পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । শেষ পর্ব  

ইমাম কুরতুবী (রহঃ)-এর রচনা সমূহ :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) সর্বদা ইবাদত-বন্দেগী ও জ্ঞান সাধনায় নিয়োজিত থাকতেন। তিনি শহরের কোলাহলমুক্ত নির্ঝঞ্ঝাট গ্রামীণ পরিবেশে নীরবে রচনা করে গেছেন তাঁর সুবিশাল সাহিত্যকর্ম।[1] এসব রচনা বিভিন্ন শাস্ত্রে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ও গভীর জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। তাইতো ঐতিহাসিকগণ বলেছেন,لَهُ تصانيف مفيدة تدل على كَثْرَة اطلاعه ووفور فضله ‘তাঁর অনেক উপকারী গ্রন্থ রয়েছে। যা তাঁর অধিক অধ্যয়ন ও অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে’।[2] আধুনিক গবেষক মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ হাসূনী বলেন, وهى مؤلفات منقطعة النظير في بابها ‘এগুলি অতুলনীয় গ্রন্থ’।[3]

ইমাম কুরতুবী (রহঃ)-এর গ্রন্থ সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এতে ইলমের বড়াই বা আত্মম্ভরিতার লেশমাত্র নেই। বরং সর্বত্র বিনয়-নম্রতার ছাপ বিদ্যমান রয়েছে। তাছাড়া তাঁর রচনা সমূহে সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও সামাজিক সমস্যা সমূহ সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে। ফলে সেগুলি ইতিহাসের বিশ্বস্ত উপাদনে পরিণত হয়েছে।[4] নিম্নে তাঁর রচনাবলী সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল :

১. তাফসীরে কুরতুবী :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ)-এর রচনা সমূহের মধ্যে তাফসীরে কুরতুবী সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও উপকারী। এর পূর্ণাঙ্গ নাম হ’ল اَلْجَامِعُ لِأَحْكَامِ الْقُرْآنِ، وَالْمُبَيِّنُ لِمَا تَضَمَّنَ مِنَ السُّنَّةِ وَآىِ الْفُرْقَانِ তবে এটি ‘তাফসীরে কুরতুবী’ নামেই সমধিক খ্যাত ও পরিচিত। এটি প্রথমতঃ কায়রোর দারুল কুতুব আল-মিসরিয়্যাহ থেকে ২০ খন্ডে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৩-১৯৫০ সালের মধ্যে এর মুদ্রণ শেষ হয়। ১৯৬১ সালে আদ-দারুল ক্বওমিইয়াহ এটি ৮০ জুয বা খন্ডে প্রকাশ করে। অতঃপর ১৯৬৭ সালে কায়রোর দারুল কিতাবিল আরাবী প্রথম সংস্করণের ফটোকপি মুদ্রণ করে। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে এর বহু সংস্করণ বের হয়েছে।[5] তন্মধ্যে আব্দুর রায্যাক আল-মাহদীর তাহক্বীক্বকৃত বৈরূতের দারুল কিতাবিল আরাবী থেকে ২০ খন্ডে প্রকাশিত (২০০৪) সংস্করণ এবং ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন আত-তুর্কীর তাহক্বীক্বকৃত  বৈরূতের  মুআস্সাসাতুর  রিসালাহ  থেকে ২৪

খন্ডে প্রকাশিত (২০০৬) সংস্করণ সবচেয়ে সুন্দর ও উপকারী।

তাফসীরে কুরতুবীর ধরন : বিষয়বস্ত্তর দিক থেকে তাফসীর গ্রন্থ সমূহ দু’প্রকার। ১. তাফসীরে ‘উমূমী বা সাধারণ তাফসীর। এতে আয়াতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী প্রত্যেক আয়াতের তাফসীর ও তার বিষয়বস্ত্ত বর্ণনা করা হয়। ২. তাফসীরে মাওযূঈ বা বিষয়ভিত্তিক তাফসীর। এতে কোন একটি বিষয়ের আয়াত সমূহের উপরে বেশী জোর দেয়া হয়। যেমন : ফিক্বহী তাফসীর বা আহকাম সংক্রান্ত আয়াত সমূহের তাফসীর প্রভৃতি।[6] ইমাম কুরতুবীর তাফসীরে উভয় প্রকারের সন্নিবেশ ঘটেছে। তাঁর তাফসীরের নামের প্রথম অংশ (اَلْجَامِعُ لِأَحْكَامِ الْقُرْآنِ) বিষয়ভিত্তিক তাফসীরের প্রতি নির্দেশ করে। অর্থাৎ এতে কুরআন মাজীদের আয়াত সমূহের আলোকে ফিক্বহী বিধি-বিধান (Legal study of the Holy Quran) বর্ণনা করা হয়েছে। আর এর দ্বিতীয় অংশ (وَالْمُبَيِّنُ لِمَا تَضَمَّنَ مِنَ السُّنَّةِ وَآىِ الْفُرْقَانِ) সাধারণ তাফসীরের দিকে ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ ফিক্বহী বিধি-বিধান ছাড়াও এতে সকল আয়াতের সাধারণ তাফসীর (Generel Commentary) এবং এতদপ্রসঙ্গে আগত হাদীছ সমূহের ব্যাখ্যা রয়েছে। তাছাড়া তাফসীরের নামের প্রথমে اَلْجَامِعُ শব্দটি উল্লেখ করে তিনি এদিকে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে, এই তাফসীরে কুরআন মাজীদের ফিক্বহী পর্যালোচনা নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের মতামত উল্লেখ করার সাথে শর্তযুক্ত হবে না। বরং এটি ফিক্বহী মতামত সমূহের এক সারগর্ভ পর্যালোচনা হবে, যাতে প্রসিদ্ধ মাযহাব সমূহের মতামতগুলি উল্লেখ করা হবে।[7] এজন্যই গবেষক মুছত্বাফা ইবরাহীম আল-মাশীনী তাফসীরে কুরতুবীকে ‘ফিক্বহী বিশ্বকোষ’ (موسوعة فقهية) বলে আখ্যায়িত করেছেন।[8]

রচনার কারণ ও উদ্দেশ্য : তাফসীরে কুরতুবীর ভূমিকায় ইমাম কুরতুবী (রহঃ) এই তাফসীরটি রচনার কারণ ও উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

فلما كان كتاب الله هو الكفيل بجميع عُلُومِ الشَّرْعِ، الَّذِي اسْتَقَلَّ بِالسُّنَّةِ وَالْفَرْضِ، وَنَزَلَ بِهِ أَمِينُ السَّمَاءِ إِلَى أَمِينِ الْأَرْضِ، رَأَيْتُ أن أشتغل به مَدَى عُمُري، وأستفرغ فيه مُنَّتي، بأن أكتب تَعْلِيقًا وَجِيزًا، يَتَضَمَّنُ نُكَتًا مِنَ التَّفْسِيرِ وَاللُّغَاتِ، وَالْإِعْرَابِ وَالْقِرَاءَاتِ، وَالرَّدِّ عَلَى أَهْلِ الزَّيْغِ وَالضَّلَالَاتِ، وَأَحَادِيثَ كَثِيرَةً شَاهِدَةً لِمَا نَذْكُرُهُ مِنَ الْأَحْكَامِ وَنُزُولِ الْآيَاتِ، جَامِعًا بَيْنَ مَعَانِيهِمَا، وَمُبَيِّنًا مَا أَشْكَلَ مِنْهُمَا، بِأَقَاوِيلِ السَّلَفِ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْخَلَفِ. وَعَمِلْتُهُ تَذْكِرَةً لِنَفْسِي، وَذَخِيرَةً لِيَوْمِ رَمْسِي، وَعَمَلًا صَالِحًا بَعْدَ مَوْتِي.

