ণনা করলেও কোন ত্রুটি উল্লেখ করেননি। সুতরাং শু‘আইব আরনাউত্বের মন্তব্যটিই এখানে অগ্রাধিকারযোগ্য এবং হাদীছটি কমপক্ষে ‘হাসান’ পর্যায়ের। সম্ভবতঃ শায়খ আলবানী রাবী ঈসা বিন হেলাল সম্পর্কে ইয়াকূব আল-ফাসাভীর ‘তাওছীক’ লক্ষ্য করেননি। এছাড়াও তিনি হাদীছটির মতনে যে অসংগতির কথা বলেছেন সেটি মৌলিক ত্রুটি নয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩২/১১২) : যাকাত ফরয হয়, এরূপ সম্পদ থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় কি?

উত্তর : কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; হাকেম হা/৩৪৬৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৮৭)। এটা ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) ও ওমর ফারূক (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৮৮৯৩, সনদ হাসান; মাসায়েলে কুরবানী ৭ পৃ.)

(২১/আগষ্ট’১৮) প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। এভাবে তাকবীর ধ্বনি বলা ও বলতে বলা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ বলেন, আবু হুরায়রা ও ইবনু ওমর যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাযারে বের হতেন এবং সশব্দে তাকবীরধ্বনি দিতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিতেন। তারা কেবল এই কাজের জন্যই বাযারে আসতেন (ফাকেহী, আখবারু মাক্কা হা/১৬৪৪; বুখারী হা/৩৭৫, ৪/১২২ পৃ.; ইরওয়া হা/৬৫১, সনদ ছহীহ)। ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাঁবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং তাদের তাকবীর শুনে বাযারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১; আখবারু মাক্কা হা/২৫৮০; বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। মায়মূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান বিন ওছমান ও ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পিছনে আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলিতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন (বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। তবে এর মাধ্যমে যেন কেউ জামা‘আতবদ্ধ যিকিরের দলীল না নেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ জামা‘আতবদ্ধ যিকির বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/২৬৯)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৯/৪২৯) : অমুসলিমদের কুরবানীর গোশত প্রদান করা যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর গোশত মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা উত্তম। তবে অমুসলিম প্রতিবেশী দুস্থ-অভাবীদের কিছু দেওয়ায় দোষ নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৪২৪)। কেননা এটি যাকাত বহির্ভূত নফল ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত (আল-মুগনী ৩/৫৮৩, ৯/৪৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাঁর ইহূদী প্রতিবেশীকে দিয়েই গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারী, তিরমিযী হা/১৯৪৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮, সনদ ছহীহ, ‘ইহূদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ)। ‘তোমরা মুসলমানদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করাবে না’ মর্মে যে হাদীছ এসেছে তা ‘যঈফ’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯১১৩)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৬/৪২৬) : আমি একটি গরু কুরবানীর জন্য রেখেছি। সেটি ২ বছর অতিক্রম করেছে এবং যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্টও হয়েছে। কিন্তু এখনো দাঁত ওঠেনি। গরুটি কি কুরবানী করা যাবে?

উত্তর : কুরবানীর জন্য গরুর বয়স হ’ল দু’বছর পূর্ণ হওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবেহ কর না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৫)। জমহূর বিদ্বানগণ অন্যান্য হাদীছের আলোকে এই হাদীছের নির্দেশিত ‘মুসিন্নাহ’ পশুকে কুরবানীর জন্য উত্তম হিসাবে গণ্য করেছেন (মির‘আত ২/৩৫৩ পৃঃ)

‘মুসিন্নাহ’ পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয় (মির‘আত, ২/৩৫২ পৃঃ, আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৫৪/৫১ পৃঃ)। কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ এই সব পশুর দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা কোন দোষের হবে না ইনশাআল্লাহ (মাসায়েলে কুরবানী ১৪-১৫ পৃঃ)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : গরু কুরবানীর সাথে বিবাহের ওয়ালীমা বা আক্বীক্বার নিয়ত করা যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ দু’টি পৃথক ইবাদত। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)