‘আল্লাহর কিতাব যখন যাবতীয় শারঈ জ্ঞানের আধার, যা সুন্নাত ও ফরযকে কায়েম করেছে এবং যা নিয়ে আকাশের আমীন [জিব্রীল (আঃ)] যমীনের আমীনের [রাসূল (ছাঃ)] নিকটে অবতরণ করেছেন, তখন আমি সংক্ষিপ্ত তাফসীর লেখার কাজে সারাজীবন ব্যস্ত থাকতে এবং এ বিষয়ে আমার যাবতীয় শক্তি-সামর্থ্য নিয়োজিত করতে চেয়েছি। যাতে তাফসীর ও ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনার সাথে সাথে ই‘রাব ও ক্বিরাআত, বক্র হৃদয়ের অধিকারী ও পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের খন্ডন থাকবে। আর এতে আমরা আহকাম ও আয়াতের শানে নুযূল উল্লেখ করত তার সমর্থনে অনেক হাদীছও প্রমাণস্বরূপ পেশ করব। কুরআন-সুন্নাহর ভাবের মাঝে সমন্বয়কারী এই তাফসীরটি সারগর্ভ এবং পূর্ববর্তী ও তাদের অনুসরণকারী পরবর্তী আলেমদের মতামত সহ দুর্বোধ্য বিষয়ের ব্যাখ্যাকারী হবে। আমি নিজের জন্য নছীহত, আমার কবরের জন্য পাথেয় এবং আমার মৃত্যুর পর এটি যেন আমার জন্য সৎকর্ম হয় সেজন্য এই তাফসীরটি রচনা করেছি’।[9]

শর্ত ও অনুসৃত পদ্ধতি : ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরের ভূমিকায় তার শর্ত এবং ‘মানহাজ’ বা অনুসৃত পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। যার সারমর্ম হ’ল :

১. তিনি বলেন,وَشَرْطِي فِي هَذَا الْكِتَابِ : إِضَافَةُ الْأَقْوَالِ إِلَى قَائِلِيهَا، وَالْأَحَادِيثِ إِلَى مُصَنِّفِيهَا، فَإِنَّهُ يُقَالُ: مِنْ بَرَكَةِ الْعِلْمِ أَنْ يُضَافَ الْقَوْلُ إِلَى قَائِلِهِ ‘এ গ্রন্থে আমার শর্ত হ’ল, বক্তব্য সমূহকে তার প্রবক্তাদের দিকে এবং হাদীছগুলিকে এর সংকলকদের দিকে সম্বন্ধ করা। কেননা বলা হয়ে থাকে, ইলমের বরকত হ’ল, বক্তব্যকে বক্তার দিকে সম্বন্ধ করা’।[10]

২. মুফাস্সিরদের উদ্ধৃত বহু কিচ্ছা-কাহিনী ও ঐতিহাসিকদের বর্ণিত বহু ঘটনার মধ্যে ব্যাখ্যার জন্য যতটুকু উল্লেখ না করলেই নয় তিনি ততটুকু উল্লেখ করেছেন।

৩. বিধি-বিধান সম্পর্কিত আয়াতের মর্ম যেন পাঠক বুঝতে পারে সেজন্য তিনি মাসআলা সমূহকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

৪. কোন আয়াতে বিধি-বিধান না থাকলে সেখানে আয়াতটির সাধারণ তাফসীর করেছেন।

৫. আয়াতের শানে নুযূল, ক্বিরাআত, ই‘রাব ও দুর্বোধ্য শব্দের অর্থ আরবদের কবিতার উদ্ধৃতি সহ উল্লেখ করেছেন।[11] অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর বর্ণিত শর্ত সমূহ ও মানহাজ অনুসরণ করেছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয়ও ঘটেছে।

তাফসীরে কুরতুবীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য :

তাফসীরে কুরতুবীর অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নে এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হ’ল :

১. সারগর্ভ ভূমিকা :

তিনি তাঁর তাফসীরের শুরুতে উলূমুল কুরআন বিষয়ক একটি সারগর্ভ ভূমিকা লিপিবদ্ধ করেছেন। এতে ফাযায়েলে কুরআন, কুরআন তেলাওয়াতের নিয়ম-নীতি, ই‘রাবুল কুরআন, তাফসীর ও মুফাস্সিরদের ফযীলত, কুরআন মাজীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, নিজস্ব রায় দ্বারা তাফসীর করার বিষয়ে ভীতি প্রদর্শন, মুফাস্সিরদের স্তর, হাদীছ দ্বারা কুরআনের ব্যাখ্যা, কুরআন সংকলনের ইতিহাস, সূরা ও আয়াত সমূহের বিন্যাস, ই‘জাযুল কুরআন (কুরআনের অলৌকিকতা) প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করেছেন, যা কুরআন গবেষক ও মুফাস্সিরের জানা আবশ্যক।[12]

২. আয়াতকে মাসআলায় বিভক্তকরণ :

তিনি এক বা একাধিক আয়াত উল্লেখ করত সেগুলিকে মাসআলায় বিভক্ত করেছেন। যে মাসআলাগুলি আবার কয়েকটি বাবের অধীনে আলোচিত হয়েছে। যেমন সূরা ফাতিহার তাফসীরকে চারটি বাবে বিভক্ত করেছেন। অতঃপর প্রথম বাবে সূরা ফাতিহার ফযীলত ও নাম সমূহকে সাতটি মাসআলায় বিভক্ত করা হয়েছে।[13] দ্বিতীয় বাবে এর শানে নুযূল ও বিধি-বিধান সমূহকে ২০টি মাসআলায় বিভক্ত করেছেন।[14] তৃতীয় বাব আমীন সম্পর্কিত। এতে ৮টি মাসআলা রয়েছে।[15] ৪র্থ বাবে সূরার অর্থ, ক্বিরাআত, ই‘রাব ও প্রশংসাকারীদের ফযীলত আলোচিত হয়েছে। এতে ৩৬টি মাসআলা রয়েছে।[16]

কখনো কখনো বাব ও শিরোনামে বিন্যস্ত না করে মাসআলা উল্লেখ করত আয়াতের তাফসীর করা হয়েছে।[17]

তবে আলোচিত সব মাসআলা যে ফিক্বহী বিধি-বিধান সংক্রান্ত তা কিন্তু নয়। যেমন তাফসীরে কুরতুবীর ভূমিকায় ইমাম কুরতুবী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন,فَضَمَّنْتُ كل آية تتضمن حُكْمًا أَوْ حُكْمَيْنِ فَمَا زَادَ، بِمَسَائِلَ نُبَيِّنُ فِيهَا مَا تَحْتَوِي عَلَيْهِ مِنْ أَسْبَابِ النُّزُولِ وَالتَّفْسِيرِ الْغَرِيبِ وَالْحُكْمِ، فَإِنْ لَمْ تَتَضَمَّنْ حُكْمًا ذَكَرْتُ مَا فِيهَا مِنَ التَّفْسِيرِ وَالتَّأْوِيلِ، هَكَذَا إِلَى آخِرِ الْكِتَابِ. ‘প্রত্যেকটি আয়াতের অধীনস্থ একটি, দু’টি বা ততোধিক বিধানকে আমি মাসায়েল হিসাবে উল্লেখ করেছি। এতে শানে নুযূল, দুর্বোধ্য শব্দের ব্যাখ্যা এবং ফিক্বহী বিধি-বিধান বর্ণনা করেছি। যদি আয়াতটি বিধি-বিধান সম্পর্কিত না হয় তাহ’লে সেখানে আয়াতের সাধারণ তাফসীর উল্লেখ করেছি। গ্রন্থের শেষ পর্যন্ত এ ধারা বজায় রাখা হয়েছে’।[18]

কখনো মাসআলার অধীনে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ছিয়াম সম্পর্কিত আয়াতের (বাক্বারাহ ১৮৩) দ্বিতীয় মাসআলায় ছিয়ামের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, اَلثَّانِيَةُ : فَضْلُ الصَّوْمِ عَظِيمٌ، وَثَوَابُهُ جَسِيمٌ ‘২য় মাসআলা : ছিয়ামের ফযীলত অনেক এবং এর ছওয়াব অগণিত’।[19] কখনো এমন তাফসীর উল্লেখ করা হয়েছে ফিক্বহী মাসআলার সাথে যার কোন সম্পর্কই নেই। যেমন ওযূর আয়াতের শেষ মাসআলায় বলা হয়েছে,اَلثَّانِيَةُ وَالثَّلَاثُوْنَ قَوْلُهُ تَعَالَى: (مَا يُرِيدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ) أَيْ مِنْ ضِيقٍ فِي الدِّينِ، ‘৩২তম মাসআলা : মহান আল্লাহর বাণীمَا يُرِيدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ ‘আল্লাহ তোমাদের উপর কোনরূপ সংকীর্ণতা চান না’ অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে সংকীর্ণতা।[20] আবার কখনো কোন কোন মাসআলায় আক্বীদা সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।[21]

৩. অবতরণকাল ও ফযীলত বর্ণনা :

সূরার প্রথমে তিনি এর অবতরণের সময়কাল ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যেমন সূরা বাক্বারার প্রথমে তিনি বলেন,وَأَوَّلُ مَبْدُوءٍ بِهِ الْكَلَامُ فِي نُزُولِهَا وَفَضْلِهَا وَمَا جَاءَ فِيهَا، وَهَكَذَا كُلُّ سُورَةٍ إِنْ وَجَدْنَا لَهَا ذَلِكَ، ‘প্রথমে এ সূরাটির অবতরণের সময়কাল, ফযীলত এবং এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করা হবে। এভাবে প্রত্যেক সূরার প্রথমে তার অবতরণকাল ও ফযীলত বর্ণনা করব যদি তা পাওয়া যায়’।[22]

৪. হাদীছের উপর নির্ভরতা :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে হাদীছের উপর নির্ভর করেছেন। তিনি এ গ্রন্থে ৬৫০০-এর বেশী হাদীছ উল্লেখ করেছেন।[23] তিনি কখনো কখনো গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের দিক থেকে হাদীছের সনদ ও মতন সম্পর্কে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন তাফসীরে কুরতুবীর ভূমিকায় তিনি বলেছেন, وَكَثِيرًا مَا يجئ الْحَدِيثُ فِي كُتُبِ الْفِقْهِ وَالتَّفْسِيرِ مُبْهَمًا، لَا يَعْرِفُ مَنْ أَخْرَجَهُ إِلَّا مَنِ اطَّلَعَ عَلَى كتب الحديث، فيبقى من لا خبرة لَهُ بِذَلِكَ حَائِرًا، لَا يَعْرِفُ الصَّحِيحَ مِنَ السَّقِيمِ، وَمَعْرِفَةُ ذَلِكَ عِلْمٌ جَسِيمٌ، فَلَا يُقْبَلُ مِنْهُ الِاحْتِجَاجُ بِهِ، وَلَا الِاسْتِدْلَالُ حَتَّى يُضِيفَهُ إِلَى مَنْ خَرَّجَهُ مِنَ الْأَئِمَّةِ الْأَعْلَامِ، وَالثِّقَاتِ الْمَشَاهِيرِ مِنْ عُلَمَاءِ الْإِسْلَامِ. وَنَحْنُ نُشِيرُ إِلَى جُمَلٍ مِنْ ذَلِكَ فِي هَذَا الْكِتَابِ، وَاللهُ الْمُوَفِّقُ لِلصَّوَابِ.  ‘ফিক্বহ ও তাফসীরের গ্রন্থ সমূহে প্রায়শ সূত্রবিহীন হাদীছ আসে। হাদীছ গ্রন্থ সমূহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত কেউ হাদীছটির সূত্র জানে না। ফলে এ বিষয়ে যার অভিজ্ঞতা নেই (অর্থাৎ সাধারণ পাঠক) তিনি এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান যে, ছহীহ ও যঈফ হাদীছের মধ্য পার্থক্য করতে পারেন না। অথচ এর পরিচয় লাভ অনেক বড় ইলম। সূত্রবিহীন হাদীছ পেশকারী ব্যক্তির কথা গ্রহণ করা যায় না এবং তার পেশকৃত হাদীছ দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করাও যায় না। যতক্ষণ না নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছগণের মধ্যে কারো দিকে সেটিকে সম্বন্ধ করা হয়। আমরা এ গ্রন্থে এ জাতীয় বহু বর্ণনার দিকে ইঙ্গিত করব। আল্লাহ যেন সঠিক বিষয়টা উপস্থাপনের তৌফিক দেন’।[24] এতদসত্ত্বেও তিনি কিছু যঈফ, মুনকার ও মাওযূ (জাল) হাদীছ উল্লেখের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছেন। বিশেষত তাফসীরের শেষ তৃতীয়াংশে তিনি অনেক ত্রুটিপূর্ণ ও জাল হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সম্ভবতঃ ছা‘লাবী ও ওয়াহিদীর তাফসীর থেকে তিনি এগুলি গ্রহণ করেছেন। তবে তাফসীরে কুরতুবীতে ছহীহ ও হাসান হাদীছের সংখ্যাই বেশী।[25]

এ ব্যাপারে জীবনীকার ও গবেষক শায়খ মাশহূর হাসানের অভিমত হ’ল, ছহীহ হাদীছ সমূহ বর্ণনার ক্ষেত্রে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) সেগুলির উৎস ও সংকলনকারীদের নাম উল্লেখ করেছেন। তবে যেগুলির শুদ্ধাশুদ্ধির ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হ’তে পারেননি, সেগুলির উৎস ও সংকলনকারীদের নাম এড়িয়ে গেছেন।[26] যেমন সূরা ফাতিহার আল-হামদুলিল্লাহ-এর তাফসীরে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন-

وَيُذْكَرُ الْحَمْدُ بِمَعْنَى الرِّضَا ... وَقَالَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: (أَحْمَدُ إِلَيْكُمْ غَسْلَ الْإِحْلِيلِ) أَيْ أَرْضَاهُ لَكُمْ.