তবে কুরবানীর গোশত দ্বারা বিবাহের ওয়ালীমা খাওয়ানো যাবে। কুরবানীর গোশত ঈদের পরে জমা রেখে খাওয়া জায়েয (ইবনু মাজাহ হা/৩১৫৯, মিশকাত হা/১৭৬২)। তুরতুসী বলেন, কেউ যদি বিবাহের ওয়ালীমায় কুরবানীর গোশত খাওয়ায় সেটিই তার জন্য যথেষ্ট হবে’ (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল লি মুখতাছারে খলীল ৪/৩৭৬)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : রাসূল (ছাঃ) কতবার কুরবানী করেছিলেন?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর কুরবানী করেছেন (তিরমিযী হা/১৫০৭; মিশকাত হা/১৪৭৫, সনদ যঈফ হলেও মর্ম ছহীহ)। সে হিসাবে রাসূল (ছাঃ) দশবার কুরবানী করেছেন। কারণ তিনি সফরে থাকা অবস্থাতেও কুরবানী পরিত্যাগ করেননি (মুসলিম হা/১৯৭৫; ইরওয়া হা/১১৫৮)। রাসূল (ছাঃ) প্রতি বছর দু’টি করে কুরবানী দিতেন। একটি তাঁর ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে, আরেকটি তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা কুরবানী করেনি, তাদের পক্ষ থেকে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৪৫৩; আবুদাঊদ হা/২৮১০)

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (৩২/৪৩২) : কুরবানীর সময় পশুর দেহের প্রবাহিত রক্ত কাপড়ে লাগলে সেই কাপড়ে কি ছালাত আদায় করা যাবে?

উত্তর : পশুর প্রবাহিত রক্ত অপবিত্র (আন‘আম ৬/১৪৫)। সুতরাং কারো কাপড়ে কুরবানী করার সময় পশুর প্রবাহিত রক্ত লাগলে তা পরিষ্কার করে ছালাত আদায় করতে হবে। কেউ জেনেশুনে উক্ত রক্ত মাখা কাপড়ে ছালাত আদায় করলে তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৫৭৬; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহু উমদাতুল ফিক্বহ ১/১০৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৩৫২)। তবে যবহের পর গোশতের মধ্যে থাকা সাধারণ রক্ত পোশাকে লেগে থাকলে উক্ত পোষাকে ছালাত হয়ে যাবে। কেননা তা প্রবাহিত রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয় (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৭২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২১৯)

[১৩/সেপ্টে ’১০] প্রশ্ন (৩৪/৪৩৪) : ঋণ করে ফিৎরা দেওয়া ও কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। যদি পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরকে ঋণ দিতেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৮৪ পৃঃ)। তাছাড়া কুরবানীর বিষয়টি সামর্থ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। যার সামর্থ্য আছে সেই কুরবানী করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না যায়’ (আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; বুলূগুল মারাম হা/১৩৪৯)

(১৭/অক্টোবর’১৩) প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : সন্তান জন্মের ৭ম দিনে যদি কুরবানীর ঈদের দিন হয় তবে ক্রয়কৃত পশু শিশুর আকীকা হিসাবে দিতে হবে, না কুরবানী হিসাবে?

উত্তর : কুরবানী ও আকীকা দু’টি পৃথক সুন্নাত। সুতরাং তা একই দিনে হ’লে সাধ্যমতে দু’টিই আদায় করবে। নইলে কেবল আকীকা করবে। কেননা আকীকা জীবনে একবার হয় এবং তা সপ্তম দিনেই করতে হয় (আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪১৫৩; ইরওয়া হা/১১৬৫)। কিন্তু কুরবানী প্রতি বছরই করা যায়। সমাজে প্রচলিত কুরবানীর পশুতে আকীকার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)

১২/প্রশ্নঃ (৫/৪৫)ঃ কুরবানীর পশু যবহ করার পর হিন্দু লোক দ্বারা চামড়া ছাড়ানো যায় কি?

উত্তরঃ কুরবানী হালাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্র নামে যবহ করা শর্ত। চামড়া ছাড়ানো বা কুটাবাছার জন্য মুসলিম-অমুসলিম কোন শর্ত নয়। তাই হিন্দু লোক দ্বারা কুরবানীর পশুর চামড়া ছাড়ানো যেতে পারে। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে কুরবানীর পশু দেখা-শুনা করতে বলেন এবং তার গোশত চামড়া ও তার গায়ের ঝুল মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করার নির্দেশ দেন। তবে কসাইকে সেখান থেকে কিছু দিতে নিষেধ করেন (ছহীহ বুখারী, মুসলিম, বুলূগুল মারাম হা/১২৫৭)। এখানে কসাই বলতে মুসলমানদের খাছ করা হয়নি। বরং মুসলিম-অমুসলিম যেকোন ব্যক্তি হ’তে পারে।

১২/প্রশ্নঃ (১৫/৫৫)ঃ কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের মাঠে তার লোম, শিং ও ক্ষুর সহ উপস্থিত হবে। একথা কি ঠিক?