‘ اَلْحَمْدُশব্দটিকে الرِّضَا বা সন্তুষ্টি অর্থেও উল্লেখ করা হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মূত্রপথ ধৌত করার প্রশংসা করি’। অর্থাৎ আমি তোমাদের জন্য তা পসন্দ করি।[27] তবে হাদীছটি কোন গ্রন্থে এবং কে সংকলন করেছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি। মূলতঃ এটি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর উক্তি।[28] তাফসীরে কুরতুবীর মুহাক্কিক্ব আব্দুর রায্যাক আল-মাহদী বলেন, وَلَمْ أَرَهُ مُسْنَدًا ‘আমি একে সনদসহ পাইনি’।[29] এ জাতীয় হাদীছগুলির মূল উৎস খুঁজে বের করে তার শুদ্ধাশুদ্ধি ও দুর্বলতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শুধু ইমাম কুরতুবী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন বলেই সেগুলি গ্রহণ করা যাবে না।[30]

৪. মাযহাবী গোঁড়ামি পরিহার :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) মালেকী মাযহাবের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেন। তাঁর শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে মালেকী মাযহাবের খ্যাতনামা আলেম-ওলামা ছাড়াও শাফেঈ মাযহাবের অনেক বিদ্বান ছিলেন। ইমাম মালেক ও মালেকী মাযহাবের প্রতি ইমাম কুরতুবী (রহঃ)-এর গোঁড়ামি ও অন্যায্য পক্ষপাত ছিল না। দলীলের দিক থেকে দুর্বল হ’লেও তিনি ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মত গ্রহণ করেছেন এমনটি নয়। বরং দলীল যে মাযহাবের পক্ষে গেছে তিনি সে মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি বিরোধীদের দলীল সমূহ দুর্বলভাবে উপস্থাপন করেননি। বরং পূর্ণ আমানতদারির সাথে সূক্ষ্মভাবে সেগুলি উল্লেখ করেছেন এবং তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন।[31]

আধুনিক গবেষক ড. মুহাম্মাদ হুসাইন আয-যাহাবী যথার্থই বলেছেন,وخير ما في الرجل أى : القر طبي أنه لا يتعصب لمذهبه المالكى، بل يمشى مع الدليل حتى يصل إلى ما يرى أنه الصواب، أيا كان قائله- ‘ইমাম কুরতুবীর প্রশংসনীয় দিক হ’ল, তিনি মালেকী মাযহাবের প্রতি গোঁড়ামি প্রদর্শন করেন না। বরং দলীলের সাথে চলেন। যতক্ষণ না তাঁর দৃষ্টিতে সঠিক মতামতের দিকে পৌঁছেন। সে মতের প্রবক্তা যেই হোক না কেন’।[32]

তাঁর মাযহাবী গোঁড়ামি পরিহারের কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন :

ক. তাক্বলীদ বর্জন : ইমাম কুরতুবী (রহঃ) মালেকী মাযহাবের অন্ধ তাক্বলীদ করেননি। তিনি ছিলেন মুজতাহিদ। তাক্বলীদ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য হ’ল, اَلتَّقْلِيدُ لَيْسَ طَرِيقًا لِلْعِلْمِ وَلَا مُوَصِّلًا لَهُ، لَا فِي الْأُصُولِ وَلَا فِي الْفُرُوعِ، وَهُوَ قَوْلُ جُمْهُورِ الْعُقَلَاءِ وَالْعُلَمَاءِ- ‘তাক্বলীদ ইলমের কোন পথ নয় এবং সেদিকে তা পৌঁছিয়েও দেয় না। উছূল (মূলনীতি) ও ফুরূ‘ (শাখা-প্রশাখা) কোন ক্ষেত্রেই নয়। এটিই অধিকাংশ জ্ঞানী-গুণী ও আলেমের অভিমত’।[33]

খ. সূক্ষ্ম বুঝ, জ্ঞানের গভীরতা এবং বিভিন্ন মাযহাবের আলেমদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ।[34]

গ. ইমাম কুরতুবী (রহঃ) সুন্নাতে নববীকে অত্যন্ত শক্তভাবে অাঁকড়ে ধারণকারী ছিলেন। তিনি তাঁর মুহাদ্দিছ শিক্ষকগণের আচার-আচরণ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন। হাদীছের উপর পূর্ণ দখল তাঁকে তাক্বলীদের গন্ডীমুক্ত করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন মতকে প্রাধান্য দেয়ার সময় তিনি হাদীছের উপর নির্ভর করতেন।[35] সঙ্গত কারণেই ঐতিহাসিক মার্রাকুশী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,وكان من أهل العلم بالحديث والاعتناء التام بروايته ‘তিনি মুহাদ্দিছ এবং হাদীছ বর্ণনার প্রতি পূর্ণ যত্নবান ছিলেন’।[36]

যেমন সূরা বাক্বারার ১৮৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ১২তম মাসআলায় তিনি রামাযান মাসে দিনের বেলায় ভুলক্রমে আহারকারীর বিধান সম্পর্কে আলেমদের মতভেদ উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক (রহঃ)-এর অভিমত হ’ল সে ছিয়াম ভঙ্গকারী বলে সাব্যস্ত হবে এবং তাকে ঐ দিনের ছিয়ামের কাযা আদায় করতে হবে। কিন্তু ইমাম কুরতুবী তাঁর মত প্রত্যাখ্যান করে বলেন,

وَعِنْدَ غَيْرِ مَالِكٍ: لَيْسَ بِمُفْطِرٍ كُلُّ مَنْ أَكَلَ نَاسِيًا لِصَوْمِهِ. قُلْتُ: وَهُوَ الصَّحِيحُ، وبه قال الجمهور: إن مَنْ أَكَلَ أَوْ شَرِبَ نَاسِيًا فَلَا قَضَاءَ عَلَيْهِ وَإِنَّ صَوْمَهُ تَامٌّ، لِحَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَكَلَ الصَّائِمُ نَاسِيًا أَوْ شَرِبَ نَاسِيًا فَإِنَّمَا هُوَ رِزْقٌ سَاقَهُ اللهُ تَعَالَى إِلَيْهِ وَلَا قَضَاءَ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّ اللهَ أَطْعَمَهُ وَسَقَاهُ-

‘ইমাম মালেক ব্যতীত অন্যদের নিকটে যে ব্যক্তি ভুলে আহার করবে সে ছিয়াম ভঙ্গকারী হবে না। আমার (কুরতুবী) বক্তব্য হ’ল, এ মতটিই সঠিক। অধিকাংশ বিদ্বান এ মতের প্রবক্তা যে, যে ছিয়াম অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে ফেলবে বা পান করবে তাকে ছিয়াম কাযা করতে হবে না এবং তার ছিয়াম পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছায়েম যদি ভুল করে খেয়ে ফেলে বা পান করে তাহ’লে সেটি আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক বলে গণ্য হবে। আর তার ওপর কোন কাযা নেই। অন্য বর্ণনায় আছে, এমতাবস্থায় সে যেন তার ছিয়াম পূর্ণ করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাকে খাওয়াছেন ও পান করায়েছেন’।[37]

অনুরূপভাবে সূরা বাক্বারার ৪৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ১৬তম মাসআলায় ছোটদের ইমামতি জায়েয কি-না এ ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষের মতামত উল্লেখ করেছেন। অতঃপর ছোটদের ইমামতি জায়েয না হওয়া সম্পর্কে ইমাম মালেক ও অন্যদের মতের বিরোধিতা করে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন,قٌلْتُ : إِمَامَةُ الصَّغِيرِ جَائِزَةٌ إِذَا كَانَ قَارِئًا ‘আমার বক্তব্য হ’ল, ছোট বাচ্চা যদি ক্বারী হয় তাহ’লে তার ইমামতি জায়েয’।[38] এর প্রমাণ স্বরূপ তিনি বুখারীর একটি হাদীছ পেশ করেছেন, যেখানে ৬/৭ বছরের এক বালক ক্বারীর ছালাতে ইমামতির কথা উল্লেখ আছে।[39] উপরোক্ত দু’টি উদাহরণ থেকে স্পষ্টতঃ বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম কুরতুবী (রহঃ) মাযহাবী গোঁড়ামি পরিহার  করে দলীলকে প্রাধান্য দিতেন।

৫. ইস্রাইলী বর্ণনার স্বল্পতা :

তাফসীরে কুরতুবীতে তুলনামূলকভাবে ইস্রাইলী বর্ণনা অনেক কম।[40] ভূমিকায় এদিকে ইঙ্গিত করে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন,وَأَضْرِبُ عَنْ كَثِيرٍ مِنْ قَصَصِ المفسرين، وأخبار المؤرخين، إلا ما لا بُدَّ مِنْهُ وَلَا غِنًى عَنْهُ لِلتَّبْيِينِ، ‘আমরা মুফাস্সিরদের বর্ণিত বহু কাহিনী এবং ঐতিহাসিকদের বর্ণিত অনেক ঘটনা উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকব। তবে ব্যাখ্যার জন্য যতটুকু উল্লেখ না করলেই নয় ততটুকু উল্লেখ করব’।[41]

ড. আবু শাহবার মতে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরকে অধিক ইস্রাঈলী বর্ণনা ও জাল হাদীছ থেকে মুক্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। যেমনভাবে তিনি ফেরেশতামন্ডলী ও নবীদের নিষ্পাপত্ব বা আক্বীদায় ঘাটতি সৃষ্টিকারী কিছু ইস্রাঈলী ও জাল বর্ণনা উল্লেখ করার পর সেগুলি বাতিল বলে সাব্যস্ত করেছেন বা যঈফ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন, হারূত ও মারূতের ঘটনা, দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ)-এর ঘটনা, গারানীকের ঘটনা, যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহের ঘটনা প্রভৃতি।[42] এসব ইস্রাঈলী ঘটনা বাতিল সাব্যস্তকরণের সময় কখনো তিনি সনদসহ পুরো ঘটনা উল্লেখ করে মুফাসসির ও আলেমদের অভিমত উল্লেখ পূর্বক সেগুলির দীর্ঘ সমালোচনা করেছেন এবং তা খন্ডন করেছেন। আবার কখনো সনদ বাদ দিয়ে শুধু মূল ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করত সেগুলি খন্ডন করেছেন এবং তার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।[43]

যেমন হারূত ও মারূত নামক ফেরেশতাদ্বয় সম্পর্কে ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীছ বর্ণনা করার পর তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হ’ল, ইবনু ওমর প্রমুখ থেকে এসব বর্ণনা প্রমাণিত হওয়া তো দূরের কথা; বরং তা যঈফ। এর কোনকিছুই বিশুদ্ধ নয়। কারণ এটি এমন একটি কথা, ফেরেশতাদের ব্যাপারে মূলনীতি যাকে প্রত্যাখ্যান করে। যারা আল্লাহর অহি-র যথার্থ আমানতদার এবং তাঁর রাসূলগণের নিকট প্রেরিত দূত’।[44]

৬. বাতিল ফিরক্বা সমূহের মত খন্ডন :

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের একজন বড় আলেম ছিলেন। তিনি তাঁর তাফসীরে খারেজী, মু‘তাযিলা, শী‘আ, ক্বাদারিয়াহ, মুরজিয়া, চরমপন্থী ছূফী প্রভৃতি বাতিল ফিরক্বা সমূহের মত খন্ডন করেছেন।[45] ভূমিকায় তিনি وَالرَّدِّ عَلَى أَهْلِ الزَّيْغِ وَالضَّلَالَاتِ বলে এদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন করবে এবং এমন বিদ‘আত সৃষ্টি করবে, যা আল্লাহ পসন্দ করেন না এবং যে বিষয়ে তিনি অনুমতিও দেননি, সে হাউযে কাওছার থেকে বিতাড়িত, দূরে অবস্থানকারী এবং কালো মুখমন্ডলের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিতাড়িত ও দূরে অবস্থানকারী হবে ঐ ব্যক্তি, যে মুসলমানদের জামা‘আতের বিরোধিতা করেছে এবং তাদের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যেমন খারেজীরা তাদের বিভিন্ন ফিরক্বার ভিত্তিতে, রাফেযীরা তাদের সৃষ্ট গোমরাহীর কারণে এবং মু‘তাযিলারা তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রবৃত্তি পূজার কারণে। এরা সবাই দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তনকারী এবং বিদ‘আত সৃষ্টিকারী’।[46]

সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আলী (রাঃ)-কে তার স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করেছিলেন তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি,أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّى بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى غَيْرَ أَنَّهُ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى ‘তুমি কি মূসা (আঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত হারূণ (আঃ)-এর মতো আমার স্থলাভিষিক্ত হ’তে রাযী আছ? তবে জেনে রাখ যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই’।[47] ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীছ দ্বারা রাফেযী, ইমামিয়াহ ও শী‘আদের সকল দল-উপদল এ বিষয়ে প্রমাণ পেশ করেছে যে, নবী করীম (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে সকল উম্মতের উপর খলীফা নিযুক্ত করেছিলেন। এমনকি ইমামিয়ারা ছাহাবীদেরকে কাফের সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন! কেননা তাদের দৃষ্টিতে ছাহাবীরা আলী (রাঃ)-এর খলীফা হওয়ার নছের উপর আমল পরিত্যাগ করেছে এবং ইজতিহাদের মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে আলী ব্যতীত অন্য ব্যক্তিকে খলীফা নিযুক্ত করেছে। শী‘আদের মধ্যে অনেকে আলী (রাঃ)-কে কাফের সাব্যস্ত করেছে। কারণ তিনি তার খলীফা হওয়ার দাবী উত্থাপন করেননি। এদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে এবং যারা তাদের কথা অনুসরণ করে তাদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তারা জানে না যে, এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় স্থলাভিষিক্ত নিযুক্তকরণ। যেমন প্রতিনিধি নিযুক্তকারীর পদচ্যুতি বা মৃত্যুর মাধ্যমে কাউকে প্রতিনিধি নিযুক্তির বিষয়টি শেষ হয়ে যায়। তার মৃত্যুর পরেও তা বহাল থাকার দাবী করে না। এর মাধ্যমে ইমামিয়াহ ও অন্যরা যে বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