উত্তরঃ উক্ত বিষয়ে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফ ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৭০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘কুরবানীর গোশত ও রক্ত আল্লাহ্র নিকটে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাক্বওয়া আল্লাহ্র নিকট পৌঁছে’ (হজ্জ ২২/৩৭)। যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির আশায় বৈধ পয়সা দ্বারা কুরবানী করবে তারাই কুরবানীর নেকী পাবে।

[১৩/নভে ’০৯] প্রশ্ন (১০/৫০) মহিলারা কুরবানীর পশু যবেহ করতে পারে কি?

উত্তরঃ মহিলারা কুরবানীর পশু সহ যেকোন পশু যবেহ করতে পারে। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তার একটি  ছাগল ‘সালআ’ নামক চারণক্ষেত্রে ছিল। তাঁর এক দাসী ছাগলটিকে মরণাপন্ন দেখে পাথর দ্বারা যবেহ করে দেয়। বিষয়টি তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি ছাগলটি খাওয়ার নির্দেশ দেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪০৭২)

১২/প্রশ্নঃ (৩২/৭২)ঃ কুরবানীর পশূতে আক্বীক্বার নিয়ত করে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তরঃ কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত। কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)। এই ভিত্তিহীন প্রথা পরবর্তীতে চালু হয়েছে। যা আমাদের দেশেও কোন কোন স্থানে চালু আছে। এই রেওয়াজ বর্জন করা আবশ্যক।

(১৮/আগষ্ট’১৫) প্রশ্ন (১১/৪১১) : আমাদের সমাজে ৫০টি পরিবারে ২৩১ জন লোক। আমরা কুরবানীর গোশত এক জায়গায় জমা করে ২৩১ ভাগ করে যে পরিবারে যত লোক সেই কয় ভাগ তাদেরকে দেই। এভাবে গোশত বণ্টন করা যাবে কি?

উত্তর : এরূপ কোন বিধান শরী‘আতে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(কুরবানীর গোশত) তোমরা নিজেরা খাও, যারা চায় না তাদের খাওয়াও এবং যারা নিজেদের প্রয়োজন পেশ করে তাদের খাওয়াও’ (হজ্জ ৩৬)। অতএব কুরবানী দাতাগণ স্ব স্ব কুরবানীর গোশতের এক-তৃতীয়াংশ একস্থানে জমা করে মহল্লায় যারা কুরবানী করতে পারেনি, তাদের তালিকা করে সুশৃংখলভাবে তাদের মধ্যে বিতরণ করবেন ও প্রয়োজনে তাদের বাড়ীতে পৌঁছে দিবেন। বাকী এক-তৃতীয়াংশ ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করবেন (দ্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই, পৃঃ ২৩)

(২০/অক্টোবর’১৬) প্রশ্ন (২৫/২৫) : আমরা তিন ভাই পৃথক পৃথক পরিবার নিয়ে বসবাস করি। আমাদের মা জীবিত আছেন তবে আমাদের রান্না পৃথকভাবে হয় এবং জমিজমা এখনো বণ্টিত হয়নি। এমতাবস্থায় সবাই মিলে একত্রে একটি পশু কুরবানী দিলে তা শরী‘আতসম্মত হবে কি?

উত্তর : কবুলযোগ্য হবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৭; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ১১/৪০৬)। তবে একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪)

(২১/অক্টোবর’১৭) প্রশ্ন (৮/৮) : তিন ভাই তাদের স্ত্রী-সন্তান সহ একত্রে বসবাস করে। প্রত্যেকের উপার্জন পৃথক। তবে একসাথেই রান্না-বান্না হয়। এক্ষণে যৌথ পরিবারে থাকার কারণে একটি কুরবানীই কি যথেষ্ট হবে? এক্ষেত্রে কুরবানী করার সময় কোন ভাইয়ের নাম বলবে?