নবী করীম (ছাঃ) ইবনে উম্মে মাকতূম ও অন্যদেরকে মদীনার দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেছিলেন। এর মাধ্যমে  সর্বসম্মতিক্রমে তাদের স্থায়ী খলীফা হওয়া আবশ্যক হয় না। আর একথার ভিত্তিতেও যে, হারূণ (আঃ)-কে মূসা (আঃ)-এর সাথে মূল রিসালাতে শরীক করা হয়েছিল। এতে তারা যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছে তার কোন দলীল নেই। হেদায়াত লাভের তাওফীকদাতা একমাত্র আল্লাহ’।[48]

অনুরূপভাবে তিনি মু‘তাযিলাদের অভিমত বান্দা তার কর্মের স্রষ্টা এবং জ্ঞান যাকে সুন্দর বলে সেটিই সুন্দর প্রভৃতি ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডন করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সঠিক আক্বীদা প্রমাণ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ বান্দার কর্মের স্রষ্টা এবং বান্দা কর্ম বাস্তবায়নকারী। আর আক্বল নয়, বরং শরী‘আতই ভাল-মন্দের মানদন্ড।[49]

তাফসীরে কুরতুবীর ইলমী মূল্য :

১. ইবনু ফারহূন (৭৬০-৭৯৯ হিঃ) বলেন,وهو من أجل التفاسير وأعظمها نفعاً أسقط منه القصص والتواريخ وأثبت عوضها أحكام القرآن واستنباط الأدلة وذكر القراءات والإعراب والناسخ والمنسوخ ‘এটি অত্যন্ত উপকারী গুরুত্বপূর্ণ তাফসীর গ্রন্থ সমূহের অন্যতম। তিনি এই তাফসীর থেকে কিচ্ছা-কাহিনী ও ঐতিহাসিক ঘটনার অবলুপ্তি ঘটিয়ে তদস্থলে কুরআনের বিধি-বিধান ও দলীল সাব্যস্ত করেছেন। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত, ই‘রাব এবং নাসিখ ও মানসূখ উল্লেখ করেছেন’।[50]

২. ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যামাখশারী, কুরতুবী ও বাগাবীর তাফসীর কি কুরআন ও সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী, নাকি অন্য কোন তাফসীর? এর জবাবে তাফসীরে কাশশাফকে মু‘তাযিলা আক্বীদাপুষ্ট তাফসীর হিসাবে আখ্যায়িত করার পর তিনি বলেন,وتَفْسِيرُ الْقُرْطُبِيِّ خَيْرٌ مِنْهُ بِكَثِيرٍ، وَأَقْرَبُ إِلَى طَرِيقَةِ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ، وَأَبْعَدُ مِنَ الْبِدَعِ ‘তাফসীরে কুরতুবী এর চেয়ে অনেক ভাল। এটি কুরআন-সুন্নাহর অনুসারীদের তরীকার অধিক নিকটবর্তী এবং বিদ‘আত থেকে অনেক দূরে’।[51]

৩. হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হিঃ) বলেন, وقد سارت بتفسيره العظيم الشّأن الرُّكْبان، وهو كامل فِي معناه ‘তাঁর বিশাল মর্যাদাপূর্ণ তাফসীরটি কাফেলা সাথে করে নিয়ে গেছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ তাফসীর’।[52]

৪. ইবনু শাকির  আল-কুতুবী (৬৮৬-৭৬৪ হিঃ) বলেন, وهو مليح إلى الغاية ‘এটি অত্যন্ত চমৎকার তাফসীর’।[53]

৫. ছালাহুদ্দীন ছাফাদী (৬৯৬-৭৬৪ হিঃ) বলেন, وَقد سَارَتْ بتفسيره الركْبَان وَهُوَ تَفْسِير عَظِيم فِي بَابه ‘তাঁর তাফসীরটি নিয়ে আরোহীদল দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ তাফসীর’।[54]

৬. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (৮৪৯-৯৯১ হিঃ) বলেন,مصنف التفسير المشهور، الذي سارت به الركبان ‘প্রসিদ্ধ তাফসীরের রচয়িতা। যে তাফসীর নিয়ে আরোহীদল (পৃথিবীব্যাপী) ছড়িয়ে পড়েছিল’।[55]

৭. ঐতিহাসিক ইবনে খালদূন (৭৩২-৮০৮ হিঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ ‘কিতাবুল ইবার’-এর ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন যে, প্রাচ্যে তাফসীরে কুরতুবীর ব্যাপক খ্যাতি ছিল।[56]

৮. ইবনুল ইমাদ হাম্বলী (১০৩২-১০৮৯ হিঃ) বলেন,والتفسير الجامع لأحكام القرآن الحاكي مذاهب السلف كلها وما أكثرَ فوائدَهُ ‘আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন তাফসীরটি পূর্ববর্তী বিদ্বানদের সকল মাযহাবের কথা বর্ণনাকারী। এর উপকারিতা অনেক বেশী’।[57]

৯. হাজী খলীফা (১০১৭-১০৬৮ হিঃ) বলেন,وهو كتاب كبير مشهور بتفسير القرطبي في مجلدات  ‘তাফসীরে কুরতুবী নামে প্রসিদ্ধ কয়েক খন্ডে বিভক্ত এটি একটি বড় গ্রন্থ’।[58]

১০. আধুনিক সালাফী বিদ্বান শায়খ মুহাম্মাদ বাহজাতুল বায়তার (১৮৯৪-১৯৭৬) বলেন,إن هذا التفسير جامع، وبيانه رائع ‘এই তাফসীরটি সারগর্ভ এবং এর বর্ণনা চমৎকার’।[59]

১১. ড. মুহাম্মাদ হুসাইন আয-যাহাবী বলেন, وعلى الجملة فإن القرطبى رحمه الله فى تفسيره هذا حُرٌّ فى بحثه، نزيهٌ فى نقده، عفٌّ فى مناقشته وجدله، مُلِمٌّ بالتفسير من جميع نواحيه، بارع فى كل فن استطرد إليه وتكلَّم فيه- ‘মোটকথা, কুরতুবী (রহঃ) তাঁর এই তাফসীরে স্বাধীন গবেষক এবং সমালোচনা, পর্যালোচনা ও বিতর্কে নিষ্কলুষ ব্যক্তি হিসাবে পরিদৃষ্ট হন। তিনি এতে তাফসীরের সকল দিকের প্রতি খেয়াল রেখেছেন। তিনি এতে যে সকল বিষয়ের অবতারণা করেছেন এবং যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন তাতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন’।[60]

১২. الموسوعة العربية العالمية বিশ্বকোষে বলা হয়েছে,وهو تفسير كامل عنى فيه بالمسائل الفقهية إلى جانب العلوم الأخرى، ‘এটি একটি পূর্ণাঙ্গ তাফসীর। এতে ফিক্বহী মাসআলা-মাসায়েল-এর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য জ্ঞানও আলোচিত হয়েছে’।[61]

১৩. জীবনীকার শায়খ মাশহূর হাসান বলেন,ولا شك أنه أهم آثاره العلمية، وأنه ذو قيمة عالية بين كتب التفسير- ‘নিঃসন্দেহে তাফসীরে কুরতুবী তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলমী অবদান। তাফসীর গ্রন্থ সমূহের মাঝে এটির মূল্য অপরিসীম’।[62]

১৪. আধুনিক গবেষক আমির বিন ঈসা আল-লাহব বলেন, فهو فريد في بابه لايستغنى عنه العالم فضلا عن طالب العلم، ‘এটি একটি মূল্যবান তাফসীর। ছাত্র তো দূরের কথা, কোন আলেমও এ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকতে পারে না’।[63]

১৫. তাফসীরে কুরতুবী ও তাফসীর ইবনে কাছীরের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক্ব আব্দুর রায্যাক আল-মাহদী বলেন,التفاسير الفقهية وهى كثيرة، وأعظمها وأكثرها جمعا، تفسير القرطبي، فإنه جمع فأوعى حيث سرد أقوال الفقهاء وأدلتهم بإنصاف وأمانة. ‘ফিক্বহী তাফসীরের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশী বক্তব্য সংকলনকারী হল তাফসীরে কুরতুবী। কেননা তিনি সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন এবং ইনছাফ ও আমানতের সাথে ফকীহদের বক্তব্য ও তাদের দলীল সমূহ উল্লেখ করেছেন’।[64] তিনি আরো বলেন,فهذا التفسير من أنفع التفاسير، وأحسنها فى ميدانه- ‘এটি উপকারী ও সুন্দর তাফসীর সমূহের অন্যতম’।[65]

১৬. ড. ফাহ্দ বিন আব্দুর রহমান বিন সুলায়মান আর-রূমী বলেন,وتفسير ابن العربى والقرطبى أفضل وأشهر تفاسير آيات الأحكام القرآنية حتى يومنا هذا- ‘ইবনুল আরাবী ও কুরতুবীর তাফসীর কুরআনের আহকাম সংক্রান্ত আয়াত সমূহের তাফসীরগুলির মধ্যে অদ্যাবধি শ্রেষ্ঠ ও প্রসিদ্ধ’।[66]

১৭. তাফসীরে কুরতুবীর উর্দূ অনুবাদক ড. হাফেয ইকরামুল হক ইয়াসীন বলেন, ‘আল্লামা কুরতুবীর এই বিশাল অবদান মূলতঃ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের Encyclopedia বা বিশ্বকোষ। যাতে তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ ও অন্যান্য ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক মূল্যবান ভান্ডার এক জায়গায় পাওয়া যায়। আলেমগণ প্রথম দেখাতেই এর জ্ঞানগত মর্যাদার প্রশংসা না করে থাকতে পারেন না। ছাত্ররা তাদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণের জন্য একে সুমিষ্ট ঝরণা মনে করে। আর সাধারণ মানুষের জন্য এটি জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার’।[67]

পরবর্তী মুফাস্সিরদের উপর তাফসীরে কুরতুবীর প্রভাব :

তাফসীরে কুরতুবীর গুরুত্ব, খ্যাতি ও মর্যাদা উল্লেখিত উক্তি সমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। স্বভাবতঃই পরবর্তী মুফাস্সিরগণ ইমাম কুরতুবী (রহঃ)-এর তাফসীর দ্বারা উপকৃত ও প্রভাবিত হয়েছেন। এদের মধ্যে হাফেয ইবনু কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) ও ইমাম শাওকানী (১১৭৩-১২৫০ হিঃ) (রহঃ)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা দু’জন তাফসীরে কুরতুবী থেকে অনেক বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনু কাছীর (রহঃ) কুরতুবীর বক্তব্যের মর্মার্থ উল্লেখ করেছেন, নছ নয়।[68] তাছাড়া খতীব শারবীনী (মৃঃ ৯৭৭ হিঃ) তাঁর আস-সিরাজুল মুনীর, সুলায়মান বিন ওমর (মৃঃ ১২০৪ হিঃ) তাফসীরে জালালাইন-এর হাশিয়া আল-ফুতূহাত আল-ইলাহিয়াহ, আবুস সঊদ (মৃঃ ৯৮২ হিঃ) তাঁর ইরশাদুল আকলিস সালীম, নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (১২৪৮-১৩০৭ হিঃ)  তাঁর ফাতহুল বায়ান ফী মাক্বাছিদিল কুরআন এবং শানক্বীতী (মৃঃ ১৩৯৩ হিঃ) তাঁর আযওয়াউল বায়ান-এ তাফসীরে কুরতুবীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।[69]

(ক্রমশঃ)


[1]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ৪০-৪১

[2]. আল-ওয়াফী বিল অফায়াত ২/৮৭; উয়ূনুত তারীখ ২১/২৭; যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৫০/৭৫

[3]. ‘তারজামাতুল ইমাম আল-কুরতুবী’ www.alukah.net.।

[4]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ৯৭

[5]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ১০২

[6]. যেমন আবূ বকর জাছ্ছাছ ও ইবনুল আরাবীর আহকামুল কুরআন, নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রহঃ)-এর নায়লুল মারাম মিন তাফসীরে আয়াতিল আহকাম প্রভৃতি।

[7]. তাফসীরে কুরতুবী (উর্দূ অনুবাদ), ১ম খন্ড, পৃঃ 1xxii

[8]. মুছত্বাফা ইবরাহীম আল-মাশীনী, মাদরাসাতুত তাফসীর ফিল আন্দালুস (বৈরূত : মুআস্সাসাতুর রিসালাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৬/১৯৮৬), পৃঃ ৫০২

[9]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৬, ভূমিকা দ্রঃ

[10]. 

[11]. ঐ ১/৬-৭

[12]. ঐ, ১/৭-৭৬

[13]. ঐ, ১/৭৭-৮১

[14]. ঐ, ১/৮১-৮৯

[15]. ঐ, ১/৮৯-৯২

[16]. ঐ ১/৯২-১০৬

[17]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ১০৯

[18]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৬

[19]. ঐ ১/২৬৯

[20]. , ৬/৭২, মায়েদাহ ৬ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.

[21]. ঐ, ২/২০২, বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.