উত্তর : একটি কুরবানীই যথেষ্ট হবে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২৫/৭)। এক্ষেত্রে পরিবার প্রধানের নাম ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে বলবে।

(২১/অক্টোবর’১৭) প্রশ্ন (৮/৮) : তিন ভাই তাদের স্ত্রী-সন্তান সহ একত্রে বসবাস করে। প্রত্যেকের উপার্জন পৃথক। তবে একসাথেই রান্না-বান্না হয়। এক্ষণে যৌথ পরিবারে থাকার কারণে একটি কুরবানীই কি যথেষ্ট হবে? এক্ষেত্রে কুরবানী করার সময় কোন ভাইয়ের নাম বলবে?

উত্তর : একটি কুরবানীই যথেষ্ট হবে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২৫/৭)। এক্ষেত্রে পরিবার প্রধানের নাম ও তার পরিবারের পক্ষ হ’তে বলবে

(২০/অক্টোবর’১৬) প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : আমাদের এলাকায় কুরবানীর গোশত এক-তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতে জমা করার পর সেখান থেকে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কিন্তু সবসময় দেখা যায় সবাইকে দেওয়ার পর অনেক গোশত বেঁচে যায় এবং পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা নিজেদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী নিজেরা ভাগ করে নেন। এভাবে নিজেরা গোশত বণ্টন করে নেওয়া শরী‘আত সম্মত হবে কি?

উত্তর : গরীবদের মাঝে বিতরণের জন্য জমাকৃত গোশত বন্টনের পর অতিরিক্ত গোশত নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেওয়া জায়েয নয়। কেননা দান করে ফেরত নেওয়াকে রাসূল (ছাঃ) বমি করে পুনরায় তা ভক্ষণ করার সাথে তুলনা করেছেন (বুখারী হা/১৪৯০, মিশকাত হা/১৯৫৪)। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিমাণ বৃদ্ধি করে হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। অথবা অতিরিক্ত অংশ পার্শ্ববর্তী গ্রামের হকদারদের নিকটে পৌঁছে দিতে হবে। তবে পঞ্চায়েতের কোন সদস্য দরিদ্র হ’লে এবং কুরবানী না দিয়ে থাকলে তাকেও এর অংশ দেওয়ায় কোন বাধা নেই (দ্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা পৃ. ২২-২৩)

(২০/মার্চ’১৭) প্রশ্ন (২০/২২০) : কুরবানীর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর চামড়া মসজিদের উন্নয়নে লাগানো যাবে না। কারণ সূরা তওবাহর ৬০ আয়াতে যাকাতের যে ৮টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(২০/সেপ্টেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) : রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে কুরবানী করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন অনুমোদন আছে কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বা কোন মৃতের জন্য পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন বিধান নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)- এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী করেছিলেন মর্মে যে বর্ণনা এসেছে (আহমাদ হা/১২৭৮; তিরিমিযী হা/১৪৯৫; মিশকাত হা/১৪৬২), তা নিতান্তই যঈফ। কোন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য বা রাসূল (ছাঃ) তার প্রিয় স্ত্রী ও সন্তানাদি বা প্রিয় চাচা হামযা বা অন্য কোন মৃতব্যক্তির জন্য এভাবে কুরবানী করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এসব থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

(২২/আগস্ট’১৯) প্রশ্ন (২০/৪২০) :  মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : মৃত ব্যক্তির নামে পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী দিয়েছেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা অত্যন্ত যঈফ (আহমাদ হা/১২৭৮; আবূদাঊদ হা/২৭৯; মিশকাত হা/১৪৬২)। মূলত কুরবানীর বিধান কেবল জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ যদি কুরবানীর পূর্ব মুহূর্তে মারা যায় তাহ’লে তার উপর থেকে বিধান রহিত হয়ে যাবে। অতএব মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সুন্নাত নয় (উছায়মীন, আহকামুল উযহিয়াহ ১/৩-৪)

(২১/ডিসেম্বর’১৭) প্রশ্ন (৩২/১১২) : যাকাত ফরয হয়, এরূপ সম্পদ থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় কি?

উত্তর : কুরবানী সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ঈদগাহে যেতে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; হাকেম হা/৩৪৬৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১০৮৭)। এটা ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) ও ওমর ফারূক (রাঃ) অনেক সময় কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৮৮৯৩, সনদ হাসান; মাসায়েলে কুরবানী ৭ পৃ.)