[22]. ঐ, ১/১০৭

[23]. তাফসীরে কুরতুবী, তাহকীক্ব : আব্দুর রায্যাক আল-মাহদী (বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪২৪/২০০৪), ১/৭

[24]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৬, ভূমিকা দ্রঃ

[25]. তাহকীক্ব তাফসীরে কুরতুবী ১/৭

[26]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ১১১

[27]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৯৪

[28]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/৬০০

[29]. তাহকীক্ব তাফসীরে কুরতুবী ১/১৭৯, হা/২২৬

[30]. আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, আত-তা‘লীকাতুল হাফিলাহ আলাল আজবিবাহ আল-ফাযিলাহ (আলেপ্পো : মাকতাবুল মাতবূ‘আত আল-ইসলামিইয়াহ, ২য় সংস্করণ, ১৪০৪/১৯৮৪), পৃঃ  ১৩৬-১৩৯

[31]. ড. আল-কাছাবী মাহমূদ যালাত, আল-কুরতুবী ওয়া মানহাজুহু ফিত-তাফসীর (বৈরূত : আল-মারকাযুল আরাবী লিছ ছাক্বাফাতি ওয়াল উলূম, তাবি), পৃঃ ৩৪৪

[32]. ড. মুহাম্মাদ হুসাইন আয-যাহাবী, আত-তাফসীর ওয়াল মুফাস্সিরূন (কায়রো : মাকতাবা অহবাহ, ১৯৭৬), ২/৩৩৮

[33]. তাফসীরে কুরতুবী, ২/১৪২, বাক্বারাহ ১৭০ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ

[34]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ১৬৫

[35]. ঐ, পৃঃ ৫৮, ১৬৫

[36]. আয-যায়ল ওয়াত তাকমিলাহ ৩/৪৯৫

[37]. দারাকুৎনী হা/২২৬৫,২২৬৭, দারাকুৎনী বলেন, হাদীছটি ছহীহ ও এর সকল রাবী ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৯৯০; ইবনু হিববান হা/৩৫২১; এর শাহেদ দ্র. বুখারী হা/১৯৩৩; মুসলিম হা/১১৫৫; তাফসীরে কুরতুবী ২/২১৫, ঐ তাহকীক্ব ২/৩১৯, হা/৯৩৮

[38]. তাফসীরে কুরতুবী ১/২৪০

[39]. বুখারী হা/৪৩০২(فَنَظَرُوا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّى، لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنَ الرُّكْبَانِ، فَقَدَّمُونِى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ، وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ، سِنِينَ)

[40]. লেখক মন্ডলী, মু‘জামু তাফাসীরিল কুরআনিল কারীম (আইসিসকো : ১৪১৭/১৯৯৭), পৃঃ ৪৮৩

[41]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৬

[42]. ড. মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ আবু শাহবাহ, আল-ইস্রাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূ‘আত ফী কুতুবিত তাফসীর (কায়রো : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪০৮ হিঃ), পৃঃ ১৩৭

[43]. মাদরাসাতুত তাফসীর ফিল আন্দালুস, পৃঃ ৫৬০

[44]. তাফসীরে কুরতুবী ২/৩৬, বাক্বারাহ ১০২ আয়াতের তাফসীর দ্র.

[45]. মান্নাউল ক্বাত্তান, মাবাহিছ ফী উলূমিল কুরআন (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪২১/২০০০), পৃঃ ৩৯০; আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ২৩৬-৩৭

[46]. তাফসীরে কুরতুবী ৪/১০৮, আলে ইমরান ১০৬ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.

[47]. মুসলিম হা/২৪০৪

[48]. তাফসীরে কুরতুবী ৭/১৭৬-৭৭, আ‘রাফ ১৪২ আয়াতের তাফসীর দ্র.

[49]. ড. সুলায়মান আল-কার‘আবী ও ড. মুহাম্মাদ বিন আলী আল-হাসান, আল-বায়ান ফী উলূমিল কুরআন (সঊদী আরব : মাকতাবাতুয যিলাল, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫/১৯৯৪), পৃঃ ৩৯০

[50]. আদ-দীবাজ আল-মুযাহ্হাব ২/৩০৯

[51]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ১৩/৩৮৭; ঐ, মুক্বাদ্দামা ফী উছূলিত তাফসীর (বৈরূত : দারু ইবনে হাযম, ২য় সংস্করণ, ১৪১৮/১৯৯৭), পৃঃ ১১৩

[52]. তারীখুল ইসলাম ৫০/৭৫

[53]. য়ূনুত তারীখ ২১/৩৭

[54]. আল-ওয়াফী বিল অফায়াত ২/৮৭

[55]. ত্বাবাক্বাতুল মুফাস্সিরীন, পৃঃ ৯২

[56].وتبعه القرطبى فى تلك الطريقة على منهاج واحد فى كتاب آخر مشهور بالشرق দ্র: মুক্বাদ্দামা ইবনে খালদূন (কায়রো : দারু ইবনিল জাওযী, ১ম প্রকাশ, ২০১০), পৃঃ ৩৭২, অধ্যায়-৬, অনুচ্ছেদ-১১

[57]. শাযারাতুয যাহাব ৭/৫৮৫

[58]. কাশফুয যুনূন (বৈরূত : দারু ইহ্ইয়াইত তুরাছিল আরাবী, তাবি), ১/৫৩৪, ‘জীম’ অধ্যায়

[59]. মাজাল্লাতুল মুজাম্মা আল-ইলমী আল-আরাবী, দামেশক, বর্ষ ২০, সংখ্যা ১১-১২, অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৯৪৫, পৃঃ ৫৬৫

[60]. আত-তাফসীর ওয়াল মুফাস্সিরূন ২/৩৪১

[61]. আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়্যাহ আল-আলামিয়্যাহ (রিয়াদ : মুআস্সাসাতু আ‘মালিল মাওসূ‘আহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৯/১৯৯৯), ১৮শ খন্ড, পৃঃ ১৬৩

[62]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ৯৮

[63]. ঐ, মানহাজুল ইমাম আল-কুরতুবী ফী তাফসীরে আয়াতিল আহকাম ফী কিতাবিহি আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন, দিরাসাতুন তাহলীলিয়াহ, ১৪২৯/২০০৮; k-tb.com/book/Quraan07064-منهج-الإمام-القرطبي-في- ।

[64]. তাফসীর ইবনে কাছীর, তাহকীক্ব: আব্দুর রায্যাক আল-মাহদী (বৈরূত: দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪৩২/২০০১), ১ম খন্ড, পৃঃ ৭

[65]. তাহকীক্ব তাফসীরে কুরতুবী ১/৮

[66]. ঐ, মানহাজুল মাদরাসাহ আল-আন্দালুসিয়াহ ফিত-তাফসীর ছিফাতুহু ওয়া খাছায়িছুহু (রিয়াদ : মাকতাবাতুত তাওবাহ, ১৪১৭/১৯৯৭), পৃঃ ১৬

[67]. তাফসীরে কুরতুবী (উর্দূ অনুবাদ), ১ম খন্ড, পৃঃ lxxiii

[68]. আল-কুরতুবী ওয়া মানহাজুহু ফিত-তাফসীর, পৃঃ ৪১৮-৪২৬

[69]. আল-ইমাম আল-কুরতুবী, পৃঃ ১০১; ড. মিফতাহ সানূসী, আল-কুরতুবী হায়াতুহু ওয়া আছারুহুল ইলমিইয়াহ ওয়া মানহাজুহু ফিত-তাফসীর (লিবিয়া : বেনগাযী বিশ্ববিদ্যালয়, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৮), পৃঃ ২৯৩; তারজীহাতুল কুরতুবী ফিত-তাফসীর, পৃঃ ২৭





ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (৩য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৯ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)-এর ব্যাপারেকিছু আপত্তি পর্যালোচনা (শেষ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল কাসেম সায়েফ বেনারসী - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (১০ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
মাওলানা অহীদুয্যামান লক্ষ্মৌভী : তাক্বলীদের বন্ধন ছিন্নকারী খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ - ড. নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.